শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

হার্মাফ্রোদিতাস

হার্মাফ্রোদিতাস

হার্মাফ্রোদিতাস ছিলেন গ্রিক পুরাণের আরেক আলোচিত চরিত্র। তিনি ছিলেন মায়াবী চেহারার একজন দেবতা। হার্মাফ্রোদিতাসের বাবার নাম হার্মেস এবং মায়ের নাম আফ্রোদিতি। আফ্রোদিতি ছিলেন সৌন্দর্য, প্রেম ও যৌনতার দেবী। আর হার্মেস ছিলেন দেবদূত। হার্মাফ্রোদিতাস তাদের অবৈধ সন্তান এবং তাদের দুজনের নাম মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখা হয়েছিল। ছোটবেলায় জল-পরীরা হার্মাফ্রোদিতাসের দেখাশোনা করত। তারা থাকত ফ্রাইজিয়ার পবিত্র ইডা পর্বতের একটা গুহায়। আর এ গুহাতেই কেটে যায় হার্মাফ্রোদিতাসের শৈশব আর কৈশোর। তিনি যখন ১৫ বছরের কিশোর, তখন এক দিন বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবলেন। এখানে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছিল তার। পাশের লাইসিয়া ও কারিয়া শহরে ঘুরতে গেল হার্মাফ্রোদিতাস। ঘুরতে ঘুরতে হালিকার্নাসাসের পাশের শহর কারিয়ার বনে এসে পেঁৗছালেন তিনি। সেই বনে বাস করত ঝর্ণাপরী সালমাসিস। সেই ঝর্ণা ছিল সবুজ ঘাস, রঙিন ফুল আর পাখির কলকাকলীতে পূর্ণ এক স্বর্গীয় আবহে ঢাকা। সেদিন সালমাসিস শিকার করতে না গিয়ে ফুল তুলছিল ঝর্ণার পাশেই। অপূর্ব মোহনীয় কিশোর হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখেই তার প্রেমে পরে গেল সালমাসিস। সে হার্মাফ্রোদিতাসকে ভালোবাসা এবং কামনার কথা জানালো। কিন্তু কিশোর হার্মাফ্রোদিতাস এর কিছুই করতে রাজি হলেন না। এমনভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাগে-দুঃখে অপমানিত হয়ে সালমাসিস দৌড়ে বনে চলে গেল। আসলে এটা ছিল তার একটা ভান মাত্র। অদূরেই একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে সে হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখছিল। এদিকে হার্মাফ্রোদিতাস ভাবল আপদ দূর হয়েছে। ঝর্ণার স্ফটিক স্বচ্ছ জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করল তার। সে জলের দিকে এগিয়ে গেল। পা ভিজালো কোমল জলে। শরীর থেকে একে একে সব কাপড় খুলে ফেলল। হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখে সালমাসিস আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। পিছু পিছু সেও ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝর্ণার জলে। সালমাসিস চাইছিলেন হার্মাফ্রোদিতাসকে নিজের করে কাছে পেতে। কিন্তু হার্মাফ্রোদিতাস চাইছিলেন দূরে সরে যেতে। এতে সালমাসিসের বুক ভেঙে যাচ্ছিল। সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করে প্রার্থনা করল, 'হে ঈশ্বর, আমাদেরকে চিরদিনের জন্য এক করে দাও। আমাদের দুটি শরীর মিলিয়ে দাও।'

ঈশ্বর কৌতুক বোধ করলেন এবং সালমাসিসের প্রার্থনা পূরণ করে দিলেন। দুজনের শরীর একত্র করে দিলেন। নারী ও পুরুষ দেহ মিলিয়ে একটি শরীর করে দিলেন। হার্মাফ্রোদিতাস নিজের শরীরে এই আকস্মিক পরিবর্তন দেখে তার বাবা-মাকে স্মরণ করল। বাবা-মায়ের কাছে প্রার্থনা করল, কেউ যদি এই ঝর্ণার জলে স্নান করে সেও যেন তার মতো হয়ে যায়। এভাবে সালমাসিস তার ভালোবাসার মানুষ হার্মাফ্রোদিতাসের। হার্মাফ্রোদিতাস মেয়েলী হয়ে গেল। তার শরীরে নারী-পুরুষ উভয়ের অঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য দেখা দিল। তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের উৎপত্তি এভাবেই হয়েছে বলে দাবি করে গ্রিক পুরাণ। সে হিসেবে হার্মাফ্রোদিতাস হলো মানব জাতির ইতিহাসে প্রথম হিজড়া।

 

 

সর্বশেষ খবর