বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তার হাতের মুঠোয় বিশ্ব রাজনীতি!

তার হাতের মুঠোয় বিশ্ব রাজনীতি!

রুপার্ট মারডককে নিয়ে কানকথার শেষ নেই। তবে এই ফিসফাঁস কথার ভিত্তি একেবারেই ভঙ্গুর নয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আর অস্ট্রেলিয়া সরকারের পালাবদলে রাজনৈতিক হাওয়াবদলে রুপার্ট মারডকের ভূমিকা গত কয়েক দশক ধরেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষভাবে পছন্দের প্রার্থীর জয়গান করে জনমানুষের কাছে হিরো করে তোলার পাশাপাশি নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ডুবিয়ে দিতে তার জুড়ি নেই। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্রোতগুলোর সঙ্গে মিশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের ভূমিকা। আর সেখানে অস্ট্রেলিয়াসহ এই দুটি দেশের রাজনীতিতে মারডকের এই পরোক্ষ কিন্তু শক্তিশালী প্রভাব এড়িয়ে গেলে ভুলই হবে। ফক্স নিউজ, স্কাই নিউজ, স্টার গ্রুপসহ পুরো দুনিয়ায় তার মালিকানাধীন তিনশ’র ও বেশি টিভি চ্যানেল রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুইশ’র মতো পত্রিকা। তাকে নিয়ে কানকথার শেষ নেই। মারডক প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেননি। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে এবং রাজনীতিকে প্রভাবিত করায় তার ছিল আগ্রহ সব সময়ই। সব দলের রাজনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে তার। মারডক নিজে রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলেন। এর মধ্যে দুটি বৈঠকের কথা না বললেই নয়। প্রথমটি ২০০৮ সালে। সে বছর অক্টোবরে নিউইয়র্কের এক হোটেলে ওবামার সঙ্গে বৈঠক হয় মারডকের। ওবামা প্রথমে মারডকের সঙ্গে বসতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু মারডক ভালো করেই জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কীভাবে হাতে রাখতে হয়। কৌশলী মারডক বিষয়টি জানতে পেরেই   কেনেডি পরিবারের সদস্যদের কাজে লাগান। আর তাতে টনিকের মতো কাজ হয়। বৈঠকে ওবামা তার বিরুদ্ধে মারডকের ফক্স নিউজের অপপ্রচারের প্রসঙ্গটি তোলেন। মারডকের উত্তরও প্রস্তুত। সরাসরি বলেন, আসলে শুরু থেকে ওবামা যদি ফক্স নিউজের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে না রাখতেন, তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। অবশেষে বৈঠকে উভয়ের মধ্যে ‘সমঝোতা’ হয়। মারডকের প্রভাব কতটুকু সেটি এই বৈঠকের ফলাফলই বিশ্ববাসীকে জানান দেয়।

অন্যদিকে বারাক ওবামার জীবনীকার মাইকেল উলফ তো বলেই বসেন, শুধু ওবামা নন, হ্যারি ট্র–ম্যান থেকে আমেরিকান পরবর্তী প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মারডক। মারডক রাজত্ব আসে আশির দশক এবং নব্বইর দশকের গোড়ার দিকে। তখন পর্যন্ত মারডকের পত্রিকাগুলো ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। থ্যাচার-মেজর যুগের সমাপ্তি ঘটলে মারডকও পাল্টে যান। তিনি সমর্থনের হাওয়া ঘুরিয়ে দেন লেবার পার্টি ও তাদের নেতা টনি ব্লেয়ারের দিকে। ১৯৯৭, ২০০১ ও ২০০৫ সালের নির্বাচনে মারডকের পত্রিকাগুলো হয় নিরপেক্ষ, নতুবা টনি ব্লেয়ারের পক্ষে ছিল। একপর্যায়ে আবার পাল ঘুরিয়ে দেন মারডক। এবার তার দ্য সান পত্রিকা প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির নিন্দা করতে থাকে। তারা সমর্থন দেয় ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টিকে। রাজনৈতিক পালাবদল নয়। দেশে দেশে যুদ্ধ বিস্তারেও মারডকের প্রশস্ত মিডিয়ার কারসাজির অভিযোগ বরাবরই উঠেছে। মারডক মিডিয়াকে ঘিরে এ ধরনের অভিযোগের অন্ত নেই। তেমনই কয়েকটি হলো- রুপার্ট মারডক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টে যে বিপুলসংখ্যক ইহুদি মারা গেছে সেটা বিশ্ববাসীর মনে গেঁথে দেন। উপসাগরীয় যুদ্ধ বাঁধানোতেও তার কারসাজি রয়েছে। বল হয়, ইরাক-ইরান যুদ্ধ হতো না। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের পেছনেও তার মালিকানাধীন মিডিয়াকে দায়ী করা হয়। ব্লেয়ারের সাবেক গণমাধ্যম উপদেষ্টা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল তার স্মৃতিকথায় স্পষ্ট করেই লিখেছেন, আমেরিকার রিপাবলিকানরা ইরাকে মার্কিন হামলায় শরিক হতে টনি ব্লেয়ারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। আর রুপার্ট মারডক এই প্রচেষ্টায় ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ্লেষকরা তো এটাও বলেন, মারডকের মিডিয়াগুলোর একপেশে ভূমিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ইউকের প্রেসিডেন্ট হন টনি ব্লেয়ার!

 

সর্বশেষ খবর