শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলচিত যত সীমান্ত

সাইফ ইমন

আলচিত যত সীমান্ত

চীন-উত্তর কোরিয়া

চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্তে প্রায় সময়ই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। আগে পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। পিঙ্কতু পর্বতমালা এবং তুম্যান ও ইয়ালু নদী নিয়েই চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত। এক সময় সীমান্তে সীমান্তরক্ষীদের টহল তেমন জোরদার ছিল না। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি বছরই বেশ কিছু সংখ্যক উত্তর কোরীয় জনগণ উন্নত জীবনের আশায় উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে চীনে প্রবেশ করত। কিন্তু কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার সীমান্তরক্ষীরা প্রায় সময়ই খাবার ও অর্থ সংগ্রহের জন্য সীমান্তবর্তী এলাকার লোকগুলোর ওপর অত্যাচার চালায়। এ সময় উত্তর কোরিয়ায় বিপুল সংখ্যক অধিবাসী চীনে প্রবেশ করতে শুরু করে। ফলে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর পরই চীন তাদের সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া আর দেয়াল তৈরির কাজ শুরু করে। বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিউক্লিয়ার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এ খবরের ভিত্তিতে চীন অতিরিক্ত সৈন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়োজিত করে।

 

আফগানিস্তান-পাকিস্তান

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তকে ঘিরে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। ফলে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রায়ই সংবাদ হয় আলোচিত এ সীমান্তটি। এই দুই দেশের সীমান্তকে বলা হয় ডুরাল্ড লাইন। প্রায় দেড় হাজার মাইল দীর্ঘ এই ডুরান্ড লাইন। তবে এই সীমান্ত কখনই মেনে নেয়নি আফগানিস্তান। পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখা রাজ্যের পশতুন অধ্যুষিত এলাকা নিজেদের বলে এখনো দাবি করে আসছে আফগানিস্তান। কিন্তু তাদের দাবি পাকিস্তান বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। ফলে এ সীমান্তকে ঘিরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাক্ষণ দাঙ্গা আর হামলায় এ সীমান্তটি কাঁপতে থাকে প্রায় প্রতিটি দিন। আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তজুড়ে অবাধে চলছে অস্ত্র কেনাবেচা, মাদক চোরাকারবারি ইত্যাদি। নিশ্চিন্তে যাতায়াত রয়েছে স্মাগলারদের। বেশ কয়েক বছর যাবৎ পাকিস্তান কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ করছে।  এই সীমান্তের দুই পাশের অঞ্চলগুলোতে স্থানীয়দের ওপর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোনো প্রভাব নেই। সীমান্ত সংলগ্ন স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ছে হিউমেন ট্রাফিকিংসহ নানা অপরাধ কর্মে। 

 

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো

পৃথিবীজুড়ে আলোচিত সীমান্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত। এই সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মেক্সিকান নাগরিক প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, গত ১৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ছয় হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। আর মাদক চোরাকারবারিদের জন্য এই সীমান্ত যেন গেইট অব হেভেন। আবার অনেক আমেরিকান নিজের দেশে অপরাধ ঘটিয়ে আত্মগোপনের জন্য পাড়ি দেন মেক্সিকোতে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হলো মাফিয়া সদস্য। মেক্সিকোর সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাদক পাচার হয়। ২০০৬ সালে মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি ফিলিপ ক্যালডেরোন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তিনি সীমান্ত দিয়ে সব ধরনের মাদক চোরাচালান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয় সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে চোরাকারবারিদের। সীমান্তের দুই পাশই মাদক চোরাচালানিদের রক্তে ভিজে ওঠে। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত বিষয়ে গত চার বছরে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ মারা যান মেক্সিকোতে।

 

উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্ত ১৯৫৩ সালের কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকেই রয়েছে আলোচনায়। ১৯৪৮ সালে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় দুটো দেশ নিজেদের বিভক্ত করার মধ্য দিয়ে। এই দুই দেশের সীমান্ত প্রায় দেড়শ মাইল দীর্ঘ। এই সীমান্তকে সামরিক সজ্জায় সজ্জিত সীমান্ত বলা হয়ে থাকে। কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সৈন্যরা এই সীমান্তের দুই পাশে অবস্থান করছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় দুই দেশের সীমান্তজুড়ে সব সময় উত্তেজনা বিরাজ করে। কদিন আগেই উত্তর কোরিয়ার একটা ডুবোজাহাজ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজকে ধ্বংস করে দেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক চূড়ান্ত অবনতির দিকে পৌঁছেছে। যে কোনো সময় বেধে যেতে পারে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে হবে দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশপথ। দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্যের জন্য আমেরিকাও নিজেদের ২৮ হাজার সৈন্য সীমান্তে বহাল রেখেছে। ফলে কোরিয়ার দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো থমথমে অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও ২০১০ সালে উত্তর কোরিয়ার গোলাগুলির জবাবে দক্ষিণ কোরিয়াও গুলি ছোড়ে।

 

কলম্বিয়া-ইকুয়েডর

কলম্বিয়া-ইকুয়েডর সীমান্ত মাঝে মাঝেই বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় চলে আসে মূলত কলম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী বা পিপলস আর্মির কারণে। কলম্বিয়া এবং ইকুয়েডরের মধ্যকার সীমান্তজুড়ে পিপলস আর্মির সদস্যরা অবস্থান করে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কলম্বিয়া সরকারের ভাষ্য, কলম্বিয়ার এই বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী ইকুয়েডরের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে কলম্বিয়ার মধ্যে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়। কলম্বিয়ার সরকারি হিসাব বলছে বিগত বছরগুলোতে পিপলস আর্মির আক্রমণে দুই লাখের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কলম্বিয়া সরকার ইকুয়েডর সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে দাবি করে, ইকুয়েডর সরকার পিপলস আর্মির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুদেশের সীমান্তজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রায়ই কলম্বিয়ান সরকারের সৈন্যদের সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তে পিপলস আর্মি সংঘর্ষে জড়ায়।

 

ইয়েমেন-সৌদি আরব

সৌদি আরব আর ইয়েমেনের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘ ৬৫ বছর চলে আসছে। দুই দেশের ১১০ মাইল সীমান্তজুড়ে প্রায় সময় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ইথিওপিয়ার ব্যাপক সংখ্যক উদ্বাস্তু এই সীমান্ত দিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ ছাড়াও চোরাকারবারী ও আল-কায়েদার সন্ত্রাসীদের উৎপাত তো আছেই। ফলে সৌদি সরকার এই সীমান্তজুড়ে দেয়াল তৈরি করতে চাইলে ইয়েমেন সরকার এর তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের দাবি, এই সীমান্তজুড়ে প্রচুর সংখ্যক লোক গবাদিপশু পালন করে।

এ নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে প্রায় ছয় হাজারের মতো বেসামরিক নাগরিক ও সেনা সদস্য মৃত্যুবরণ করে। এ দুই দেশের সীমান্তজুড়ে অস্থিরতা এখনো অব্যাহত আছে। অল্প কিছুদিন আগে থেকেই সৌদি সরকার সীমান্ত নিয়ে আবারও কঠোর অবস্থান নেয়। ফলে দুই দেশের সীমান্তের অস্থিরতা প্রায়ই বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় চলে আসে।

 

সুদান-দক্ষিণ সুদান

সুদান এবং দক্ষিণ সুদান দেশ দুটির সীমান্ত বিশ্ব মিডিয়ায় বারংবার শিরোনাম হতে দেখা গেছে দুটির চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণে। ১৯৮৩ সাল থেকেই এই যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। ২২ বছরের রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০০৫ সালে। যার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন এক দেশ যুক্ত হয়। বিশ্ব মিডিয়ার তথ্যমতে এই যুদ্ধে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। ২০০৫ সালের ৯ জুলাই নিজেদের সীমানা তৈরি করে স্বাধীন এক দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে দক্ষিণ সুদান। কিন্তু হঠাৎ দক্ষিণ সুদানকে অবৈধ দাবি করে সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর হাসান আল বশির নতুন সুদানকে না মানার ঘোষণা দেন। দেশটির দক্ষিণ কোর্দোফানের আবেই অঞ্চল দাবি নিজেদের দাবি করেন তিনি। ফলে সীমান্তজুড়ে শুরু হয় আবারও ব্যাপক পরিমাণে গোলাবর্ষণ। এ সময় প্রায় এক লাখের উপরে মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

বাংলাদেশ-ভারত

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। এ সময় ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরাসরি সাহায্য করে। তবে এরপর থেকে দুই দেশের সীমান্তে পারস্পরিক এই বন্ধুত্ব খুব একটা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা চ্যানেল ফোরের তথ্য বলছে, সংখ্যার দিক থেকে এই সীমান্তে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যার অন্তত ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীনতার পরপরই নানা জায়গায় ভারতীয় সৈন্যরা ক্যাম্প বসানোর কাজ শুরু করে। এবং এসব ক্যাম্পের সংযোগস্থল রাস্তাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে চলে আসে। এরকমই একটি স্থান হচ্ছে মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন পাদুয়া। এ ছাড়া ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে ভারতীয়দের সঙ্গে বিএসএফ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

 

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল

বছরের পর বছর বিশ্ব মিডিয়ায় সর্বাধিক আলোচিত সীমান্ত হচ্ছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমান্ত। সেখানকার বহু মানুষ নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ২৫ মাইল সীমান্তজুড়ে ফিলিস্তিন গড়ে তুলেছে নিরাপত্তা প্রাচীর। আরও রাখা হয়েছে পাঁচটি প্রবেশপথ। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে প্রবেশপথগুলো। এরপরও ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সীমান্তজুড়ে প্রায় সময় সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ আছে, ইসরায়েলি সেনারা নানা সময় ফিলিস্তিনি এলাকায় প্রবেশ করে সেখানকার সামরিক-বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। ফলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা সারা বছরই বিদ্যমান থাকে। আর এ অঞ্চলের লোকজন মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়েই জীবন ধারণ করে। যুদ্ধবিগ্রহ আর ধ্বংসের চিত্র দেখেই এখানকার শিশুরা বড় হয়।

 

নেদারল্যান্ডস-বেলজিয়াম

বার্লে নাসাউ ও বার্লে হার্টগ এ দুই শহরের সীমান্তই নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম সীমান্ত। নেদারল্যান্ডসের শহর হলো বার্লে নাসাউ আর বেলজিয়ামের শহর হলো বার্লে হার্টগ। এখানে অন্য দেশের সীমান্তের মতো কোনো ধরনের সংঘর্ষ নেই। তবুও এই সীমান্ত বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ এখানকার অদ্ভুত সীমান্ত রেখা। প্রতি বছর এই সীমান্ত দেখার জন্যই গোটা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসেন। একটি সীমান্ত রেখা বেলজিয়ামকে আলাদা করে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস থেকে। এই সীমান্ত রেখা চলে গেছে একেবারে ঘরবাড়ি, রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাট ভেদ করে। অদ্ভুত এই সীমান্তের ফলে দেখা গেছে আপনি নেদারল্যান্ডসের কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন অথচ সেই রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর পড়েছে বেলজিয়ামের বার্লে হার্টগ শহরে। ফলে দেখা গেছে, রান্না হচ্ছে এক দেশে আর পরিবেশিত হচ্ছে আরেক দেশে।

 

মিসর-সুদান সীমান্ত

মিসর-সুদান সীমান্ত এক অদ্ভুত ইতিহাস তৈরি করেছে। যেখানে অন্য দেশে জায়গা দখল নিয়ে সীমান্তে যুদ্ধ বেঁধে যায়। সেখানে দুই দেশের সীমান্তবর্তী বির তাউলি জায়গা নিজেদের করে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশ দুটি। ঘটনা হলো ১৮৯৯ সালে মিসর আর সুদানের ভিতরে সীমানা রেখা তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯০২ সালে সীমানাটি বদলে ফেলা হয়। যাতে দুটো ভিন্ন স্থানের উদ্ভব হয়। একটি বির তাউলি আর অন্যটি বির হালাইব। কিন্তু মিসর বা সুদান কোনো দেশই বির তাউলিকে নিজেদের সঙ্গে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বির তাউলি সম্পদহীন অঞ্চল। অপরদিকে দুটি দেশের আগ্রহ সম্পদে ভরপুর বির হালাইবকে ঘিরে। ফলে এখন পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা বাদে বির তাউলি পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যাকে কোনো দেশই নিজের বলে দাবি করেনি।

 

ভারত-পাকিস্তান

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশ বিভক্ত হয় ধর্মের ওপর ভিত্তি করে। ফলে অঞ্চলটি ভাগ হয়ে যায় হিন্দু ও মুসলমান দুটি দেশে। সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে আলাদা দুটি রাষ্ট্রের। কিন্তু এই বিভক্তির পর থেকে নানা সংঘর্ষ হয়ে আসছে এ দুই দেশের সীমান্তজুড়ে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছে এ দুটি দেশের মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাশ্মীর। এই সীমান্ত সমস্যার সাময়িক সমাধান দেওয়া হয় লাইন অব কন্ট্রোলের মাধ্যমে। যাতে কাশ্মীরের তিনটি অঞ্চল ভারতের আর দুটি অঞ্চল পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় দেওয়া হয়। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ ভারত দাবি করে পাকিস্তানের শাসনে থাকা অংশকে নিজেদের। আর পাকিস্তান দাবি করে ভারতের শাসনে থাকা অংশ নিজেদের। বর্তমানেও এর রেশ থেমে যায়নি। প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা কাশ্মীর সীমান্তে পরস্পর গোলাগুলি বিনিময় করে থাকে। এর মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তান গোপনে কাশ্মীর সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ অবধি পুরোটাই ভেস্তে যায় ২০০৮ সালের মুম্বাই অ্যাটাকের কারণে। এর পেছনে কাজ করে লস্কর-ই তাইয়্যেবার মতো জঙ্গি সংগঠন। তাদের আক্রমণে মারা যায় ১৬৩ জন মানুষ। ওই বছর ২৩ জুন আবার দুই দেশ আলাপে বসলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। অল্প কিছুদিন আগেও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সেনাবাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। দেশ দুটির চলমান বিরোধের জেরে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি অভিনয় শিল্পীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর