বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

উৎসবের ঐতিহ্য শাড়ি

উৎসবের ঐতিহ্য শাড়ি

মডেল : পূর্ণিমা বৃষ্টি ♦ ছবি : মুনতাকিম ♦ মেকওভার : পারভেজ ♦ পোশাক : বর্ণন লাইফস্টাইল

বাজার ঘুরে দেখা গেল শুধু রং আর নকশাতে নয়, শাড়ির উপাদানেও থাকছে নতুনত্ব। এ বছর শাড়ির জমিনজুড়ে নানানরকম কাজ- এ ধরনটা কিছুটা কম, বরং পাড়  আর আঁচলজুড়ে থাকছে ভরাট কাজ...

আদিকাল থেকে বাঙালি রমণীদের উৎসব মানে শাড়ি। ট্রেন্ড যেমনই হোক- নানা ঋতুর পালাবদলে শাড়ির ঐতিহ্যে বুঁদ হয়ে থাকেন- ষোল থেকে ষাট, সব বয়সী নারীই। তাই তো বলা হয়ে থাকে- উৎসব মানেই বাঙালি রমণীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। আর ঈদ হলে তো কথাই নেই। তরুণী থেকে গৃহিণী- সবার অন্তত একবেলা হলেও শাড়ি পরা চাই-ই। ঈদ, পূজা-পর্বণ- আমেজ যাই হোক সকাল, দুপুর ও রাতে; তিন বেলার সাজে রমণীরা। সকালের শাড়ি একটু হালকা ও রাতের শাড়িটা একটু জাঁকজমক পরে থাকেন।

শাড়িতে নারীদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণে। অনেক সময় ছোটরাও বড়দের দেখে বায়না ধরে শাড়ি পরার। সারা বছর আত্মীয়-স্বজনদের যা-ই উপহার দেন না কেন, উৎসব উপলক্ষে শাড়ি সেই জায়গাটা দখল করে রাখে। উৎসবের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। তবে এখনকার তরুণীরা জমকালো শাড়ি পরতে খুব একটা পছন্দ করছে না। রুচিশীল মার্জিত ডিজাইনের শাড়ি পরতে বেশি পছন্দ করছে। হালকা রং থেকে শুরু করে গাঢ় রং পরছে অনেকেই। উৎসব মানেই তো নতুন সাজ পোশাক। তার সঙ্গে মিলিয়ে গয়না পরা।

ঐতিহ্যবাহী শাড়ির কদর রয়েছে বেশ। তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে জামদানি, কাতান, মসলিন, তসর, সিল্ক শাড়ি রয়েছে পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়াও অনেকেই ঠিক করে রেখেছেন পরবেন এন্ডি, মটকাসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। শাড়ির কাজের মধ্যেও রয়েছে নতুনত্ব। সুতি শাড়িও পরবেন অনেকেই। যেহেতু ঈদের মধ্যে গরম থাকবে তাই সুতি শাড়ির কদর রয়েছে। উৎসব ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের শাড়ি ছাড়া মানানসই লাগে না। ঈদ উৎসবে নির্দিষ্ট রঙে বাঁধা পোশাক পরার চল তেমনটা হয় না। তার পরও ঈদের শাড়িতে কোন কোন রং বেশি আনা হবে, তা নিয়েও এখন রীতিমতো গবেষণা করা হয়। নানান রং সমাহারে সাজিয়ে তোলা হয় উৎসবের শাড়িগুলো। রং হিসেবে উঠে আসছে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, সাদা, গোলাপি। একরঙা শাড়ির সঙ্গে সেই রঙের প্রিন্ট বা সুতার কাজ এখন বেশ চলছে। আবার একরঙা শাড়ির সঙ্গে অন্য রং কন্ট্রাস্ট করে তৈরি করা হচ্ছে শাড়ি। চওড়া পাড়ের শাড়ি এ সময়ে অনেকে পরছেন। আবার দুই তিন লেয়ারের চওড়া পাড় শাড়িও পরছেন অনেকে।

বাহাড়ি রং কাজ করা শাড়ি উৎসবের সঙ্গে মানিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলো। সিল্ক শাড়িতে হাতের কাজ, কাঁথা স্টিচ করা কাজ বেশ চলছে। এ ছাড়াও ব্লক প্রিন্ট করে তার মধ্যে হালকা সুতার কাজ করে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে শাড়ি। অ্যামব্রয়ডারি করা শাড়িও নিয়ে এসেছে নতুনত্ব। তবে মসলিন শাড়ির ওপরে অ্যামব্রয়ডারির কাজ ও তাতালের কাজ মন কাড়া। এক দেখাতেই পরতে মন চাইবে সবার। অনেকে আবার ভারী কাজ করা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। তারা নির্দ্বিধায় পরতে পারেন কাতান শাড়ি। কাতান শাড়ির জমকালো কাজেও হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। যারা খুব হালকা কাজের মধ্যে শাড়ি পরতে চান তাদের জন্য রয়েছে নানান ধরনের শাড়ি। তসরের শাড়িতে হয়ে উঠতে পারেন সবার চাইতে আলাদা। হালকা কাজের মধ্যে তসর শাড়ি বেশ জনপ্রিয় সবার। মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্পনাও করা হয় ঈদ উপলক্ষে। নকশা হিসেবে উঠে এসেছে লতাপাতা, ফুল, বিভিন্ন ধরনের আল্পনা।

শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ মিলিয়ে পরার ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ আগ্রহ থাকে। শাড়ির সঠিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারে মানানসই ব্লাউজ। বিভিন্ন বুটিকসে ভিন্ন কাটিংয়ে হাতে ও গলায় কাজ করা সেলাই ছাড়া ব্লাউজের কাপড় চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে। আজকাল অনেক তরুণী ট্রেন্ডি লুক আনতে ট্র্যাডিশনাল ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরেন না। ক্রপটড, শার্ট, টপ, টি-শার্টকে শাড়ির সঙ্গী করে নিচ্ছেন তারা। তবে এলিগ্যান্ট লুক আনতে রাতের পার্টিতে শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন জ্যাকেট। গরমের জন্য যারা জ্যাকেটকে এড়িয়ে যেতে চান, তারা বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন, সঙ্গে রাখতে পারেন রকমারি বাকলস।

 

প্রয়োজনীয় টিপস...

♦  গরমে হালকা শিফন, সেমি সিল্ক, জর্জেটের শাড়ি পরতে পারেন। সুতি শাড়ি পরলেও তা যেন নরম কাপড়ের হয়।

♦  গরমের সময় উজ্জ্বল রঙের শাড়ি বেছে নেওয়া ভালো। এটিই বেশি মানানসই। রঙের মধ্যে লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি, বেগুনি, নীল রঙের শাড়ি বেছে নিতে পারেন।

♦  গরমে সুতো, জরি, চুমকির ঝাপটানো কাজ করা শাড়ি পরবেন না। এসব শাড়িতে গরমে আপনি অস্বস্তিবোধ করবেন।

♦  বাঙালি নারীর প্রিয় জামদানি শাড়ি। গরমে কোনো অনুষ্ঠানে যেতে জামদানি শাড়ি হতে পারে সেরা পছন্দ। ফুলপাতার নকশায় নানান রঙের জামদানি শাড়ি পাওয়া যায়। সূক্ষ্ম সুতোর কাজ করা এই শাড়িতে নিজের ব্যক্তিত্বও ফুটে ওঠে।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর