বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভাসমান বিস্ময়

তানভীর আহমেদ

 

মহাসমুদ্রে মসজিদ

সমুদ্রের নীল ঢেউয়ে ভাসমান মসজিদের মিনার আর নামাজ আদায়রত মুসলি­দের দেখে বিস্মিত হতে চাইলে যেতে হবে মরক্কো। বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান এ মসজিদটি তৈরি করেছেন ক্লাসাবাঙ্কা শহরে। এর নকশা তৈরি করেছিলেন বাদশা হাসানের ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনচিউ। মসজিদটির তিনভাগের একভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত। দূরের কোনো জাহাজ থেকে দেখলে মনে হয়, ঢেউয়ের বুকে মসজিদটি দুলছে। এখানে প্রায় ১ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। এর মিনারের উচ্চতা ২০০ মিটার। আর মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ৬৫ মিটার। মসজিদের ছাদটি প্রতি ৩ মিনিট পরপর যান্ত্রিকভাবে খুলে যায়। ফলে মসজিদের ভেতরে প্রাকৃতিক আলো ও সমুদ্রের খোলা বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ২২.২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ মসজিদের মূল ভবনের সঙ্গেই আছে লাইব্রেরি, কোরআন শিক্ষালয়, ওজুখানা এবং কনফারেন্স রুম। এ মসজিদের ভিতরের পুরোটাই টাইলস বসানো। কোথাও কোথাও সোনার পাত দিয়ে মোড়া হয়েছে। মসজিদ এলাকায় রয়েছে ১২৪টি ঝরনা এবং ৫০টি ঝাড়বাতি। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ও কারুশিল্পীর দিনে দুই শিফট শ্রমের ফলে প্রায় সাত বছরে নির্মিত হয় এ মসজিদ। এটি নির্মাণে খরচ হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

 

 

 ২৫তলা ভাসমান শহর

ভবিষ্যতের শহর মাটিতে নয়, সমুদ্রের বুকে স্থান করে নেবেÑ এমনটাই পরিকল্পনায় রেখেছেন স্থাপত্যবিদরা। জমির সীমাবদ্ধতা জানান দিয়েছে এবার পানির ওপর দৃষ্টি দিন। আর সেটাই হতে যাচ্ছে। পানির ওপর ভাসমান শহর নির্মাণের চ‚ড়ান্ত পরিকল্পনার খবর প্রকাশ পায় বিশ্ব মিডিয়ায়। বিশ্বের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ভাসমান শহর বানানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক একটি কোম্পানি। ২৫ তলা বিশিষ্ট এই শহরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রিডম শিপ’। একটি বৃহদাকার জাহাজের আদলেই এই মিনি শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা। একটি আদর্শ শহরে যা যা প্রয়োজন তার সবই থাকবে এখানে। খেলার মাঠ, হাসপাতাল, স্কুল, পুলিশ স্টেশন, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট সবই। আর শহরের বসবাসকারীদের জন্য বাড়ি তো বটেই। এই মিনি শহরের আয়তন ব্রিটেনের কুইন মেরি টু জাহাজের চারগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাসমান শহরে স্থায়ীভাবে বাস করবে ৪০ হাজার বাসিন্দা। ২৫ তলাবিশিষ্ট বিশাল এই ভাসমান শহরটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি ডলার। ২৭ লাখ টন ওজনের একটি জাহাজ সদৃশ হবে এটি। যে কারণে এই ভাসমান শহরটি সমুদ্রে এক জায়গায় স্থির থাকবে না। প্রতি দুই বছরে একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। চাইলে এটি থামবে বিশ্বসেরা বড় শহরগুলোতে। ভাসমান শহরটিতে ২০ হাজার ক্রু ছাড়াও স্থায়ী বাসিন্দা থাকবে ৪০ হাজার। তবে বাইরে থেকে প্রতিদিন বাড়তি ৩০ হাজার দর্শনার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া ১০ হাজার অতিথির জন্য রাতযাপনেরও ব্যবস্থা থাকবে। এটি নির্মাণকাজ শুরুর জন্য ১০০ কোটি ডলার সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ভাসমান শহর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপক‚ল থেকে জুন মাসে যাত্রা শুরু করে ইউরোপের উদ্দেশে আটলান্টিক পাড়ি দেবে। ইউরোপে তখন থাকবে গ্রীষ্মকাল। এরপর স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, এরপর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে জিব্রাল্টার হয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়বে। বড়দিনের সময়টায় তারা থাকবে আফ্রিকার উত্তর উপক‚লে। জানুয়ারিতে যাবে উত্তমাশা অন্তরীপ। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া, এরপর এশিয়া হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপক‚লে পৌঁছবে। জাহাজটির প্রতি দুই বছরের যাত্রার ৭০ ভাগ সময় অবশ্য নোঙর করা অবস্থায়ই কাটবে।

 

বিশ্ব মডেল ভাসমান বিদ্যালয়

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা সুপরিচিত। ‘শিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’র প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রেজওয়ান এমনই একটি সাধারণ নৌকার রূপ পাল্টে দিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ভাসমান বিদ্যালয়’। এই ভাসমান বিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণীকক্ষ, গ্রন্থাগার, প্রশিক্ষণের স্থান এবং চিকিৎসাসেবা। শুধু তাই নয়, এই ভাসমান বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ সৌরচালিত। যে কারণে  বন্যা কবলিত এবং বন্যাপ্রবণ প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে এই ভাসমান বিদ্যালয় থেকে। এ স্কুলে কম্পিউটারসহ, আধুনিক শিক্ষাপোযোগী সরঞ্জাম দ্বারা সুসজ্জিত। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার পরিবারের শিশুরা আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় ভাসমান স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করছে। ২২টি স্কুলে ১,৮১০ জন শিশু পড়াশোনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্লোভানিয়ার মতো উন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে যুক্ত হয়েছে এই স্কুল। বলা বাহুল্য, এই ভাসমান স্কুলের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই ভাসমান বিদ্যালয় এখন বিশ্ব মডেল। এই ভাসমান স্কুল নিয়ে খ্যাতিমান তথ্যচিত্র নির্মাতা গ্লেন বেকার নির্মাণ করেছেন তথ্যচিত্র ‘ইজি লাইক ওয়াটার’।

 

ফাইভস্টার হোটেল

দামি হোটেলে যারা রাত কাটান বা কোনো কাজে থামতে হয় তাদের জন্য রীতিমতো বড় একটি চমক ‘দি মান্তা রিসোর্ট’। পাঁচ তারকা হোটেলের তকমা পাওয়া এই রিসোর্টটি শুধু পানির ওপরে ভেসেই বেড়ায় না চাইলে পানির নিচেও আপনাকে নিয়ে যাবে। চাইলে সামুদ্রিক মাছেদের সঙ্গী করে ডিনারটাও সেরে ফেলতে পারবেন। তবে হাঙর এসে বাগড়া দেবে না নিশ্চিন্ত থাকুন। এই রিসোর্টটি তৈরি হয়েছে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়াতে। হোটেলটির চার পাশে রয়েছে মাছ ও পানি। এ ছাড়া প্রবাল প্রাচীরের সমারোহ। সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এর চেয়ে ভালো বিস্ময় আর নেই। আফ্রিকাতে পানির নিচে তৈরি হওয়া এটিই প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল। এ হোটেল ডিজাইন করেছেন দি আটার ইন নামের সুইডিশ প্রতিষ্ঠান যারা একই ধরনের আরেকটি ভাসমান হোটেল সুইডেনে তৈরি করেছেন। রিসোর্টটি নিকটবর্তী সমুদ্র তীর হতে প্রায় ২৫০ মিটার বা ৮০০ ফুট দূরে যার পানির নিচে রয়েছে ৪০ ফুট। ভেতরে রয়েছে ১৭টি কক্ষ। হোটেলটির সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এর পানির নিচের বেডরুমসমূহ। এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত থাকতে খরচ হবে বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রায়।

 

বিলাসবহুল ভাসমান বাড়ি

ভাসমান বাড়ি কল্পনার বিষয় নয়। আপনি চাইলে আজই কিনে নিতে পারেন ভাসমান বাড়ি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ভাসমান বাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইতালিয়ান স্থপতি জিয়ানকার্লো জেমা পানির ওপর বাড়ি তৈরির যে নকশাগুলো করেছেন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘ওয়াটার নেস্ট-১০০’। এ ধরনের বাড়ি মিলবে হ্রদ বা নদীর ওপর। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ছোট একটি পরিবারের জন্য এই ভাসমান বাড়িতে রয়েছে দুটি বেডরুম, লিভিং রুম, রান্নাঘর, গোসলখানা ও বারান্দা। এ বাড়িতে চার সদস্যের একটি পরিবার বেশ আয়েশেই থাকতে পারে। বিশাল গোলাকার এ বাড়ির মডেলটির ব্যাসার্ধ ৩৯ ফুট। বারান্দাসহ এক হাজার ৭৬ বর্গফুটের বাড়িটি ১৩ ফুট উঁচু। স্থপতি জেমার বাসায় ভাসমান এ বাড়িটি আসলে জলজ পাখির বাসার আদলেই নকশা করেছেন। ভাসমান এ বাড়ি ইচ্ছে হলে অর্ডার দিয়েও বানাতে পারেন। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইকোফ্লোলাইফ কোম্পানি এ ধরনের ভাসমান বাড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ করে থাকে। বাড়ির দাম পড়বে বাংলাদেশি টাকায় চার কোটি ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা থেকে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন অর্ডার দিলে এক বছরের মতো সময় লাগবে এটি নির্মাণ করতে।

 

পর্যবেক্ষণাগার

নির্মিত হয়েছে ভাসমান পর্যবেক্ষণাগার। এটি মূলত মহাকাশের গ্রহ ও তারকারাজি নিয়ে গবেষণার। বিশ্বের প্রথম ভাসমান পর্যবেক্ষণাগার নির্মাণ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বৃহদাকারের একটি বিশেষ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের (টেলিস্কোপ) সমন্বয়ে তৈরি এই পর্যবেক্ষণাগার। এটির দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ওজন ১৭ টন এবং ব্যাস আট ফুট। এটি স্থাপন করা হয়েছে পরিবর্তিত একটি যাত্রীবাহী বিমানের (বোয়িং ৭৪৭) ওপরে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘স্ট্র্যাটোসফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি’ (এসওএফআইএ)।

ভাসমান এই পর্যবেক্ষণাগার বা বিশেষ বিমানটি সাত হাজার ৬২৪ মাইল এলাকায় টহলরত অবস্থায় আকাশে টানা ১২ ঘণ্টার বেশি অবস্থান করতে সক্ষম। এসওএফআইএ এমন সব তথ্য পাঠাতে সক্ষম, যা স্থল বা মহাকাশের অন্য কোনো পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র বা উপকরণের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি এমন একটি ভ্রাম্যমাণ পর্যবেক্ষণাগার, যার সাহায্যে সুপারনোভা ও ধূমকেতুর মতো স্বল্প সময় স্থায়ী মহাকাশের বস্তুও শনাক্ত করা যাবে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি জার্মান মহাকাশকেন্দ্রের (ডিএলআর) সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

 

ম্যানহাটনের হাডসন নদীতে নয়নাভিরাম পার্ক

নিউইয়র্ক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণের শহর। আর সেই নিউইয়র্কের পরিচয় করিয়ে দেয় হাডসন নদী। সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিউইয়র্কের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। হাডসন নদী কেন বাদ যাবে। হাডসন নদীর ওপরে ভাসমান পার্ক, পারফর্মেন্স স্পেস, সবুজে ঢাকা ওয়াকওয়ে, রাতের আঁধারে নদীর বুকে একটুকরো রঙিন আলোর ছোট শহর। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ম্যানহাটনের এই ভাসমান পাবলিক পার্ক যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। ১৩০ থেকে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই ভাসমান পার্কের সচিত্র খবর আসে বিজনেস ইনসাইডারে। নিউইয়র্কের ইতিহাসে পাবলিক ডোনেশনে এত বড় অঙ্ক খরচের পাবলিক পার্ক এটিই প্রথম। ভাসমান পার্ক বলা হলেও এটি রীতিমতো স্টেডিয়াম হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ২০১৯ সাল নাগাদ এই ভাসমান পার্ক ও স্টেডিয়ামের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। এই ভাসমান স্টেডিয়ামে যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের খরচ সাধারণ থিয়েটারের চেয়ে খুব বেশি হবে না। পায়ার ফিফটি ফাইভ নির্মাণে দ্য সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে মিলবে ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া আলাদাভাবে নিউইয়র্ক স্টেট থেকে পাওয়া যাবে আরও ১৮ মিলিয়ন ডলার। গোটা পার্কটি নদীর বুকে এমনভাবে বসানো হবে যেন দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি ভাসছে। ওপর থেকে দেখতে এটি আলোর ফুলকির আদলে হবে। নদীর পাশ থেকে মূল সড়ক থেকে একটি সেতু ধরে এখানে আসতে হবে। উঁচু উঁচু কংক্রিটের পিলারের ওপর গোটা পার্কটি বসানো হবে। হারিকেন স্যান্ডি আঘাত হানার পর এর ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। প্রায় ৩০০টি কংক্রিটের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই পার্কটিতে সবুজের সমারোহ রাখা হবে। এই পার্ক ও স্টেডিয়ামটির নকশা প্রণয়নে শুরু থেকেই স্থাপত্যবিদদের লক্ষ্য ছিল এটি যেন স্বপ্নময় কিছু হয়। নিউইয়র্কে ভাসমান এমন একটি পার্ক ও স্টেডিয়াম সারা বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে সেটাই প্রত্যাশা।

 

‘জীবনতরী’

বাংলাদেশেই রয়েছে ভাসমান হাসপাতাল। এর নাম জীবনতরী। গোটা একটি হাসপাতাল নিয়ে ছুটে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েই এটি গড়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা এবং পঙ্গুত্বরোধের জন্য ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এটি চালু করে। বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ভাসমান হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। দেশের প্রধান প্রধান নদীর কাছের মানুষ, যারা শহর বা নগরে যেতে পারছে না তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ‘জীবনতরী’ ভাসমান হাসপাতালটি সাধারণ চিকিৎসা এবং শল্য চিকিৎসা দুই ধরনেরই স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সেবা প্রদান করে। ‘জীবনতরী’ জলে ভেসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রোগীদের প্রায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জরুরি অপারেশন করে থাকে।

 

ভাসমান স্বর্গদ্বীপ

ভাসমান স্বর্গদ্বীপ। বাক্যটা শুনেই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন এটি শুধু একটি বাড়ি বা শহর নয়। গোটা একটি দ্বীপ। সাধারণত সমুদ্রের বুকে উঁকি দেওয়া দ্বীপগুলোকে দূর থেকে দেখলে ভাসমান বলেই মনে হয়। এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই ভাসমান দ্বীপ নিয়ে যদি মহাসমুদ্রে ইচ্ছেমতো চলাচল করা যায় কেমন হবে? আর সে ভাবনা থেকেই স্বর্গদ্বীপ। ধনকুবেরদের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যক্তিগত ভাসমান একটি দ্বীপ এটি। ব্যক্তিগত এই দ্বীপ নিজেই চলতে পারবে এবং বিশ্বের যে কোনো সমুদ্রের যে কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই স্বর্গদ্বীপে একটি পেন্ট হাউস যেখানে বসে আপনি চারদিকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ৮০ মিটার দীর্ঘ এলিভেটর দিয়ে পেন্ট হাউসে ওঠা যায়। রয়েছে জঙ্গলময় একটি ডেক যাতে কৃত্রিম জলপ্রপাত রয়েছে। হেলিকপ্টার নামানোর জন্য রয়েছে একটি হেলিপ্যাডও। আধুনিক সব সুবিধা যেমন, স্পা, জিম, বিউটি স্যালুন, বার এবং একটি সুইমিং পুল রয়েছে এই ভাসমান দ্বীপে। দ্বীপটিতে একটি ঊর্ধ্বমুখী বাগান এবং পাম গাছ ও ফুলের পাশাপাশি সবুজের সমারোহ। ব্যক্তিগত ইয়ট নির্মাতাদের পরিকল্পনায় রয়েছে এ ধরনের স্বর্গদ্বীপ।

 

বিমানবন্দর

শিল্পনৈপুণ্যের উদাহরণ হলো, জাপানের ক্যানসাই ভাসমান বিমানবন্দর। প্রকৌশলীদের দৃঢ়তায় সমুদ্রের উপরেই ভাসমান বিমানবন্দর তৈরি করা হয়। ১৯৮৭ সালে শুরু হয়। প্রথমে সমুদ্রের মধ্যে পাথর ফেলে দেয়াল তোলা হয়। নির্মাণের শুরুতে প্রায় আট মিটার সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল। চার কিলোমিটার লম্বা ও আড়াই কিলোমিটার চওড়া ভাসমান ক্যানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় ১৯৯৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সেই থেকে এ বিমানবন্দরে সপ্তাহে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা করে ৬১৪টি, মালবাহী বিমান ২০০টি এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের সংখ্যা ৪৯৩। এ বিমানবন্দরটির টার্মিনাল প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার লম্বা। এ টার্মিনালটির ছাদ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সামুদ্রিক ঝড় এর ক্ষতি করতে না পারে। ১৯৯৪ সালে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে একটি টাইফুন বিমানবন্দরটির ওপর দিয়ে বয়ে যায়। ১৯৯৫ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে বিমানবন্দরের একটি কাচও ভাঙেনি। ২০০১ সালে ‘দ্য আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স’ একে ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং মনুমেন্ট অব দ্য মিলেনিয়াম’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

 

স্টেডিয়াম

সিঙ্গাপুরের মেরিনা উপসাগরে নির্মিত হয়েছে ভাসমান স্টেডিয়াম। অবিশ্বাস্য শোনালেও গোটা একটি স্টেডিয়াম ভেসে রয়েছে জলের ওপর। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভাসমান স্টেডিয়াম এটি। এই স্টেডিয়াম লম্বায় ১২০ মিটার ও চওড়া ৮৩ মিটার। ভাসমান এই স্টেডিয়ামে শুধু খেলাই নয়, কনসার্ট, প্যারেড, প্রদর্শনী আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ইস্পাতের তৈরি এ স্টেডিয়াম একবারে বইতে পারে এক হাজার সত্তর টন ওজন। অর্থাৎ ৯ হাজার মানুষ। স্টেজ বানানোর জন্য ২০০ টন আর ৩০ টন ওজনের বড় বড় তিনটি গাড়ি একসঙ্গে রাখা যাবে এ স্টেডিয়ামের ওপর। আর এখানে অনুষ্ঠিত খেলা বা অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য ৩০ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে স্টেডিয়াম লাগোয়া এক বড় গ্যালারিতে। মেরিনা বে ফ্লোটিং স্টেডিয়াম বানানো হয়েছিল সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের বিকল্প হিসেবে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য। তখন জাতীয় স্টেডিয়ামটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে ভাসমান এ স্টেডিয়ামের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কাজে।

 

বিনোদনকেন্দ্র

ভারতে তৈরি হচ্ছে ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাটমস্ফিয়ার’। সম্প্রতি দুটি টাওয়ারের মাথায় ৫৫ হাজার বর্গ ফুটের সংযোগকারী সেতু বসানো শুরু হচ্ছে। ৪০০ ফুট উপরে ভাসমান এই সেতুতে থাকবে বিনোদনের একগুচ্ছ ব্যবস্থা। কোটি টাকার এই প্রকল্পে সব থেকে বড় আকর্ষণ ‘দেওয়া ’ দুটি টাওয়ারের মাঝখানে মাটি থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে ঝুলন্ত ‘দেওয়া ’ তৈরিতেই খরচ হবে ১৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাঠামোগত নকশা তৈরি করেছেন সিঙ্গাপুরেরই হোসেন রেজাই জোরাবি। ভূমিকম্পে যাতে ‘দেওয়া’ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করতে ভূকম্প প্রতিরোধকারী বিশেষ বিয়ারিংয়ের ওপর তা বসানো হবে। সূর্যের অবস্থান আকাশে যখন যেমন থাকবে একইভাবে দেওয়ার আকৃতি সর্বদা বদলাতে থাকবে। কখনো তার দৃশ্যত রূপ হবে কঠিন বস্তুর মতো। কখনো বা তরল বা মেঘের মতো প্রসঙ্গত, ‘অ্যাটমস্ফিয়ার’ ভারতের প্রথম আবাসন প্রকল্প যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সুপার স্ট্রাকচার্সের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

 

রহস্যময় পাথর

ভারী কিছু বাতাসে ভেসে বেড়াবে এটি রীতিমতো অবিশ্বাস্যই বলা যায়। আর যদি জানা যায়, এমন পাথরের সন্ধান মিলেছে যেটি বাতাসে ভেসে থাকে তবে অবাক হতেই হয়। আবার কিছু ধরনের পাথর রয়েছে যেগুলো বাতাসে নয়, পানিতে দিব্যি ভেসে থাকতে পারে। এ ধরনের পাথরের গঠনগত বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে খুব সহজেই এ ধরনের পাথরগুলো পানিতে ভেসে থাকতে পারে। রহস্যঘেরা বিশাল আকৃতির ভাসমান পাথরের খোঁজ মিলেছে। এমনই একটি প্রাচীন বিশাল আকৃতির একটি পাথর রয়েছে সৌদি আরবের আল-হাস্সা গ্রামে। অনলাইন মিডিয়ায় এ পাথর নিয়ে কৌত‚হল রয়েছে অনেকেরই। ঐতিহ্যবাহী এ পাথর সাধারণ মানুষের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। পাথরটি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাটি থেকে ১১ সে.মি. শূন্যে ভেসে থাকে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে একটি দিনে পাথরটি আধা ঘণ্টা মাটির ওপর ভাসমান থাকে। এই ভেসে থাকা পাথর টুকরা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের বহু মানুষ জড়ো হয়। অত্যন্ত চমকপ্রদ এই পাথর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন এ ঘটনা ঘটে তখন পাথরটি উজ্জ্বল হয়ে গাঢ় বর্ণ ধারণ করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর