বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশে দেশে মানব পাচারচিত্র

দেশে দেশে মানব পাচারচিত্র

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড মানব পাচারের শক্তিশালী এক রুট। এখান দিয়ে মানুষ পাচার হয় ও অনুপ্রবেশ ঘটে। মানব পাচারের শক্তিশালী এই রুটে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরা বিভিন্ন দেশের অবৈধ মানুষ থাইল্যান্ডে ঢুকতে যেমন সাহায্য করে তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধ পাচারের ব্যবস্থা করে থাকে। পাচারকালে অসহনীয় নির্যাতন ও নির্মমতার বহু ঘটনার জন্ম ঘটেছে এই রুটে। তবু থেমে নেই মানব পাচার। থাইল্যান্ডে পাচারকৃত নারীদের যৌনকাজে বাধ্য করা ও অবৈধ নাগরিকদের স্বল্প বেতনে দিনমজুর হিসেবে কাজ দেওয়া হয়। তবু এই রুটে মানুষের যাতায়াত কমেনি। দেশে থাকতে ভালো কাজের লোভ ও বেশি বেতনের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। থাইল্যান্ডে পাচারকৃত মানুষদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে এদের বেশির ভাগই গৃহহারা, বাস্তুহারা, সংখ্যালঘু। ধর্মীয় উত্তেজনায় নিরাপত্তা হারানো ও অবৈধ অভিবাসীদের তালিকাও এখানে বেশ লম্বা। থাইল্যান্ড গত কয়েক বছর ধরেই মানব পাচারের রুটের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। গেল কয়েক বছরে এর কোনো উন্নতি তো হয়নি বরং মানব পাচারের ঘটনা আরও বেড়েছে। এ নিয়ে উন্নত দেশগুলো থাইল্যান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছে। থাইল্যান্ডে পাচার হয়ে মানুষরা অবর্ণনীয় জীবনযাপন করে। পাচারকৃত মানুষদের জঙ্গলে তাঁবু গেড়ে থাকতে দেওয়া হয়। ঠিকমতো তিনবেলা খাবারও দেওয়া হয় না। অবাধ্যদের মেরে ফেলার ঘটনা এখানে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

 

মালয়েশিয়া

মানব পাচারের জন্য মালয়েশিয়ার ভূমিকা নিয়েও কঠোর সমালোচনা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। ুটিয়ার-৩ ক্যাটাগরির এ দেশটি মানব পাচার রোধে খুবই দুর্বল ভূমিকা পালন করছে। মালয়েশিয়াতে উন্নত জীবনের আশায় বিভিন্ন অনুন্নত দেশের পুরুষ, নারী ও শিশুদের পাচার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে এদের স্বল্প বেতনের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ যেমন ক্লিনার, রাজমিস্ত্রির কাজ মেলে। নারী ও শিশুদের জোরপূর্বক যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এসব কারণে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে উঠেছে আরও ভয়াবহ। গত কয়েক বছরে পাচার হওয়া ২ লাখ মানুষের এখনো কোনো ঠিকানা নেই ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছরই অসংখ্য বাংলাদেশি পাচার হয়ে থাকে মালয়েশিয়ায়। পাচার হওয়ার পেছনে লম্বা ও শক্তিশালী একাধিক চক্র বিভিন্ন দেশে তাদের এজেন্ট কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার আশা দিলেও বাস্তবে সেখানে পৌঁছানোর আগেই মাঝপথে মারা পড়েন অনেকে। যারা প্রাণে বেঁচে পৌঁছেও যান তারা শহরে ঢুকতে পারেন না সঠিক কাগজপত্র না থাকায়। লুকিয়ে বনে জঙ্গলে কাটাতে হয় সময়। কোনো আবাস পেলে সেখানে থাকতে হয় বন্দী।

 

সিরিয়া

২০১১ সাল থেকে সিরিয়ান সরকার মানব পাচারের শক্তিশালী চক্রের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু যেখানে সরকার ব্যবস্থারই স্থিতিশীলতা নিয়ে উত্তেজনা সর্বত্র সেখানে মানব পাচার রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেই বলে মনে করে মানব পাচার নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। টিয়ার-৩ তালিকাভুক্ত এ দেশটিতে গত কয়েক বছরে মানব পাচার নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে গেছে। অবস্থা হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। ইতিমধ্যে দেশটিতে ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু সেই ভয়াবহতার চিত্রই ফুটিয়ে তোলে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাগাম ছাড়া হয়ে উঠেছে মানব পাচার। সিরিয়ায় মানব পাচার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা। এ ছাড়া সিরিয়ার সীমান্ত ব্যবহার হয়ে থাকে মানব পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে। ফিলিপাইন, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে মানুষ এখানে পাচার হয়ে আসে, নয়তো এই রুট ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে থাকে। দুবাইয়ে যাওয়ার রুট হিসেবেও এখন সিরিয়ার বিপজ্জনক সীমান্ত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সহজ শ্রম ব্যবহার করার জন্য এই রুটে পাচারকারীরা নারী, পুরুষ ও শিশুদের পাচার করে থাকে।

 

লিবিয়া

সাব-সাহারান অঞ্চল থেকে পাচার হওয়া মানুষদের জন্য উল্লেখযোগ্য রুট লিবিয়া। লিবিয়া সরকারের দুর্বল সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে এই রুটে পাচার বেড়েই চলেছে। টায়ার-৩ ক্যাটাগরির এ দেশটিতে পুরুষদের জোরপূর্বক স্বল্প বেতনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া নারী ও শিশুদের দিয়ে করানো হয় পতিতাবৃত্তি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানব পাচারবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো সরব হয়ে উঠলেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। ২০১১ সাল থেকে এ অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে। এ ছাড়া দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণেও আশপাশে দেশগুলোর সীমান্ত ব্যবহার করছে পাচারকারী চক্র। দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের পাচার হয়ে থাকে এ রুটে। এই মানুষগুলো পাচার হচ্ছে সাব-সাহারান দেশগুলোতে। আফ্রিকান অঞ্চলে পাচার হওয়া মানুষগুলোর গল্প হয়ে ওঠে নির্মম। এদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। এক পোশাকেই কাটাতে হয় মাসের পর মাস। রাতে ঘুমানোর জায়গা নেই। কাটাতে হয় বন্দীদশা। পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে এই পাচারকৃত মানুষগুলোকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখার ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। ২০১২ সালের পরিসংখ্যানে সিরিয়ার কারাগারে ৮,৩০০ বন্দী ছিল যারা পাচার হয়ে যাওয়ার পথে ধরা পড়েছে। তাদের বয়ান থেকে জানা যায়, বড় বড় চক্র এই মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাচার হওয়া শিশুদের বিদ্রোহী দলের হয়ে লড়াইয়ে নাম লেখানোয়।

 

সর্বশেষ খবর