শিরোনাম
বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাল-চাদরের উষ্ণতা

শাল-চাদরের উষ্ণতা

পোশাক ও ছবি : রং বাংলাদেশ

তরুণীর পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে শীতের সঙ্গী হয়ে উঠেছে শাল। উষ্ণতার পাশাপাশি ফ্যাশন অনুষঙ্গ শালের কদর বেড়ে চলেছে দিন দিন। শীতে মানানসই একটি শাল ব্যবহার করাও এখনকার ট্রেন্ড। সেই ফ্যাশনে তরুণীর সঙ্গে পিছিয়ে নেই তরুণরাও...

সময়টা এখন এমন যে, নিজের আগ্রহ হোক বা অন্যের দেখাদেখি হোক ফ্যাশন করাটাই মুখ্য। সে জন্য হালকা বা ভারি শীতে শাল এখন সব সময়ের সঙ্গী। ইতিহাস বলে, শীতবস্ত্র হিসেবে চাদরের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। সে সময় রাজা-মহারাজা ও অনেক অভিজাত শ্রেণিতে শালের ব্যবহার চলত। তখনকার মানুষ কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন বাহারি কারুকাজ করা বিখ্যাত কাশ্মীরি শাল। আবার যাদের আর্থিক সংগতি কিছু কম ছিল তারাও এই চাদরের উষ্ণতার আরাম থেকে বাদ যেতেন না। তীব্র শীতের হাত থেকে রেহাই পেতে গায়ে জড়িয়ে নিতেন মোটা ধরনের চাদর। হালকা বুননের পশমি শালেও সে সময় শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতেন মানুষ। শুধু শীতের পোশাক হিসেবেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও আজকের প্রজন্মের কাছে চাদরের রয়েছে আলাদা কদর। নগরীতে শীত যত জেঁকে বসছে, শীত অনুষঙ্গ চাদর-শালের কদরও ঠিক ততটাই বাড়তে শুরু করেছে। তরুণীরা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, স্কার্ট সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে পরছেন হাল ফ্যাশনের এসব শাল। বিভিন্ন রং, নকশা, কাটিং, ডিজাইন সব বয়সি নারীর সঙ্গে মানিয়েও যায় বেশ। শীতের হাত থেকে বাঁচতে গায়ে শাল জড়িয়ে চলাফেরা করায় যে আরাম তা অন্য শীত পোশাকে নেই বললেই চলে। তাই শীতে তরুণ-তরুণীদের কাছে শালের গুরুত্বই আলাদা। সেকাল থেকে একাল-শীত ফ্যাশনে শালের কদর ঊর্ধ্বগামী বলাই চলে। বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণী উভয়ের কাছেই শালের কদর লক্ষণীয়। ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন শীতের ফ্যাশন হিসেবে চাদর ব্যবহার করেন।

শীতের সকাল কিংবা বিকাল কুয়াশায় মোড়া চারপাশ। এ সময় চাই চাদরের উষ্ণতা। শুধু উষ্ণতা ছড়ানোর জন্যই না, শাল উপযুক্ত অনুষঙ্গ হিসেবেও। আবালবৃদ্ধ সবারই পছন্দ শাল। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে শাল ফ্যাশনে আনবে বৈচিত্র্য। পাশাপাশি মিলবে উষ্ণতাও...
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে শীত ফ্যাশনের শালও হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল আইকন। আর এখনকার শীত উৎসবে শালের রং আর ডিজাইনে আনা হয়েছে নানা রকম পরিবর্তন। হালকা শীতে পাতলা একটা শাল কিংবা চাদর ছেলেমেয়ে উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। এখনকার পাতলা চাদরগুলোর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়, চাইলে একে মাফলার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

শীতে মেয়েদের ফ্যাশনে চাদর আনে ব্যতিক্রমী লুক। এমনিতেই বাঙালি নারীকে শাড়িতেই বেশি মানায়। সব ঋতুতেই বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ শাড়ি। যে কোনো পার্টি বা গেট টুগেদারে তারা শাড়ি পরতে ভালোবাসেন। সময়ের পালে এখন জায়গা করে নিয়েছে জমকালো বা ফ্যাশনেবল নানা নান্দনিক ডিজাইনের শাড়ি। তবে শীতের সময় শাড়ি পরে ঠান্ডায় টিকে থাকা সত্যিই কষ্টকর। এ জন্য চাই মানানসই এমন পোশাক যা দিয়ে দুই কাজ হবে। কর্মজীবী নারীরা যারা শাড়ি কিংবা থ্রি-পিস পরেন তারা পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চাদর ব্যবহার করতে পারেন। থ্রি-পিসের সঙ্গে ওড়না হিসেবে এটা বেশ মানানসই। তবে ঢাকা শহরে শীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত কয়েক বছর হালকা বা পাতলা শাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। হালকা শীতে এই শালগুলো যেমন আরাম দেয়, তেমনি বহন করতেও সুবিধা। অনেকে ওড়নার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন নানা রং আর ডিজাইনে তৈরি শাল।

শীতের ফ্যাশনে ছেলেরাও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। ফ্যাশনে তাদেরও চাই ভিন্ন মাত্রা। তাই শার্ট, টি-শার্ট এবং পাঞ্জাবি যাই হোক না কেন, একটা বাহারি শাল পরে নেন। চাদরের রঙের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয় নীল, খয়েরি, কফি, মেজেন্টা, বাদামি, অফ হোয়াইট ইত্যাদি। চমৎকার বুনন আর ডিজাইনে তৈরি করা হয় নজরকাড়া এসব চাদর বা শাল। দেশি শালের মধ্যে বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। বেয়ারা শীতকে বশ করতে খদ্দর বা উলের মোটা চাদর বেছে নিতে পারেন। সিল্ক, খাদি, পশমি সুতা, মোটা সুতি ইত্যাদি কাপড়ের ওপর কাজ করা হচ্ছে। এসবের বাইরেও বিদেশি শাল লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানি শালও হতে পারে আপনার শীতের সঙ্গী। কাশ্মীরি শালের মধ্যে পশমিনা শাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নেপাল থেকেও পশমিনা সংগ্রহ করেন কেউ কেউ। এখন দেশেও তৈরি করা হচ্ছে এই শাল।

এবারের শীতে পাতলা কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। কারণ, শীত এবার খুব বেশি নয়। বেশি শীতের জন্য থাকছে উলেন কাপড়ের শাল। সুতা, চুমকি, পুঁতি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্কেচ, কাশ্মীরি শাল ও জরির কাজ করা শাল তো আছেই! থাকছে বাহারি রকমফের সেলাই ও নকশার কারুকাজ।

বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে রয়েছে এর আলাদা চর্চা। দেশি-বিদেশি এসব শালের মধ্যে মেয়েদের জন্য করা হয়েছে আলাদা নকশা। সাধারণত মেয়েরা ফুল, পাখির নকশা বা বিভিন্ন রঙের সুতায় নকশা করা শাল পছন্দ করেন। দেশি ফ্যাশন হাউস রং বাংলাদেশ, দেশাল, নিত্য উপহার, আড়ং, দেশীদশ, বাংলার মেলাসহ অন্যসব হাউসে মিলবে বাহারি শাল। কাপড় আর ডিজাইনের ভিন্নতায় শালের দামও ভিন্ন ভিন্ন। পছন্দসই শাল পেয়ে যাবেন ১২০০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। তাছাড়া ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর বিভিন্ন শপিংয়ে সাশ্রয়ী দামে পেয়ে যাবেন বাহারি শাল-চাদর।

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর