শিরোনাম
বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিউ ইয়র্কের ভুতুড়ে দ্বীপ

তানভীর আহমেদ

নিউ ইয়র্কের ভুতুড়ে দ্বীপ

নিউ ইয়র্ক সিটি। আমেরিকার প্রাণকেন্দ্র বলা যায়। ঝলমলে এক শহর। আধুনিকতায় ঢাকা এই শহরটিতে হঠাৎই খুঁজে পাওয়া গেল এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মানববসতি নেই সেখানে। চমকে উঠতে হবে এই দ্বীপের সুনসান নীরবতায়। ব্রাদার আইল্যান্ড নামে পরিচিত এই দ্বীপকে ঘিরে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। কী হয়েছিল এ দ্বীপের যে মানুষজন দ্বীপটিকে ছেড়ে চলে গেল? অনেকেই বলেন মহামারির আক্রমণে জনমানুষশূন্য হয়েছে দ্বীপটি। একদল মানুষ আবার একটু বাড়িয়ে বলেন। তাদের মতে অদৃশ্য আত্দার উৎপাতে মানুষ ছেড়েছে এই দ্বীপ। ব্রাদার আইল্যান্ডের বয়স খুব বেশি নয়। ১৮৮৫ সালের দিকে এই দ্বীপে মানুষের চলাচল ছিল। তখন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে রোগীকে সরিয়ে আনা হতো এই দ্বীপে। নির্জন এই দ্বীপে গড়ে তোলা হয় একটি হাসপাতাল। স্মলপঙ্ ও টাইফয়েডের চিকিৎসা দেওয়া হতো এখানে। চিকিৎসা চলাকালীন অনেক রোগীই এখানে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। তাদের মৃত্যুই এই দ্বীপকে অভিশপ্ত করে তুলেছে বলে মানেন অনেকে। সেই থেকে এ দ্বীপের প্রতি মানুষের কৌতূহল ও ভীতি দুটোই বেড়ে চলে। অনেকে এই দ্বীপকে মৃত্যুপুরী বলে মানতেন।  বিশ্বাসীদের দল বলতেন, মৃতের আত্দারা এ দ্বীপের নির্জনতা লুকিয়ে রয়েছে। রাতের অাঁধারে এরা জেগে ওঠেন, মানুষের প্রাণ হরণ করে। এই মিথ ছড়িয়ে গেলে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করে। এক সময় দ্বীপটি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে মানুষেরা। হাসপাতালটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বসানো হয়। তখন হেরোইন আসক্ত মানুষের চিকিৎসা চলত এখানে। তাদের পাগলামি দেখে অনেক চিকিৎসকই পালিয়ে বেঁচেছেন এই দ্বীপ থেকে। এরপর থেকেই এই দ্বীপকে নিয়ে মুখরোচক একেক গল্প বেরিয়ে আসতে থাকে। যারা এই দ্বীপে ছিলেন তাদের বর্ণনায় বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক একেক ঘটনা। প্রেতের সাক্ষাৎ পাওয়ার দাবিও করেন অনেকে। অশুভ আত্দার ভয়ানক সব কর্মকাণ্ডের গল্পগুলো শুনে সাধারণের মনে ভয় আরও বাড়তে থাকে। প্রেতের দ্বীপ বলে দ্বীপটি কুখ্যাতি ছড়ায় এক হেরোইন আসক্ত ব্যক্তির কথায়, যাকে চিকিৎসার জন্য এই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতে মৃত মানুষের চলাফেরা তো ছিলই সেই সঙ্গে ছিল তাদের রাতভর কান্না। দ্বীপের আনাচে-কানাচে জ্বলত আগুন। দ্বীপটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হতো বুঝি স্বপ্নপুরী কিন্তু এর ভেতরে ঢুকলে সবুুজ গাছের নিচে অন্ধকারে ডুবে যেতে হতো। এই অন্ধকার পেরিয়ে দ্বীপে চলাচলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া ছিল কঠিন। অনেকেই ভুল রাস্তায় হেঁটে ক্লান্ত হয়ে ঢুকে পড়তেন পাথুরে গুহায়। অবাক শোনালেও কথিত আছে এ দ্বীপের পাথুরে গুহাগুলো কেবল অন্ধকারেই মুখ খুলে বসে থাকত। যখন কেউ এ গুহায় ঢুকত অমনি বন্ধ হয়ে যেত গুহার মুখ। এদের পরিণতি কী হতো তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না। এমন অনেক মানুষ হারিয়ে গেছে এই দ্বীপে।

এ দ্বীপটি মানুষ ফেলে চলে যায় ১৯৬৩ সালের দিকে। কিন্তু হাসপাতালটি সেখানে সে অবস্থাতেই ছিল। মাদকাসক্তদের বসতবাড়ির ও আসবাবপত্র ্বএখনো আগের মতোই রয়েছে। ১৯৭০ সালের দিকে দ্বীপটি বিক্রি করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এই দ্বীপটি কিনতে কেউই আগ্রহী হয়নি। এমন অভিশপ্ত আর ভুতুড়ে দ্বীপ কিনে কে অভিশাপের ভার নিতে চায়? তারপর থেকে এতদিন আর কোনো মানুষ এ দ্বীপে যাওয়ার সাহস করেনি। তাই কয়েক দশক ধরে দ্বীপটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল।

এদিকে নিউ ইয়র্ক বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। এ দ্বীপের কথা অনেকেই ভুলে বসেছেন। বিশ্বের সেরা স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিকায়ন নিয়ে মাথা উঁচু করেছে নিউ ইয়র্ক। ব্রাদার আইল্যান্ড হঠাৎ করেই আলোচনায় আনেন এক শখের পর্যটক। তিনি পথ ভুলে পেঁৗছে যান এই দ্বীপের কাছে। তারপর তুলে আনেন একের পর এক বোমা ফাটানো ছবি। দ্বীপের ভেতরের চিত্রগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহী হন এ দ্বীপের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে। কিন্তু পর্যটক খুব বেশি বলেননি। কোনো এক অজানা কারণে দ্বীপের রহস্য তিনি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেননি। কৌতূহলী মানুষজন খোঁজ নিতে গিয়ে টের পেল এটা সেই অভিশপ্ত ভুতুড়ে দ্বীপ ব্রাদার আইল্যান্ড। এতদিন এই দ্বীপ যেন মানুষের মনের বাইরে ছিল। হঠাৎ কী মনে করে এ দ্বীপ আবার নিজের অস্তিত্বের জানান দিল তা নিয়ে অনেক গুজব শুরু হয়। যারা প্রেত ও আত্দা নিয়ে গবেষণা করেন তারা কিন্তু খুব সুবিধার চোখে দেখছেন না বিষয়টিকে। তাদের মতে দ্বীপটি আবার ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছে। মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য অভিশপ্ত আত্দারা জেগে উঠেছে। দ্বীপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে এখন অনেকেই হয়ত ছুটবেন এ দ্বীপে আর তাদের গিলে নেবে দুর্ভাগ্য। পর্যটকের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে দেখা গেছে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের কয়েকটি দেয়ালে গুলির দাগ রয়েছে। কীভাবে এগুলোর চিহ্ন এলো তা এক রহস্য তৈরি করেছে।

 

সর্বশেষ খবর