বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বর্ণমালার পোশাক

বর্ণমালার পোশাক

► পোশাক ও ছবি : কে ক্রাফট

বর্ণমালা, মমতায় মাখা এক অব্যক্ত আবেগ। বাঙালির অহংকারের আরেক নাম একুশ। তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলোও তাদের পোশাকের জমিনে ফুটে তুলেছে আলপনা, বর্ণমালা, শব্দ আর মাতৃভাষার ইতিহাস। ভাষার মাসের বিশেষ রং হিসেবে সাদা আর কালো আমাদের ভাবনার জগতজুড়ে আছে।  সেই সঙ্গে মানাবে ছাই রং বা অ্যাশ অফ হোয়াইটও...

 

বাংলা মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। বায়ান্নতে রক্ত দিয়ে কিনতে হয়েছে বাংলা ভাষাকে। যার আবেগ মিশে আছে আমাদের চেতনা ও সংস্কৃতিতে। সেই বাংলা বর্ণ ও শব্দমালার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে পোশাকে; নানা রঙে নানা ঢঙে।

 

বাঙালির যা কিছু অহংকারের, একুশ তার একটি। আর বাংলা বর্ণমালা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। একুশের প্রধান বিষয় হচ্ছে শোকের সঙ্গে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো। এটি বৈশাখ বা অন্য দিবসের মতো নয়, এটি ভাবগম্ভীর বিষয়। সেটিকে বোঝাতেই কালো সংযুক্ত হয়েছে। আর সাদার অর্থ হচ্ছে শুদ্ধতা ও শ্রদ্ধা। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের দিনেও আমরা সাদা পোশাকের ব্যবহার দেখেছি। তখন থেকেই শুদ্ধ সাদা। এর সঙ্গে শোক যুক্ত হয়েছে। এ দুটো রং ছাড়া একুশকে কোনোভাবেই বোঝানো সম্ভব নয়। আর যেহেতু আমাদের আত্মত্যাগ আর লড়াই ছিল ভাষার জন্য, সেহেতু ভাষা ও বর্ণমালা এখানে অনেক বেশি সংযুক্ত।

 

একুশে ফেব্রুয়ারির দিন পোশাকে রং-ঢঙে থাকে শোক ও প্রতিবাদের ভাষা। পোশাকের জমিনে ফুটে ওঠে মাতৃভাষার বর্ণমালা অ আ ক খ। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও বুটিকগুলো একুশের চেতনা নিয়ে তৈরি করছে নতুন নতুন ডিজাইনের বর্ণমালার পোশাক। রং, কাপড় এবং ডিজাইন সবকিছুতেই রয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা। ফলে পোশাকে বর্ণমালার ব্যবহার যেন বাঙালির চেতনারই অংশ। পোশাকের ক্যানভাসে রচিত নানা রং ও ডিজাইনের মোটিভে সেজেছে দেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো।

 

পোশাকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য

শোক, শ্রদ্ধা ও গৌরবের দিনটির নানা আয়োজনের সঙ্গে একুশের দৃঢ় চেতনা অনেক আগের। দিনটিকে ঘিরেই থাকে নানা আয়োজন। ভাষার প্রতি বাঙালির ভালোবাসা, একুশের মাধ্যমে উঠে আসে লেখায়, রেখায় এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনে; পোশাক-আশাকে। ১৯৮২ বা ৮৩ সালে বর্ণমালার নকশা দিয়ে পোশাক ডিজাইন করেছিলেন ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্র শেখর সাহা। শাড়ি, শার্ট ও পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করেছিলেন বাংলা বর্ণমালা। ধীরে ধীরে পোশাকের জমিন ভরে উঠছে বর্ণমালায়। জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা বাংলা কবিতা, গান বা একুশের স্লোগান দিয়ে করেছেন পোশাকের নকশা। শহীদ মিনার, মানচিত্র, পতাকাসহ একুশের নানা চিত্রের প্রকাশ ঘটে পোশাকে। এখনো চলছে সেই ধারা।

 

রঙের বৈচিত্র্য

রং দিয়েও প্রকাশ করা যায় অনুভূতি। তাই তো একুশের পোশাকের রঙের ব্যবহারেও আছে নানা ফিউশন। পবিত্রতা আর পরিপূর্ণতা- সাদা রঙের পাশাপাশি আছে শোক ও প্রতিবাদের রং কালোর ব্যবহার। তবে এখন আর দুটি রঙে আবদ্ধ নেই একুশের পোশাক। এখন একুশের পোশাকে রয়েছে সর্বজনীন রঙের ব্যবহার। সাদা ও কালো রঙের আধিক্যতার পাশাপাশি আছে অ্যাশ, অফ হোয়াইট, লাল, সবুজ, হলুদ, নীল তামাটেসহ সব রঙের সমাহার।

 

পোশাকের নকশা

একুশে পোশাকের জমিনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গর্বিত বর্ণমালার সাজ। বিশেষ দিবস উপলক্ষে পোশাকে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারিতে করা হয়েছে জমিন অলঙ্করণ। ভালোবাসাকে সারাক্ষণ শরীরে জড়িয়ে রাখতে তাই দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোরও চেষ্টার অন্ত নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশি বুটিক হাউসগুলো তাদের পোশাকে নিয়ে আসছে ভাষার মাসকে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলেন, ‘পোশাকে কালো রঙের ব্যবহার কারণ বাংলা বর্ণমালা আমরা কালো কালিতে লিখি, আবার শোক হিসেবেও কালো রং ব্যবহার করি। একুশের ইতিহাস রক্তক্ষয়ী ইতিহাস তাই লাল আসে। আর শুদ্ধতার প্রতীক সাদা রংকে সমতল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একুশের আয়োজনে মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, আনস্টিচ, সিঙ্গেল ওড়না, ব্লাউজ তো আছেই! পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, ফুলহাতা ও হাফহাতা শাট, টি-শার্ট, পোলো-শার্ট এবং উত্তরীয়। শিশুদের জন্য আছে একুশের পোশাক। নকশিকাঁথা ফোঁড়, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারিতে করা হয়েছে জমিন অলংকরণ। এই মাধ্যমগুলোতে ভ্যালু এডিশনের পর প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনকে মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে নানা অনুষঙ্গে সাজিয়ে। প্যাটার্ন ভেরিয়েশনে রয়েছে দেশি ঐতিহ্যের ছাপ। সাদাকালোর সমন্বয়ের পোশাকের কাপড়ে সুতির প্রাধান্য থাকলেও তাঁত, মসলিন, সিল্কের ব্যবহারও অনেক।

সর্বশেষ খবর