বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

পেত্রা

পেত্রা

পেত্রা। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি। পাথুরে এই কাঠামো যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিস্মিত করে আসছে। পেত্রা মূলত একটি প্রাচীন আরব শহরের ধ্বংসাবশেষ। এটি রয়েছে বর্তমান জর্ডানের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রাম ওয়াদি মুসার ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে।

এই নগরীকে ঘিরে নানা গবেষণা চলেছে। এখনো থেমে নেই তা। নিত্যনতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে সেসব গবেষণা থেকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পেত্রা নগরী মূলত একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত দুর্গ। এটি বিখ্যাত এর অসাধারণ সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। এটি তৈরি হয়েছে গুহার মধ্যে। এর কোনো কোনো স্থান মাত্র ১২ ফুট চওড়া। মাথার ওপরে পাথরের দেয়াল। গুহার পাশেই রয়েছে কঠিন পাথরের দেয়ালের গায়ে গ্রথিত সেই প্রাচীন দালানগুলো যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'খাজনেত ফেরাউন' নামের মন্দিরটি। মন্দিরটি ফারাওদের ধনভাণ্ডার নামেও পরিচিত। আরও রয়েছে অর্ধগোলাকৃতির একটি নাট্যশালা। এ নাট্যশালা এতটাই সুপ্রশস্ত যে, সেখানে প্রায় তিন হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারে। পেত্রার চারধারে একসময় উঁচু পাহাড় ছিল। শুধু তাই নয়, এসব পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসত স্বচ্ছ জলের ঝরনাধারা। পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত পেত্রা।

তবে পেত্রা প্রাচীনকালে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে রোমান শাসনের সময়। তখন সমুদ্রকেন্দ্রিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটার কারণে পেত্রায় যাতায়াত বাড়ে মানুষের। কিন্তু খুব বেশি দিন টিকে থাকেনি এই নগরী। অনেকেই দাবি করেন, ৩৬৩ সালে এক ভূমিকম্পে এর দালানগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায় এর পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা। এতেই ইতি ঘটে এই গোছানো নগরীর। তবে বহু বছর অজানা থাকার পর ১৮১২ সালে এই প্রাচীন শহরটিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে উন্মোচন করেন সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ বুর্খার্দত। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো পেত্রাকে 'বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান' ঘোষণা করে। ঘোষণায় বলা হয়, মানব সভ্যতার ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পেত্রা সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। পেত্রা সংস্কৃতি, সম্পদ আর ক্ষমতায় একসময় যে খুব সমৃদ্ধ ছিল। পেত্রার ধ্বংসাবশেষ থেকে এর শক্ত প্রমাণ মিলে। সব মিলিয়ে এখনো পেত্রা মানব সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন।

 

 

সর্বশেষ খবর