শিরোনাম
বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

বুস্টার ডোজ নাকি সর্বজনীন এক ডোজ

বুস্টার ডোজ নাকি সর্বজনীন এক ডোজ

বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা, গবেষকগণ, এপিডেমিওলজিস্টরা, সরকারপ্রধান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসিসহ সবাই একযোগে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর কাজ করে যাচ্ছে। মহামারী নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলো (Public Health Measures) বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়-

 

  লকডাউন

টেস্টিং (RT PCR for SARS-COV 2)

কন্টাক্ট ট্রেসিং (Contact Tracing)

কোয়ারেন্টিন  (Quarantine)

আইসোলেশন (হোম/হাসপাতাল)

টিকা গ্রহণ

 

টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই করোনা থেকে স্থায়ী মুক্তির সম্ভাবনা দেখছে সারা বিশ্ব। এরই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে দ্রুত সময়ে মাত্র ১১ মাসে উৎপাদন হয়েছে করোনার টিকা। এরপর থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জনগণকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

 

এখন পর্যন্ত ৯৯টি টিকা মানব শরীরে পরীক্ষার (Clinical Trial) বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে আরও ৭৫টি রয়েছে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। ১২টি টিকা পেয়েছে জরুরি অনুমোদন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে ৭টি টিকা। ১৮৩টি দেশে এই লেখা প্রকাশের সময় পর্যন্ত ৫.২৬ বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে মোট জনসংখ্যার (৭৯০ কোটি) ৭০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশকে টিকা দিয়ে দিতে হবে। তবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে টিকাদানে তাল মেলাতে পারছে না অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো।

 

আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ট্র্যাকারগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো নিচের দিকে। উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তালিকার উপরের দিকে অবস্থান করলেও বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশের নিচে রয়েছে শুধু আফ্রিকার হতদরিদ্র দেশগুলো। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রতি একশ জনে মাত্র ১.৫ ডোজ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। এর মূল কারণ টিকার ঘাটতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় আনা উচিত।

 

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় বুস্টার ডোজের প্রয়োজন রয়েছে কি না তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তারপরও বেশ কয়েকটি দেশ বুস্টার ডোজ প্রয়োগের ওপর জোর দিচ্ছে। এতে গরিব দেশগুলো টিকা নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে ইসরায়েল, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ তাদের দেশের অতিসংবেদনশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বুস্টার ডোজ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে।

 

করোনা মহামারী থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের সব জনগণকে অন্ততপক্ষে একটি করে ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। একটি ডোজের টিকা পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে না পারলেও মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকিয়ে দিতে পারবে এই একটি ডোজ। অবস্থার বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োগ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বুস্টার ডোজ বন্ধ থাকলে প্রত্যেক দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। টিকাদানের ক্ষেত্রে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই আহ্বান। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে- সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিটি দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। আমাদের সবার উচিত হবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা।

তথ্যসূত্র :  WHO, Vaccine Tracker, Milken Institute of Vaccine Tracker, New York Times, BBC

 

ডা. আরিফ মাহমুদ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডেপুটি ডিরেক্টর, মেডিক্যাল সার্ভিসেস, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর