শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তীব্র শীতেও নির্বাচনী উত্তাপ

তীব্র শীতেও নির্বাচনী উত্তাপ

‘আমার কথা মনে রাখবেন’ অনুরোধ করছেন প্রার্থী আর ভোটার বলছেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই।’ এভাবেই চলছে। পৌর নির্বাচনের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। এখনো ‘আপনাকেই দেব’ শোনা যায় না; শোনা যাচ্ছে ‘অবশ্যই অবশ্যই’। মুখে হাসি, বুকে কাশি অবস্থা প্রার্থীর। পৌষের তীব্র শীত উপেক্ষা করে ঘরে ঘরে গিয়ে এত যে মিনতি, এত যে করমর্দন, তার জবাবে ভোটারের মিষ্টি হাসি ছাড়া পরিষ্কার কিছুই দৃষ্টিগোচর নয়। তাই প্রার্থী আর প্রার্থীর আপন লোকরা ছুটছেন তো ছুটছেন। হিমেল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে তাদের, তবু যেন অব্যক্ত এক উত্তাপে ঘামছেন। অজানাকে জানার অদম্য কৌতূহল এভাবে উত্তাপ ছড়াবে ভোট গননা শেষ হওয়া পর্যন্ত।

প্রতিবেদনটি সমন্বয় করেছেন— মাহমুদ আজহার, গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

 

ভোট নিয়ে ব্যস্ত যারা

 

কিছু কিছু জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে, আর কখনো দলে তাদের স্থান দেওয়া হবে না —ওবায়দুল কাদের

 

 

 

বিদ্রোহীদের মদদদাতা এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতার রেহাই নেই

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পৌর নির্বাচনে দলের সমন্বয়ক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের মদদদাতা দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতার তালিকা করা হচ্ছে। তাদের রেহাই নেই। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের আগামী বৈঠকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। তাই কিছু কিছু জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে, আর কখনো তাদের স্থান দলে হবে না। পৌর নির্বাচনে বিএনপির নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের চেয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার রেকর্ড আমাদের ভালো। বিএনপির নির্বাচন মানেই দশজন গুণ্ডা, বিশটি হুন্ডা আর দখল। আমরা তা করিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিগত কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীই জয়ী হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে ফলাফল ভিন্ন হলেও হতে পারত। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের দলের ভিতরেও হয়। কিছু কিছু ঘটনায় কেন্দ্রও বিব্রত হয়। পরবর্তীতে আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। আওয়ামী লীগের এ নীতিনির্ধারক বলেন, বিএনপি যত অভিযোগই করুক না কেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেব। বিএনপি মার্কা নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। সরকার পূর্ণ সহযোগিতা দেবে।  তিনি বলেন, বিএনপি ও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, সরকারের জন্য বিব্রতকর এমন কিছু আওয়ামী লীগ করবে না।


 

 

 

চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমরা টিকে থাকতে চাই। স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও দলীয় প্রতীকে হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের রূপ পেয়েছে।

—মো. শাহজাহান

 

 

 

সুষ্ঠু ভোট হলে গণতন্ত্রের শুভ বার্তা বয়ে আনবে

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে তা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনবে বলে মনে করেন পৌর নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটর সেলের সদস্য সচিব মো. শাহজাহান। বিএনপির এই যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী। এখনো নানা শঙ্কা সত্ত্বেও আমরা আশা করছি, পৌর ভোটও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নইলে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্ত ভিত তৈরি হবে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও দলীয় প্রতীকে হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের রূপ পেয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে নানা সমস্যা থাকলেও এই ভোটে জাতীয় ইস্যুগুলো উঠে আসছে। তাই আমরাও রাজনৈতিকভাবেই এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এখন সরকারের উচিত, নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে একটি সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার চিন্তাভাবনা করছি। মোটামুটিভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি ৮০ ভাগ পৌরসভায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলেও আশা করছি। কারণ এ সরকারের প্রতি জনগণের প্রচণ্ড ক্ষোভ আছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোটারদের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্যই সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। এ নির্বাচন ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য একটি শুভ বার্তা বয়ে আনবে। নইলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে আমরা গণতন্ত্রের শুভ বার্তাই প্রত্যাশা করি। সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী প্রার্থীদের সুষ্ঠুভাবে প্রচারণা চালানোর সুযোগ দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।  নইলে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এদেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।


 

 

 

সংসদ সদস্য হোক বা অন্য  কেউই হোক; যদি কেউ এখন আচরণবিধি ভঙ্গ করেন বা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন, আমাদের আদেশ এবং নির্দেশ সবার প্রতি, যাতে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া হয়।

—মো. শাহনেওয়াজ

 

চিঠি নয় এবার অ্যাকশন

পৌর নির্বাচনে বিধি ভঙ্গ ঠেকাতে ‘অসহায়’ নির্বাচন কমিশন এবার সরাসরি ‘অ্যাকশন’ দেখানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য আর কোনো চিঠি দিয়ে সতর্ক করার সময় নেই। এখন সরাসরি ‘অ্যাকশন’ নেওয়া হবে। শাহনেওয়াজ বলেন, এখন আর চিঠির বিষয় নয়, অ্যাকশনের বিষয়। এখন যে সময় রয়েছে চিঠি-চুঠির বিষয় থাকবে না; এখন সরাসরি রিটার্নিং অফিসারকে বলেছি, ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তারা সরাসরি অ্যাকশন নেবে। আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপক অভিযোগ উঠলেও এই নির্বাচন কমিশনার বলছেন, দু-একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ঘটেছে। নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের বিপক্ষে চলে গেছে— এ কথা মোটেও সত্য নয়। এখনো আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে— দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে; ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের দৃষ্টিগোচরে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশও দিচ্ছি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তার খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও শোকজ করার ব্যবস্থা করছি। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে যত বড় লোকই হোক, ক্ষমতাশালীই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমপিদের বিধি ভঙ্গে কোনো ছাড় না দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। সংসদ সদস্য হোক বা অন্য কেউই হোক; যদি কেউ এখন আচরণবিধি ভঙ্গ করেন বা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন, আমাদের আদেশ এবং নির্দেশ সবার প্রতি, যাতে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।  আমাদের কাছে এ ধরনের রিপোর্ট আছে— প্রার্থীকে সহায়তা করছেন বা সহায়তা নিচ্ছেন প্রার্থী; তেমন ঘটনা ঘটলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেব।


 

এক বিদ্রোহীতেই কপাল পুড়ছে নৌকা-ধানের শীষের

 

আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীতেই কপাল পুড়ছে নৌকা ও ধানের শীষ প্রার্থীর। শাসক দলের স্থানীয় এমপির একক সিদ্ধান্ত এবং বিএনপির প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ভিতরে ভিতরে ঝুঁকছেন  নারিকেল গাছ প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর দিকে। এখন পর্যন্ত গৌরীপুর পৌরসভার নির্বাচনী চিত্র এটি। দুই দলের চাপা ক্ষোভের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন গতবারের বিদ্রোহী বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি বিদ্রোহী হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে মাঠ দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন সুজিত কুমার ঘোষ। নির্বাচনী হিসাব যেমনই হোক মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা রাত-দিন ভুলে গিয়ে নিজ প্রচারণায় ব্যস্ত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুয়ারে কড়া নেড়ে উন্নয়নের ফুলঝুরি আওড়াচ্ছেন তারা।  পৌষের শীতকে জয় করে চা স্টল থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে চলছে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে নানা আলোচনা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেও বোঝা গেছে এবার বেশ কৌশলী তারা। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের বেশ কিছু নেতা আড়াল থেকে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শফিকুল ইসলাম হবির পক্ষে। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত সৈয়দ রফিকুল ইসলামের পক্ষে যারা মাঠে আছেন তাদের নিয়েও সংশয় রয়েছে বলে জানান স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এসবের কারণ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র আহ্বান না করে জরুরি ভিত্তিতে পৌর কমিটির সভা ডেকে রফিককে প্রার্থী দিয়ে জেলা এবং কেন্দ্রে একক সিদ্ধান্তে নাম দেন এমপি। সেদিন থেকেই মূলত পৌর এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই বিদ্রোহী হবির হয়ে আড়ালে কাজ করছেন। এদিকে বিএনপির প্রার্থীকে পছন্দ না হওয়ায় জামায়াতসহ বিএনপির একটি বড় অংশও কাজ করছে নারিকেল গাছের পক্ষে। দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমানে চারটি গ্রুপ রয়েছে এ উপজেলায়। প্রতিটি গ্রুপ থেকেই একজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এর মধ্যে সুজিতের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ায় অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেনি।  ফলে ঘাপটি মেরে অনেকেই কাজ করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীর পক্ষে।  সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ


 

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী বিএনপিতে জামায়াত ফ্যাক্টর

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী-বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী ও জামায়াত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত হলেও এখানে বিএনপি প্রার্থীদের ছাড় দেয়নি জামায়াত।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান দুই দলে দুই সমস্যা। আওয়ামী লীগে সমস্যা বিদ্রোহী, বিএনপিতে সমস্যা জামায়াত। চার পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী-বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী ও জামায়াত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত হলেও এখানে বিএনপি প্রার্থীদের ছাড় দেয়নি জামায়াত। জেলার চারটি পৌরসভায়ই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। পাশাপাশি জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থীরা। সদর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন একজন।

তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে শিবগঞ্জ পৌরসভায় নিষ্ক্রিয় নেতা ময়েন খানকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। ফলে দলের দুর্দিনে মাঠে থাকা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। আর এ সুযোগে কতিপয় সুবিধাবাদী নেতা-কর্মী অর্থশালী প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ায় এর সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত-বিএনপির প্রার্থীরা।

এমনিতেই শিবগঞ্জ পৌরসভায় গত পাঁচবারের নির্বাচনে কোনোবারই জিততে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চারবার বিএনপির প্রার্থী ও একবার জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের এই ‘ভঙ্গুর’ অবস্থানে  গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিন। জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে এখানে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভায় জামায়াতও ভাবনায় ফেলেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের।

এদিকে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক না থাকায় বেকায়দায় রয়েছে জামায়াত। তারপরও জামায়াত প্রার্থীরা বলছেন জামায়াত সমর্থকরা প্রার্থী দেখে নয়, দলের লোক দেখে ভোট দেবেন। এতে এখন বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত প্রার্থীরা। উভয় দলের প্রার্থীরা এখন তাদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং পথসভা করছেন। পৌর এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটও চাচ্ছেন তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সামিউল হক লিটন, বিএনপি মনোনীত সাবেক জামায়াত নেতা ও সাবেক মেয়র আতাউর রহমান, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মাওলানা আবদুল মতিন, জাসদের মনিরুজ্জামান মনির, জামায়াতের জেলা আমির নজরুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জামায়াতের প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। তারা একজন অপরজনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আতাউর রহমান সরাসরি ভোট প্রচারণা চালালেও জামায়াতের প্রার্থী নজরুল ইসলাম নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক থাকায় তাদের কর্মীরা প্রত্যেকটি বাড়ি, মহল্লা ও অঞ্চলে ভোটারদের কাছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।

শিবগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঈন খান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিন, বিএনপির সফিকুল ইসলাম ও জামায়াতের প্রার্থী মো. জাফর আলী নির্বাচনী প্রচরণা চালাচ্ছেন। এখানে বিএনপি প্রার্থী সফিকুল ইসলাম মাঠে থাকলেও অধিকাংশ দলীয় নেতা-কর্মী পলাতক রয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী জাফর আলী নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও তার পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এখানেও বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে রয়েছেন জামায়াত প্রার্থী।

রহনপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একক প্রার্থী রয়েছেন। এখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস এমপির আপন ভাই ও বর্তমান পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী বিশ্বাস আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তারিক আহম্মেদ ও জামায়াতের প্রার্থী মিজানুর রহমান (কারান্তরীণ)। এখানে বিএনপি প্রার্থী সরাসরি প্রচারণা চলালেও জামায়াতের মিজানুর রহমান বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ফলে  তাদের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। এতে বিএনপি প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী।

নাচোল পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী সাতজন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুর রশিদ খান ঝালু। বিএনপি প্রার্থী কামরুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল মালেক চৌধুরী, আমানুল্লাহ আল মাসুদ ও আসলাম হোসেন এবং জামায়াতের প্রার্থী ডা. রফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।  এখানেও বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী।

 মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ


 

প্রচারণায় দুলুর ‘পাগলা’ বাহিনী

লালমনিরহাট পৗরসভায় ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে সাবেক উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপি সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুর পাগলা বাহিনী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই পাগলারা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। কোথাও কোনো উঠান বৈঠক হলেই পাগলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। তাদের ব্যতিক্রমী ভোট প্রার্থনা ব্যাপক সাড়াও জাগিয়েছে। এসব পাগলের স্বাভাবিক জ্ঞান না থাকলেও তারা ধানের শীষের প্রতীকের পোস্টার, লিফলেট নিয়ে চায়ের দোকান-ফুটপাথ-রেলস্টেশন ও বাড়িতে বাড়িতে নানা প্রলাপ বকছে। ১০-১২ জনের এই পাগলের দল কখনো সবাই একসঙ্গে, আবার কখনো দ্বৈতভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছে। এদের মধ্যে রফিক পাগলা কয়েক গুচ্ছ প্রকৃত ধানের শীষ ও কয়েকটি পোস্টার শরীরের মধ্যে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। অপরদিকে শামছুল পাগল তেলের কুপি দিয়ে হর্ন সাদৃশ্য করে জনকোলাহলপূর্ণ ফুটপাথে হেঁটে হেঁটে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রলাপ বকছে।  তবে প্রচারণায় তাদের বাধা দেওয়ার অভিযোগও এসেছে বলে জানা গেছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি


 

নতুন ভোটাররাই ফ্যাক্টর

কুষ্টিয়া পৌরসভায় এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বর্ধিত অংশের ভোটাররা।

১৪২ বছরের পুরনো কুষ্টিয়া পৌরসভা এতদিন ১২ ওয়ার্ডে সীমাবদ্ধ ছিল। সম্প্রতি দুটি ইউনিয়ন বিলুপ্ত করে বিশাল একটি এলাকা পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৯টি ওয়ার্ড বেড়ে ২১টি হয়েছে। ভোটার বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে পুরনো ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের কিছু বেশি। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬০ জনে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলী দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর ভোটারদের ধরে রাখতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কুতুব উদ্দিন।  এই বর্ধিত এলাকার ভোটারদের যে প্রার্থী জয় করতে পারবেন, তিনিই হবেন শতাব্দী প্রাচীন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র।

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া


 

কাহালুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী চা বিক্রেতা রোস্তম আলী হাজারী চা বিক্রয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন

তিন ব্যবসায়ী বনাম চা বিক্রেতা

বগুড়ার কাহালু পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে তিন ব্যবসায়ীর সঙ্গে লড়ছেন এক চা-বিক্রেতা। ২ নম্বর ওয়ার্ডে চার কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌস আলম, জামিল হোসেন ভূঁইয়া, তার সহোদর নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও রোস্তম আলী হাজারী। নির্বাচনী মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেরদৌস আলম নিজের কয়েকটি পুকুর নিয়ে মাছ চাষ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পোনা সরবরাহ করে থাকেন। জামিল হোসেন ভূঁইয়া মুরগির খাবারের পাইকারি বিক্রেতা এবং কয়েকটি খামারের মালিক। নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া নিজের পুকুরের পাশাপাশি কয়েকটি পুকুর পত্তনি নিয়ে মাছ চাষ করেন। আবার মুরগির খাবারের পাইকারি বিক্রেতা। এদের কাহালু বাজারে পাইকারি দোকান আছে। কিন্তু রোস্তম আলী হাজারী একজন চা-বিক্রেতা। তিনি কাহালু রেলওয়ে বাজারে দিন-রাত চা ও বিস্কুট বিক্রি করেন। রোস্তম আলী হাজারী রেলস্টেশন এলাকায় চা-বিস্কুট বিক্রয়ের পাশাপশি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই ওয়ার্ডের সাত-আটজন ভোটার বলেন, ‘ফেরদৌস আলম, জামিল হোসেন ভূঁইয়া ও নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া সফল ব্যবসায়ী। তারা এলাকায় পাইকারি ব্যবসা করে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। কিন্তু রোস্তম আলী হাজারী প্লাটফর্মের সামনে স্টেশন বাজারে সামান্য জায়গা নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চা-বিস্কুট বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালান। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এক দিনে যা খরচ করবেন তিনি সারা নির্বাচনে তা খরচ করতে পারবেন না।’ কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামায় জানা যায়, ফেরদৌস আলম ও রোস্তম আলী অষ্টম শ্রেণি পাস। তবে জামিল হোসেন ভূঁইয়া ও নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া স্বশিক্ষিত। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোস্তম আলী হাজারী বছরে আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও রোস্তম আলী হাজারী নিজেকে চা বিক্রেতা উল্লেখ না করে কৃষিকাজ করেন বলে উল্লেখ করেছেন। রোস্তম আলী হাজারী জানান, ‘টাকা দিয়ে নির্বাচন হয় না। ওয়ার্ডে গরিব শ্রেণির লোকই বেশি। তাদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি। আমি সারা দিন চা বিক্রির সঙ্গে নির্বাচনের প্রচারণা চালাই। আবার সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে মহল্লায় মহিলাদের কাছে ভোট চাই।  আমার ইচ্ছা জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় কাজ করে নজির সৃষ্টি করব।

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া


 

দুই জোটে প্রচারণায় কৌশলী শরিকরা

বরিশাল জেলার ছয় পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি মনোনীত এবং ২০ দল সমর্থিত হলেও বিএনপি-জামায়াত ছাড়া মেয়র প্রার্থীদের পাশে নেই জোটের অন্য শরিকরা। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে রয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ নেতা-কর্মীরা। মেহেন্দিগঞ্জে বিএনপির মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন দিপেন বলেন, ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ থাকলেও সেগুলো গুরুত্ব না দিয়ে নিজের প্রচারণায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি। এ ছাড়া মেহেন্দিগঞ্জে ২০-দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপি ছাড়া একমাত্র জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আড়ালে-আবডালে থেকে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানান মেয়র প্রার্থী দিপেন। মুলাদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আসাদ মাহমুদ বলেন, ২-৩ দিন আগে তার বেশ কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। তিনি আবার পোস্টার লাগিয়েছেন। এখন দুই দলের সমান প্রচারণা চলছে। বিএনপি ছাড়াও পুলিশের হয়রানির আশঙ্কায় ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে জোটের অন্যান্য শরিক দলের কোনো তত্পরতা নেই বলে তিনি জানান। গৌরনদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন জানান, প্রতিনিয়ত তার নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। শরীফ স্বপন বলেন, তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হলেও ২০ দলের সমর্থন রয়েছে। জোটের শরিকদের মধ্যে একমাত্র জামায়াত নেতা-কর্মীরা পুলিশের হয়রানি এড়িয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন। উজিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হলেও মহাজোট এবং ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদ নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। একই কথা বলেছেন, গৌরনদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হারিছুর রহমান হারিছ। বিএনপির পৌর নির্বাচন মনিটরিং সেলের বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ২০ দলের সমর্থন রয়েছে। জামায়াতের কিছুটা প্রশাসনিক সমস্যা থাকায় তারা পুলিশের হয়রানি এড়িয়ে কৌশলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে।  বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।  বিভিন্ন পৌরসভায় তাদের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে মহাজোট এবং ১৪ দলের শরিকরা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে, আবার কোথাও তারা নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের।

রাহাত খান, বরিশাল


 

একই পরিবারের তিন প্রার্থী

 

দুই সহোদর আমানতুল্লাহ ও শহিদুল ইসলাম কাউন্সিলর পদে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং তাদের ভাবী সেরুয়া বেগম সংরক্ষিত পদে লড়ছেন

 

রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে (রামকৃষ্ণপুর, জানিপুর ও কর্ণিপাড়া) কাউন্সিলর পদে একই পরিবার থেকে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই সহোদর আমানতুল্লাহ ও শহিদুল ইসলাম কাউন্সিলর পদে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং তাদের ভাবী সেরুয়া বেগম সংরক্ষিত পদে লড়ছেন। একই পরিবারের তিন প্রার্থী নিয়ে বিব্রত সাধারণ ভোটাররা। এ নিয়ে এলাকায় চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার জনপ্রিয় কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম (৪২) দুবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সেরুয়া বেগম নির্বাচিত হন। এবার এই পদে সাইফুলের দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেরুয়া বেগমও লড়ছেন সংরক্ষিত পদে। তারা সবাই নির্বাচনী প্রচারে প্রয়াত কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করছেন। বড় ভাই আমানতুল্লাহ মরহুম ভাইয়ের ইমেজকে ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে জানান, ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন ও তার রেখে যাওয়া অসম্পন্ন কাজ শেষ করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আরেক ছোট ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে কী জন্য প্রার্থী হলো, তা বুঝতে পারছি না। ভোটাররা যাকে চাইবেন, তাকেই নির্বাচিত করবেন।’ নির্বাচন থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। ছোট ভাই শহিদুল ইসলামও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে সাইফুল ইসলামের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাবেন। এলাকার  ভোটাররা তার প্রতি দুর্বল ছিল। এ কারণে ছোট ভাই হিসেবে তিনি সে সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না বলে জানিয়েছেন। সেরুয়া বেগম জানান, তার স্বামীর ইমেজকে প্রচার করে ভোট চাইছেন। একই পরিবার থেকে তিনজনের প্রার্থিতার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, আমানতুল্লাহ তার ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) এবং শহিদুল ইসলাম দেবর। স্থানীয় ২৬ জন ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একই পরিবারের তিনজন প্রার্থীকে নিয়ে তারা রীতিমতো বিব্রত।  সবাই প্রয়াত সাইফুল ইসলামের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছেন বলে তারা কাকে  ভোট দেবেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সর্বশেষ খবর