শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

কিউপিড

কিউপিডকে সবাই প্রেমের দেবতা হিসেবেই চেনে। গ্রিক পুরাণ অনুসারে দেবতা কিউপিডের তীরের আঘাতেই মানুষের মনে প্রেমের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। নিষ্পাপ মুখশ্রী আর সোনালি চুলের এ দেবতা তার স্বর্গীয় ধনুক থেকে তীর বর্ষণ করে মানব আর মানবীর দুটি হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দেয়। ফলে তারা একে অন্যের কাছাকাছি চলে আসে এবং তাদের মধ্যে তৈরি হয় দারুণ প্রেম। ফর্সা হৃষ্টপুষ্ট এক শিশু এক হাতে ধনুক, অন্য হাতে তীর পিঠে কল্পনার সাদা ডানা মুখে অনাবিল এক স্বর্গীয় হাসি 'ভ্যালেন্টাইনস ডে'র সৌজন্যে 'কিউপিড' এর এ চেহারা এখন বিশ্বব্যাপী সবার কাছেই পরিচিত। প্রায় দুই হাজার বছর আগের গ্রিক দেবতা 'অ্যারেস'ই রোমান শিল্পীদের হাতের গুণে হয়ে উঠেছে 'কিউপিড'। যদিও ভালোবাসার দেবতা কিউপিডের নিজের জন্ম ইতিহাসটি নিয়েই গ্রিক ও রোমান পুরাণে বিতর্ক রয়েছে। কারও কারও মতে, কিউপিডের জন্ম হলো মারকারি আর ভেনাসের ওরসে। এ ছাড়া কারও মতে, মূলত মার্স ও ভেনাসের স্বর্গীয় কোলেই প্রথম হেসে ওঠে কিউপিড। আবার আরেকটি মত অনুসারে প্রেম ও সৌন্দর্যের অনিন্দ্যসুন্দরী দেবী আফ্রোদিতির পুত্র ছিলেন অ্যারেস। যিনি প্রেম, কামনা ও যৌনতার দেবতা। অনেকের মতে, তার না ছিল জন্মদাতা, না ছিল জন্মদাত্রী। একই সঙ্গে দেবতা ও মানব ছিলেন তিনি। সুদর্শন উড়ন্ত অ্যারেসের হাতে থাকত ধনুক আর পিঠে তীর, দুই রকমের অনেক তীর তার- সোনালি তীরে পায়রার ও অন্যটিতে পেঁচার পাখনা। তীর বিদ্ধ কেউ সর্ব প্রথম যা দেখবে সামনে তার প্রেমেই পড়ে যাবে। অনেকে মনে করেন, অ্যারেস হলো সে যে জন্ম হয়ে আলোর জন্ম দেয়।

সে সময় একজন রাজার তিন মেয়ের ভেতর ছোট মেয়েটি ছিল ভীষণ রূপবতী, নাম ছিল সাইকি। তার যশ ও রূপের খবর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ল এবং অনেক লোক তাকে পূজা করতে আসতে থাকল। এদিকে দেবী আফ্রোদিতির ভক্ত ও অভ্যর্থনাকারীর সংখ্যা গেল কমে। এতে আফ্রোদিতি হিংসায় পুড়তে থাকল, সিদ্ধান্ত নিল তার পুত্র অ্যারেসের সাহায্য নিয়ে তিনি সাইকিকে হেয় করবেন। তিনি অ্যারেসকে বললেন, ঘুমন্ত সাইকিকে তীর মেরে তার সামনে সবচেয়ে ঘৃণিত ও বাজে পশু যেমন শূকরকে রাখত, যাতে করে ঘুম থেকে উঠে সাইকি শূকরের প্রেমে পড়ে। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর অ্যারেস রাজি হলো, মায়ের কথা মতো চলে গেল ঘুমন্ত সাইকির ঘরে। কিন্তু তীর নিক্ষেপের সময় সাইকির ঘুম ভেঙে গেল। হতচকিত অ্যারেসের বাহুতেই অসাবধানতায় বিঁধে গেল তীর, পরিণতিতে সাইকির গভীর প্রেমে পড়লেন স্বয়ং অ্যারেস। প্রেমের মাত্রা এত বেশি ছিল যে তীরের আঘাতে এমন তীব্র প্রেমে পড়েনি কেউ আগে।

প্রেমে কাতর অ্যারেস ফিরে এসে সব কিছু খুলে বলল আফ্রোদিতিকে। আফ্রোদিতি ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন এবং অভিশাপ দিলেন_ যদিও সবাই তার রূপে মুগ্ধ হবে কিন্তু কেউ তাকে স্ত্রী হিসেবে নেবে না। সেই সঙ্গে ইরৌসকে সাইকির থেকে দূরে থাকতে বলল। এর পর নানা ঘটনায় শেষমেশ সাইকি আর অ্যারেসের মিলন হয়। সাইকি লাভ করেন অমরত্ব।

সর্বশেষ খবর