বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লালু প্রসাদের রকম-সকম

তানভীর আহমেদ

লালু প্রসাদের রকম-সকম

ভারতের রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী একটি নাম লালু প্রসাদ যাদব। তুখোড় এই রাজনীতিবিদ বার বার উঠে এসেছেন আলোচনায় সমালোচনায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও মেনে নেবেন লালু প্রসাদ যাদব নামটি ভারতীয় রাজনীতিতে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন। প্রথমে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পরে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেঁসেছেন। জেলও খেটেছেন। তবে চমক দেখিয়েছেন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের পতনের পেছনে কলকাঠি নেড়ে। ভারতের অন্যতম দরিদ্র এই রাজ্যে নীতিশ-লালু ম্যাজিকের কাছে সুস্পষ্ট ধরাশায়ী হয় মোদি সরকার।

 

দুধয়ালার ছেলে মুখ্যমন্ত্রী

লালু প্রসাদ যাদব। ভারতীয় রাজনীতিবিদ। বিভিন্ন সময় এসেছেন আলোচনায়। আর সমালোচনা তাকে ঘিরে রাখে। এই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের জম্ন ১৯৪৮ সালে।  ফুলওয়ারিয়া, বিহারে জম্ন নেওয়া লালু প্রসাদের বাবার নাম কুন্দান রায়, মায়ের নাম মারাছিয়া দেবী। ছয় ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। সংসারের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না তাদের। তার বাবা দুধওয়ালার কাজ করতেন। গরুর দুধ বাজারে ও ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে বিক্রি করতেন লালু প্রসাদের বাবা। এই কেনাবেচায় তিনিও সাহায্য করতেন। কখনো বাবা, কখনো মায়ের সঙ্গে বেরোতেন তিনি। কাজ সেই একই। দুধওয়ালার ছেলে বলে সমাজে শোচনীয় অবস্থাতেই ছিল তারা। অবশ্য তাই বলে লালু প্রসাদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি তার বাবা-মা। স্থানীয় এক স্কুলে তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা চালিয়ে যান। পরে তিনি বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাটনায় চলে আসেন। এখানেই বাকি পড়াশোনা চলে তার। তিনি আইন ও সমাজকল্যাণ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেই তিনি কাজের সন্ধান শুরু করেন। দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন বলে যে কোনো ধরনের কাজ খুঁজছিলেন। দ্রুতই কাজ পেয়ে যান বিহার ভেটেরিনারি কলেজে। সেখানে তিনি সামান্য একজন ক্লার্ক হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন। তার বড়ভাই ছিলেন সেখানকার পিয়ন। দুই ভাই পাটনায় সামান্য আয়ে খুব করুণ দিনযাপন করছিলেন। তার বড়ভাইয়ের সঙ্গে পিয়ন কোয়ার্টারে তিনি মাথাগুঁজার জায়গা করে নেন। ভারতের বিহার রাজ্যের রাজনীতিতে শুধু নন, পুরো ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি বরাবরই প্রভাব রেখে চলেছেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এরপর ২০০৪ সালে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সাবেক এই রেলমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৫তম লোকসভার পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে তিনি পদ ছাড়েন। তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পাটনা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন দিয়ে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৭০ সালে তিনি সেই স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বিহার মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। আরও বড় পরিসরে রাজনীতি সেখান থেকেই শুরু। এই আন্দোলনের সময়ই তিনি জয় প্রকাশ নারায়ণের কাছাকাছি আসেন। যে কারণে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জনতা পার্টিতে নাম লেখান। এই জনতা পার্টির মনোনয়ন পেয়েই তিনি লোকসভা নির্বাচনে নামেন। ১৯৭৭ সালে লোকসভার সদস্য হন তিনি। তখন তিনি জনতা পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সী পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে লালু প্রসাদ সবার নজর কাড়েন। ১৯৯০ সালে তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সবাইকে চমকে দেন। তার রাজনৈতিক জীবনের পথচলায় নানা উত্থান পতন ছিল। তারই একটি, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি। ১৯৯৭ সালে এই কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেশ বেকায়দায় ছিলেন। এই সময়ে তার স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। লালু প্রসাদের স্ত্রী রাবড়ি দেবী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় থেকেছেন। স্বামী লালু প্রসাদের যখন অবস্থা প্রতিক‚লে তখন স্ত্রীর মুখ্যমন্ত্রী ভ‚মিকায় প্রতিপক্ষরা নানা বিষেশণ যুক্ত করে লালু প্রসাদকে রাজনীতির মাঠে শোচনীয় ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে। যে কারণে ‘জঙ্গল রাজ’ উপাধিটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। তবে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের পাহাড় জমে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দলীয় কর্মীদের অপরাধ সংঘটনের নানা অভিযোগে তাকে ‘বিহারের গুন্ডা রাজ’ বলে সম্বোধন করেন বিরোধীরা। লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরও তার অতীত ভুলে যেতে দেননি প্রতিপক্ষের নেতারা। শীর্ষস্থানীয় বহু নেতাই তাকে কটাক্ষ করে ‘দুধওয়ালার ছেলে’ বলেছেন। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি একসময় সামান্য এক ক্লার্ক ছিলেন। তার বড়ভাই ছিলেন পিয়ন আর থাকতেনও পিয়নদের কোয়ার্টারে। এসব কটু কথায় কখনই বিচলিত হননি তিনি। বরং গর্ব করে নিজের বর্তমান অবস্থানকে দেখিয়ে দিয়েছেন সমালোচনাকারীদের। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই খারাপ সময় চলে তার। যে কারণে জনতা পার্টি থেকে বেরিয়ে আসেন। কিছুটা ক্ষোভের বশেই তৈরি করেন নতুন দল। রাষ্ট্রীয় জনতা দল নামের সেই দলের প্রেসিডেন্ট তিনি। ১৯৯৭ সালের ৫ জুলাই যাত্রা শুরু করা এই দল নিয়েই রয়েছেন তিনি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তার এই দল বিহারের ক্ষমতায় ছিল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার দলের অবস্থা ছিল শোচনীয়। মাত্র ৪টি আসনে জয়লাভ করেছে এই সময়ে। তবে ২০১৩ সালে এসে দলকে আবার গুছিয়ে নেন তিনি। দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি তাকে রাজনৈতিক মাঠে যেন দাঁড়াতেই দিচ্ছিল না। যে কারণে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর তিনি লোকসভার সদস্যপদ হারান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি আবারও মাত্র ৪টি আসনে জয়লাভ করে। ভারতীয় জনতা পার্টির অভাবনীয় উত্থান ঘটে এই সময়ের ব্যবধানে। তবে ২০১৫ সালে রাজকীয়ভাবে লালু প্রসাদ আবার রাজনীতির মাঠে নামেন। ৮১টি আসন লাভ করে তার রাজনৈতিক সহযোগী নীতিশ কুমার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টির অন্যতম প্রধান এই জয় অতীতের সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ১০ বছর পর এসে রাজনীতির মাঠ কাঁপিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা লালু প্রসাদের রাজনৈতিক সাফল্যের একটি বড় নমুনা।

 


প্রধানমন্ত্রী মোদি ধারণা করছিলেন, এই রাজ্যে জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি আরও বাড়বে। কিন্তু বিহারে মহাজোটের সাফল্যের নেপথ্য নায়ক হয়ে ওঠেন লালু প্রসাদ যাদব। বিবাদ ভুলে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরোধিতা করে হাতে হাত মিলিয়েছিলেন লালু প্রসাদ এবং নীতিশ কুমার...

নীতিশ-লালু ঐক্যে জয়

বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের পতনের পেছনের প্রধান কারণ নীতিশ, লালু এবং কংগ্রেস মহাজোট। ভারতের অন্যতম দরিদ্র এই রাজ্যে নীতিশ-লালু ম্যাজিকের কাছে সুস্পষ্ট ধরাশায়ী হয় মোদি ম্যাজিক। এই জয়ে নীতিশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের অত্যন্ত দরিদ্র রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিহারের নির্বাচনে জয়ের আশা করছিলেন। ধারণা করছিলেন, এই রাজ্যে জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি আরও বাড়বে। কিন্তু ফল হলো উল্টো। এই পরাজয় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য বড় আঘাত হিসেবে আবিভর্‚ত হলো। আর বিহারের সংখ্যালঘু এবং উদারপন্থিদের জন্য এই জয় স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফল প্রকাশের পর বিজেপি জোটের পরাজয় মেনে নিয়ে নীতিশ কুমারকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনে জয়ের খবরে রাজপথে নেমে আসেন মহাজোটের সমর্থকরা। অনেকে লালু প্রসাদকে রাজনীতির হিরো বলে আখ্যা দেন। নীতিশ কুমার বিহারের গত দুই নির্বাচনে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু এবার বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তিনি হাত মেলান তার পুরনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ লালু প্রসাদের সঙ্গে। দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত লালু নিজে ভোটে লড়তে পারেননি, কিন্তু সমানসংখ্যক আসনে লড়াইয়ে তার দল নীতিশ কুমারের দল জেডি-ইউয়ের চেয়ে বেশি ভালো করেছে। অন্তত ৮০ আসন পেতে চলেছে তার দল। গত অক্টোবর ও চলতি নভেম্বর মাসে মোট ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিহারে মহাজোটের সাফল্যের নেপথ্য নায়ক তিনিই। তিনি আরজিডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব। বিবাদ ভুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করে হাতে হাত মিলিয়েছিলেন লালু প্রসাদ যাদব এবং নীতিশ কুমার। মহাজোটের সাফল্যের পর সংবাদ সম্মেলনের জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার আরজিডি দফতরে পৌঁছে যান। একে অপরকে  জড়িয়ে ধরলেন লালু-নীতিশ।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লালু প্রসাদের দলেরও উত্থান হলো। এবার মহাজোটের তিনটি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে লালু প্রসাদ যাদবের দলই। তবে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে লালু প্রসাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, নীতিশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।

 

লালু প্রসাদের ইচ্ছা

প্রত্যেকেরই বিচিত্র ইচ্ছা আছে। আর লালু প্রসাদের ইচ্ছা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবিলম্বে পাকিস্তান পাঠানো হোক। তার মতে, মোদির জন্য ওটাই সেরা ওষুধ। আর তাতে পাকিস্তানও বুঝবে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা কাকে বলে। মোদি নিজে কথায় কথায় সবাইকে পাকিস্তানে পাঠাতে চায়, তাই আমরা বরং সবাই মিলে ওকেই পাঠিয়ে দিই।

জেলজীবন

পশুখাদ্য দুর্নীতিতে লালু প্রসাদের নাম জড়িয়ে যায় ১৯৯৬ সালে। ৪.৫ বিলিয়ন রুপির এই দুর্নীতিতে তিনি শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হন। একাধিক রিপোর্ট প্রমাণ করে তিনি বিভিন্ন সময়ে এই বিশাল অঙ্কের টাকা উত্তোলন করেছেন। যে কারণে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ও তার স্ত্রী এই দায়িত্ব তুলে নেন। ২০০১ সালে এই মামলাটি সুপ্রিমকোর্ট ঝাড়খন্ডে  স্পেশাল কোর্টে পাঠান। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম রিমান্ডে যান।

এ ছাড়া একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়ে তার নাম। এগুলোর বেশির ভাগই দুর্নীতি মামলা। শেষ পর্যন্ত জেলে  ঢুকতে হয় তাকে। তবে জেলে ছিলেন খোশ মেজাজে। এমনিতেই বিরসা মুণ্ডা জেলে বন্দীদের দেখভালকারী কর্মীরা অধিকাংশই লালুর দলের সমর্থক। মাঝে-মধ্যেই নিজেদের সেল থেকে লালু প্রসাদের নামে জয়ধ্বনি দিত তারা। রাঁচির কারাগারের বাগানে মালীর কাজ করেছেন। আপিলের আবেদন বাতিল হলে কারাদণ্ডের ১ মাস পর সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসেবে তাকে মালীর কাজ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। লালুসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের সবার জন্যই বাগানে মালীর কাজ নির্ধারিত হয়। জেলের নিয়ম মেনেই তিনি প্রতি মাসে পারিশ্রমিকও পান। এর আগে ১৯৯৭ সালে কেলেঙ্কারি মামলায় ১৩৪ দিনের জন্য জেল হয় লালুর। তবে জেলে না থেকে লালু কাটান বিহারের মিলিটারি পুলিশের গেস্টহাউসে।

 

আষ্টেপৃষ্ঠে বিতর্ক

পশুখাদ্য দুর্নীতি

ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব। পশুখাদ্য দুর্নীতির মামলা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় আঘাত। এই কেলেঙ্কারিতে ডুবেছেন তিনি। জেলও খেটেছেন। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার ২৫ লাখ টাকা জরিমানাও হয়। এই সাজার কারণে  রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রধান লালু প্রসাদ যাদব তার লোকসভার সদস্যপদও হারান। যে কারণে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি কোনো নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পারবেন না। লালু প্রসাদ  বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পশুখাদ্য কেনার জন্য বরাদ্দ থেকে ৩৭ কোটি টাকা সরকারি অর্থ নয়ছয় করা হয়েছিল এই অভিযোগে মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল গত ১৭ বছর ধরে; অবশেষে তাদের প্রত্যেককেই দোষী বলে চিহ্নিত করেছেন আদালত। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা, ১২০ বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতি দমন আইনের ১৩ (১) (সি), ১৩ (১) (ডি), ১৩ (২) ধারায় লালুসহ ৪৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। ১৯৯৬ সালে চাইবাসা ট্রেজারি থেকে গবাদিপশুর খাবার কেনার নামে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা তোলার অভিযোগে অবিভক্ত বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। এরপর পাটনা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০০১ সালে রাঁচির সিবিআই আদালতে মামলা স্থানান্তরিত হওয়ার পর আদালতে আত্নসমর্পণ করেন লালু প্রসাদ যাদব।

অভিনব টুইট

অভিনব টুইটে নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন লালু প্রসাদ যাদব। ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্ব গান্ধী) হত্যা প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব।

লালু প্রসাদ টুইট করেছেন এভাবে

প্রশ্ন : বাপুজীর হত্যাকারী গডসেকে কারা পুজো করে?

উত্তর : আরএসএস।

প্রশ্ন : আরএসএসকে কারা পুজো করে?

উত্তর : বিজেপি।

প্রশ্ন : বিজেপিকে কে পরিচালিত করছে?

উত্তর : মোদি।

তাহলে হত্যাকারী কে?’  এভাবে টুইটে মোদিকে কটাক্ষ করেন লালু প্রসাদ যাদব। প্রসঙ্গত, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে ‘বাপুজী’ বলা হয়।

গো-মাংস বিতর্ক

গো-মাংস বিতর্কে বোমা ফাটিয়েছেন লালু প্রসাদ যাদব। তিনি বলেন, হিন্দুদের মধ্যেও কেউ কেউ গো-মাংস খায়। অনাবাসী ভারতীয়রাও। তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিজেপির নেতা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তিনি হুমকি দিয়েছেন, লালু তার মন্তব্য ফিরিয়ে না নিলে মামলা করবেন। লালুর বক্তব্য, যারা মাংসাশী, তারা গরুর মাংস খেল না পাঁঠার, তাতে কী এসে যায়?  তবে পরবর্তীতে তিনি বক্তব্য ফিরিয়ে নিয়ে বলেন, তিনি আসলে গো-মাংস নয়,বিফের কথা বলেছেন।

 

লালুর উত্থান লালুর পতন

লালু প্রসাদ যাদব নামটি ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত, এটা  তার বিরোধীরাও মেনে নেবেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পরবর্তীতে রেলমন্ত্রী হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছে বোরিং রাজনীতিকে তিনি ইন্টারেস্টিং বানিয়েছেন। কখনো শায়েরি, কখনো মজার কথা বলে পার্লামেন্ট গুরুগম্ভীর আলোচনায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মুহূর্ত...

 

সাপ্লিমেন্ট মুখ্যমন্ত্রী!

লালু প্রসাদের স্ত্রী রাবড়ি দেবী। রাজনৈতিক মাঠে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে নাকাল লালু প্রসাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পথ ছেড়ে দায়িত্ব তুলে দেন তার স্ত্রী রাবড়ি দেবীর হাতে। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। কোনো প্রশাসনিক দক্ষতা না থাকলেও স্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়ায় সমালোচকরাও এক হাত নেন। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। যে কারণে বিরোধীরা রাবড়ি দেবীকে তুলনা করেন ‘সাপ্লিমেন্ট মুখ্যমন্ত্রী’!

 

২ ছেলে ৭ মেয়ে

লালু প্রসাদের পরিবার বেশ বড়। বিয়ে করেছেন রাবড়ি দেবীকে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়ায় অফিস ছাড়তে হয়েছিল লালু প্রসাদকে। তখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন রাবড়ি দেবী। এই দম্পতির দুই ছেলে ও সাত মেয়ে রয়েছে।  ছেলে সন্তান দুজন হলেন তেজ প্রতাপ ও তেজাসভি। অন্যদিকে সাত মেয়ের নাম হলো মিশা ভারতী, রোহিনী আচার্য, চন্দা, রাগিনী, ধনু, হেমা, লক্ষী।

মেয়ে রাজ লক্ষীর বিয়েতে হৈচৈ ফেলে দেন লালু প্রসাদ। লালু প্রসাদ যাদবের মেয়ের মুলায়ম সিং যাদবের নাতির সঙ্গে বিয়ে হয়। মূল বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় অনুষ্ঠান পর্ব। মুলায়মের প্রাম সইফইতে গিয়ে তিলক অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২১ ফেব্র“য়ারি বিয়ের অনুষ্ঠান পর্বে এসেছিলেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। আত্নীয়, রাজনীতিক, গ্রামের মানুষ, সাংবাদিক, বিচারক ও বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মিলিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ১ লাখ। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, বিহারের নীতিশ কুমারসহ আরও অনেকে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর