বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নায়কোচিত উত্থান

নায়কোচিত উত্থান

মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের জন্ম মেলবোর্নে। মারডক  স্যার কিথ মারডক ও এলিজাবেথ জয়ের একমাত্র সন্তান। অর্থবিত্তের মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন। তার পরিবারও ধনী ছিল। সম্পদের উৎস সংবাদপত্র ব্যবসা। তবে পত্রিকা ব্যবসার আগে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করার জন্য ভর্তি করে দেন মারডক দম্পতি। রুপার্টের যখন ২১ বছর তখন তিনি বাবাকে হারান। সঙ্গত কারণেই এরপর তার উপার্জনের জন্য মন দিতে হয়। বয়সে তরুণ হলেও উদ্যোমী ছিলেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করেই যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আসেন। তরুণ বয়সেই পারিবারিক ব্যবসার দায়িত্ব নিতে হলো তাকে। ১৯৫৩ সালের কথা। এডেলেইডের একটি সংবাদপত্র দিয়ে শুরু হলো তার মিডিয়া সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন। তখনও কেউ ভাবতে পারেনি একদিন পুরো বিশ্ব দখল নেবেন তিনি। ভিত্তি মজবুত হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়ার আরও দুটি সংবাদপত্রের মালিকানা কিনে নিলো তার কোম্পানি নিউজ লিমিটেড। সেই সংবাদপত্রের অবস্থাও খুব প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তাই বেশ কম দামেই তিনি সেগুলো কিনে নেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার অভিজ্ঞতা। ১৯৭২ সালে মারডক সিডনির সকাল বেলার ট্যাবলয়েড দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ কিনে নিলেন স্যার ফ্রাংক প্যাকারের কাছ থেকে। এটি একটি মাইলফলক ছিল তার জন্য। ১৯৫০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় টিভি নেটওয়ার্কে মারডক তার ব্যবসার হাত বাড়িয়ে দেন। তবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পরবর্তীতে তিনি তার টিভি চ্যানেলটি বিক্রি করে দেন। নিউজ করপ, অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা শুধু সীমাবদ্ধ থাকল প্রিন্ট মাধ্যমে। খবরের দাম তখন হু হু করে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে মিডিয়া ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে মারডকের প্রথম টেলিভিশন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন ১৯৮৬ সালে। তখন ফক্স ব্রডকাস্টিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হলো। ২০০০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারক হিসেবে শেয়ার বাজারে তার নাম তালিকাভুক্ত হলো। এরই ফাঁকে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ইন্টারনেট ব্যবসায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে রুপার্ট মারডকের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটি ঘটে প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে। চার্লস ডাও, এডওয়ার্ড জোনস ও চার্লস বার্গট্রেসার ১৮৭৪ সালে যে পত্রিকাটির যাত্রা শুরু করেন তখন সেটির রুপ এখনকার মতো জমজমাট ছিল না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মারডকের হাতে আসার পর যেন জাদুকরের ছোঁয়া পায়। সময়ের বিবর্তনে এবং পরিচালনার দক্ষতায়  এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক বিক্রীত এবং বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকায় পরিণত হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে রুপার্ট মারডক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিটি শেয়ার তার অভিহিত মূল্যের তিন গুণ বেশি দাম দিয়ে কেনার ঘোষণা দেন। এতে অনেকের চোখ কপালে ওঠে। নিউইয়র্কের স্টক মার্কেটে চমক সৃষ্টি করেন তিনি। পত্রিকার তৎকালীন মালিক ব্যানক্রফট পরিবার অনেক দেন-দরবারের পর ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মালিকানা রুপার্ট মারডকের নিউজ করপ-এর কাছে হস্তান্তর করলেন। বিশ্বব্যাপী মিডিয়া জগতে রুপার্ট মারডক তার আধিপত্য বিস্তার করে চললেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বর্তমানে যে ট্যাবলয়েড নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-এর কারণে মারডক এখন নিন্দিত সেটি তিনি কিনেছিলেন ১৯৬৮ সালে। এই সাপ্তাহিকীর মালিকানা অর্জনের পর তিনি একে একে কিনে নেন ব্রডশিট পত্রিকা দি সান, দি টাইমস, দি সানডে টাইমস। ইউরোপে তার ব্যবসার শুরু ১৯৬৮ সালে। ১৯৮৬ সালে তিনি তার সংবাদপত্র শিল্পে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতির ছাপা প্রক্রিয়া প্রবর্তন করেন যা তখনকার দিনে ছিল এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রে রুপার্ট মারডকের মিডিয়া সাম্রাজ্য স্থাপনের কাজ শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। এশিয়ায় রুপার্ট মারডকের ব্যবসার শুরু ১৯৯৩ সালে। তখন তার প্রতিষ্ঠান হংকংভিত্তিক স্টার টিভি নেটওয়ার্কের স্বত্ব কিনে নেন। এভাবেই তার ব্যবসার প্রসার ঘটে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায়। টাকা ও ক্ষমতার বদৌলতে শুধু পত্রিকার মালিকানাই অর্জন করলেন না মারডক, ব্রিটিশ রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক হিসেবেও তার আবির্ভাব ঘটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর