বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উন্মাদনার বিশ্বকাপ

উন্মাদনার বিশ্বকাপ

মডেল : কর্ণিয়া ও মৌ রহমান, ছবি : মনজু আলম ও এমএইচ বিপু

চার বছর পর বিশ্বব্যাপী ফুটবলের জোয়ার নিয়ে আসে বিশ্বকাপ ফুটবল। সেই জোয়ারের রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশেও। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ নামে পরিচিত বিশ্বকাপের আনন্দোৎসবে শামিল হয় ছেলে-বুড়ো সবাই।  উন্মাদনার রং ছড়ায় অলিগলি সবখানেই...

বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই উন্মাদনা। তাই তো লাখো মাইল দূরে থেকেও একই সুরে গলা মিলায় বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল সমর্থক! এবারের কাতার বিশ্বকাপের আসরেও আনন্দোৎসবে শামিল হয়েছে সোনার বাংলাদেশ। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই দুটি মাত্র ফুটবল দলের সমর্থনে বিভক্ত। তাই তো ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই মাঠে-ময়দানে, পাড়া-মহল্লায়, বাসার ছাদে কিংবা গাড়িতে প্রিয় দলের পতাকা উড়িয়ে তাদের সমর্থন জানায় সমর্থকরা। গায়ে জড়ায় প্রিয় দল, খেলোয়াড়ের জার্সি, ক্যাপ এমনকি সানগ্লাসও।

বিশ্বকাপ ফুটবল চলবে প্রায় এক মাস। এ সময় বাঙালিরা বিশ্বকাপ আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকে। কে কার চেয়ে বড় পতাকা লাগাবে, প্রিয় দলের সমর্থনে কোন জার্সি নেবে- এসব কর্মযজ্ঞে বিশ্বকাপ ফুটবল পায় পূর্ণ মাত্রা। আর বাঙালিদের পূর্ণ বিনোদনের খোরাকে পরিণত হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপ ফুটবল এমন একটি খেলা, যে খেলার দরুন প্রত্যেক মানুষের খেলার প্রতি যে নিবেদন ও আবেদন কাজ করে, তা সুনিপুণভাবে ফুটে ওঠে। বাঙালিরা তাদের চিত্তবিনোদন মেটানোর পাশাপাশি প্রিয় দলের বিজয়ে জয়োল্লাস করে, যাতে মিইয়ে যায় অনেক না জানা, অদেখা দুঃখ ও ভারাক্রান্ত প্রতিক্রিয়া।

পাড়া-মহল্লায়, হাটে-বাজারে তাকালেই দেখা মিলবে এমন দু-চারজন, যারা দলের সমর্থনে জার্সি গায়ে জড়ান। চায়ের স্টলে কিংবা ফুড কর্নারে চলে সমর্থকদের কথার লড়াই। রেস্তোরাঁগুলোতে এখন খাবারের সঙ্গে ‘গরম-গরম খেলা’ও পরিবেশন করা হচ্ছে। গুলশান-বনানীর দামি কফি শপ থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়ের টংদোকানগুলোতেও একই চিত্র পাবেন- কেউ টিভিতে, কেউবা প্রজেক্টর লাগিয়ে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। স্রেফ বিশ্বকাপের জন্যই মধ্যরাত পর্যন্তও খোলা থাকছে অনেক রেস্তোরাঁ। দলেবলে গুঁড়ো থেকে বুড়োরা ভিড় করছেন সেখানে। এ ছাড়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্বকাপ উন্মাদনার পারদ যেন অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে চলে বিশ্বকাপ উন্মাদনার ঝড়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে জমে উঠেছে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার হিড়িক। এখন ঘরোয়া আয়োজনে বিশ্বকাপের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে পরিবারের ছোট-বড় সবার মাঝেই।

দলকে সমর্থন করে জার্সি পরা আর প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে মেতে ওঠাই এখন অন্য রকম বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে সবার। এই বিনোদন থেকে বাদ যাচ্ছে না ছেলেমেয়ে কেউই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে নিজেদের প্রোফাইল পিকচারটিও দলের জার্সি পরা ছবি দিয়ে পরিবর্তন করে নিয়েছেন অনেকেই। বিকালের আড্ডায় বা ঘুরতে গেলে জার্সি জড়িয়ে নেওয়া এখন খুব সাধারণ একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে জার্সির এই ব্যবহারও যেন এক জোয়ারের মতো। মডেল তারকারাও পছন্দের জার্সি গায়ে জড়িয়ে জানান দিচ্ছেন প্রিয় দল সম্পর্কে। রীতিমতো জার্সি পরেই ক্যামেরার সামনে তাদের পোজ আর ভিডিও করতে দেখা যাচ্ছে।

নানা দেশের ছোট-বড় পতাকায় সেজেছে সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি করপোরেট অফিসও। স্যুট-বুট যে অফিসের অলিখিত ‘ইউনিফর্ম’, সেখানেও ইদানীং ঢোলাঢালা জার্সি পরে হাজির হওয়া যাচ্ছে। নিজের মাপমতো বা একটু ঢিলেঢালা হলেও ক্ষতি নেই, মানিয়ে যাচ্ছে বেশ। যে ছেলেটি বা মেয়েটি ফিটিং শেপের ড্রেস পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেই ছেলেটি বা মেয়েটিও একটি লুজ ফিটিংয়ের জার্সি গায়ে জড়িয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর মাপ মতো পেলে তো কথাই নেই। জার্সির আরামদায়ক ফেব্রিক সারা দিনেও অস্বস্তির কারণ হয় না। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ উপলক্ষে চলছে বিশেষ ছাড়ও।

ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনায় উত্তাল এখন ফ্যাশন হাউসগুলোতেও। ফুটবলের উচ্ছ্বাস দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড সাতকাহনের ঘরেও। স্বত্বাধিকারী নুরুন্নাহার নীলা জানান, ‘আমরা এবার একটু ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা থেকেই কটি ও লং শার্টগুলোতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার পতাকার ছাপ রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষজন যারা কিনছেন তাদের ভিতরে তরুণরাই বেশি।’ আর ফ্যাশনের সব অনুষঙ্গেই স্থান পাচ্ছেন জমজমাট আয়োজনের নানা আমেজ। এই তালিকায় যুক্ত হয়ে বাড়তি আমেজ তৈরি করেছে জেন্ডার নিউট্রাল সোয়েটার। বছর কয়েক আগেও ফুটবলপ্রেমীদের কাছে উন্মাদনার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল জার্সি পরিধান। এবার বিশ্বকাপ ফ্যাশনে জার্সির পাশাপাশি যোগ হয়েছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টুপি, মগ, বাহারি পতাকা, হুডি, টি-শার্ট, টপস, চাদর, ঘড়ি, চশমা, ব্যাসলেটসহ নানা কিছু। বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, জার্সির সঙ্গে মিল রেখে বানানো লুঙ্গি। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানির লুঙ্গি পরে প্রিয় দলের সমর্থন জানান দিচ্ছেন সমর্থকরা। তাই তো পছন্দের দলের জেতার আগেই সবাই মাত হয় ‘যে যার মতো সাজো’- আয়োজনের মতো-  সংস্কৃতিতেও।

বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই জার্সি কেনার হিড়িক লেগেছিল ফুটবল ভক্তদের মাঝে। বাংলাদেশে বেশির ভাগ ফুটবল অনুরাগীদের মনোযোগের কেন্দ্রে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। সঙ্গে অন্যান্য দেশও আছে, তবে তাদের সংখ্যা কম। যেমন- জার্মানি, স্পেন ও পতুগালের জার্সির চাহিদাও রয়েছে অনেক। বিশ্বকাপ নিয়ে হাসি-তামাশা, রঙ-তামাশা, ফ্যাশন-ফিউশন চলবেই। সঙ্গে জমবে তর্ক-বিতর্ক। এসবের মধ্যে উদযাপনটাই মুখ্য। কারণ, যার দল যা-ই হোক, দিন শেষে ফুটবলের সমর্থক সবাই।

লিখেছেন : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর