বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বের বিস্ময়

মানুষের কল্পনা আকাশ ছুঁতে পারে। সেই আকাশছোঁয়া কল্পনাকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে নামিয়ে আনতে মানুষের প্রচেষ্টা সব সময়। এখন প্রাযুক্তিক উত্কর্ষতা কল্পনাপ্রবণ মনের খেয়ালকে করেছে বাস্তব। আকাশে উড়ছে ৬৪০ টনের উড়োজাহাজ, সমুদ্রে দিব্যি ভেসে বেড়াচ্ছে বিশতলা বিশিষ্ট প্রমোদতরি, সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেন দাপিয়ে বেড়িয়েছে পৃথিবীর মাটি। বিস্ময় জাগানো এমন যানবাহনগুলো নিয়েই আজকের রকমারি—

রণক ইকরাম ও তানভীর আহমেদ

বিশ্বের বিস্ময়

আকাশের দানব

আন্তোনভ এন-২২৫ মারিয়ার অন্য পরিচয়, এটি এক কথায় ‘আকাশের দানব’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ বলে কথা। মালবাহী এই উড়োজাহাজটি নকশা করা হয়েছিল ১৯৮০ এর দশকের সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমানের রাশিয়ার আন্তোনভ ডিজাইন ব্যুরোতে। অনেকেই ভেবেছিল এটি বুঝি ড্রয়িংপ্যাডেই আটকে থাকবে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববাসীকে হতভম্ব করে দিয়ে ৬টি টার্বো ইঞ্জিনযুক্ত এই বিমান ৬৪০ টন সামগ্রিক ভর নিয়ে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এই দানবীয় বিমানটি ৮৪ মিটার লম্বা। জ্বালানি ও মাল ছাড়াই এই বিমানের ওজন ১৭৫ টন।

 

সমুদ্রের মরূদ্যান

জাহাজের নাম ‘হারমনি অব দ্য সিজ’। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সাগরের মরূদ্যান’। বুঝে নিলেই হয়, এটি সমুদ্রের বুকে একটি শহর। জাহাজটি পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্রযাত্রা করার পর থেকেই বিশ্ববাসী বিস্ময়ে ডুবে যায়। এতদিন যা শুধু কল্পনা আর লেখালেখিতেই ছিল সেটিই যেন সামনে এলো। সাগরের বুকে জাহাজটি দিব্যি ছুটে চলেছে গোটা এক শহর সমান আয়োজন নিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে ‘হারমনি অব দ্য সিজ’ হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম ও বিলাসবহুল প্রমোদতরি। এটি নির্মাণে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। পুরো জাহাজটি যখন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে নেমে এলো তখন কেটে গেছে প্রায় আড়াই বছর। এটি কত বড় সেটি ছোট্ট একটি উদাহরণ টানলেই টের পাওয়া যায়। হারমনি অব দ্য সিজ’ ইতিহাসখ্যাত টাইটানিকের চেয়ে আকারে ৫ গুণ বেশি বড়। হারমনি অব দ্য সিজ লম্বায় মোট ১,১৮৭ ফুট। এর ওজন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮২ গ্রস টন। জাহাজটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার ২৯৬ জন এবং ২,১০০ জন ক্রুর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। নয় রাতে ইস্টার্ন ক্যারিবিয়ানে প্রমোদভ্রমণের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ১,২৯৯ ডলার। আর সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ৪,৮২৯ ডলার পর্যন্ত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সর্বমোট ২০ তলাবিশিষ্ট জাহাজ। জাহাজের বৈশিষ্ট্যগুলোকে সর্বমোট ৭টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক, পুল, ফিটনেস সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি। জাহাজের পাটাতনের ওপর রয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক ধরনের বিশাল খোলা জায়গা। যেখানে ছোট ছোট গাছ লাগানো রয়েছে। জাহাজের ২৫৪টি রুম থেকে এ পার্ক দেখা যাবে। রয়েছে ৭৫০ আসনের একুইয়া থিয়েটার, ২৪টি রেস্তোরাঁ। একটি ক্যাসিনোর সঙ্গে রয়েছে একটি বার। জাহাজে রয়েছে সর্বমোট ১৬টি ডেক, ২,৭০০টি সুসজ্জিত কক্ষ। রয়েছে একটি পার্ক বা উদ্যান, যেখানে ১২ হাজার গাছের চারা এবং ৫৬টি গাছ রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম ভাসমান উদ্যান। আরও রয়েছে ভলিবল কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট। চারটি বিশালাকৃতির সুইমিং পুল। রয়েছে পুল সার্ফিংয়ের সুবিধা। জাহাজে রয়েছে কম্পিউটার গেমিং ও সাইন্স ল্যাবরেটরিসহ নানান আকর্ষণীয় বিষয়।

 

অতিকায় গাড়ি

রাস্তায় ছুটে চলা গাড়ির উচ্চতা যদি প্রায় তিনতলা সমান হয় আর দেখতে গোটা এক দালানের মতো বড় হয় তবে গাড়িকে তিনতলা বাড়ি ভেবে নিয়ে ভুল হবে না। এমনই এক গাড়ি। এই গাড়িটির উচ্চতা ২৬ ফুট, দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট। গাড়িটি কত বড় তা তুলনা টেনে দেখা যাক। লন্ডনের ডাবল ডেকার বাসগুলোর তুলনায় এটি প্রায় দ্বিগুণ উঁচু। আকারেও বেশ বড়। আর এই গাড়ি বানিয়ে চমকে দিয়েছেন সুধাকর যাদব। সুধাকর ভারতের নিবাসী। নতুন নতুন মডেলের গাড়ি তৈরির প্রতি তার নেশা রয়েছে। সেই নেশা মিটিয়ে চলতে গিয়েই এমন বড় আকারের গাড়ি তৈরি করেন। উদ্দেশ্য কিন্তু নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস গড়া। সে চেষ্টা এর আগেও করেছেন। এর আগে বিশাল ত্রিচক্রযান বানিয়ে এই ওয়ার্ল্ড  রেকর্ড করেছেন যাদব। ১৯২২  ফোর্ড টুরার মডেলের স্টেশনারি  ভেহিকল নামে এই গাড়ি দেখতে অনেকটা ফরমুলা ওয়ান কারের মতো। অবশ্য তাই বলে নকল নকশা ভেবে নিলে কিছুটা হলেও ভুল হবে। এটি অন্যান্য গাড়ির মতোই স্ক্যাপ মেটাল দিয়ে তৈরি। ১৪ বছর বয়স  থেকেই বিচিত্র গাড়ি বানানোর নেশায় পেয়ে বসে সুধাকরকে। এখনো নিত্যনতুন আদলের গাড়ি বানাচ্ছেন সুধাকর। নিজের বানানো গাড়ি দিয়ে হায়দরাবাদে গড়ে তুলেছেন একটি গাড়ির জাদুঘর। সুধা কার মিউজিয়াম নামে ওই জাদুঘরে তিনি বিচিত্র মডেলের বিভিন্ন সাইজের গাড়ির প্রদর্শন করে থাকেন। তার জাদুঘরে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে টয়লেট কমোড, বিলিয়ার্ড টেবিল, গিটার, মেয়েদের জুতা, লিপস্টিক, বার্গার, সিগারেট, বেগুন, বেড, সোফা, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদি আদলের অন্তত ৭ শতাধিক গাড়ি।

 

৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেন

রেল যোগাযোগ আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বলে যুগের পর যুগ ধরে মানুষের কাছে জনপ্রিয়। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে ট্রেনে যোগ করা হয় বাড়তি বগি ও কামরা। আর এতেই বাড়তে থাকে ট্রেনের দৈর্ঘ্য। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেনের কথা বলতে গেলে যাত্রীবাহী ট্রেন নয় বরং মালবাহী ট্রেনের কথা চলে আসে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মালবাহী ট্রেনের দৈর্ঘ্য

৭.৩৫৩ কিলোমিটার বা ৪.৫৭ মাইল! বিস্ময় জাগানো এই দীর্ঘতম ট্রেনের নাম  ‘অস্ট্রেলিয়ান বিএইচপি আওর ওরে ট্রেন’ এটি ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউম্যান থেকে পোর্ট হেডল্যান্ডে ২৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। সে ট্রেনটিতে ছিল ৬৮২ ওয়াগন লোহা। এই বিপুল পরিমাণ লোহার মোট ওজন ছিল ১ লাখ টন। চমকাতে চাইলে আরেকটু সবুর করতে হবে। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই অতিকায় ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ করেছে মাত্র একজন চালক। গিনেস বুকে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম ট্রেন।

 

এটাও মোটরসাইকেল!

ইতালির ফ্যাবিও। মোটরসাইকেলের প্রতি আকর্ষণ বহুদিন থেকেই। তবে সবাই মাটির কাছাকাছি উচ্চতার মোটরসাইকেলে চড়লেও তিনি ভাবলেন একটু ব্যতিক্রম হওয়া চাই। তাই বসে থাকলেন না। ছোট মোটরসাইকেল পাল্টে বড় মোটরসাইকেল তৈরির দিকে মন দিলেন। শুরুর দিকে তার ওয়ার্কশপে যারা অতিকায় মোটরসাইকেল দেখতে এসেছিলেন তারা ভাবলেন এই লোক বদ্ধ পাগল ছাড়া আর কি। নইলে কেউ দোতলা বাসের সমান উঁচু মোটরসাইকেল বানাতে চায়? ফ্যাবিওর বয়স মাত্র ৩২ বছর। ওই বয়সে পাগলামিটা মাথায় চড়ে বসলে যা হয় তাই করলেন। আটজনকে তার পাগলামিতে সাহায্য করার জন্য দলে ভিড়ালেন। সাত মাসের মাথায় গিয়ে তৈরি হলো দানবাকৃতির মোটরসাইকেল। প্রায় সতের ফুট উঁচু এই মোটরসাইকেল কিন্তু চালকের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। দেখতে যেমন দানবের মতো এর ইঞ্জিনও তাই। তিন গিয়ারের এই মোটরসাইকেলে রয়েছে ৫.৭ এল ভি৮ ইঞ্জিন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চালনাযোগ্য মোটরসাইকেলের খেতাব পেয়েছে। এটি সাধারণ বড় আকৃতির মোটরসাইকেলের চেয়ে ৬ গুণ বড়। দশ মিটার লম্বা আড়াই মিটার চওড়া। আর ওজন পাঁচ হাজার কেজি!

 

 

>> বিমান তোলা সহজ কাজ

আকাশে বিমানের রাজত্বে ভাগ বসাতে জুড়ি নেই হেলিকপ্টারের। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আকৃতির হেলিকপ্টারের নাম এমআই টুয়েন্টি সিক্স। অনেকে আদর করে ডাকে ‘হেলো’ বলে। আকাশে উড়ার চমকপ্রদ নৈপুণ্য রয়েছে এর। প্রতিকূল আবহাওয়াতেও এটি দিব্যি ভাসতে পারে। মাঝারি আকৃতির বিমানও এই হেলিকপ্টারের শক্তির কাছে পাখির পালকের মতো হালকা বৈকি। নইলে এয়ারবাস এ-থ্রি হান্ড্রেড টুয়েন্টির মতো উড়োজাহাজকে দুটি স্টিলের তারের সঙ্গে বেঁধে নির্দ্বিধায় আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারত না। এই হেলিকপ্টারের রয়েছে ১১ হাজার হর্স পাওয়ারের টার্বোশেফট ইঞ্জিন। যে কারণে ৪৪ হাজার পাউন্ডের কার্গো বা ১১টি ফ্যামিলি কার একই সঙ্গে বয়ে নিয়ে যাওয়া তার কাছে ছেলেখেলা। বর্তমানে এ ধরনের বিশেষ হেলিকপ্টার রাশিয়ার সেনা পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

 

>> ৩০০ যাত্রী বসতে পারে যে বাসে

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বাস কোনটি? এই প্রশ্নের জবাব পেতে একটু সমস্যা পোহাতে হবে। কারণ আন্তঃজালে ৮২ মিটার লম্বা ও ৯৮ মিটার লম্বা দুটি বাসের মধ্যে বেশ দীর্ঘ বাস কোনটি এ নিয়ে লড়াই চলছে। তবে যাত্রী পরিবহন করছে এমন দীর্ঘ বাসের খোঁজ করতে চাইলে চীনে যেতে হবে। সেখানেই রয়েছে প্রায় ২৭০ ফুট লম্বা বাস! সাধারণ লম্বা বাসের চেয়ে এটি কম করে হলেও ১৩ গুণ বেশি দীর্ঘ। একে বলা হয় ইয়ংম্যান জেএনপি৬২৫০জি। নামটা কঠিন হলো? একে ইয়ংম্যান ডাকলেই চলবে। এটি চীনের জনপ্রিয় একটি সিটি বাস। চীনের সড়কে এটি নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে আসছে। প্রতি যাত্রায় এটি ৩০০ যাত্রীকে আলাদা আলাদা সিটে বসিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে থাকে। বেইজিং থেকে হ্যাংজুতে ছুটে চলা এই বাস র্যাপিড ট্রানজিট সার্ভিসের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। অতি জনবহুল শহরে এ ধরনের বাস যাত্রীদের সময় বাঁচাচ্ছে, দিচ্ছে উন্নত পরিবহন সেবা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর