বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিল্কের আভিজাত্য

সিল্কের আভিজাত্য

♦ মডেল : মৌ রহমান ♦ ছবি : সৈয়দ মেহরাব হোসেন ♦ পোশাক : স্বপ্নযাত্রা

শাড়ি মূলত বাংলার নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এতে ফুটে ওঠে বাঙালি নারীর ষোলআনা সৌন্দর্য। তন্মধ্যে সিল্ক শাড়িকে বলা হয় আভিজাত্যের প্রতীক। সেই আভিজাত্যকে কে না চান!  ফ্যাশনপ্রেমী নারীরা কম-বেশি সারা বছরই সিল্ক শাড়ি পরেন। তবে গরম কমলে এর কদরও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দেখতে জমকালো, পরতেও বেশ আরামদায়ক।

 

ঐতিহ্যবাহী এ শাড়ির ফ্যাশন প্রতিবছরই ফিরে আসে নতুন রূপে আর নকশায়। এই শাড়ি খুব সহজেই সামলানো যায়। পুরো সাজে যোগ হয় আভিজাত্য ও পরিপাটি ভাব। পাশাপাশি মানিয়ে যায় যে কোনো বয়সের সঙ্গেই। মসলিন, বলাকা সিল্ক, অ্যান্ডি সবই একই রেশম সুতায় বোনা। মসলিন কাপড়টি যে সুতায় বানানো হয়, একই সুতা মোটা করে টুইস্টিং মেশিনে পাকানো হলে বলাকা সিল্ক হয়ে যায়। একটি শাড়ি তৈরি করার পর রেশমের বাতিল সুতাগুলো দিয়ে অ্যান্ডি, দুপিয়ান ও মটকা তৈরি করা হয়। তাই বলাই যায়, জমকালো যে কোনো উপলক্ষে নজর কাড়তে সিল্ক সব সময়ই অমলিন। মূলত- অভিজাত পরিবেশে নিজেকে উপস্থাপন করতে এটাই সেরা অপশন।

 

এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস এটায়রিস্ট-এর স্বত্বাধিকারী দিলরুবা সাথী বলেন, কালের বিবর্তনে বদলেছে শাড়ির পাড়-আঁচল, বুনন এবং পরিধেয় কৌশল। আর সেই শাড়ি যুগে যুগে বাংলার নারীদের ফ্যাশনের অংশ হয়েই রয়ে গেছে। আবার সেই শাড়ির সুতায় রয়েছে রকমফের। শাড়ির ঐতিহ্যে যেমন রয়েছে- তাঁত, জামদানি শাড়ি; তেমনি আভিজাত্যের শাড়ির মধ্যে রয়েছে সিল্ক। ৮০ কাউন্ট সুতা থেকে তৈরি শাড়িটি এমন একটি প্রয়াস, যাকে আমাদের দেশের তাঁত-বুনন কারিগররা এর নাম দিয়েছেন সিল্ক। ’৯০-এর দশকের শুরুতে শাড়িতে ব্লক প্রিন্ট জনপ্রিয়তা পায় যা আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। এবার সিল্ক শাড়িতে ব্লক ডাই নকশা এমনভাবে সাজানো, যেন শাড়ির আবেদনে ঘাটতি না থাকে।

হ্যান্ডপেইন্ট, কাটওয়ার্ক, কাঁথাস্টিচ অথবা ব্লক-বাটিক কিংবা ভেজিটেবল ডাই। উপাদানটা মোটামুটি একই, তবে নকশায় রয়েছে ভিন্নতা। মোটিফ আর বুননে বৈচিত্র্য অনেক বেশি আনা যায় সিল্ক শাড়িতেই। তবে আরও থাকা চাই সাজ আর গয়নার বৈচিত্র্য। সিল্কের ওপর জ্যামিতিক মোটিফে নানা নকশার ধাঁচটা পুরনো হয়েছে। এখন মোটিফে বেশ নতুনত্ব এসেছে। পাশাপাশি পোলকা ডট, জ্যামিতিক বা লতাপাতার মোটিফে নকশা করা শাড়িও দেখা যাচ্ছে। সেগুলো নিত্যকার ব্যবহারের জন্য বেশ চলছে। আর জমকালো উপলক্ষে মসলিন, অ্যান্ডি সিল্কের শাড়ির চাহিদাই বেশি। আর হ্যাঁ, চকচকে ও একটু মোটা কাপড় হওয়ায় সিল্কের চাহিদা শীতের সময় তুলনামূলক বেশি হয়। নকশা ও রং ফুটিয়ে তোলা যায় মনের মতো করে। যে কোনো কাজই সিল্কের ওপর করা যায়। নকশার তালিকায় প্রিন্ট তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছে।

 

এখন জামদানি বা কাতান শাড়ির আদলে সিল্কেও নকশা করা হচ্ছে। সিল্কেরই দুটো প্রকার অ্যান্ডি আর মসলিন। রাজশাহী সিল্কের পাশাপাশি এ দুয়ের চাহিদাও এখন বেশ। বুনন আর টেক্সচারে ভিন্নতা আছে এসবের। সিল্কে রয়েছে নানা রকমফের। রাজশাহী সিল্ক, গরদ, বলাকা সিল্ক, সপুরা সিল্ক, কাশ্মীরি সিল্ক, মাইসোর সিল্ক, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক, সফট সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, তসর, জয়শ্রী, ধুপিয়ান সবই সিল্কের রকমফের। সব ধরনের সিল্কে রয়েছে আভিজাত্য ও রুচিশীলতার ছোঁয়া। তাই অনায়াসেই সিল্কের এ বিশাল সম্ভার থেকে বেছে নিতে পারেন পছন্দের শাড়িটি। সিল্কের শাড়িতে এখন বেশ দেখা যাচ্ছে গাঢ় রঙের ব্যবহার। জমিনে গাঢ় নীল, সরষে, সবুজ, মেরুন, লাল, সাদা, ছাই এই রংগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি। আঁচলে থাকতে পারে কন্ট্রাস্ট কোনো রঙের স্ট্রাইপ। হ্যান্ডপেইন্ট বা কাটওয়ার্কের নকশা করা শাড়িগুলো তো বেশ জমকালোই। এর সঙ্গে রং মেলানো ব্লাউজ চলতে পারে। শাড়ি পরার ধাঁচে আনুন ভিন্নতা। ঘাগরার মতো কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারেন। এক প্যাঁচে পরলেও মানিয়ে যাবে।

 

বাজার ঘুরলেই ক্রেতাদের মধ্যে সিল্কের চাহিদা বোঝা যায়। তবে সিল্ক কেনার আগে যাচাই করে নেওয়া উচিত, এটা আসল কি না। বিশেষজ্ঞরা জানালেন সিল্কের শাড়ি চেনার সহজ পদ্ধতি। কাপড়ের কোনার একটু অংশ আগুনে পুড়িয়ে দেখুন। ছাই হয়ে গেলে বুঝবেন এটি রেশমের সুতায় তৈরি সিল্ক। পৃথিবীর ৩৬টি দেশে রেশম উৎপাদন করা হয়। সব জায়গায় এই পদ্ধতিতেই সিল্ক চেনা হয়। পোড়ানোর পর গন্ধ বের হবে এবং ওই অংশটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

 

দরদাম : নকশার ওপর নির্ভর করে সিল্কের শাড়ির দাম ২৭০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া আড়ং-সহ বেশ কটি ফ্যাশন হাউসে সিল্কের ওপর বিভিন্ন কাজ করা শাড়িগুলো পাবেন। দাম পড়বে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

 

বাড়তি টিপস...

সিল্ক শাড়ির মতো আভিজাত্য আর অন্য কোনো শাড়িতে নেই। কোনো রকম মেকআপ ছাড়াই খুব সুন্দরভাবে সেজে ওঠা যায় সিল্কের শাড়িতেই। সিল্ক, কটন শাড়ির সঙ্গে নানা কাটের ব্লাউজ পরা যায় ঠিকই। তবে সিল্কের শাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবাই পিছিয়ে। কীভাবে পরবেন?

 

►  সিল্ক শাড়ির সৌন্দর্য আঁচলে। আর এই শাড়ির আঁচল কিন্তু বেশ ভারী হয়। বেশিরভাগই তাই আঁচল পিন করে নেন। কিন্তু যদি কোনোভাবে আঁচল সামনে করে পরতে পারেন বা একটা পিন করে নিজের মতো আঁচল ছেড়ে রাখেন তাহলে কিন্তু দেখতে বেশ ভালো লাগে। এখন অনেক কায়দাতেই সামনে আঁচল দিয়ে ড্রেপ করা যায় শাড়ি।

►  ইদানীং অনেকেই শাড়ি পরছেন বেল্ট দিয়ে। কোমর বন্ধনীর পরিবর্তে বেড়েছে বেল্টের ব্যবহার। আর বেল্ট দিয়ে শাড়ি ড্রেপ করলে দেখতেও দারুণ লাগে। এতে যেমন কোমরের শেপ সুন্দর লাগে তেমনই কোমরের অতিরিক্ত মেদও ঢাকা পড়ে যায়।

►  শাড়ির সঙ্গে গয়নাও কিন্তু মানানসই পরতে হবে। আর তাতেই খোলে শাড়ির সৌন্দর্য। তবে একসঙ্গে সব গয়না নয়। যদি গলায় ভারী কোনো হার পরেন তাহলে আর কোনো গয়না নয়। একইভাবে কানে ভারী দুল পরলে আর কিছু পরার প্রয়োজন নেই।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর