শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত সুখী দেশ

তানভীর আহমেদ

বিশ্বের যত সুখী দেশ

গড় আয়ু বৃদ্ধিতে ভিয়েতনাম বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম সুখী দেশ এটি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন নিউ ইকোনমিক্স ফাউন্ডেশন। ‘হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স ২০১৬’ শিরোনামে সেখানে সুখী দেশের নাম উঠে এসেছে। চলতি বছর সারা বিশ্বে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম সুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে কোস্টারিকা। একটি দেশের নাগরিকদের সন্তুষ্টি, গড় আয়ু, পরিবেশের ওপর প্রভাব ও বৈষম্য— এই চার মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সুখী দেশের এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

 

১ কোস্টারিকা

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশটির নাম কোস্টারিকা। কোস্টারিকাকে পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ দেশ বলা হয়। অবাক হওয়ার মতো বিষয়, কোস্টারিকার কিন্তু নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই। ১৯৪৯ সালের পর থেকেই সেনাবাহিনী ছাড়াই এই নিরাপদ দেশ চলছে। হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স অনুযায়ী ৪৪.৭ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে তারা। এখানকার অপরাধের মাত্রাও বিশ্বের সর্বনিম্ন তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া এই দেশে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগও হানা দেয় না।

 

২ মেক্সিকো

প্রতিবেশী দেশ আমেরিকার চেয়ে বেশি সুখী মেক্সিকোর জনগণ। হঠাৎ করে কথাটি শুনলে চমকে উঠতে পারেন, তবে এটাই সত্যি। অর্থনৈতিক উন্নতির আকারের দিক থেকে আমেরিকার ধারে কাছেও নেই মেক্সিকো অথচ সুখ অনুভবে এগিয়ে তারাই। টাকাই যে সুখের শেষ কথা নয়— এটাই মনে করিয়ে দেয় মেক্সিকো। সাম্প্রতিক কালে মেক্সিকোবাসী আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার ছোঁয়া পেয়েছে। এ ছাড়া দেশবাসী ভোগ করছে রাজনৈতিক স্বস্তি। যে কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় নিরাপত্তা দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে।

 

৩ কলম্বিয়া

কলম্বিয়াকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশ। প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমাহার রয়েছে এই দেশে। দেশটি পাহাড়, নদী, সমুদ্রের সৌন্দর্যে যে কাউকে মুগ্ধ করবে। মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সমাজ ও দেশকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছে বিশ্ব দরবারে। ফ্যাশন জগতেও কলম্বিয়াকে আইকন মানা হয়। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা ও সামাজিক নিরাপত্তা দিয়েছে সুখের ঠিকানা। কলম্বিয়া রং বাহারি উৎসবে মেতে ওঠে। মানুষ অল্পতেই তৃপ্ত বলে হতাশা কম দেশটিতে।

 

৪ ভানুয়াতু

আকারে বড় নয়। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে বিগত বছরগুলোতে। মানুষের মাঝে ভাতৃত্ববোধ দারুণ। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভানুয়াতুর জিডিপি অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় প্রায় ২০ গুণ কম। তবু সুখের অভাব নেই এ দেশবাসীর। ভানুয়াতুর নেই নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী। দিন দিন উন্নতি করে চলা দেশটি শান্তির দেশ হিসেবে প্রশংসিত। অবাক করার মতো বিষয় প্রকৃতির সুরক্ষা রক্ষায় দেশটি ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। জাপানের তুলনায় ভানুয়াতুর জনগণ বেশি নাগরিক সন্তুষ্টি লাভ করে।

 

৫ ভিয়েতনাম

পাহাড়ঘেরা, ট্রপিক্যাল বনের দেশ ভিয়েতনাম। এদেশটি প্রাকৃতিক সুরক্ষায় উদাহরণ হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর কাছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হংকং। অর্থনৈতিক আকারের বিবেচনায় হংকংয়ের চেয়ে ২৪ গুণ ছোট ভিয়েতনাম বহু চড়াউ-উত্রাই পার করে এখন স্বস্তির খোঁজ পেয়েছে। ভিয়েতনামবাসীর গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিয়েতনাম অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। এখানকার মানুষ পর্যটকদের জন্য বেশ সহায়ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রকাশ করার জন্য প্রশংসনীয়।

 

৬ পানামা

৩৯.৫ স্কোর নিয়ে তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে পানামা। এদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৭.২ বছর। প্রাকৃতিক সুরক্ষা রক্ষার্থে বিশ্বের ৭৩ নম্বর দেশ এটি। নাগরিক সন্তুষ্টিতে দশে ৬.৯ স্কোর করেছে দেশটি। সবমিলিয়ে দারুণ অবস্থানে উঠে এসে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে পানামা। পানামার মানুষের সন্তুষ্টির মাত্রা চমকপ্রদ। এখানকার মানুষ সহজেই একে অপরের সঙ্গে আন্তরিক হতে পারে। সামাজিক উৎসবেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখা যায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এরা মন খুলে জমায়েত হয়।

 

৭ নিকারাগুয়া

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ নিকারাগুয়া। দেশের চারপাশের সমুদ্রের উচ্ছ্বাস মানুষকে মুগ্ধ করে। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে নয়, ব্যবহারেও নিকারাগুয়ার মানুষ যে কারও মন জুড়িয়ে দেবে। হাসিখুশি ও উৎসবপ্রিয় মানুষের বসবাস এদেশে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় দেশটি বেশ সচেতন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেও এগিয়েছে দেশটি। সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে। পর্যটকরাও ভিড় করেন এদেশে। এখানের পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থা মানুষের বসবাসের জন্য শান্তিময় বলেই খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। নিকারাগুয়ার মানুষদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঠিক কোন সুবিধাগুলোর কারণে তারা সুখী। তাদের মতে, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, উৎসবে স্বাধীনতা ও গড় আয়ু বৃদ্ধি তাদের সুখী করে তুলেছে।

 

৮ বাংলাদেশ

বিশ্বের অষ্টম সুখী দেশ বাংলাদেশ। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে চিনছে সারা বিশ্ব। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি, প্রাকৃতিক সুরক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসনীয়। সবুজ দেশ খ্যাত বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ উর্বর ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে গার্মেন্ট শিল্পের বড় অবদান রয়েছে। পরিবেশ দূষণ রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইমেজ অন্য উচ্চতায় রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতেও বাংলাদেশ চমকপ্রদ অবস্থানে উঠে এসেছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে, বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর