শিরোনাম
বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বর্ষায় যেমন পরিচর্যা

বর্ষায় যেমন পরিচর্যা

মডেল : টুম্পা, ছবি : মনজু আলম

বর্ষায় ত্বকের খেয়াল রাখা সহজ নয়। কিন্তু এই মরসুমেই ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ত্বক সারাক্ষণ চিটচিটে হয়ে থাকে। অস্বস্তি বাড়ে। ত্বকের হালও বেহাল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যা তো আছেই! যা সর্বদা কপালে ফেলে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তবে সমস্যা যাই হোক, সমাধানের উপায় একটিই, ত্বকের যত্ন নেওয়া। জেনে নিন কীভাবে নেবেন ত্বকের যত্ন...

বছরের সারাটা সময়ই ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনো সময়ই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করা উচিত নয়। রোদের ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি কম সময় থাকলেও তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। একটি বিষয়ে সবার খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার।

বর্ষায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ব্রণের আক্রমণও বাড়ে। মুখের ত্বক তৈলাক্ত হওয়া ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ব্রণ পেকে ফুসকুড়ির মতো হয়ে পড়তে পারে
♦ তৈলাক্ত ত্বক : অবশ্যই পানির মাত্রা বেশি অর্থাৎ ওয়াটারবেজড সানস্ক্রিন বাছাই করা উচিত। সানস্ক্রিনের এসপিএফ অবশ্যই ৩০ মাত্রার অধিক ব্যবহার করবেন।

♦ শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক : রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে। এসপিএফ ৩০ মাত্রার অধিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

♦ সাধারণ ত্বক : ৩০ থেকে ৫০ এসপিএফ মাত্রার সানস্ক্রিন ভালোভাবেই কাজ করে। এতে করে ত্বক একটু ঘেমে গেলেও সানস্ক্রিন ত্বকে ভালোভাবেই থাকবে।

তবে হ্যাঁ, সানস্ক্রিন কেনার আগে অবশ্যই ভালো করে মেয়াদ উত্তীর্ণের সময় দেখে নেবেন। অনেকের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। যেসব সানস্ক্রিন ক্রিমে অক্সিবেঞ্জোন, রেটিনাইল পালমিটেট এবং প্যারাবেন্স জাতীয় উপাদান রয়েছে, সেসব সানস্ক্রিন এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এই উপাদান ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

 

যা যা করতে পারেন

♦ সারা বছর ফেসওয়াশ ব্যবহার না করলেও বর্ষায় কিন্তু করতেই হবে। কারণ বর্ষা মরসুমে ত্বকের প্রতিটি কোষে তেল জমে থাকে। সেগুলো জমে থাকতে থাকতে অনেক সময় ব্রণ, র‌্যাশ বেরোয়। তাই বর্ষায় ফেসওয়াশ মাখতে যেন ভুল না হয়।

♦ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বর্ষায় নিয়ম করে ব্যবহার করুন শিট মাস্ক। শীতের মতো বর্ষায়ও ত্বকে টান ধরে। ত্বকে তেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তৈলাক্ত ভাব কমাতে শিট মাস্ক বেশ উপকারী।

♦ বর্ষায় বেশি করে পানি খাওয়া প্রয়োজন। বেশি করে পানি পান করলে ত্বক ভিতর থেকে সতেজ দেখায়। আলাদা করে কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বর্ষা মৌসুমে ত্বকের পরিচর্যায় সহজ পাঁচটি উপায় সম্পর্কে অক্সিগ্লো কসমেটিক্স’য়ের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাচিত গুপ্তা পরামর্শ দেন...

সঠিক উপায়ে পরিষ্কার : বাতাসের আর্দ্রতা এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই ত্বক পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। এ সময় আবহাওয়া রুক্ষ থাকে। তাই সাবানহীন ‘ফেসওয়াশ’ ব্যবহার করা উচিত। তবে তা হতে হবে ত্বকের সঙ্গে মানানসই। যেমন- তৈলাক্ত ত্বকে ‘অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ’।

সব ঋতুতে টোনার : বর্ষাকালেও টোনার ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটি ত্বকের লোমকূপ সংকুচিত করে, ত্বকে অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে রাসায়নিক উপাদানমুক্ত প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টোনার ব্যবহার করুন।

বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, ভ্যাপসা গরম, মাথায় ঘাম, ভেজা চুল প্রভৃতি কারণে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, ছত্রাক বাসা বাঁধে। তা থেকে ত্বকে প্রদাহ, চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া সহ নানা রকম প্রদাহ দেখা দেয়

সানস্ক্রিন বাদ না দেওয়া : বর্ষাকালে সূর্যের তাপ কম থাকলেও অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। তাই এই মৌসুমেও সানস্ক্রিন ব্যবহার এড়ানো যাবে না। অ্যালোভেরা ও গাজর সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য উপকারী।

মেকআপ ব্যবহারে সতর্কতা : আর্দ্রতা, তাপ, ঘাম ও বৃষ্টি ইত্যাদি একসঙ্গে ত্বকের ক্ষতি করে। এর মধ্যে ত্বকে ভারী মেকআপ ও দীর্ঘক্ষণ ত্বকে মেকআপ রাখা ত্বকের শ্বাস গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই হালকা মেকআপ ব্যবহারে সতেজ অনুভূত হবে।

প্রয়োজন বাড়তি যত্ন : নিয়মিত ত্বক পরিচর্যার পাশাপাশি আবহাওয়ার প্রকোপ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে মাঝেমধ্যে বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন। ত্বকের প্রয়োজন বুঝে চারকোলের ফেইস প্যাক, মধু, পেঁপের স্ক্রাব প্যাক, ল্যাকোরিচ মাড প্যাক, ডি-ট্যান ফেইসপ্যাক বা মাস্ক ব্যবহার ত্বককে সতেজ ও টানটান রাখে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। ত্বক হয় সতেজ।

 

চুলের যত্ন

অন্যান্য ঋতুতে যদি কারও প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৮০টি চুল পড়ে, বর্ষায় সেটি বেড়ে আরও বেশি হয়ে যায়। ফলে খুশকি, চুলপড়াসহ চুলের নানা সমস্যা বেড়ে যায়। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনেকের চুল সহজে শুকায় না। ফলে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে অতিরিক্ত চুল পড়ে। রইল কয়েকটি পরামর্শ..

♦ গোসলের পরপরই ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নেওয়া।

♦ বর্ষার মৌসুমে অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা।

♦ রোদে খোলা চুলে বাইরে গেলে সান-প্রটেক্টর ক্রিম ব্যবহার করা।

♦ রোদে বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করা বা ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে রাখা।

♦ প্রতিদিন পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলেও একদিন পরপর শ্যাম্পু ব্যবহার করা।

♦ মাথার ত্বকে শ্যাম্পু এবং চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা।

♦ মাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার চুলে তেল ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে এসেনশিয়াল তেল হলো- সবচেয়ে ভালো পাথেয়।

এ ছাড়া এ সময় চুলের যত্নে ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- মেথি, অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা মাথার ত্বক ও চুলের জন্য দারুণ কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন-ই মাথার ত্বক পরিচর্যার জন্য আদর্শ এক উপাদান।

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর