শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি

সংকটে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

তানভীর আহমেদ

সংকটে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

ডুবে যাবে ৬০০ মিলিয়ন মানুষ

পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সারা বিশ্বে। মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হুমকিতে পড়েছে বিশ্ববাসী। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণতার হার এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর ৬০০ মিলিয়ন মানুষ ডুবে যাবে। সমুদ্র গ্রাস করে নিবে বাংলাদেশসহ সমুদ্রউপকূলবর্তী দেশগুলোকে। অন্তত ৭০টি দেশ সমুদ্রের তলদেশে চিরতরে হারিয়ে যাবে। হিসাব কষে এই সংখ্যাতত্ত্ব দাঁড় করানো হলেও বাস্তবতা আরও কঠিন হতে পারে। পরিবেশে অন্তত ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে মেনে নিতে বাধ্য হবে বিশ্ববাসী। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী মানুষরা সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ডিসকভারি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আর মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই পৃথিবীর ২৮০ মিলিয়ন মানুষের ঠিকানা সমুদ্রতলে ডুবে যাবে। পৃথিবীতে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে সেটি একেবারেই ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা পৃথিবীর জন্য। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই আশঙ্কাজনক ঘটনা পৃথিবীর গত ১ মিলিয়ন বছরেও ঘটেনি। মাত্র এক শতকের ব্যবধানে পৃথিবীর মানুষের ভবিষ্যত্ সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে বিশ্ববাসী, বিশেষত কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো সচেতন না হলে পৃথিবী অচিরেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন কল্পনা নয়। এ তো গেল কেবল ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কথা। যদি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে। থমকে যেতে পারে মানবসভ্যতা।

 

২১৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাব আমরা

বিগত দুই দশক ধরে কার্বন দূষণ এড়াতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে আসছে দরিদ্র দেশগুলো। বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাসের লক্ষ্যে কাজ করছে কয়েকটি দেশ। ব্রিটেন ইতিমধ্যে কয়লানির্ভর সব কারখানা বন্ধ করেছে। সম্প্রতি প্যারিস সম্মেলনে বিশ্ববাসী আশার আলো দেখতে পেয়েছে।

আমেরিকা, নরওয়ে, মেক্সিকো, কলম্বিয়াসহ ১০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখতে স্বেচ্ছায় প্রতিশ্রুত হয়েছে। এতে ক্যারিবীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো তাদের প্রাকৃতিক সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখায় মনোযোগী হতে পারবে।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলো তাদের অরণ্যভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগী হবে। আফ্রিকা সচেষ্ট হবে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশগুলো বিকল্প শক্তির উৎস সন্ধানে তত্পর হবে। নইলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। এবছরের শুরুতে ‘ন্যাশানাল জিওগ্রাফি’ প্রকাশিত এক গ্লোবাল ম্যাপে দুনিয়ার বিভিন্ন শহরের সঙ্গে কলকাতার ও বাংলাদেশ স্থান হয়েছে জলের তলায়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং কারণে যেদিন পৃথিবীর সব বরফ গলে যাবে তখনকার দৃশ্য উঠে এসেছে এই ম্যাপে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে মাত্র ১০ শতাংশের মতো বরফের চাদর রয়েছে। পৃথিবীতে পাঁচ মিলিয়ন কিউবেক মাইল হিমায়িত জল জমা রয়েছে। যদি এই বরফ স্তর পুরোটাই গলে যায় তাহলে কেমন দেখতে লাগবে আমাদের পৃথিবীকে? ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সাতটি মহাদেশের মানচিত্র প্রকাশ করেছে যা সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলো প্রায় ২১৬ ফুট জলের তলায় চলে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর