বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিচিত্র বিয়ে

নাজিম উদ দৌলা

বিচিত্র বিয়ে

বিয়ের উৎসব সর্বত্র। সারা বিশ্বে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অতুলনীয় বিয়ে। একেক সমাজে বিয়ের উৎসব একেক রকম। তবে আনন্দের ছোঁয়া রয়েছে সবখানেই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বেশ কিছু সমাজ আছে যেখানে বিয়েকে কেন্দ্র করে অদ্ভুত রীতি পালন করা হয়। এসব নিয়ম আমাদের কাছে যতই উদ্ভট বলে মনে হোক না কেন, ওই সমাজের মানুষের কাছে তা খুব স্বাভাবিক। এই রীতিগুলো অন্যরকম হলেও আনন্দের। কোনোটা আবার বিস্ময় জাগায়। বিয়ের এমনই কিছু রীতি জানাচ্ছেন- নাজিম উদ দৌলা

বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করে মুরগি

মঙ্গোলিয়া

 

 

মানুষের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করার জন্য লাগবে মুরগির লিভার, এমনটা ভাবা যায়? বিস্ময় জাগানো এই রীতি মঙ্গোলিয়ায় কিন্তু সাধারণ ব্যাপার। মঙ্গোলিয়াতে ডাউর নামক এক গোত্রের বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জন্য বাড়তি গুরুত্ব রাখে মুরগির লিভার। সে সমাজে দুজন নর-নারী চাইলেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেন না।  এখানে বিয়ের দিন-তারিখ নির্ণয়ের এক অদ্ভুত রীতি প্রচলিত আছে। হবু বর আর কনেকে একত্রে একটি মুরগির বাচ্চা জোগাড় করতে হয়। সেই মুরগির বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হলে তো কথাই নেই। মুরগির বাচ্চার পেট কেটে লিভার বের করার প্রয়োজন পড়ে। একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে লিভারটা পরীক্ষা করানো হয়। যদি মুরগির বাচ্চার লিভারটি দেখতে সুন্দর ও সবল মনে হয় তাহলে বর-কনেকে সুযোগ দেওয়া হবে নিজেদের বিবাহের দিন-তারিখ নির্ধারণ করার জন্য। আপাতদৃষ্টিতে তারা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করলেও মুরগির বাচ্চার গুরুত্বের কথা ভুলে গেলে চলবে না। কারণ লিভারটি দেখতে যদি সুন্দর না হয় তাহলে কিন্তু তাদের বিয়ে এ যাত্রায় ভেস্তেই গেল। তবে সন্তোষজনক লিভারের দেখা পাওয়া গেলে উভয় পক্ষ অনুমতি পায় বিয়ের তারিখ নির্ণয় করার। তাদের ধারণা, বিয়ে মানেই পরিবারের সৃষ্টি। আর কিছু সৃষ্টির জন্য কিছু বিসর্জন দিতে হয়। তাই বিয়ের তারিখ নির্ণয়ের প্রাক্কালে মুরগির বাচ্চা বিসর্জন দেওয়া লাগে। বিয়ের তারিখ নির্ধারণে এই রীতি পৃথিবীর আর কোথাও নেই।


 

বিয়ে বাড়িতে চাই শব্দদূষণ

ফ্রান্স

 

 

‘বিয়ে’ শব্দটির সঙ্গে এক ধরনের ভালোবাসা মিশে আছে। এই রোমান্টিক আমেজের সঙ্গে আর যাই হোক কানফাটানো শব্দ নেই। কিন্তু এই চিত্র ভিন্ন ফ্রান্সে। ফ্রান্সের অনেক জায়গায় বিয়ের ঠিক পরমুহূর্তে বর-কনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরা এমন কাণ্ড বাধান যা রোমান্টিক আমেজের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। নতুন বিয়ে হয়েছে বলেই আনন্দ উদযাপনে এই শব্দদূষণ। তারা থালা-বাসন, ঘটি-লাঠি, বাঁশিসহ হাতের কাছে যা পান তাই নিয়ে নবদম্পতির বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হন। থালা-বাসনের টুংটাং শব্দের সঙ্গে যোগ হয় চিৎকার, হৈচৈ, হট্টগোল। ফরাসিরা স্বভাবতই শোরগোলপ্রিয় জাতি। যে কোনো আনন্দ উপলক্ষে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি না করলে তাদের চলে না। তাই নতুন বিয়ের পর এই হৈ-হুল্লোড়কে বলা চলে তাদের ঐতিহ্যেরই একটি অংশ। আফ্রিকায় ফুটবল বিশ্বকাপের কল্যাণে এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভুভুজেলা বাঁশির উপদ্রব। কিন্তু তাই বলে বর-কনে যে এই শব্দদূষণ থেকে বাঁচার জন্য কানে তুলা গুঁজে বসে থাকবে সেই উপায়ও নেই। তাদেরও বেরিয়ে আসতে হবে বাসা থেকে। রাগ করা চলবে না মোটেও, বরং হাসিমুখে আগত সবাইকে ড্রিংকস ও স্ন্যাকস খেতে দিতে হবে। শব্দদূষণে তাদের অংশগ্রহণ অতিথিদের বাড়তি আনন্দ দেয়। আওয়াজ তোলে এমন কিছু পেলেই হলো, দিনভর শব্দ দূষণ চলে।


 

বরের জুতা চুরি

বাংলাদেশ ও ভারত

 

 

বরকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তার জুতা চুরির কথা এ দেশে কে না জানে। বাংলাদেশ ও ভারতে এই সৌখিন জুতা চুরি আর চোরের উপদ্রব বেশ আনন্দের। আমাদের দেশে বিয়ের আসরে জুতা চুরি যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা হলেও অন্য দেশের মানুষের কাছে ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অবাক হওয়ার মতো। শহরাঞ্চলের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো কমিউনিটি সেন্টারকেন্দ্রিক হয়ে গেছে বলে এখন আর জুতা চুরির ব্যাপারটা খুব বেশি দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশ এবং ভারতের গ্রামাঞ্চলের কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এই দৃশ্য এখনো লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত জামাই আর তার কাছের লোকদের বসার জন্য বিয়ের আসরে একটা উঁচু মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। জামাই বিয়ের মঞ্চে ওঠার আগে তাকে নিজের জুতা জোড়া খুলে উঠতে হয়। আর জুতা খোলার পর থেকেই বউয়ের ছোট ভাইবোন কিংবা বান্ধবীরা মিলে বরের জুতা চুরি করার চেষ্টায় থাকে। অন্যদিকে বরপক্ষের লোকেরাও জানে, যে কোনো সময় জুতা চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই তারা সারাক্ষণ নজর রাখে যেন জুতা চুরি হয়ে না যায়। যদি একবার কনেপক্ষের লোকেরা জুতা চুরি করতে সক্ষম হয়, তাহলে আর রক্ষা নেই। তারা জুতা ফেরত দেওয়ার বদলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বসবে। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক চলবে। তারপর বরপক্ষকে জুতা চোরের দাবি অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে তবেই জুতা ছাড়িয়ে নিতে হয়।


 

হাসলেই বিয়ে পণ্ড

কঙ্গো

 

 

সারা বিশ্বে বিয়ে মানেই আনন্দের উপলক্ষ। বিয়েতে বর-কনের আত্মীয়-স্বজন আসবে। তারা গল্প করবে, হাসি-তামাশা করবে, একসঙ্গে খাবে, মৌজ-মাস্তি করবে, গান-বাজনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কঙ্গো এদিক থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম। কঙ্গোতে আপনি যদি কারও বিয়ের অনুষ্ঠান পণ্ড করতে চান তাহলে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। একজন কমেডিয়ান ভাড়া করে আনুন। তাতেই আপনার উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল। কঙ্গো সমাজে বিয়ের ব্যাপারটিকে খুবই সিরিয়াসলি নেয় সবাই। তারা এটাকে আনন্দের অনুষ্ঠান নয়, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অতি মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হিসেবে আয়োজন করে। এখানে বিয়ের আসরে কোনো ধরনের হাসাহাসি, গাল-গল্প, ঠাট্টা-মশকরা গ্রহণযোগ্য নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই যাবে গম্ভীরমুখে। নীরবতা পালন করা হবে, প্রয়োজন ব্যতীত খুব বেশি কথা বলবে না কেউ। কঙ্গো সমাজের বাইরের কেউ বিয়ের আসরে গেলে তার কাছে মনে হতে পারে- বিয়ে নয়, কোনো শোকসভায় অংশ নিতে এসেছে সবাই। বিশেষ করে বর-কনের জন্য নিয়মটা অত্যধিক কড়া।

কোনোক্রমেই বিয়ের সময় হাসাহাসি করা চলবে না। ভুলক্রমে কেউ হেসে ফেললে তাকে নিন্দা করবে সবাই। কঙ্গো সমাজে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, বিয়ে ব্যাপারটি খুবই সাংঘাতিক। এখানে সবাইকে খুব সিরিয়াস থাকতে হবে, হাসাহাসি করলে বিয়ের আয়োজন নষ্ট হবে।


 

স্ট্র-বয়েজের সঙ্গে নাচ

আইরিশ

 

 

আইরিশ কাউন্টি লেইট্রিম এবং মায়োতে একটা অদ্ভুত ধরনের বিয়ের আচার প্রচলিত আছে। এসব কাউন্টিতে নয়জন অল্প বয়সী পুরুষকে নির্বাচিত করা হয় স্ট্র-বয়েজ হিসেবে। নাম শুনে যাই মনে হোক, আসলে তারা ওই অঞ্চলে ভালো নাচ জানে এমন নয়জন পুরুষের একটি দল। এদের কাজ হচ্ছে খড় দিয়ে নিজেদের সজ্জিত করে বিয়ের আগের রাতে কনেপক্ষের বাড়িতে যাওয়া। এরা সেখানে গিয়ে বিয়ের পাত্রীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ নাচে। সেই বাড়িতে আরও কোনো মহিলা থাকলে তাদেরও এই নৃত্যযজ্ঞে অংশ নিতে হয়। অনেক সময় বিয়ের পাত্রী এবং অন্য মহিলারাও নাচার সময় নিজেরা খড় দিয়ে সাজে। কতক্ষণ নাচ চলবে তার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই অবশ্য। নাচ শেষে কনের বাড়িতে স্ট্র-বয়েজদের নানা সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। স্ট্র-বয়েজদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ কিংবা কাজে ব্যস্ত থাকে তাহলে বাকিরা মিলে ভালো নাচতে জানে এমন একজনকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। অবশ্য চাইলেই কিন্তু স্ট্র-বয়েজ হওয়া যায় না। এটা অতি সম্মানজনক উপাধি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অঞ্চলের মেয়েদের সবারই স্বপ্ন থাকে একদিন স্ট্র-বয়েজের সঙ্গে নাচার। মেয়েরা তাদের বিয়ের দিন ঠিক হলে যতটা খুশি হয়, তার চেয়ে বেশি খুশি হয় স্ট্র-বয়েজদের সঙ্গে নাচার সুযোগ পাওয়া যাবে ভেবে। বিয়ের আগে এই নাচ যেমন আনন্দের তেমন সম্মানেরও।


 

নবদম্পতির বন্দীদশা

ফ্রান্স

 

 

নবদম্পতিকে বিয়ের পর একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও একটি পক্ষ থাকে, যাদের কাজই হলো নবদম্পতিকে জ্বালাতন করা। তবে মালয়েশিয়ার অধীন উত্তর বোর্নিওর টাইডং কমিউনিটির আদিবাসীদের মধ্যে ঠিক বিপরীত একটি চিত্র লক্ষ্য করা যায়। বিয়ে নিয়ে তাদের সমাজে এক অন্যরকম রীতি আছে। এরা বিয়ের পর নববিবাহিত দম্পতিকে একটা ঘরের ভিতর তিন দিনের জন্য আটকে রাখে। ঘরের দরজা-জানালা সব বাইরে থেকে আটকে রাখা হয়। আলো-বাতাস ঢোকার উপায় নেই, বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই। দিনে তিনবার শুধু ছোট একটা ফোকর দিয়ে খাবার দেওয়া হবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার অফুরন্ত সুযোগ দিতেই এই আয়োজন। বন্দীদশা বলা হলেও, এটি মোটেই আতঙ্কের কিছু নয়। পরম্পরা থেকে প্রাপ্ত এই রীতি চর্চা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। নবদম্পতি ঘরের ভিতর কার্যত বন্দী থাকলেও তাদের সব চাহিদা বাইরে থেকে পূর্ণ করা হয়। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার নিয়ম নেই। শুধু বোঝাপড়া নয়, এ সময়ে বাইরের অশুভ শক্তির ছোঁয়া থেকে তাদের মুক্ত রাখার জন্য এ ব্যবস্থা। এ ছাড়া তাদের বিশ্বাস, অশুভ শক্তির হাত থেকে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্ত রাখতেও এটি প্রয়োজন। এ ধরনের রীতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।


 

পা মাটি ছুঁয়ে থাকা চাই

আয়ারল্যান্ড

 

 

আয়ারল্যান্ডের মানুষের নাচ খুব পছন্দ। যে কোনো উৎসবের সঙ্গে নাচ সম্পৃক্ত। বিয়ের ক্ষেত্রেও সেটির ব্যতিক্রম ঘটে না। বলা হয়, কোনো আইরিশ ছেলে বা মেয়েকে আপনার সঙ্গে লাঞ্চ করা, সিনেমা দেখতে যাওয়া কিংবা খেলার মাঠে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা আপত্তি করতে পারে। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গে নাচার আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনাকে ফিরিয়ে দেবে এমন সম্ভাবনা খুব কম। সাধারণত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর সবাই মিলে হালকা মিউজিকের সঙ্গে নাচে। বিয়েতে আগত অতিথিরা নবদম্পতিকে ঘিরে নাচতে থাকে। বর-কনেও তাদের সঙ্গে তাল মেলায়। এই নাচের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়ম নির্ধারিত না থাকলেও বর-কনের নাচের জন্য একটা নিয়ম-বাঁধা রয়েছে। নাচার সময় সারাক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে যেন কনের পা সব সময় মাটিতে থাকে। আয়ারল্যান্ডের একটা প্রাচীন মিথ অনুযায়ী এটা মানতে হয়। তাদের বিশ্বাস, বর-কনে যখন নাচে তখন অশুভ শক্তি তাদের ঘিরে থাকে। কনের পা যদি কোনোক্রমে মাটি ছেড়ে শূন্যে উঠে যায় তাহলে সর্বনাশ। অশুভ পরীরা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। অশুভ পরীরা সুন্দর জিনিস দেখলে কেড়ে নিতে চায়। কনে যেহেতু খুব সুন্দরী তাই তারা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু তারা সেই সুযোগ পাবে না যদি কনের পা মাটিতে থাকে। ইউরোপের এই দেশের মানুষের মাঝে এখনো এমন বিশ্বাস কাজ করে সেটা জেনে বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।


 

নিশানা নির্ভুল হলেই বিয়ে

চীন

 

 

ভালোবেসে কোনো নারীর হৃদয় হরণ করে তাকে বিয়ে করা একজন পুরুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু তীর ছুড়ে একজন নারীকে বধ করে তাকে বিয়ে করার দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই তীরে কনের প্রাণপ্রাতের কোনো সম্ভাবনাই নেই। চীনে ইউগুর নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠী বসবাস করে। এদের সমাজে বিয়েকে কেন্দ্র করে বেশ ভয়ঙ্কর একটা নিয়ম প্রচলিত আছে। বিয়ের সময় বরের কাজ হচ্ছে তীর-ধনুক হাতে নিশানা করে কনেকে বধ করা। কাজটা একবার নয় তিনবার করতে হবে তাকে। যতক্ষণ না তিনটি তীর কনের শরীরে লাগবে ততক্ষণ তাকে তীর ছুড়েই যেতে হবে। অবশ্য তীরগুলোর মাথা সাধারণ তীরের মতো চোখা হয় না। সেটির বদলে তীরে নরম রাবার লাগানো থাকে। তিনটা তীর গায়ে লাগার পর বরের দায়িত্ব হচ্ছে তীরগুলো সংগ্রহ করে এনে ভেঙে ফেলা। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হলো যে তারা সব সময় পরস্পরকে ভালোবাসবে। তবে বিয়ের আগে নিশানা নির্ভুল করে নেওয়ার সুযোগ পায় বর। বিয়ের আগে বর বেশ কিছুদিন তীর নিক্ষেপের অনুশীলন করে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সহজ দূরত্ব থেকেই এই তীর ছোড়া হয়ে থাকে যেন কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে। কনেও সপ্রতিভ, তীরের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। বর লক্ষ্যভেদ করতে পারলেই বিয়ে।


 

অভিনব মানবগালিচা

মরিশাস দ্বীপ

 

 

বিয়ের আসরে বর-কনে দামি লাল রঙের মখমলের গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে বিয়ের মঞ্চে ওঠে এমন দৃশ্য অহরহ দেখা যায়। কিন্তু ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মরিশাস দ্বীপে এক অদ্ভুত গালিচার প্রচলন আছে। এ গালিচা হচ্ছে এক ধরনের মানবগালিচা। বিয়ের আসরে এ অদ্ভুত ব্যাপারটি ঘটে। কনের সব আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুরা মিলে পরস্পরের গায়ে গা লাগিয়ে, মাটিতে মুখ ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। দেখে মনে হয় যেন মানবগালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে।

বর-কনের কাজ হচ্ছে এ গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া। অতিথিরা সানন্দে এই গালিচা সাজতে আসেন।

বিয়ের অন্যতম আনন্দও এটি। সেখানকার লোকেরা বিয়ের পাত্র-পাত্রীকে মনে করে ওই দিনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাদের বিশ্বাস, নতুন বিয়ে করতে যাওয়া এ মানব-মানবীকে যতটা বেশি সম্ভব সম্মান প্রদান করতে হবে। তাই এ অভিনব গালিচার ব্যবস্থা। তবে এ মানবগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়াও কিন্তু সহজ কথা নয়। নিচের মানুষটা একটু নড়ে উঠলেই বর-কনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজকাল অবশ্য ব্যাপারটায় একটু পরিবর্তন এসেছে। মানুষের পিঠের ওপর দিয়ে না হেঁটে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া হয়।


 

বিয়ের আগে এক মাস কান্না

চীন

 

 

বিয়ের অনুষ্ঠানে কান্নাকাটি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে এ দেশে বিয়ের পর মেয়েকে যখন বরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তখন মেয়ের মা-বাবা, অন্য আত্মীয়-স্বজন সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদরে বেড়ে ওঠা মেয়েটি যখন ঘর ছেড়ে অন্যের কাছে চলে যায় তখন কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, ব্যাপারটাকে আরও তীব্র মাত্রায় নিয়ে যায় এমন সমাজও পৃথিবীতে আছে। চীনের তুজিয়া সমাজে বিয়ে কোনো আনন্দের উপলক্ষ নয়, বিয়ে মানেই একটা অতি বেদনাদায়ক ব্যাপার। এখানে বিয়ের এক মাস আগে থেকেই শুরু হয় মেয়ের কান্না। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত এক ঘণ্টা তাকে কাঁদতেই হবে। তা নাহলে সমাজের চোখে তাকে খারাপ ভাবা হবে। প্রথম ১০ দিন পার হওয়ার পর মেয়েটির মা এ কান্নায় যোগ দেন। আরও ১০ দিন পার হলে যোগ দেন মেয়ের দাদি-নানীরা। এক মাস শেষ হওয়ার পর দেখা যায় কনেপক্ষের সব মহিলা অঝোর ধারায় কাঁদছেন। তবে তারা যে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে বলে খুব কষ্ট পেয়ে কাঁদছেন তা কিন্তু নয়। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে এখানে কান্নার একটা ধরন আছে। সুরে সুরে কাঁদতে হয়। তাই এ কান্নাকাটির ব্যাপারটাকে মূলত বিয়ের গান হিসেবে ধরা যায়। গান এমন হৃদয়বিদারক হতে পারে তা কল্পনাই করা যায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর