শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বদলে যায় নাটোরের জীবন-চিত্র

নাটোর জেলার আমচাষি মো. আবুল হোসেন। বহুদিন ধরেই আমচাষ করছিলেন। কিন্তু আমের মৌসুমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কখনো ন্যায্যমূল্য পেতেন না। সংরক্ষণেরও সুযোগ ছিল না। এরপর স্বপ্নদ্রষ্টা আমজাদ খান চৌধুরী সেখানে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করলেন। স্বপ্ন দেখালেন চাষিদের। আমচাষি আবুল হোসেনের চিন্তা দূর হলো। প্রাণের কাছে আম বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পেলেন। স্বাবলম্বী হলেন। তার মতোই নাটোরের আমচাষি দেবাশীষ প্রামাণিক, কামাল হোসেনসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৬ জেলার হাজার হাজার চাষির ভাগ্য বদলে গেল। দরিদ্র কৃষি পরিবারগুলোতে ফিরে এলো সোনালি দিন।

নাটোরের কৃতী সন্তান আমজাদ খান চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত কৃষিভিত্তিক প্রাণ কোম্পানি উত্তরাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছে। এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উত্পাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্যই শুধু পাচ্ছেন না, বেকারত্ব দূরীকরণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।

২০০০ সালে আমজাদ খান চৌধুরী নাটোর শহরতলির তেবাড়িয়া ইউনিয়নের একডালায় দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় প্রাণ এগ্রো ফ্যাক্টরি। শুরু থেকে প্রাণের আম ক্রয় কার্যক্রম উত্তরবঙ্গের আমচাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। নতুন করে অনেক কৃষক আমচাষে উদ্বুদ্ধ হন। প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মাহাতাব উদ্দিন জানান, তাদের কোম্পানির সঙ্গে প্রায় ১৩ হাজার চুক্তিবদ্ধ আমচাষি রয়েছেন। প্রাণ কৃষি হাবের মাধ্যমে তারা সারা বছর ওই চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। স্বল্পমূল্যে উন্নতজাতের চারা প্রদান, সার, কীটনাশক ব্যবহার, রোপণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেন। বছর শেষে আমচাষিদের প্রতিনিধি ও প্রাণের প্রতিনিধিরা বসে দাম নির্ধারণ করেন। সেই নির্ধারিত দামেই আম কিনে নেয় প্রাণ। এতে কৃষকরাও খুশি থাকেন, প্রাণও লাভবান হয়।

প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, আম ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক প্রান্তিক কৃষক এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য যেমন— চাল, ডাল, বাদাম, টমেটো, দুধ, জলপাই, মরিচ ও হলুদ সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের ফ্যাক্টরি নাটোরে হওয়ায় প্রাণের চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা মূলত উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক। তারা বগুড়া, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়, রংপুর, নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করে। কৃষকদের উত্পাদিত আলু থেকে নাটোরের কারখানায় পটেটো চিপস, ক্র্যাকার্স এবং টমেটো থেকে বিশ্বমানের সস্ উত্পাদন হয়। এই ফ্যাক্টরিতে উত্পাদিত প্রাণের অন্যান্য এগ্রোভিত্তিক পণ্যের মধ্যে আছে প্রাণ সস্, জেলি, আচার, চাটনি, নুডল্স, বিভিন্ন মসলা, পিনাটবারসহ আরও কিছু প্রোডাক্ট। তা ছাড়া এখানে আমের মৌসুমে আম সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে প্রাণ গ্রুপের নরসিংদী ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়। সেখানে তৈরি হয় প্রাণ ম্যাংগো ড্রিংকস। নাটোর ফ্যাক্টরিতে সরাসরি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়াও আমের মৌসুমে অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান ঘটে ফ্যাক্টরিসহ আমচাষি ও সরবরাহকারীর কাজের সহায়তায়। আর এই শ্রমিকের প্রায় ৯০ ভাগই নারী। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে তিনটি ডেইরি হাবের মাধ্যমে প্রাণের ডেইরি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হাবগুলো নাটোরের গুরুদাশপুর, পাবনার চাটমোহর ও রংপুরে অবস্থিত। পাশাপাশি নাটোরের একডালায় ২০১১ সালে প্রাণের একটি ডেইরি একাডেমি স্থাপিত হয়েছে। এ একাডেমিটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত। একাডেমিটি পরিচালনার জন্য মোট ১১ জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। একাডেমিতে ‘ডেইরি ফার্ম ম্যানেজমেন্ট’-এর ওপর বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৬৮৯ জন প্রশিক্ষণার্থী এ একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যাদের ২৪৭ জনকে প্রাণ ডেইরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজে থেকেই খামার স্থাপন করেছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী।             —নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর