প্রাচীন রোম। আকাশ, তারা ও চন্দ্রের দেবী ছিলেন নাট। পৃথিবীর অধিপতি গ্যাবের পত্নী সে। তাদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। মিথ দাবি করে রিও নামক এক জ্যোতিষী তাকে অভিশপ্ত করেছিল। যে কারণে তার সন্তান ছিল না। এ নিয়ে মনে দুঃখ ছিল তার। সন্তানের জন্য নাট দ্রোহের কাছে গিয়েছিল। দ্রোহ জানতেন ঠিক কী কারণে জোতিষী রিও তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। পরবর্তীতে দ্রোহ নাটের সন্তান কামনায় গেলেন চাঁদ ও খড়ার দেবতা কোনসুর কাছে। কোনসু রিও অভিশাপ তুলে দেয়। এরপর আসে সুখের দিন। নাটের উদরে একে একে জন্ম নেয় ওসিরিস, দ্বিতীয় সন্তান ডার্ক সিথ, তৃতীয় কন্যা সন্তান আইসিস, চতুর্থ সন্তান হিসেবে জন্ম নিল নেপসিস। আইসিস ও ওসিরিসের সময়ে মিসরের সভ্যতা তখনো বিকশিত হয়নি। সে সময় হানাহানি, হত্যা, লুণ্ঠন, খুন ছিল সাধারণ ব্যাপার। দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা ছিল মিসরবাসীর নিত্যসঙ্গী। জনগণের কল্যাণের জন্য আইসিস নতুন ধরনের ফসল চাষের উদ্ভাবন করেন। ওসিরিসের সহায়তায় আর আইসিসের মেধায় জনগণ নতুন পদ্ধতির ফসল উৎপাদন করল। দূর হয়ে গেল মিসরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা। শুধু তাই নয়, ওসিরিস ও আইসিস জনগণের জন্য তৈরি করলেন আইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক মৈত্রীর জন্য গির্জা ও মন্দির। মিসর সভ্য জাতিতে পরিণত হলো। আইসিস ও ওসিরিস সবার মধ্যমণি হয়ে উঠলেন। কিন্তু তাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠল সিথ। একপর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নিল আইসিস ও ওসিরিসকে হত্যা করবে। কিন্তু ওসিরিসের ভাই শয়তানের দেবতা সিথের চক্রান্ত টের পেয়ে আইসিস সব সময় সতর্ক থাকতে বলল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সিথ তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন ওসিরিসকে। ভাইয়ের অনুরোধে একজন সঙ্গীসহ ওসিরিস সিথের প্রাসাদে গেল। সিথ ওসিরিসের সম্মানে নৈশভোজ নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করেন। প্রথম পরিকল্পনায় সিথ হত্যা করতে পারে না ওসিরিসকে। এরপর পরিকল্পনা পাল্টালো সে। নীল নদের উপকূলে যখন ওসিরিস সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করে তখনই শয়তান সিথ ওসিরিস ও তার সঙ্গীকে সিন্দুকের মধ্য পুরে নীল নদে ভাসিয়ে দেয়। নীল নদের পানিতে ভাসতে ভাসতে দেবতা ওসিরিস পিউনিসিয়ার ব্যাবলস শহরের সমুদ্র বন্দরে এসে পৌঁছে। খবরটি রাজা ম্যান কিলারভার ও রানীর কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। তারা দেবতা ওসিরিসের লাশ ও সিন্দুক অতি যত্নের সঙ্গে সংগ্রহ করে। এ খবর আইসিসের কানেও পৌঁছায়। স্বামীর শোকে শোকাহত আইসিস পিউনিসিয়ায় পৌঁছে ওসিরিসের মৃতদেহ গ্রহণ করে। প্রতিশোধের নেশায় জ্বলতে থাকে আইসিস ও তার ছেলে হোরুজ। আইসিস ছিল অসম্ভব সুন্দরী, ম্যাজিশিয়ান ও ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তিনি ওসিরিসের দাফন না করিয়ে মৃতদেহকে গভীর রাতে নীল নদের উপকণ্ঠে এনে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। হঠাৎ আকাশ থেকে আলোকোজ্জ্বল্য আভা এসে মৃতদেহের ওপরে ঠিকরে পড়লে মুহূর্তেই জীবিত হয়ে যায় ওসিরিস। মৃত পিতাকে জীবিত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় হোরুজ। আবেগে আপ্লুত হয় আইসিস। দেবতা ওসিরিস ছেলে হোরুজকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে শয়তান সিথের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয় উভয়পক্ষের। প্রাণ হারায় সিথ। সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যায় সিথের। ওসিরিস হয়ে ওঠে মিসরীয় দেবতা আর আইসিস দেবী। হোরুজ হয় মিসরীয় রাজা। অনেকেই দাবি করেন মিসরের সর্বশেষ সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা নিজেকে আইসিসের মানবী সংস্করণ এবং মার্ক অ্যান্টনিকে ওরিসিসের মানব সংস্করণ।