বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পশু-পাখির মজার রেস

পশু-পাখির মজার রেস

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা। প্রাচীন গ্রিকে ৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়দৌড় শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এটি অলিম্পিকেও ব্যাপক জনপ্রিয়। একই আদলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পশু-পাখি নিয়ে অদ্ভুত প্রতিযোগিতার আয়োজন দেখা যায়। জানাচ্ছেন— আবদুল কাদের

 

উটপাখির প্রতিযোগিতা

পাখি, তবে উড়তে পারে না। সাত থেকে নয় ফুট লম্বা হয় একেকটি উটপাখি। অবিশ্বাস্য হলেও একটি শক্তিশালী উটপাখি ঘণ্টায় ৪৩ মাইল (৬৯ কি.মি.) অতিক্রম করতে পারে। এমনকি একটি উটপাখি ঘণ্টায় ৩১ মাইল (৫০ কি.মি.) বা তার বেশি অতিক্রম করতে সক্ষম। লম্বা লম্বা পা ফেলে ১০ থেকে ১৬ ফুট পার হতে পারে। এমনই উটপাখির দৌড় প্রতিযোগিতা দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। আমেরিকায়ও চলে এই খেলা। একেকটি উটপাখি যেন একেকটি ঘোড়া। পিঠে গদি এবং মুখের লাগাম টেনে ধরলেই এগিয়ে যায় গন্তব্যে। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ১৮৯২ সাল থেকে এই খেলা চলে আসছে। আরও অনেক উৎসব চলে চান্দলার, অ্যারিজোনা, লোওয়া, নেভাদা এবং ক্যান্টাকিতে।

 

রাজকীয় দৌড় প্রতিযোগিতা

এর প্রতিযোগী হলো পাগলাটে কুকুর। সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ পাউন্ড ওজনের (২২ থেকে ৩৬ কেজি) হয়ে থাকে এরা। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির কুকুরও বটে। চোখের পলকে ৪৫ মাইল (৭০ কি.মি.) রাস্তা অতিক্রম করতে পারে। ধারণা করা হয় খরগোশ, হরিণের দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে ইউরোপ এবং ব্রিটেনে এই প্রতিযোগিতার উদ্ভব। ১৫০০ শতাব্দীতে রানী এলিজাবেথ-১ এই খেলার উদ্ভাবক। এ কারণেই প্রতিযোগিতাটি ‘কুইন্স অব স্পোর্টস’ নামে পরিচিত। ১৯১২ সালে খেলাটি বড় পরিসরে আনে ওভেন প্যাট্রিক স্মিথ। প্রতিযোগিতায় কুকুরগুলোর মাঝে চলে নানা আঘাত-প্রতিঘাত এবং নৃশংসতা। ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিমেল প্রোটেকশন খেলাটি নিয়ে বাদ সাধলেও গোটা ব্রিটেনে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক।

 

শামুকের দৌড়ে রেকর্ড

প্রতি বছর জুলাই মাসে ইংল্যান্ডের নরফোক প্রদেশের কংহাম স্টেডিয়ামে বিশ্ব শামুক দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এটি এখানকার দীর্ঘ ২৫ বছরের ঐতিহ্য। স্থানীয় ইউরোপিয়ানরা হেলিক্স অ্যাসপার্সার বাগান শামুকের দৌড় খেলায় ব্যবহার করে থাকে। শর্ত একটাই, ভিনদেশি শামুক অংশ নিতে পারবে না এবং এর নিয়ম-নীতিও সাধারণ। একটি শামুকের থেকে আরেকটি শামুকের দূরত্ব সমান এবং প্রতিটি প্রতিযোগী শামুক গোলাকার বৃত্ত থেকে ১৩ ইঞ্চি দূরে থাকবে। শামুকের ট্রেইনার ‘রেডি, স্টেডি, স্লো’ বললেই শুরু, বৃত্তের প্রান্তে যে শামুকটি আগে পৌঁছবে সেই হবে বিজয়ী। শামুকের এই দৌড় খেলার রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে কেবল ২ মিনিটে ১৩ ইঞ্চি অতিক্রম করেছিল একটি আর্চি শামুক।

 

আমেরিকান ন্যাশনাল স্পোর্টস

নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকার জনপ্রিয় খেলা এটি। ১৯৭০ সালে উত্তর আমেরিকায় প্রথম আজব এই খেলাটি দেখা যায়। ১৯৯৩ সালে আমেরিকায় খেলাটি বাণিজ্যিকভাবে টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। কুকুরগুলোর আকৃতি অন্যসব কুকুরের মতো হলেও জিনগত কারণে এদের পা অনেক ছোট। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে ন্যাশনাল ডাচস্যান্ড  রেসিংয়ের আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় কুকুরগুলোকে ২৫ এবং ৫০ ইয়ার্ড (২২ এবং ৪৫ মিটার) দৌড়াতে হয়। ২০০৭ সালে এটিকে আমেরিকান ন্যাশনাল খেলা ঘোষণা করা হয়।

 

ধীরগতির কচ্ছপও প্রতিযোগী

আমেরিকায় খেলাটি ছোটদের প্রিয় হলেও বড়রাও এই খেলায় পিছিয়ে নেই। প্রাচীন ‘বাহমাছে’ ১৯০২ সালে সর্বপ্রথম খেলাটির দেখা মেলে। বাহমাছ বর্তমানে চিকাগো শহর নামে পরিচিত। তখন চিকাগো শহরের একটি বাগানে সাতটি কচ্ছপ নিয়ে এই খেলা চলে। সেই খেলায় জয়ী কচ্ছপটিকে চিকাগো ট্রিবিউনের সৌজন্যে ‘দ্য স্ট্রংগেস্ট রেস এভার রান’ খেতাবও দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালেও আরেকটি আয়োজন দেখা গিয়েছিল মিনেসোটার লংভ্যালিতে। এই খেলায় বিজয়ী কচ্ছপকে ‘দ্য টারটেল রেসিং ক্যাপিটেল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কারও দেওয়া হয়। শুধু আমেরিকায়ই নয়; অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এটি জনপ্রিয়।

 

গরিবের খেলা ছাগলদৌড়

ক্যারিবিয় উপদ্বীপের জনপ্রিয় খেলা এটি। ১৯২৫ সাল থেকে চলে আসছে। ক্যারিবিয় টোবাগো দ্বীপে প্রতি ‘স্টার মানডে’তে স্থানীয় ধনী ব্যক্তিরা ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করে। একই সময়ে স্থানীয় মধ্যবিত্তরাও ছাগলের দৌড় খেলার আয়োজন করে। দ্বীপের বাক্কো গ্রামে স্যামুয়েল কালান্দার এই খেলার উদ্ভাবক। এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই খেলার দিনটিকে ‘স্টার টুয়েসডে’ বলে সম্বোধন করে। দ্বীপবাসীর জন্য দিনটি অলিখিত ছুটির দিন। এই আয়োজনে হাজারেরও বেশি দর্শকের সমাগম ঘটে। গ্রামের রাস্তায় খেলাটি হয় এবং এই খেলায় কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি জুয়া চলে। প্রতিযোগী ছাগলগুলোর মালিকেরা ছাগলগুলোকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

 

আরব্য রজনীর ঐতিহ্য

খেলাটি আরব্য রজনীর ঐতিহ্যই শুধ নয়, প্রাচীনতম খেলাও বটে। শোনা যায়, খেলাটি সাত শতকেরও বেশি পুরনো। ১৯৭০ সালের পর খেলাটি জনপ্রিয়তা পায়। অন্যসব খেলার মতো এই খেলায়ও কমিটি, নিজস্ব বোর্ড এবং পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। তারাই খেলাটির নিয়ম-কানুন বাতলে দেন। খেলাটি শুধু আরব দেশেই নয়, ভারত, মিসর, অস্ট্রেলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়। এই খেলায় অংশ নেওয়া উটগুলো ঘণ্টায় ২৫ মাইল অর্থাৎ ৪০ কি.মি. বেগে দৌড়াতে পারে। কুইন্সল্যান্ডের ‘দ্য শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক উট প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে উটের মালিককে ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয় ডলার এবং ‘দ্য বুলিয়া ডেজার্ট স্যান্ড’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী উটের মালিককে কমপক্ষে ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয় ডলার পুরস্কার দেওয়া হয়।

 

দানের টাকায় ভেড়ার রেস

নিউ সাউথ ওয়েলসে বলিগ্যালে ভেড়ার দৌড় উৎসবের আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়াবাসী। সপ্তাহব্যাপী চলা এই ভেড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংগঠন এক লাখ ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার অর্থাৎ প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দান করে থাকে। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে চলে আসছে এই প্রতিযোগিতা-উৎসব। আরেকটি বার্ষিক প্রতিযোগিতার নাম ‘শিপ গ্রিন্ড ন্যাশনাল’। স্থানীয় হু ফার্মে ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে করা হয় এই আয়োজন। ব্রিটেনের শ্রোপসারের টেলফোর্ডেও এই খেলা হয়ে থাকে। খেলায় ভেড়ার পিঠে পুতুল বেঁধে দেওয়া হয়। ভেড়াগুলো উঁচু-নিচু পথে বেড়া ডিঙ্গিয়ে শেষ মাথায় রাখা খাবারের দিকে ছুটে যায়। আর সেখানেই থাকে ফিনিশ লাইন। উঠে আসে বিজয়ী ভেড়1

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর