বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

তর্ক-বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মাহবুবুল আলম

তর্ক-বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যিনি প্রথম  থেকেই প্রবল প্রতাপে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে প্রত্যর্পণ করা ট্রাম্প এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও বিতর্কিত একটি নাম। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, মানুষের হাসির খোরাক জুগিয়েছেন। অথচ সেটাই তার জন্য পৌষ মাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক নির্বাচনে দলের অন্য প্রার্থীদের থেকে যোজন-বিয়োজন এগিয়ে ট্রাম্প।

কে এই ট্রাম্প

ইদানীং বিতর্কের রাজা বনে যাওয়া ট্রাম্পের পুরো নাম ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। তার জন্ম নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকায় ১৪ জুন ১৯৪৬ সালে। বাবা ছিলেন রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও এই খাতে সফল।  পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় থেকে তিনি তার পিতার ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। রিয়াল এস্টেট বিজনেসে পড়াশোনা শেষে ট্রাম্প ইকোনমিক্সে গ্রাজুয়েট হন। কিন্তু তার রয়েছে হরেক রকম পরিচয়। ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। তাতে তার নাম যশ অর্থ বিত্ত হয়েছে অনেক। এপ্রেনটিস্ট নামের একটি রিয়ালিটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। রেসলিং ম্যাচ উপস্থাপনা করেছেন। বেশ কয়েকবার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। তার বেশ সমর্থকও জুটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। মামলা ঠুকেছেন এবং মামলা খেয়েছেন। এখন তার রয়েছে ৫৮ তলা একটি বহুতল ভবন (ট্রাম্প টাওয়ার), স্পোর্টস ক্লাব, শেয়ার বাজারে পুঁজি। সবমিলিয়ে ৯০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক তিনি। তার বার্ষিক বেতন প্রায় ২৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ দুই কোটি ডলারেরও বেশি তার মাসিক বেতন। রাজনীতিতে তার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। বৈদেশিক নীতিতেও তিনি অদক্ষ। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু প্রত্যাশী বললে কম বলা হবে, কারণ এখন পর্যন্ত যে খবর তাতে দলের অন্য প্রার্থীদের থেকে যোজন-বিয়োজন এগিয়ে ট্রাম্প। তার সবচেয়ে প্রিয় বইগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়টি তারই  লেখা দি আর্ট অফ দি ডিল, অর্থাৎ কীভাবে ব্যবসা করতে হয়। তার সবচেয়ে প্রিয় বইটি হচ্ছে বাইবেল। তবে বাইবেলের কোন লাইনটি তার সবচেয়ে প্রিয় সেটা তিনি বলতে রাজি হননি।

বিতর্কিত একজন

ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে প্রচার খুব ভালোভাবে করেন। তাই পাচ্ছেন সেলিব্রিটির মতো মনোযোগ। তবে সেই মনোযোগের সবটাই সুখের নয়। সে দেশে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা উচিত এমন বক্তব্য দিয়ে হাততালি যেমন পেয়েছেন, আবার ব্যাপক সমালোচিতও হয়েছেন। সম্প্রতি সোমালিয়ার জিহাদি গোষ্ঠী আল-শাবাব তাদের একটি প্রচারণামূলক তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের এই বক্তব্য জুড়ে দেয়।

এরপরও পিছু হটেননি তিনি। উল্টো বলেছেন, দেশের জনগণ তার এই সাহসিকতার জন্য প্রশংসা করছে কারণ তার ভাষায়, সমস্যাটিকে অনেকেই এড়িয়ে গেছেন। প্রতিবন্ধী এক সাংবাদিককে ব্যঙ্গ করে সমালোচিত হয়েছেন। রিপাবলিকান দলের এক নারী রাজনীতিবিদকে কুিসত বলেছেন আবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। প্রায় নিয়মিতই এরকম নানান বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত এমনকি অনেকের হাসির খোরাকও হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে বেশ কবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু কখনোই শেষ পর্যন্ত দাঁড়ানো হয়নি। তবে এবার বেশ শক্তভাবে এগোচ্ছেন।

ইমিগ্র্যান্টবিরোধী

২০১৫ সালের ১৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি নির্বাচনী  স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (আমেরিকাকে আবার মহান করুন) প্রকাশ করেন। এই স্লোগানের পক্ষে বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা পিছিয়ে পড়েছে এবং নিচু মানের দেশ হয়ে গেছে। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো থেকে আগত অভিবাসীরা। ট্রাম্প বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ক্ষমতার প্রথম দিনই আমেরিকায় অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের দ্রুত বের করে দেওয়ার জন্য কাজ করব। মেক্সিকান ইমিগ্র্যান্টরা আমেরিকায় ড্রাগস চোরাচালান করে, তারা বিভিন্ন অপরাধ করে, ধর্ষণ করে। ভালো মানুষ মেক্সিকো থেকে আসে না। যারা আসে তারা আনে হাজার সমস্যা। এই ঢালাও অভিযোগের পর ট্রাম্প বলেন, এটা বন্ধ করতেই হবে। সেটার জন্য আমি একটা গ্রেট ওয়াল বানাব। আমার চাইতে ভালো ওয়াল কেউ বানাতে পারে না। বিশ্বাস করুন, আমি খুব সস্তায় এই ওয়াল বানাব।

মুসলিমবিরোধী

ইমিগ্রেশন বিতর্কটি যখন ট্রাম্প শুরু করেন তখন তার মনে মুসলিম ইসুটা আসেনি। এটা আসে ২ ডিসেম্বর ২০১৫- তে ক্যালিফোর্নিয়ায় সান বারনারডিনো শহরে একটি উৎসবে মুসলিম দম্পতি, সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক ও তাশফিন মালিকের অতর্কিত বন্দুক হামলায় ১৪ জন নিহত এবং ২২ জন আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটির পর। ফারুকের জন্ম হয়েছিল আমেরিকায় একটি পাকিস্তানি বংশে। তার স্ত্রী তাশফিনের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে এবং তিনি ছিলেন আমেরিকান রেসিডেন্ট। তাদের ছয় মাস বয়সী শিশুকন্যাকে ফারুকের মার কাছে রেখে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলি চালান এবং নিজেরাও পাল্টা গুলিতে নিহত হন। এই দুর্ঘটনার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় ইসুটা আমেরিকানদের সামনে তুলে ধরেন। একটি লিখিত ভাষণ তিনি টিভিতে পড়ে শোনান, যার প্রথমেই ছিল নিচের লাইনগুলো : আমি ডোনাল্ড জন ট্রাম্প আহ্বান জানাচ্ছি। আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে। ট্রাম্প আরও বলেছেন, জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার বিধানটি তুলে দিতে হবে। এর ফলে আমেরিকায় কোনো মুসলিম ইমিগ্রান্ট বা মুসলিম ট্যুরিস্টের আমেরিকায় জন্ম হওয়া সন্তানের আমেরিকান নাগরিকত্ব আর নাও পেতে পারেন।

‘সাদ্দাম-গাদ্দাফিতে নিরাপদ থাকত মধ্যপ্রাচ্য’

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে বিশ্বজুড়ে ধিকৃত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে তুলে নতুন বিতর্কে বনে যান ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে এবং লিবিয়াতে মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ না করা হলে আজ মধ্যপ্রাচ্য অনেক নিরাপদ থাকত। তার মতে হিলারি ক্লিনটনের ভুল পররাষ্ট্র নীতির কারণে আজ মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মানুষ মরেছে। লক্ষ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে শরণার্থী হয়ে  দেশ বিদেশে ছুটছে। এবিসি নিউজের জনপ্রিয় একটি টিভি শোতে তিনি এসব কথা বলেন।

মনোনয়ন না দিলে দাঙ্গা

প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত না করলে যুক্তরাষ্ট্রে দাঙ্গা বাধবে বলে নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের হুঁশিয়ার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মনোনয়ন  দৌড়ে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রতিনিধিদের ভোটে জয় পাওয়ার পর সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। নির্বাচনী প্রচারে ব্যবসায়ী ট্রাম্পের বিতর্কিত নানা বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের মধ্য থেকেই তাকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন না করতে প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেন, দলের বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধির সমর্থন নিশ্চিতের পরও যদি তাকে মনোনয়ন দেওয়া না হয়, তবে দাঙ্গা বাধবে। আমি মনে করি না, আপনারা ভাবছেন যে আমার জয় এমনি এমনি আসছে। আপনারা দাঙ্গা ডেকে আনবেন, দাঙ্গা ডেকে আনবেন। কেননা আমার  পেছনে এখন লাখো মানুষ রয়েছে।’

ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পোপের প্রশ্ন

 মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে মন্তব্য করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস। মেক্সিকো সফরে গিয়ে পোপ বলেন, যে ব্যক্তি শুধু দেয়াল নির্মাণ করতে পারে কিন্তু সেতু নয়, সে খ্রিস্টান হতে পারে না। তবে পোপের এ মন্তব্যের পর নিজেকে গর্বিত খ্রিস্টান উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, পোপের এমন মন্তব্য অপমানজনক। ট্রাম্প ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ১১ মিলিয়ন মেক্সিকান নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে মেক্সিকানদের প্রবেশ ঠেকাতে  টেক্সাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের  ঘোষণা দেন তিনি।

মনোনয়নের দৌড়

যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি এমনই জটিল যে নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও ভোটের আয়োজন করা হয়। প্রার্থীরা প্রথমে নিজ নিজ দলের পক্ষে মনোনয়ন চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা  দেন। সেখান থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক মাস ধরে দেশের সব অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক নির্বাচনে অংশ নেন প্রার্থীরা। এরপর জুলাইয়ে জাতীয় কাউন্সিলে দলের ডেলিগেটদের  ভোটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হওয়া। তবে এই প্রাথমিক নির্বাচনে যে প্রার্থী বেশিরভাগ রাজ্যে জয় লাভ করেন তিনি দলের মনোনয়ন পান। এদিন থেকে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে ৩০টি অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক নির্বাচনে ১৮টিতেই জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। যেখানে তার নিকটতম ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ জয় পেয়েছেন মাত্র ৮টিতে।

নিকৃষ্ট ব্যবসায়ী!

ব্যবসায়িকভাবে ট্রাম্প সফল হলেও তিনি খুবই বিতর্কিত ব্যক্তি। এমনকি ব্যবসায়ে তার সফলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাদের মতে, ট্রাম্প নিজে তার ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করেননি, উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। আছে বিভিন্ন ক্রাইম সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ বৈধ উপায়ে তার এই বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া নিয়েই। তার বহু কোম্পানি ফেল করে অথবা দেউলিয়া হয়ে যায়। সমালোচকদের মতে, বিভিন্ন কোম্পানির নামে টাকা তুলে তিনি পরবর্তীতে স্বেচ্ছায় এসব কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যক্তিগত খাতে টাকা সরিয়ে নেন। আর এভাবেই তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এতে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে যেমন পথে বসানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের অন্ন কেড়ে নিয়েছেন। এই কারণেই তাকে অনেকেই নিকৃষ্ট ব্যবসায়ী বলেও সম্বোধন করেন। যদিও এসবের একটা উত্তর দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি দেশের প্রচলিত আইনের সুযোগ নিয়েছি। এটা ব্যবসা। অন্য ব্যবসায়ীরাও এটা করে থাকেন। মামলায় অন্য যে কোনো ব্যবসায়ীকে ছাড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন ব্যবসায়ে দেউলিয়াত্বের কারণে এবং আইনের মারপ্যাঁচে তার বিরুদ্ধে লোক ঠকানোর অভিযোগে আছে। এজন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পুঁজি বিনিয়োগকারীরা শত শত মামলা ঠুকেছেন। সেসব মামলা এখনো চলছে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাধারণত জনসেবায় এগিতে আসতে দেখা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও ট্রাম্প ভিন্ন। অভিযোগ আছে, বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে যাওয়া ট্রাম্প জনসেবায় মোটেই সময় ব্যয় করেননি। অথচ সেই ট্রাম্পই কি না রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় শীর্ষে আছেন।

জঙ্গি নিধনের ওয়াটারবোডিং পদ্ধতি

একসময় আল-কায়েদার কথা শোনা গেলেও বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক এই সংগঠন এখন বিশ্বের বড় বড় ক্ষমতাধর দেশের মাথার কাটা। মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইতিমধ্যে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তারা। কোনো কিছুতেই তাদের দমন করা যাচ্ছে না। তবে ট্রাম্প মনে করেন ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটারবোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। এই পদ্ধতিতে মুখের ওপর এমনভাবে পানি ঢালা  হয় যে ওই ব্যক্তির মনে হবে তাকে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে আইএসকে বোমা মেরে দোজখে পাঠাবেন। তার মতে এবিষয়ে তার চেয়ে বেশি কঠোর আর কেউ হতে পারবেন না।

 

ট্রাম্পের লাস্যময়ী তিন স্ত্রী

রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন আলোচিত তেমনি সমানভাবে আলোচিত হচ্ছেন তার তিন স্ত্রীও। প্রথম দুই স্ত্রী ট্রাম্পের ঘর ছেড়ে গেছেন। সঙ্গ দিচ্ছেন একজন। সাবেক ও বর্তমান তিন স্ত্রীই আবেদনময়ী নারী হিসেবে পশ্চিমা দুনিয়ায় জনপ্রিয়। কারণ তিনজনই তাদেও ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন মডেল।

 

ইভানা ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের একসময়ের জনপ্রিয় মডেল ইভানা। অসংখ্য পুরুষের ঘুম হারাম করা ইভানা শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কের ধুনকুবের  ট্রাম্পের গলায় মালা পরান। রাজকীয় আয়োজনে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ১৯৪৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় জন্ম নেওয়া ইভানা আগে অবশ্য আলফ্রেড উইঙ্কলমায়ার নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। ১৯৭৬ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর  পেশাগত কারণে কানাডা চলে যান। কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৭ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে বিয়ের পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ভালোই কেটেছিল ইভানার সংসার। ট্রাম্পের ব্যবসায় নিজেও ডুবে গিয়েছিলেন। ১৫ বছরের সংসার জীবনে ট্রাম্প ও ইভানার ঘরে আসে তিন সন্তান। তারা হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, জুনিয়র, এরিক ট্রাম্প এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি তাদের বন্ধন। ১৯৯২ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে ইভানার তিন সন্তান এখন ট্রাম্প অরগানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিচ্ছেদের তিন বছর বাদে আবার বিয়ে করেন ইভানা। তিন বছর সংসার করে প্রায় এক দশক একাকী থাকার পর আবার বিয়ে করেন ইভানা। এখানে দুই বছরের মতো সংসার শেষে এখন তিনি একা। তবে সামাজিক ও উন্নয়নমূলক অনেক কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন।

 

মারলা ম্যাপলস

ট্রাম্পের দ্বিতীয় স্ত্রী মারলা ম্যাপলস হলিউড সুন্দরী হিসেবে মার্কিন দুনিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। আবেদনময়ী ম্যাপলস বেশ কিছু মুভিতে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। প্রথম স্ত্রী ইভানা থাকা অবস্থায় ১৯৯০ সালের দিকে ট্রাম্পের প্রেমে পড়েন ম্যাপলস। বেশ কিছুদিন চুটিয়ে প্রেম করেন তারা দুজন। এরই মধ্যে ইভানার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় ১৯৯৩ সালে ট্রাম্পকে বিয়ে করেন ম্যাপলস। তবে বেশি দিন টেকেনি তাদের সংসার। প্রায় ছয় বছর সংসার করার পর ১৯৯৯ সালে ট্রাম্পের ঘর ছাড়েন এই মডেল। তবে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে তাদের ঘর আলো করে আসে এক সন্তান। এসময় সংসারের টানাপড়েনে একপর্যায়ে নিজের ক্যারিয়ার থেকে সরে আসেন অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতে সমান পারদর্শী এই সুন্দরী। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর ঘরে বসে নেই ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী ম্যাপলস। তার পক্ষে বিভিন্নভাবে সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করছেন তিনি।

 

মেলানিয়া নাউস

ট্রাম্পের তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া নাউস স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।  পেশায় মডেল। অলঙ্কার ও ঘড়ির নকশা করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। এখন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ট্রাম্পের স্ত্রী। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া মেলানিয়া ১৬ বছর বয়স থেকে মডেলিংয়ে আসেন। তারপর পাড়ি জমান ইতালি। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর শুরু হয় ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেমকাহিনী। ২০০৫ সালে ট্রাম্পকে বিয়ে করে এখনো সংসার করে যাচ্ছেন মেলানিয়া। ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামে তাদের বছর দশেকের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। মেলানিয়া বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ মডেল হয়েছেন।

 

ট্রাম্পের অর্থ জোগানদাতা

যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থী নির্বাচনে যে অনুদান পাবেন, দাতাদের নামসহ সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য ফেডারেল ইলেকশন কমিটিকে জানাতে হবে। ফলে কে কোথায় থেকে কত অনুদান পাচ্ছেন তা ভোটাররা জানতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলের আকার ২ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৩১৯ ডলারের। এর বেশির ভাগটাই তার নিজের। যদিও এটা ঋণ হিসাবে তিনি নিয়েছেন, যা পরে হয় তার নিজের তহবিল থেকে অথবা নির্বাচনী তহবিল থেকে শোধ করতে হবে। তবে স্বাস্থ্য খাত আর আবাসন খাত থেকে তার অনেক অনুদান এসেছে। যদিও সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের হার খুবই কম। ট্রাম্প অবশ্য অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদেও তুলনায় একটি দিকে এগিয়ে রয়েছেন। মিডিয়া মুঘল হওয়ায় তাকে অন্য প্রার্থীদের মতো টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের পিছনে পয়সা খরচ করতে হবে না। তাই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী তহবিল যেখানে ১৩ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৭ ডলার। যেখানে ৫ গুণ কম ট্রাম্পের। আবার হিলারি দাতাদের কাছ অর্থ নিয়েছেন সেখানে প্রায় নিজের অর্থ দিয়েই নির্বাচন করছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ধর্মীয় মতাদর্শ

শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শেই নয়; ট্রাম্পের ধর্মীয় মতবাদও সমালোচকদের কাছে নরম-গরম বিষয়। নিজেকে তিনি একজন ক্যাথলিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ডাচ রিফোর্মড গির্জার একজন সদস্য এবং প্রেসবিটারিয়ান (যাজকমণ্ডলী পরিচালিত গির্জা প্রশাসন বিশেষ) হিসেবেও তার পরিচিতি মিলে। তিনি তৃতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন বিশপ-শাসিত ইপিসকাপল গির্জায়। তবে সমপ্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে একজন অনুগত প্রেসবিটারিয়ান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার ভাষ্য মতে, ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। আমি খ্রিস্টান। আমার ধারণা বাইবেল বোধহয় জ্যামাইকা রাণীর প্রেসবিটারিয়ান গির্জায় এসেছিল। সেখানে আমি একবার গিয়েছিলাম। আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন  প্রেসবিটারিয়ানও বটে। আর আপনারা জেনে থাকবেন গির্জার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভালো। আমার কাছে ধর্ম কৌতূহলের বিষয়। আমার কাছে আমার ধর্মই সবচেয়ে সুন্দর।’

ব্লগে হিট ট্রাম্পকে পরিহার করার উপায়

আমেরিকান ফ্র্রিল্যান্স কপি ও কনটেন্ট রাইটার সামান্থা গ্রিটস তার ব্লগে নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এড়িয়ে চলার পাঁচটি উপায়ের কথা বলেছেন। এর প্রথমটা হলো আহারের জন্য মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। কারণ ট্রাম্প মেক্সিকানদের খুব গালমন্দ করেছেন। সুতরাং তিনি কখনই কোনো মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে খেতে যাবেন না। দ্বিতীয়ত, নিউইয়র্কের ব্রায়ান্ট পার্কে অবস্থিত নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে যাবেন। লাইব্রেরি থাকে নীরব। কিন্তু ট্রাম্প কথা বলতে বেশি ভালোবাসেন। এক মুহূর্ত তিনি নিরব থাকতে চাননা। এজন্য তিনি কখনো এখানে যাবেন না। তৃতীয়ত, এই ব্রায়ান্ট পার্কেই শীতকালে যে আইস রিংক হয়। কেউ যদি ট্রাম্পকে এড়িয়ে চলতে চান তাহলে সেখানে আইস স্কোটিং করতে যাবেন। সেখানে ট্রাম্প কখনোই যাবেন না।

কারণ, আইস স্কেটিং করতে  গেলে প্রায়ই অনেকে পড়ে যান। ট্রাম্প পতন পছন্দ করেন না। সুতরাং তিনি আইস স্কোটিং করবেন না। চতুর্থত, কেনাকাটা করার জন্য নিউইয়র্কের সব সস্তা দোকানে যাবেন যেমন, বাফেলো এক্সচেঞ্জ, যেখানে প্রায়ই ডিসকাউন্টে জিনিসপত্র বিক্রি হয়। ট্রাম্প মার্কিন ধনকুবেরদের একজন। তিনি সব সময় তার ধন-দৌলতের বড়াই করতে ভালোবাসেন। সুতরাং এসব দোকানের ধারে কাছে ঘেঁষবেন না। পঞ্চমত, নিউইয়র্ক সিটিতে জাহাজ ঢোকার মুখে লির্বাটি দ্বীপে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রতীক স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে যাবেন।

সর্বশেষ খবর