বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিখ্যাত জ্যোতিষী নস্ট্রাদামুস ও লিস্ট ভার্সের চোখে

কী ঘটবে ২০১৭ সালে?

আবদুল কাদের

কী ঘটবে ২০১৭ সালে?

ভবিষ্যৎ কেমন হবে সে নিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসার কমতি নেই। এই কৌতূহল বহু পুরনো। সত্যি বলতে, কাল কী ঘটবে তা হয় তো আমরা কেউই বলতে পারি না। অবশ্য অনেকেই নানা সম্ভাবনার কথা বলে মানুষকে চমকে দিয়েছেন। যেমন বিখ্যাত জ্যোতিষী মিচেল ডি নস্ট্রাদামুস। তার বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়, তাকে নিয়ে কৌতূহল বাড়ে। সম্ভাবনার কথা যদি বলা হয় তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০১৭ সাল কেমন যাবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা মত রয়েছে— সেসব নিয়ে লিস্ট ভার্স ডটকম একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে। সে তালিকা ধরেই আজকের রকমারি—

 

আমেরিকায় হতে পারে গৃহযুদ্ধ

শিরোনাম পড়ে অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে, অচিরেই গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে আমেরিকায়! নানা বিশ্লেষণ, বিতর্ক থাকলেও তালিকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা এটি। এমনিতেই আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান টার্গেট আমেরিকা। টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রে একটি গ্রুপ নিজেই সশস্ত্র ও সহিংস বিদ্রোহ শুরু করতে পারে। আর এই তথ্য উঠে এসেছে পিউর রিসার্চে। তারা বলছে, আমেরিকানদের নিজের দেশের লোকদের ওপর বিশ্বাস উঠে গেছে। মার্কিন রাজনীতিতে চলছে মেরুকরণ। বিভেদ বাড়ছে রাজনীতিবিদদের মধ্যে। ডানপন্থি ও বামপন্থিরা নিজেদের অনুসারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজ নিজ অনুসারীদের দিন দিন হিংস্র করে তুলছে। আবার অনেকেরই মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে নির্বাচন ব্যবস্থায় কারচুপি হয়েছে বলে অনেক রাজনীতিবিদ তো বটেই, সাধারণ মানুষও মেনে নিতে পারছেন না নতুন প্রেসিডেন্টকে। তাদের মতে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট অবৈধ। ফলে সব মিলিয়ে আমেরিকার পরিস্থিতি ঘোলাটেই বলা যায়। যদি সেখানে আন্দোলন বাধে তবে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অবশ্য এ বছরই যে এমনটি ঘটবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনেকের কাছে জরিপটি হাস্যকর মনে হতেই পারে। তবে এটা নিশ্চিত, আমেরিকা বর্তমানে বিভক্ত ও অস্থিতিশীল এক রাষ্ট্র। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথকে কেন্দ্র করে দেশটিতে চলছে আন্দোলন। আর এই আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত থামবে না যতক্ষণ কেউ এসব চিন্তাধারায় পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন।

 

ইউরোপে জঙ্গিদের তত্পরতা বাড়বে

২০১৭ সালে আবার ইউরোপে ভয়াবহ হামলার আশঙ্কা রয়েছে। ইরাক ও সিরিয়া ধ্বংসের পর আইএসের অনেকে ঘরে ফিরছে। তাদের মধ্যে পশ্চিমা জঙ্গিও রয়েছে। সবার একটাই লক্ষ্য সর্বোচ্চ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটানো। ইউরোপোলের মতে, ‘ফিরে আসা এসব জঙ্গি ইউরোপের দেশে দেশে হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। যেমনটি হয়েছিল প্যারিস, ব্রাসেলস ও লন্ডনে। এবারের লক্ষ্য হতে পারে ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেন। আর এসব হামলা যে শুধু আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই হবে এমনটি নয়। সেরিন এবং অ্যানথ্রাক্সের মতো মরণব্যাধি ভাইরাসের মাধ্যমেও এমন হামলা হতে পারে। অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করা গেলেও একটি সফল হামলা ইউরোপে ঘটিয়ে দিতে পারে মৃত্যুর রথযাত্রা। কেননা, আগে হামলা চালিয়ে বন্দী কিংবা হত্যার উদ্দেশ্য হাসিল করে পালিয়ে যেত। এখন আর জঙ্গিরা সেই রীতিতে নেই। এখন হামলায় নিহত না হওয়া পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায় হামলাকারীরা।

 

পারমাণবিক পরাশক্তি উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া কি ফাঁকি দিচ্ছে! ইরানের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে যখন গোটাবিশ্ব চিন্তিত ঠিক তখনই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। পুরো ব্যাপারটি যেন শেঠ রগেনের সিনেমার মতো। তবে এটা সত্য, কোরিয়া গোটাবিশ্বকে অবমূল্যায়ন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে বিশ্ববাসী দেখতে পারে কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের গর্জন যা গোটা মানবজাতির জন্যই হুমকিস্বরূপ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে  উত্তর কোরিয়া পঞ্চম পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। একই বছরের জানুয়ারিতে চালিয়েছিল হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা। ইতিহাসে এমন পরাশক্তি নেই যে, শুধু পরীক্ষার জন্য পাঁচটি পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছে। শুধু গবেষণার জন্যই এই রকেটগুলো বানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ২০১৮-এর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক গবেষণায় পরিপূর্ণ সফলতা পাবে। ইতিমধ্যে কিমের ২০টি পারমাণবিক বোমা ও একটি দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে।

 

 

দেশে দেশে বাড়বে সহিংসতা

বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি যে ক্রান্তিকালের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে করে বলা যায় খুব শিগগিরই এর পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এখন পর্যন্ত অসংখ্য পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। এমনই এক জরিপে দেখা যায়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে চলছে এবং ২০১৭ সালে ইউরোপে আরও জঙ্গি হামলা চালানো হবে। গেল কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চীনের ডেইলি এবং গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশ হওয়া খবর ছিল অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রও ন্যাটো বাহিনী পাঠাতে পারে। ১৯১৩ সালে গুপ্তহত্যা থেকেই আস্তে আস্তে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। ঠিক তেমনি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষে গোটাবিশ্বের সাধারণ মানুষ অদূর ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে বিভিন্ন বিশ্বশক্তি। মার্কিন জনগণ ভয়াবহ রকমের যুদ্ধের আশঙ্কা করছে। এক জনমত জরিপে আরও উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জনগণ প্রধান হুমকি বলে মনে করে রাশিয়াকে। রাশিয়ার সাবেক এক ন্যাটো কমান্ডার ইতিমধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মস্কো ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাটলিক রাজ্যে যোগ হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে সমর্থন  দেবে। তা ছাড়া পাকিস্তান ও ভারতে উত্তেজনা তো আর একেবারেই ফেলনার নয়।

 

মেরিন লে পেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি হবেন

লিস্টভার্স ডটকম তাদের তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক ও অবিশ্বাস্য এক ভবিষ্যদ্বাণী রেখেছে। এই তালিকায় বলা হয়, মেরিন লে পেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি হবেন। এর পেছনে তারা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালেও এটি নজর কেড়েছে অনেকের। মেরিন লে পেন, ন্যাশনাল ইলেকশন ২০১৭-এ ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্টের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ন্যাশনাল ফ্রন্ট এমন একটি দল যারা পুরোপুরি ডানপন্থি এবং তারা অনেকটা বিতর্কিত জেনারেল ফ্রাঙ্কোর মতো। ১৯৭২ সালে ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির উদ্ভাবন করেন জেন মেরি লে পেন, যিনি বরাবরের মতো গণহত্যার কথা অস্বীকার করেন। তার কাছের সদস্যরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রেঞ্চের সদস্য ছিলেন। তিনি নািস বা ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী বলে ২০১২ সালে তার দলের বিরুদ্ধেও ফ্যাসিবাদী অভিযোগ উঠেছিল। তার কন্যা ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা মেরিন। লে পেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি হলে আরও একটি ব্রেক্সিটের ঘটনা ঘটবে। নির্বাচনে মেরিন লে পেন জয়লাভ করলে ইইউ বিরাট একটি ধাক্কা খাবে এবং পরবর্তীতে তা পুরোপুরি রাশিয়ার পক্ষে যাবে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

পূর্ণশক্তিতে ফিরে আসতে পারে তালেবান

২০১৭ সালে আতঙ্ক জাগানো সম্ভাবনা হিসেবে লিস্ট ভার্স বলছে তালেবানদের ফিরে আসার কথা। বিশ্লেষণ বলছে,  জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান বিশাল অর্থনৈতিক বাজেট নিয়ে ফিরে আসতে পারে। সম্ভবত তারা গ্রীষ্মকালীন সময়টাকেই আক্রমণের জন্য বেছে নিয়েছে। তারা পুরো আফগান নগরী দখলের জন্য দেশটির প্রতিটি কোনায় কোনায় নিজেদের আধিপত্য গড়ার চেষ্টায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ৪০০টি জেলার মধ্যে ১৫০টির কাছাকাছি জেলা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। ৫০টির বেশি জেলায় চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। ২০০১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আফগান সেনা ও পুলিশ দলত্যাগ করেছে। তা ছাড়া আইএসের ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার ভয়াবহতার কথাই কে ভুলতে পারে। রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানান, ‘তালেবানরা ছড়িয়ে আছে গোটা আফগানিস্তানে; এমনকি তাদের মাঝে মাঝে অস্ত্রসহ টহল দিতেও দেখা যায়।’ সর্বশেষ তালেবানরা ২০১৬ সালের অক্টোবরে কুদ্দুস নগরী দখলে নেয়। বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে।

 

আফ্রিকা-এশিয়ায় গণহত্যার আশঙ্কা

ইরাক, ইয়েমেন এবং সিরিয়ার মতো দেশ বর্তমানে মৃত্যুপুরী। এসব মৃত্যুনগরীর সহিংসতার অংশীদারিত্ব হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। এখনো দিনদুপুরে লাশ পড়ে ইউক্রেন, মেক্সিকো এবং সোমালিয়ায়। এ তো গেল আনপ্রিন্টেড লিস্ট, ২০১৭ সালে সম্ভবত আরও দুটি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। একটি হলো মিয়ানমার (বার্মা) এবং অন্যটি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক জাতিগতভাবে বিভক্ত, গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করা সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর অন্যায়-অত্যাচারে লিপ্ত ব্যর্থ রাষ্ট্র। গত দুই বছর ধরে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক প্রায়ই উত্তপ্ত। জাতিগত সহিংসতা, হরহামেশা মারামারি, হত্যাযজ্ঞে দেশটির বাতাস হয়ে উঠেছে ভারী। পর্যবেক্ষকদের দাবি, এখানকার বাতাসে ছড়িয়ে আছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। জাতিগত সহিসতায় লণ্ডভণ্ড পুরো অঞ্চল। যে কোনো দিন যে কোনো সময় ঘটছে সরাসরি গণহত্যা। অন্যদিকে মিয়ানমারও একই ধরনের সাম্প্রদায়িকতার ভয়ানক জালে বন্দী। মিয়ানমারের কথিত সাফল্যের গল্পও ছিল। দীর্ঘ ৬০ বছর পর একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রা হয়েছিল। এটাকে বিনামূল্যে বিশ্বের অন্যতম বাতিঘর বলে মনে করা হতো। হঠাত্ করেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। একাত্মতার গ্রামগুলো ধ্বংস এবং সাম্প্রদায়িকতার রেশ ধরে জাতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে।

 

বাণিজ্য যুদ্ধে পরাশক্তি চীন-আমেরিকা

সম্ভাবনা রয়েছে চীন ও আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধের। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় চীন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ। এমনকি চীনা কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও তার প্রশাসনকে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন এবং বেইজিং বাণিজ্য চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সত্যিই যদি আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চান, সে লক্ষ্যে চীনা পণ্যের ওপর ৪৫ ভাগ কঠিন কর আরোপের কথাও ভাবছেন তারা। চীন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য হয় প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যার সিংহভাগ আমদানি করে চীন। তাই বলা যায়, চীন অবিলম্বে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তবে এ ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে সম্ভবত আমেরিকাই হবে এর বৃহত্তম শিকার। তবে এর প্রভাব এশিয়ায় ভালোভাবেই পড়বে। ক্ষতিকর বাণিজ্য যুদ্ধে এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ানসহ অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

বন্ধ হতে পারে ব্যাংকা ডি-ইতালিয়া

ধস ব্যাপারটাই আতঙ্কের। আর তা যদি হয় অর্থনৈতিক সংকট তাহলে সত্যিই ভয়াবহ। সম্ভবত ২০১৭ সাল ইতালির অর্থনীতির জন্য খারাপ সময়। কেননা ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকা ডি ইতালিয়ায় অর্থ সংকট দেখা দেয়। আর সেই অর্থ সংকটের বেড়াজাল থেকে ইতালি আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি। ইতালির ঋণদাতারা ২০০৮ সালের মতো সংকটে এর আগে কখনো পড়েনি। তাই ধারণা করা হচ্ছে, ইতালির এই ব্যাংকটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইতালির অর্থনীতি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্ অর্থনীতি। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত। আর এ জন্যই ইতালির অর্থনীতির ধস মানে ইউরোপের ধস। ইইউর ঘোষিত নীতিমালার চেয়ে ইতালির ঋণ দ্বিগুণ হওয়ায় দেশটিতে চলছে অর্থ মন্দা। গ্রিসও এই অর্থ সংকটের বাইরে নয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে গ্রিসের অবস্থান ৫০তম। বলাবাহুল্য, অর্থনৈতিক দিক থেকে ইইউ চীনের চেয়েও বড়। যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ছে।

 

ঘটতে পারে সাইবার অ্যাটাক

২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর হ্যাকারের একটি দল পশ্চিম ইউক্রেনের পাওয়ার প্লান্টে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং তিনটি প্রধান পাওয়ার স্টেশন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। সময়টা ছিল শীতের মাঝামাঝি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর অন্ধকার বরফাচ্ছন্ন হয়ে ছিল পশ্চিম ইউক্রেনের চারপাশ। একসঙ্গে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার বাড়ি ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে। এটিই ছিল পাওয়ার গ্রিডের ইতিহাসে প্রথম সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা। যদিও সে সময় মার্কিন পাওয়ার গ্রিডের চেয়ে ইউক্রেনের সেই সাইবার সিকিউরিট বেশ ভালো ছিল। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে মার্কিন সাইবার অ্যাটাক সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেননা ২০১৭ সালে বড় ধরনের সাইবার অ্যাটাকের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেন হামলার পর সতর্কবাণী বেশ গুরুত্ব পায়। ইউক্রেন অ্যাটাকে ছয় ঘণ্টা পাওয়ার গ্রিড বন্ধ থাকার পর ব্যাকআপ ব্যবহার করে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। মার্কিন সাব স্টেশনের বেশ অভাব। যদি একবার হ্যাকারের কবলে পড়ে তাহলে পুনরুদ্ধারে মাসখানেক সময় পার হয়ে যেতে পারে। ফ্রান্সেও একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ এর মাঝামাঝি সময়ে। সে সময় রাশিয়ান হ্যাকাররা ফ্রান্সের টিভি-৫ প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিল। ২০১৬-এর শীতকালে আবারও ইউক্রেনে সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, আমেরিকা এবারের লক্ষ্যবস্তু হতেই পারে।

 

নস্ট্রাদামুসের চোখে ২০১৭

১৬ শতকের চিকিত্সক ও জ্যোতিষী ছিলেন মিচেল ডি নস্ট্রাদামুস। পেশায় চিকিত্ক হলেও তিনি জ্যোতিষী শাস্ত্রে সেকাল-একাল দুই সময়ের বিখ্যাত একজন। তিনি ১৫৫৫ সালে পৃথিবীর ভবিষ্যত্ নিয়ে এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যেগুলো পরবর্তী কয়েক শতক ধরে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে। এমনটিও দাবি নস্ট্রাদামুসের অনুসারীদের। নস্ট্রাদামুস তার প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী লিখেছিলেন মাত্র চার লাইনের কবিতার ছন্দে। কে জানত যে সেই হেঁয়ালিভরা শব্দগুলো কয়েক শতক পরের ঘটে যাওয়া ঘটনা। নস্ট্রাদামুস ১০টি খণ্ডে তার ভবিষ্যদ্বাণী লিখে গেছেন। প্রতিটি খণ্ডে ১০০টি ভবিষ্যদ্বাণী আছে। দুই হাজার বছরের ভবিষ্যত্ লিখেছেন তিনি। ২০১৭ সালের প্রত্যাশিত কিছু ঘটনার কথাও উল্লেখ আছে তার কবিতার ছন্দে। এসব কবিতায় ২০১৭ সালে খরা, বন্যা, যুদ্ধ, মহামারী ও বিভিন্ন যুদ্ধের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে। তার ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, চলতি বছরে চীন তার অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেবে। চীন কয়েকটি খ্রিস্টান দেশকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কয়েকটি মুসলিম দেশের সঙ্গে এক জোট হবে। ইতালিতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। নস্ট্রাদামুস আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এক দেশে পরিণত হবে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে নতুন এক চুক্তি হবে, এতে আমেরিকা বাধা দিলেও সমর্থন দেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেবে। সন্ত্রাস বেড়ে যাবে। চীন তার ক্ষমতা দেখাবে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে।

এ ছাড়াও ৩৭৯৭ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে, সে কথাও বলে  গেছেন এই বিখ্যাত জ্যোতিষী। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

 

এ বছরই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!

ফ্রান্সের চিকিৎসক ও অ্যাস্ট্রোলজার নস্ট্রাদামুস প্রায় ৫০০ বছর আগেই নানা ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন। গবেষকদের দাবি, কালের বিবর্তনে এই জ্যোতিষের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী অতীতেও মিলে গিয়েছিল। যার ফলে বিশ্ববাসী দেখেছিল ফেঞ্চ বিপ্লব, হিটলারের উত্থান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গুপ্তহত্যা এমনকি আমেরিকায় নাইন ইলেভেনের মতো হামলা। এখানেই শেষ নয়, নস্ট্রাদামুসের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী মতে গবেষকরা বলেন, সম্ভবত এ বছরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ের আভাসও দিয়েছিলেন নস্ট্রাদামুস। তিনি এক ধাঁধায় লিখেছেন, ‘খুব নির্লজ্জ, অহংকারী এক বক্তা ক্ষমতাসীন হবে। সে বিতর্ক তৈরি করবে। সেতু ভেঙে যাবে, আতঙ্ক গ্রাস করবে সবাইকে।’ ফলে আমেরিকায় শাসনব্যবস্থা ভেঙে যাবে, সুপার পাওয়ার দেশটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর ট্রাম্পের হাত ধরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে, সে আভাসও দিয়েছেন তিনি। নস্ট্রাদামুসের হিসাব সত্যি হলে, চলতি বছর বিশ্ববাসীর জন্য হতে পারে এক দুর্ভোগময় বছর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর