শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আলোচিত সন্ত্রাসী হামলা

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

আলোচিত সন্ত্রাসী হামলা

৯/১১ এর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ কমই আছে। সেই হামলায় কেঁপে ওঠে পুরো বিশ্ব। পৃথিবীর নজর কেড়ে নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। আজ এত বছর পরেও ৯/১১ আমাদের স্মৃতিতে রয়েছে ঠিক আগের মতোই ভীতিকর। কিন্তু সময়ের পালাবদলে পৃথিবী কাঁপানো কিছু সন্ত্রাসী হামলার কথা অনেকেই যেন ভুলতে বসেছেন। বিশ্ববাসীকে শিউরে দেওয়া সেই সন্ত্রাসী হামলাগুলো বিশ শতকের কলঙ্ক হয়ে রয়েছে। সেগুলোর ভয়াবহতা ৯/১১-এর চাইতে কোনো অংশে কম নয়। বিশ শতকের তেমনই কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কথা লিখেছেন- সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

১৯৮৭ সালের হাইপারকোর বোমা

 

 

১৯৮৭ সালের ১৯ জুন বাস্কো বিচ্ছিন্নতাবাদীরা খুব ভেবেচিন্তে পরিকল্পনামাফিক বার্সেলোনার জমজমাট সুপারমার্কেট হাইপারকোর মার্কেটে একটি গাড়ি পার্ক করে। খুব সাধারণ কোনো গাড়ি ছিল না সেটি। বাইরে থেকে আর ১০টা সাধারণ গাড়ির মতো দেখতে গাড়িটিতে ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা। বিকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করে সন্ত্রাসীরা। প্রচণ্ড ভিড় তখন মার্কেটে। দিনের সবচেয়ে জমজমাট সময়। ঠিক সে সময়ই গণমাধ্যমকে ফোন করে নিজেদের পরিকল্পনা আর মার্কেটে বোমা রাখার ব্যাপারটি জানায় সন্ত্রাসীরা আর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে বিস্ফোরণ করে বোমার। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই বোমা হামলার সময় পুলিশ আর দোকানদারদের ভিতরে কিছু ঝামেলা চলছিল। পুরো বিল্ডিংটি পরিষ্কার করা হয়নি তখনো। দোকানদারদের নানারকম মালসামানায় ভর্তি ছিল হাইপারকোর। ফলে বিস্ফোরণের সময় এক তলা পর্যন্ত সবটুকু ধ্বংস হয়ে যায় সুপারমার্কেটটির। আগুন ছড়িয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে। মানুষের চিৎকার আর দৌড়াদৌড়ি বাড়তে থাকে। প্রচণ্ড ধুলা-ময়লা, মানুষের বিভ্রান্তকর ছুটে যাওয়া আর সব ঝামেলা দূরে ঠেলে যখন ভিতরে যায় উদ্ধারকারীরা ততক্ষণে ১৫টি মৃতদেহ খুঁজে পায় তারা। সেখানে ছিল একজন গর্ভবতী মহিলা আর দুটি শিশুও। পরবর্তীতে মৃতের সংখ্যা গিয়ে ২১ জনে দাঁড়ায়। আর আহত হয় মোট ৪৫ জন।


 

রোম আর ভিয়েনার বিমানবন্দর

 

 

১৯৮৫ সালের ২৭ ডিসেম্বরের ঘটনা। ঘড়িতে ৮টা ১৫ মিনিট। রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হঠাৎ ছয়জন মানুষ প্রবেশ করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল বন্দুক। ভিতরে ঢুকেই একটুও দেরি না করে গুলিবর্ষণ শুরু করে তারা। ঠিক একই সময়ে ভিয়েনার বিমানবন্দর। দৃশ্য অনেকটা একই। কিছু মানুষ হঠাৎ ভিতরে ঢোকে আর অপেক্ষারত যাত্রীদের লক্ষ্য করে ছুড়ে দেয় বোমা। পরের কিছু মিনিটে দুটি দেশেই মারা যায় বেশ কিছু মানুষ। সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্যের। অপেক্ষারতদের ভাষ্যমতে গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই মাথা নিচু করে ফেলে তারা। কেউ কেউ শুয়ে পড়ে। তবে থেমে থাকেনি ইতালি আর অস্ট্রিয়ার পুলিশরা। পাল্টা গুলি চালায় তারা। কাচ ভেঙে যাত্রীদের শরীরে লাগে। গুলিতে মারা পড়ে প্রায় ১৮ জন। যার ভিতরে ১৪ জন ছিল বেসামরিক আর ৪ জন সামরিক। এ ঘটনা দুটিতে নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয় প্রায় ১২০ জন মানুষ। এই সন্ত্রাসী হামলা হয়ে যাওয়ার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি মানুষ। খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে অভিযুক্তদের।

আর আঙ্গুল গিয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনি এক সন্ত্রাসী দলের ওপর। ১৯৮৮ সালে বলা হয় আবু নাইদালের ফাতাহ রেভলুশনারি কাউন্সিলই এই ঘটনার জন্য দায়ী। ঘটনাস্থলের ইতালির পুলিশরা অবশ্য দোষটা সিরিয়ার ঘাড়ে ফেলতেই উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতাকে প্রমাণসহ ধরতে পারেনি কেউ।


 

ওরলি বিমানবন্দর হামলা

 

 

১৯১৫ সালে টার্কির করা মানবাধিকার লঙ্ঘন আর নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে ১৯৮৩ সালে আমেরিকার সন্ত্রাসী দল এএসএএলএ ঠিক করে প্রতিবাদ করার। আর অবশ্যই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিতর দিয়ে। যেই ভাবা সেই কাজ। পরিকল্পনামাফিক প্যারিসের ওরলি বিমানবন্দরে একটি ব্যাগে বোমা রেখে সেটা ছেড়ে দেয় তারা টার্ক এয়ারলাইন্সের জন্য। তাদের পরিকল্পনা ছিল খুব ছোট্ট আর সহজ। একবার বিমানে বোমাটা উঠবে, সেটা টার্কি অব্দি পৌঁছবে আর সেখানকার বিমানবন্দরে ফাটবে। কিংবা সেটা না হলেও মাঝপথে বিমানেই বিস্ফোরিত হয়ে পুরো বিমানের মানুষগুলোকে মেরে ফেলবে। ধ্বংস করে দেবে বিমানকে। কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই যখন বোমা বিমান পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বিমানবন্দরেই বিস্ফোরিত হয়। সন্ত্রাসীদের পুরো পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। টার্কির বদলে প্যারিসের ক্ষতি করে বসে তারা। বোমার কাছে থাকা মানুষের শরীর জ্বলে যায় আর একটু দূরে থাকা মানুষগুলোর শরীর বেয়ে অতিরিক্ত আঘাতে ঝরতে থাকে রক্তের ধারা। এ সন্ত্রাসী হামলায় মারা যায় মোট ৮ জন আর প্রচণ্ডভাবে আহত হয় প্রায় ৫৫ জন মানুষ। দায় খুব স্বাভাবিকভাবেই চলে যায় এএসএএলএর সদস্য ভারাওজান গারাবেডিয়নের ঘাড়ে। ১৯৮০ সালে জেলে চলে যায় সে আর মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসে ২০০১ সালে। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে তাকে অভিনন্দন জানান আমেরিকার প্রধানমন্ত্রী।


 

মিউনিখে বোমা বিস্ফোরণ

 

 

পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা। ২৬ সেপ্টেম্বর, সকাল ১০টা। ভূগোলের নম্র, ভদ্র আর চুপচাপ স্বভাবের ছেলে ২১ বছর বয়সী গানডলফ কোহলারকে দেখা যায় গুটি গুটি পায়ে মিউনিখের সবচাইতে ব্যস্ত সড়ক অকটোবারফেস্টে ঘোরাফেরা করতে। তার হাতে ছিল একটি প্যাকেট। খানিক ঘোরাফেরার পরে সেটাকে সে পাশের ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দেয় আর ঘুরে হাঁটতে শুরু করে। তবে দুই কদম যাওয়ার আগেই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে ট্র্যাশ ক্যানটি। তার ভিতরে রাখা কোহলারের বোমাটি আরও ১২ জনের সঙ্গে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় তার নিজের শরীরও। মোট ১৩ জন মানুষ মারা যায় এ ঘটনায়। প্রচণ্ডভাবে আহত হয় আরও ২০০ জন। ঘটনাস্থলে একটি হাত পড়ে থাকতে দেখা যায়। যার কোনোরকমের হদিস পাওয়া যায়নি আজ অব্দি। পাওয়া যায়নি মালিকও। মনে করা হয় এই বিচ্ছিন্ন হাতটি দ্বিতীয় কোনো বোমা বিস্ফোরকের। যদিও অনেক অনুসন্ধান করেও কোহলারের সঙ্গে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, সূত্র বারবার এটাই বলেছে যে কোহলার একাই এমন একটা কাজ করেছিল, সাক্ষ্য-প্রমাণের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় এক নিও-নাজিকে। সেখান থেকে ধারণা করা হয় এই বোমা বিস্ফোরণের পেছনে রয়েছে কোন নিও-নাজির হাত। তবে কেউ থাকুক কিংবা না থাকুক, খুব পরিকল্পনা করেই তারা কোহলারকে নিজের রাখা বোমার মাধ্যমেই মেরে ফেলে। ফলে কোনো প্রমাণের অভাবে সেখানেই থেমে যেতে বাধ্য হয় এই মামলাটি।


 

ওয়াল স্ট্রিটে বোমা বিস্ফোরণ

 

 

বোমা নিজেই একই সঙ্গে অনেক মানুষকে মারার জন্য একটি মারাত্মক অস্ত্র। আর তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় লোহার টুকরো? বোমার আঘাতে ছিটকে যাওয়া লোহার টুকরোগুলো ঠিক কতটা গতি পাবে সেটা ভাবাও কষ্টসাধ্য। আর এই অভিনব রাস্তাটাই অবলম্বন করেছিল প্রায় ১০০ বছর আগে ওয়াল স্ট্রিটের জেপি মরগান ব্যাংকে আক্রমণকারীরা। সেবার একটি ঘোড়াগাড়ি এসে থামে জেপি মরগান ব্যাংকের সামনে। গাড়িটি বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও এতে ছিল বেশ বড়সড় একটি বোমা যার পেছনে ছিল ২২৫ কিলোগ্রামের লোহা। ঠিক ১২টা বেজে ১ মিনিটে বোমার টাইমার শূন্যতে গিয়ে থামে আর প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি। সেই শব্দ আর কাঁপুনির ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে প্রায় দুই ব্লক পরেও নড়ে গিয়েছিল বেশ কিছু গাড়ি-ঘোড়া। পুরো শহরকে কাঁপিয়ে দিয়ে গিয়েছিল বোমার ভয়াবহতা। আশপাশের বাড়ি, ঘর, গাড়ি, মানুষের দেহ- সবকিছুকে কাগজের মতো ছিন্ন করে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল লোহার টুকরোগুলো। ভাঙা জানালার কাচ আঘাত করেছিল আরও অনেক সাধারণ মানুষকে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় ৩০ জন মানুষ। তবে এরপরেও হাসপাতালে মারা যায় আরও আটজন। জেপি মরগান ব্যাংককে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে যায় এই ঘটনা। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি এ ঘটনার পেছনের হোতাদের। তবে ১৯৪৪ সালে এফবিআই অবশেষে সিদ্ধান্তে আসে যে এটি সেই ইতালিয়ান বোমারুদের কাজ যারা কিনা ১৯১৯ সালেও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।


 

টোকিওর রাসায়নিক সন্ত্রাসবাদ

 

 

১৯৯৫ সালের কথা সেটা। নিজেদের প্রথম কাজ হিসেবে ধর্মীয় সংস্থা আউম সিনরিকিয়ো টোকিও সাবওয়ে সিস্টেমে রাসায়নিক পদার্থ সারিনের একটি মেঘ তৈরি করে। সারিন হচ্ছে সেই রাসায়নিক তরল যেটার কোনো রং নেই অথচ প্রচণ্ডরকম ভয়াবহভাবে হাজার হাজার মানুষকে নিমিষে মেরে ফেলতে পারে যেটি। ব্যাপক ধ্বংস সৃষ্টিকারী তরল হিসেবে বেশ পরিচিত এটি সবার কাছে। তো এটিকেই অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত আউম সিনরিকিয়ো। এর কয়েক বছর আগে পাহাড়ের ওপর থেকে নিজেদের এই তলল অস্ত্রের পরীক্ষা করে এই দলটি। যাতে আহত হয় প্রায় ৫০০ মানুষ। ঘটনাটির সময় এই সন্ত্রাসী দলের হাতে ছিল প্রায় চার মিলিয়ন মানুষকে মারার মতো তরল পদার্থ। তারা সেটাকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন এই দলটি নিজেদের নতুন একটি স্থানে নিয়ে আসে। আর সেখানে তাদের দলটির সম্পর্কে কথা উঠলে তারা কিছু গ্যাস রাস্তায় ছড়িয়ে দেয়। এ সন্ত্রাসী হামলার কথা পশ্চিমা বিশ্বসহ সবার কাছে অনেকটা অজানা রয়ে গেলেও এতে মারা যায় মোট সাতজন মানুষ। আহত হন ইওশিইউকি কোউনু নামের একজন মানুষসহ আরও অনেকে। তবে কোউনুর কথা উঠে আসার কারণ হচ্ছে পুলিশ কেবল তাকে একজন আক্রান্ত মানুষ নয়, বরং আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। যদিও এর পক্ষে খুব একটা প্রমাণ কখনো পাওয়া যায়নি।


 

রক্তাক্ত শুক্রবার

 

 

রক্তাক্ত রবিবারের কথা অনেকেই শুনেছেন। সেবার ১৯৭২ সালের এক রবিবারে নিরস্ত্র ১৩ জন আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্টকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে  ব্রিটিশ আর্মি। উত্তর আয়ারল্যান্ডে পুরোপুরি গুমোট একটা অবস্থার সৃষ্টি করে সেটি। তবে ঠিক এরকমই আরেকটি রক্তাক্ত বারের কথা জানেন না অনেকে। আর সেটি হলো শুক্রবার। আয়ারল্যান্ডে এই ঘটনার পর দেশটি কি থেমে ছিল? চুপ করে সবটা সয়ে গিয়েছিল? না। রক্তাক্ত রবিবারের বদলা নিতে সে বছরেরই গরমের এক শুক্রবারে পরিকল্পনা মাফিক ২৩টি বোমা বেলফাস্টে পুঁতে রাখে কিছু আইরিশ। ৯০ মিনিটের কম সময়ে যাদের ১৯টি বিস্ফোরিত হয়ে যায়। প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় ২.৪০ মিনিটে। আলস্টার ব্যাংকের পাশে। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পর আরেকটি বিস্ফোরণ হয়। এরপর আরেকটি। একই সঙ্গে দুটি বিস্ফোরণের পরপরই বেলা ৩টা অব্দি আরও সাতটি বিস্ফোরণ হয় বেলফাস্টে। বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে পুরো বেলফাস্ট। ঠিক ৩টা বেজে দুই মিনিটে একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয় বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে তখনি মারা যায় ৬ জন মানুষ। এর ১৫ মিনিট পরে প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথোলিক দুজনকেই আঘাত করে আরেকটি গাড়ি বোমা। প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার ৭৫ মিনিটের ভেতরে মোট ২০টি বোমা বেলফাস্টের চারপাশে। এতে মোট মারা যায় নয়জন মানুষ আর আহত হয় প্রায় ১৩০ জন। পরবর্তীতে আইআইএ সবার কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।


 

ধর্মসভায় বোমা বিস্ফোরণ

 

 

১৯৮০ সালের ঘটনা সেটি। স্কুলগামী শিশুদের বাসের নিচে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় অনেক শিশু। ব্যাপারটি ঘটে এন্টওয়ের্পের হোভেনিয়ের্সসট্রাট এলাকায়। নিষ্পাপ আর কোমলমতি শিশুদের ওপরে ঘটে যাওয়া এই নির্দয় আর নিষ্ঠুর ঘটনার পর থেকেই সেখানকার মানুষের মনে জেঁকে বসেছিল অজানা এক ভয়। সবসময় উদ্বিগ্নতার ভিতরে দিন কাটছিল তাদের। তবে তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে এর চাইতেও বড় কোনো ঘটনা আরও একবার অবাক করে দেবে তাদের। থামিয়ে দেবে। এই ঘটনার ঠিক এক বছর পরের কথা। ১৯৮১ সালের ১৯ অক্টোবর। সেদিন রাতের বেলা ধীরগতিতে একটি ভ্যান প্রবেশ করে হোভেনিয়ের্সসট্রাটে। সেখানকার এক ধর্মসভা বা সিন্যাগগের পাশে সেটাকে রেখে চলে যায় গাড়ি চালকেরা। পরদিন সকালবেলা বেশ বড় এক ধর্মসভার আয়োজন চলছিল সেখানে। স্থানীয় ধর্মসভাতে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় দোকানদাররা সকাল সকালই তাদের দোকানপাট খুলে বসেছিল। সিমহাথ তোড়া উদযাপনের জন্য একত্রিত হয়েছিল তারা। ধর্মসভায় ধর্মসংক্রান্ত কাজের জন্যও মানুষ প্রবেশ করল একটা সময়। পুরো উৎসবটা শুরু হবে- এমন সময় হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয় ধর্মসভার পাশে রাখা ভ্যানটি। দোকান, সাধারণ মানুষ, ধর্মগুরু- প্রায় ১০০ জনের বেশি মানুষ মারাত্মক আহত হন এই ঘটনায়। মারা যান তিনজন। তবে এখনো পর্যন্ত এর পেছনে থাকা মানুষকে চিহ্নিত করা যায়নি।


 

কিং ডেভিড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ

 

 

১৯৪৬ সালের ২২ জুলাই। ইহুদি এক আধা সামরিক বাহিনী সেবার ব্রিটিশের আওতায় থাকা ফিলিস্তিন নামের পরিচিত স্থানে অবস্থিত কিং ডেভিড হোটেলে ঢোকে আর সেখানকার কলামের নিচে রেখে আসে বিধ্বংসী বোমা। বোমাগুলো রেখেই শান্তভাবে বাইরে চলে আসে তারা আর হোটেলে একটি ফোন করে নিজেদের এই বোমা বিস্ফোরণের কথা জানায় সবাইকে। অনুরোধ করে সবাইকে বাইরে চলে আসতে। মূলত এই মানুষগুলোর ইচ্ছে ছিল না কোনো সাধারণ মানুষকে আঘাত করার। তারা চেয়েছিল এ দেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিতে। তাদের ভয় দেখাতে। কিন্তু ব্রিটিশ সৈন্যরা কেন, হোটেলের কর্মচারীরাও এই টেলিফোন কলে এতটুকু চিন্তিত হয়নি। তাদের সব কাজ নিয়মমাফিকই চলছিল। আর এর ফলাফলে সেবার কিং ডেভিড হোটেলের বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল ৪১ আরব, ২৮ ব্রিটিশ, ১৭ ইহুদি ও অন্য ৫ জন মানুষসহ মোট ৯ জন। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক।


 

মুম্বাইয়ে বোমা বিস্ফোরণ

 

 

মুম্বাই ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় ১৯৯৩ সালে। ঘটনার শুরু হয় বেলা ১টা বেজে ২৫ মিনিটে। মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৩০টি গাড়িকে ধ্বংস করে দিয়ে বিস্ফোরিত হয় প্রথম গাড়িবোমাটি। মারা যায় প্রচুর মানুষ। তবে সেটা ছিল কেবল শুরু। এরপরের টানা বোমার প্রতাপে একে একে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে এয়ার ইন্ডিয়া, দ্য ব্যাংক অব ওমান আর সিরক শেরাটন হোটেল। বোমার আঘাতে ছিটকে বাইরে পড়ে মানুষ আর আসবাবপত্র। তবে এটাও কিন্তু শেষ ছিল না। পরের এক ঘণ্টায় সরকারি ভবনগুলো, সিনেমা হল, হাসপাতাল, ব্যাংক, বাজার, ব্যস্ত সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় মোটকথা মুম্বাইয়ের পুরো ভিতকে ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল এই বোমা বিস্ফোরণ। প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে দিয়ে মোট ১৫টি বোমা বিস্ফোরিত হয় মুম্বাইয়ে।   টানা ৭৫ মিনিট বিস্ফোরণ চালিয়ে যায় স্থানীয় একটি মাফিয়া পরিবার। এতে মারা যায় ২৫০ জন মানুষ। আর গুরুতর আহত হয় প্রায় ১১ হাজার জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর