বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্ব ক্ষমতাধর পুতিন

তানভীর আহমেদ

বিশ্ব ক্ষমতাধর পুতিন

মন ভালো থাকলে ঘণ্টায় ১৫০ মাইল বেগে গাড়ি চালান

তিনি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। একটু দুপুরের দিকে প্রথম খাবার খান। ‘কটেজ চিজ’ নামে পনির থাকা চাই সকালের নাশতায়। এ ছাড়া তিনি কোয়েলের ডিম ও ফলের রস খেতে পছন্দ করেন। সকালে নাশতার পর সাঁতার কাটার জন্য সুইমিং পুলে নামেন। পরেন সাঁতার কাটার চশমা। সাধারণত ক্রলিং স্টাইলে সাঁতার কাটেন। সাঁতারের পর জিমে সময় কাটান। বিভিন্ন ব্যায়াম শেষে গরম ও ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করেন। তিনি ইন্টারনেট পছন্দ করেন না। তার অফিসে টেলিভিশনও নেই। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি  নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। এখনো কাগজেই কাজ করেন। ব্যবহার করেন সোভিয়েত যুগের ল্যান্ড টেলিফোন লাইন। বিদেশ ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার খাতিরে তার সঙ্গে থাকে নিজস্ব বাবুর্চি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ওয়েটার। হোটেলে থাকার সময় তার সঙ্গে থাকা লোকজন হোটেলের সব কাগজ ও প্রসাধনী দ্রব্য সরিয়ে ফেলে সেখানে অনুমোদিত সামগ্রী রেখে দেন। আর ক্রেমলিনের অনুমোদন ছাড়া তিনি কোনো বিদেশি খাবার খান না। মস্কোর বাইরের একটি স্থানে বাস করেন। জায়গাটা গোপনীয়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি যানজট, দূষণ ও মানুষের ভিড় অপছন্দ করেন। তিনি তার সরকারি দফতর ক্রেমলিনে যেতেও পছন্দ করেন না। তার নিজস্ব কর্মীরা তাকে ‘টিসার’ নামে ডাকেন। যার অর্থ বস। তার ব্যক্তিগত জীবন সীমিত। তার দুই মেয়ের বিষয়ে খুব একটা জানে না কেউ। ত্রিশ বছরের সম্পর্ক শেষ করেছেন স্ত্রীর সঙ্গে। কঠোর পরিশ্রমী এই সাধারণ ব্যক্তিই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি ভ্লাদিমির পুতিন। তাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল পাওয়ারফুল ম্যান’। যাকে বিশ্লেষণ করার সাধ্য কারও নেই। বিশ্ব রাজনীতিকে কখন কোন দিকে ঘুরিয়ে দেবেন সে হিসাব কষতে গিয়ে বিশ্লেষকরা এটা মেনে নিয়েছেন। কারণ আর কিছুই নয়, তিনি যা ভাবান বিশ্লেষকরা তাই-ই ভাবেন। রাশিয়ায় তাকে লৌহমানব বলে এক নামে চেনে সবাই। দক্ষ কুস্তিগীর ও খেলোয়াড়। গণমাধ্যমসহ রাশিয়ার পুরো প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে। সাম্প্রতিক সময়ে আইএস মোকাবিলায় সিরিয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের শক্ত পদচারণার কথা জানান দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল অভিযানে রাশিয়ার সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভ্লাদিমির পুতিনকে আরেক নজর দেখেসয়ে চলার কথাই মনে করিয়ে দিল। যার ফলস্বরূপ আমেরিকার মিত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজেরাই রাশিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে তালিকায় বাদ নেই ফ্রান্স ও সৌদি আরবের মতো দেশও। ব্রিটেন-জার্মানিও সেই পথেই হাঁটা দিয়েছে। সহজ কথায় পুরো বিশ্ব এখন পুতিনমুখী। স্নায়ুযুদ্ধে পুতিনকে মাস্টারমাইন্ড মানেন অনেকেই। একটা উদাহরণ টানা যায়। কয়েক বছর আগে দক্ষিণ চীন সাগরের কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের বিরোধ। সেখানে আমেরিকার রণপ্রস্তুতি দেখে বিশ্ববাসী আতঙ্কিত হয়েছিল। কিন্তু কী দেখা গেল? শেষে চুপচাপ আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার। কারণ বুঝতে বাকি রইল না। চীনের প্রতি ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতেও কলকাঠি পুতিনের হাতে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ক্ষমতা পুতিনের মুঠোতেই বন্দী। পুতিন কিন্তু এক দিনে এই আসনে বসেননি। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর। স্কুলজীবন থেকেই পুতিন জুডো-কারাতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পারদর্শিতা অর্জন করেন। পুতিনের বাবা অত্যন্ত দরিদ্র একজন মানুষ ছিলেন। পুতিনকে খুব পছন্দ করলেও তিনি পুতিনের শুধু ভুল ধরতেন আর বকাঝকা করতেন। পুতিনের দাদা লেনিনের গ্রামের বাড়িতে শেফ ছিলেন। এমনকি তিনি স্টালিনের বাবুর্চির কাজও করেছেন। তবে এসব ছাপিয়ে পড়াশোনায় এগিয়ে যান পুতিন। তিনি ১৯৭৫ সালে লেনিনগ্রাদ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আন্তর্জাতিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ হন। তারপর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতে পাঠানো হয়। ধাপে ধাপে এগিয়েছেন। রুশ সিনেমায় গোয়েন্দাদের ভূমিকা দেখে পুতিনের গোয়েন্দা জীবনের প্রতি কৌতূহল জন্মায়। শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৬ সালে। এরপর ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে কেজিবি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কেজিবি প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রশাসনের প্রধানের প্রথম ডেপুটি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯২ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষদ থেকে অবসর নেন। সেই সময়ে তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের আগস্টে তিনি মন্ত্রিসভার সভাপতি হন। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলিসনের পক্ষ থেকে সময়ের আগেই নিজের ওপর থেকে দায়িত্বভার প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কার্যকরভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ২০০৪ সালে পুতিন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পুতিন তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আইনের শাসন প্রবর্তন এবং স্থিতিশীলতা আনার মাধ্যমে রুশ সমাজব্যবস্থায় তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পুতিন তার সময়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছেন। তার সময়ে দরিদ্রতা কমে এসেছে অন্তত সত্তর ভাগ। মাসিক বেতন ৮০ থেকে ৭৯০ ডলারে উন্নীত হয়। বৃহৎ জ্বালানি প্রকল্প হিসেবে দেশটি পারমাণবিক শক্তিতে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া কাস্পিয়ান সাগরে অবস্থানরত যুদ্ধজাহাজ থেকে ৯৬০ মাইল দূরবর্তী সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অসংখ্য অবস্থানে নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষ আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের প্রমাণ করে দিয়েছে সামরিক সক্ষমতায় রাশিয়া এখন বিশ্বসেরা। এটি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। উন্নত প্রযুক্তির নিত্যনতুন সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণের মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার আমেরিকার সামরিক কর্তৃত্বকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেছেন। সম্প্রতি রাশিয়া শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ সামরিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। সিরিয়া যুদ্ধে যাবতীয় দিক-নির্দেশনা এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রদান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে যাই বলা হোক, রাশিয়ার বেশির ভাগ মানুষ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পছন্দ করেন বলে নতুন এক জনমত জরিপে দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা এপির রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এ জনমত জরিপে দেখা যায়, রাশিয়ার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করেন। পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দুই মেয়াদের দায়িত্বকালে রাশিয়াকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, যা রাশিয়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তেও পিছপা হচ্ছে না রাশিয়া। তাকে নিয়ে মজার মজার তথ্য জানা যায় বিভিন্ন মিডিয়ায়। যেমন— বিয়ের আগে প্রথম স্ত্রী জানতেন না পুতিনের আসল পরিচয়। ফর্মুলা ওয়ান রেস কার চালাতে ভালোবাসেন পুতিন। এই ৬৩ বছর বয়সে এসেও তিনি ১৫০ মাইল বেগে গাড়িতে গতি তোলেন যখন মন ভালো থাকে।

 

ক্ষমতা তার মুঠোবন্দী

ফোর্বসের করা তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি তিনি। বারাক ওবামাকে সরিয়ে দিয়ে এ জায়গা দখল করেছেন তিনি। তবে সত্যিই কি শুধু ফোর্বসের তালিকা দিয়ে ক্ষমতার প্রতাপ মাপা যায়? উত্তর বলছে, জানা যায় না। বিশ্ব রাজনীতিতে এখন অর্থনীতি ও সন্ত্রাসবাদ নামের দুটো কাঁটার সঙ্গে একইভাবে হিসাব মিলিয়ে চলতে না পারলে ক্ষমতার মূল্যায়ন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের চাদরে আইএস হুমকি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। আর সিরিয়ায় পুরোদমে হামলা করে পুতিন বাজিমাত করে দিয়েছেন। যে কারণে এটা মেনে নিতে কষ্ট হয় না, কেন পুতিনকেই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর বলা হয়। সামরিক সম্ভারের দিক দিয়ে রাশিয়া নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পাশাপাশি বাগ্যুদ্ধ ও রাজনৈতিক দাবার চালে পুতিন বেশ দক্ষ এটা স্বীকৃত। এখন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করে তুলছেন তিনি। তার একটি নমুনা দেখা যায় ইউক্রেন ইস্যুতে। চরমভাবে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়া ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনকে দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে পুতিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কৌশলকে পরাস্ত করেন। এ ছাড়া পুতিনের নির্দেশনায় রাশিয়ার পার্লামেন্টে সাধারণ ক্ষমাসংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়। যার আওতায় হাজার হাজার বন্দী মুক্তি পায়। শুধু তাই নয়, একই মাসের শুরুর দিকে আধা স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ-নভোস্তি পুনর্গঠন করার বিষয়ে পুতিন ঘোষণা দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। নির্বাহী ক্ষমতাগুলোও ভালোভাবে ঘষেমেজে নিয়েছেন এরই মধ্যে। এখন আবার যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক। ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কোন্নয়ন কার্যত ইঙ্গিত দেয় পুরো বিশ্বের রাজনীতি পকেটে পুরে নিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

 

বানাতে চান পৃথিবীর নতুন মানচিত্র

এক রাশিয়ান সেনার ছবি ইন্টারনেটে তোলপাড়। এটি তোলা হয়েছিল ১৯২০ সালে। ওই সৈন্যের ছবি হুবহু পুতিনের মতো। এ সন্দেহকে আরও উসকে দিল ১৯৪১ সালের আরেক সৈন্যের ছবি। প্রথম ছবির ২০ বছর পর তোলা আরেকটি ছবিতেও যেন স্পষ্ট পুতিন। এসব হয়তো একেবারেই ভিত্তিহীন ভাবনা যে পুতিন যুগে যুগে আজকের মতোই ছিলেন। অমরত্বের ধোঁয়া উড়লেও সেটা একেবারেই কল্পনাপ্রসূত। তবে এটা কল্পনা নয়। পুতিন কিন্তু বৃহত্তর রাশিয়া গড়ার কথা আকারে-ইঙ্গিতে বেশ কয়েকবার বলেছেন। সে কারণেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে চ্যালেঞ্জে গেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন— এমনটাই ভাবছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে সরাসরি ওয়াশিংটনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি। আর সিরিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি যুদ্ধ ঠেকিয়ে দেন। মূলত মস্কোর কারণেই সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের পরিকল্পনায় রাজি হতে হয়েছে ওয়াশিংটনকে। পুতিনের সমর্থকরা বলছেন, বৃহত্তর রাশিয়া গড়ার পথে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। শচি অলিম্পিকের সফল আয়োজন তার একটি বড় প্রমাণ। এমনিতে ভালো ইংরেজি বলতে না পারলেও এই অনুষ্ঠানে পরিষ্কার ইংরেজি বলে তাক লাগিয়ে দেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না পুতিন হাঁটছেন অন্য রাস্তায়। এ ছাড়া ইউরোপের সীমানা বদলানোর বিষয়ে বরাবর সোচ্চার তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের সীমানা আবার নির্ধারণ করতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও একই বিষয়ে অভিযোগ করেন। গণভোটে ক্রিমিয়ার অধিবাসীরা বিপুল ভোটে রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে রায় দেওয়ার পর এ-সক্রান্ত বিলে সই করে পুতিন কিন্তু পৃথিবীর নতুন মানচিত্র বানানোর কথাই স্মরণ করিয়ে দেন।

 

শাল জড়িয়ে বিতর্কে

২০১৪ সালের ঘটনা। বেইজিংয়ে এপেক শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আলোচনা চলছে। শীতের রাতে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। হঠাৎই দেখা গেল, পুতিন একটি শাল পরিয়ে দিচ্ছেন চীনা ফার্স্ট লেডির গায়ে। বিষয়টি এড়ায়নি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। এটাকে আড়চোখে দেখে কিছু মিডিয়া মাতামাতি করল। তবে তিনি ছিলেন নিরুত্তাপ। পুতিনও চুপ। চীনজুড়ে এ ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়ে গেল। রীতিমতো শাল জড়ানোর স্ক্যান্ডালে পুতিন ফেঁসে গেলেন বলা চলে।

 

‘রাশিয়ার সঙ্গে লাগতে এসো না’

হুমকি-ধমকি রাজনীতিবিদদের রোজকার ব্যাপার। মিডিয়াতে প্রায়ই শিরোনাম কেড়ে নেন তারা। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন বা বারাক ওবামা হুমকি দিয়ে বসলে হিসেবটা অন্যরকম হতে বাধ্য। তাদের হুমকি-ধমকিতে পুরো বিশ্বই কেঁপে ওঠে। সিরিয়ায় আক্রমণে আগে দৃশ্যপট ছিল একেবারেই ভিন্ন। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার শিরোনাম জুড়ে দিয়ে দেশে দেশে মার্কিন অভিযান যখন পুরোদমে চলছে তখন আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল রাশিয়া বুঝি চুপ করে পেছনের সারিতে বসে শুনছেই। তাই আমেরিকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হলেও রাশিয়া সামরিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পায়নি। আর কে না জানে স্নায়ুযুদ্ধে পুতিনই সেরা। আইএসের বিরুদ্ধে রাশিয়া যে সামরিক সম্ভার প্রদর্শন করেছে তাতে দাবার দান উল্টে গেছে। ২০১৪ সালে পুতিন এরই একটি আভাস দিয়েছিলেন। পারমাণবিক শক্তিধর রাশিয়ার সামরিক বাহিনী যে কোনো ধরনের আগ্রাসন রুখতে প্রস্তুত বলেই তিনি থামেননি। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশকে এটা বুঝতে হবে যে, রাশিয়ার সঙ্গে লাগতে যাওয়া ঠিক হবে না। আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র।

 

অন্যরকম পুতিন

ছোটবেলায় ইঁদুর মারতেন—

যে ভবন থেকে রাশিয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকাতেই একসময় পুতিনের শৈশব কেটেছিল। রিচার্ড সাকভা তার ‘পুতিন : রাশিয়ান চয়েস’ নামের বইতে দাবি করেছেন, সেন্ট পিটার্সবার্গের সেই সব ভবনের সিঁড়িতে দৌড়াদৌড়ি করে একসময় ইঁদুর মারতেন পুতিন।

শেফের কাজ করতেন পুতিনের দাদা—

ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। তার বাড়িতে দীর্ঘদিন শেফের কাজ করতেন পুতিনের দাদা। পরে যখন স্টালিন রাশিয়ার ক্ষমতায় আসেন তখন তারও রান্নার কাজ করতেন তিনি।

জুডোতে ব্ল্যাক বেল্ট—

নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরের ফিটনেস রক্ষা করেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা পুতিন। তিনি জুডো ও কারাতে দক্ষ। আঠারো বছর বয়সেই পুতিন জুডোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। এখনো তিনি প্রায় প্রতিদিন মার্শাল আর্ট অনুশীলন করেন। ২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর, সেন্ট পিটার্সবার্গে জুডো প্র্যাকটিস করছেন।

 

বেশি পড়তেন গোয়েন্দা কাহিনী—

অবসর পেলেই বই পড়েন পুতিন। তবে গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে বেশি পছন্দ করেন। এ সম্পর্কে পুতিনের বিখ্যাত একটি উক্তিও আছে— ‘আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত ও মুগ্ধ করে ওই বিষয়টি, যখন কোনো একটি কাজ পুরো সেনাবাহিনী মিলে করতে পারে না, অথচ সেই কাজই করে ফেলেন গুটিকয়েক ব্যক্তি।’

সফরসঙ্গী কুকুর—

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতিদিনই বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যান পুতিন। যেখানেই যান না কেন তার সফরসঙ্গীর তালিকায় থাকবে তার প্রিয় পোষা কুকুর কনি।

 

গোপন দুনিয়া

পুতিনের সবচেয়ে গোপন দুনিয়ার খবর হঠাৎই জানা গেল। তবে পুরোটা নয়। পুতিনের সবচেয়ে গোপন দুনিয়া ছিল তার দুই কন্যা মারিয়া ও ইয়াকেতেরিনার জীবন। কন্যাদ্বয়ের পড়ালেখা, ঘোরাফেরা সবই ছিল খুবই গোপন ও অত্যন্ত সুরক্ষিত। কলেজে ছদ্মনামে তারা পরিচিত ছিল। এমনকি বসবাসের ঠিকানা ছিল একেবারে অজ্ঞাত। তবে ত্রিশ বছর সংসার করার পর আলাদা হয়ে যান ভ্লাদিমির পুতিন ও তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী লুদমিলা। স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার পর পুতিনের এই গোপন জগত কিছুটা হলেও ভেঙে পড়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর