রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাকা চোর

তানভীর আহমেদ

টাকা চোর

চুরি করে স্টার ‘মিস্টার নটোবর লাল’

চুরি করে বিখ্যাতের সংখ্যা কম নয়। সে তালিকায় অনেকের নামই লেখা যায়। তবে আশপাশে তাকালে নটোবর লালকেই সবার আগে দেখা যায়। ১৯১২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যাকে নিয়ে রোমাঞ্চ ছিল। ছিল বললে ভুল হবে, এখনো আছে। প্রায় ১০০ বছর ধরে সেই রোমাঞ্চ টেনে এনেছেন তিনি। তাও কীভাবে? চুরি করে। তার আসল নাম মিথিলেশ কুমার শ্রীভাস্তভা। তার টাকা রোজগারের পেছনে ছিল চুরির নিত্যনতুন কৌশল। টাকা সরানো তার চোখ ধাঁধানো খেল আরকি! লোকে তাকে জানত নটোবর লাল নামেই। তিনি তাজমহল, রাষ্ট্রপতি ভবন, রেডফোর্ট এমনকি সংসদ ভবনের ৫৪৫ জন সদস্যেরই কোনো না কোনো জিনিস চুরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ভারতের আট রাজ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। চুরিবিদ্যায় নিজেকে তিনি এমনই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে, ১৯৭৯ সালে ‘মিস্টার নটোবর লাল’ নামে একটি চলচ্চিত্রই নির্মাণ হয়েছিল। গ্রেফতারের পর মোট ১১৩ বছরের জেল হয়েছিল তার। সেটা অবশ্য ভোগ করতে হয়নি তাকে। ২০০৬ সালে জেল থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার সময়ই ৮৪ বছর বয়সী নটোবর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিল্লি রেলস্টেশন থেকে পালিয়ে যান। এর পর ২০০৯ সালে মারা যান।

 

চুরি করাই যার প্যাশন

বার্টি। সবাই বলত বার্টি স্মল। ছোট ডাকার কারণ তার উচ্চতা। কম উচ্চতা নিয়ে জীবনের শুরুতে টিটকারী শুনে এসেছেন। কাউকে কিছু বলেননি। তবে খেপে যে উঠেছিলেন সেটা বোঝা গেল তার পরিণত বয়সে। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সময়কালে পুরো ব্রিটেন কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন চুরি আর ছিনতাই করে। ১৫ বছর বয়সেই প্রথম ছিনতাইয়ে নাম লেখান। তারপর দিনে দিনে তার নজর পরে ব্যাংকগুলোর দিকে। সেখানকার নগদ টাকার লোভ তাকে ধীরে ধীরে কুখ্যাত চোরে রূপান্তর করে। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার কুখ্যাতি ছিল ঈর্ষণীয়। ১৯৭০-এর দিকে তিনি যে লুটেরাদের দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা প্রায় আড়াই লাখ ডলার চুরি করে ব্যাংকের ভল্ট খালি করে দেন। পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড তালিকায় থেকে দিব্যি চুরি করে বেড়াতেন বার্টি।

 

 

ফ্যাশনেবল চোর

মেক্সিকান রাজনীতিবিদ গোর্ডিওলাকে নিয়ে মুখোরোচক কথার শেষ নেই। তাকে নিয়ে ঘুরেফিরে আসে টাকা লোপাট করার অভিযোগ। শেষ বোমটা ফাটায় ফোর্বস। তারা মেক্সিকোর কুখ্যাত ১০ দুর্নীতিপরায়ণ মেক্সিকানের তালিকায় তার নাম উঠিয়ে দেয়। গোর্ডিওলা টিচারস ইউনিয়নের শীর্ষ নেত্রী। স্বভাবতই এ নিয়ে বেশ হৈচৈ শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ ফেলে দেওয়ার নয়। দুর্নীতির খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। টিচারস ইউনিয়নের ফান্ড থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু এ চুরি গোপন থাকল না। পরে অবশ্য জানা যায়, ফ্যাশনেবল ও বিলাসী জীবনযাত্রার প্রয়োজনেই এই চুরিটা সারেন তিনি। তার হাত ব্যাগের দামই ছিল ৫ হাজার ডলার! ২০১৩ সালে তাকে চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

 

প্লাস্টিক সার্জারিতে চেহারা বদল করেছিলেন যে চোর

কিছু কিছু গল্প সিনেমাকেও হার মানায়। তেমনই গল্প মিশে রয়েছে আলবার্ট স্পাগগিয়ারিকে। লোকে যাকে চোর বলেই দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাই বলে যে দমে গেছেন তা নয়। উল্টো চুরি, ডাকাতি সমানতালে চালিয়ে গেছেন। ব্যাংক থেকে টাকা চুরির জন্য চোর মহলে দারুণ সমাদৃত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সের সোসিয়েট জেনারেল ব্যাংক ডাকাতি করে তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এর পর ৬০ মিলিয়ন ফরাসি মুদ্রা চুরি করেন। তারপর সেখানকার দেয়ালেই লিখে এসেছিলেন, ‘কোনো অস্ত্র ছাড়াই, কোনো হতাহত ছাড়াই, কোনো রকম সংঘর্ষ ছাড়াই’ এ ঘটনা ঘটানো হলো। পুলিশ তার টিকিটিও পায়নি। ধারণা করা হয়, প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহারা পাল্টিয়ে আর্জেন্টিনায় বাকি জীবন পার করেছেন।

 

ব্যাংকের টাকা চোর

পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার দিক দিয়ে সবচেয়ে সফল চোরদের একজন কার্ল গোগাসিয়ান। অথচ তাকে কিন্তু বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করা হয়েছে।

আর গ্রেফতার করার কারণেই আবার চুরি করেছেন— এমনটাই ছিল তার অভিমত। সারা জীবনে কমপক্ষে ২ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছেন তিনি। ব্যাংক চুরির দিকেই তার মনোযোগ ছিল বেশি। প্রায় ত্রিশ বছর চুরি পেশায় কাটিয়েছেন কার্ল। ১৫ বছর বয়সে সে প্রথম চুরি করেন। সেবার একটি দোকান থেকে চকোলেট চুরি করেন তিনি। তবে তাকে ধরে স্টেট ইয়ুথ ফ্যাসিটিলিসে পাঠানো হলে মনে জেদ চেপে যায় তার। ছাড়া পেয়েই স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে চুরি শুরু করেন তিনি। তার চুরির দক্ষতা ছিল অস্বাভাবিক কাতারে। একবার সবার অগোচরে মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরো একটি ব্যাংক চুরি করে সটকে যান।

 

 

 

ফ্রাংক উইলিয়াম অ্যাবাগনেল

প্রতারকদের গুরু

চেক প্রতারকদের গুরু মানা হয় ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম অ্যাবাগনেল জুনিয়রকে। চেক প্রতারণা করেই বসে থাকেননি। প্রয়োজনে সেজেছেন ভুয়া পাইলট। তবে সৌভাগ্যের কথা তাকে বিমান উড়াতে হয়নি। ব্যাংকের চেক প্রতারণায় তার ধারেকাছেও নেই তিনি। প্যান এ এম এয়ারলাইন্সের চেক প্রতারণা করে তিনি মিলিয়ন ডলার তুলে নেন ব্যাংক থেকে। এ ছাড়া তিনি আইন বিষয়ে নিয়েছেন ভুয়া ডিগ্রিও। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ঘাম ছুটানো অ্যাবাগনেল শেষতক ধরা পড়েন ফ্রান্সে। ১৯৬৯ সালে গ্রেফতারের পর তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

ফ্রেঞ্চ পুলিশের পর হাতে পড়েন সুইডিশ পুলিশের। সেখান থেকে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। ১২ বছরের কারাদণ্ড মাথায় ঝুলেছিল তার। তবে সিনেমার গল্পের মতই তার জীবনের গল্প রোমাঞ্চকরভাবে ঘুরে যায়। তার চেক কেলেঙ্কারির চতুরতা কাজে লাগায় ব্যাংকের চেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আমেরিকার নিরাপত্তাবিষয়ক কনসালট্যান্ট। অথচ তিনি একসময়ে ভণ্ড, প্রতারক আর সাচ্চা মিথ্যাবাদী বলে অধিক পরিচিত ছিলেন। বলা বাহুল্য, বিমানচালক, ডাক্তার, ইউএস ব্যুরো অব প্রিজনসের এজেন্ট এবং উকিল সেজে নানা কুকীর্তি করেছেন। এ কাজে এতটাই ধূর্ত ছিলেন যে, মাত্র ২১ বছর বয়সে জেল থেকে পালানোর কৌশল রপ্ত করেছিলেন। যদিও ধরা খেয়ে তাকে বেশ কয়েক বছর জেলও খাটতে হয়েছে। তবে এ জেলজীবনই তাকে অনন্য হয়ে উঠতে বেশি ভূমিকা রেখেছিল। একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজের সুযোগ পান। এখানেই এখন এফবিআই একাডেমি ও ফিল্ড অফিসে কনসালট্যান্ট ও লেকচারারের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে অ্যাবাগনেল ‘অ্যাসোসিয়েটস’ নামের একটি জালিয়াতি পরামর্শক কোম্পানি পরিচালনা করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর