বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
TIME —এর চোখে

২০১৭ সালে যত সেরা ব্যক্তিত্ব

টাইম ম্যাগাজিন ১৯২৭ সাল থেকেই ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে আসছে। বছরজুড়ে সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে প্রভাবশালী, ভালো-মন্দ, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলনকে সেরা হিসেবে নির্বাচন করে সংবাদমাধ্যমটি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৭ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’-এর জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে টাইম ম্যাগাজিন। এই তালিকায় রানার আপ নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরপরই নাম আছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। এ ছাড়াও সেরাদের তালিকায় আছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন, ওয়ান্ডার ওম্যানের নির্মাতা প্যাটি জেনকিনস ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ফুটবল খেলোয়াড় কলিন কায়োপারনিক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

জেফ বেজস

সিইও, আমাজন

বিল গেটসকে টপকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজস। বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন শপিং রিটেইলার আমাজন ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তিনি। চলতি বছর বেজসের মোট সম্পদ ৯ হাজার ৬০ কোটি ডলার গড়ালে বিল গেটস থেকে ৫০ কোটি ডলার এগিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ‘বিশ্বের সবচেয়ে গ্রাহককেন্দ্রিক কোম্পানি’ হিসেবে বিশাল বিনিয়োগ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে আমাজনের। সাবেক বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম অনলাইন রিটেইলার এখন। নতুন গ্রাহকদের খরচ করা অর্থের অর্ধেকের বেশি নিজেদের পকেটে পুরছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানও এখন আমাজন। ৪০ হাজার কোটি ডলার বাজার মূলধন হিসাব করলে আমাজন হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম মূল্যবান প্রতিষ্ঠান। আমাজনের মতো অন্য কোনো কোম্পানি এত কম মুনাফা দেখিয়ে এত মূল্যায়ন পায়নি। ২০২০ সালের পর মুনাফা আসবে এমন সম্ভাবনায় ৯২ শতাংশ মূল্যায়ন করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এদিকে আমাজন কাজ করছে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে। ক্রমাগত বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার লক্ষ্য হচ্ছে ই-কমার্স ও আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস ব্যবসায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানো। নতুন নতুন কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করে নিজেকে এই পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছেন জেফ বেজস। আর তাই তো বছরজুড়ে আলোচনায় মুখর ছিলেন তিনিও।

 

দ্য ড্রিমার্স

অভিবাসন অধিকার রক্ষা

দ্য ড্রিমার্স প্রকল্পের মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রহীন কয়েক হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। ছোটবেলায় এদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমন ঘটে বাবা-মার হাত ধরে। যখন তাদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিতের কোনো বুঝই ছিল না। দায়ভার যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা তাদের মা-বাবার। এসব ছেলেমেয়ে আমেরিকার পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। এখানে তাদের সবকিছু। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় থাকলেও কোনো বৈধতা পায়নি। বিভিন্ন সময়ে সরকার বদলের ফলে তাদের পড়তে হয়েছে নানা ধরনের সমস্যায়। বারাক ওবামা এ ধরনের ছেলেমেয়েদের জন্য যথেষ্ট সহনশীল ছিলেন। তাদের জন্য আলাদা নীতিও নির্ধারণ করেন। এতে করে অবৈধ এই নাগরিকদের জীবন ভালো চললেও হঠাৎই তার ছন্দপতন ঘটে। ট্রাম্প প্রশাসন যাত্রা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই জারি করে নতুন আইন। বারাক ওবামা আমলের সহনশীল নীতি বাতিল করে দেন তাদের জন্য কোনো আইন প্রণয়ন ছাড়াই। এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসে দ্য ড্রিমার্স প্রকল্প। তারা এ বিষয় নিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করেন। ড্রিমার্স প্রকল্পের অধীনে এমন আন্দোলন হয়, যাতে করে আমেরিকায় বসবাসকারী অবৈধ তরুণ অভিবাসীদের প্রত্যর্পণ না করার বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

প্যাটি জেনকিনস

সিনেমা নির্মাতা

সুপার হিরো সিনেমায় বুঁদ গোটা বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সে ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন এনে জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিল সুপার হিরোইন। ওয়ান্ডার ওম্যান প্রমাণ করল নারীরাও পিছিয়ে নেই। বক্স অফিস থেকে শুরু করে সুপার হিরোপ্রেমীরা পেলেন নতুন এক অভিজ্ঞতার স্বাদ। আর এমনই এক ছবির নির্মাতা হিসেবে প্যাটি জেনকিনস বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে হলিউডে গড়লেন ইতিহাস। নারী নির্মাতা হিসেবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিলেন প্যাটি। ওয়ান্ডার ওম্যান পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে গুঞ্জন রটেছে এবার সেই পারিশ্রমিকের পরিমাণ এক কোটি ডলার ছুঁয়ে যাবে। আর এটাই হবে হলিউডের ইতিহাসে কোনো নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার পাওয়া সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। অবশ্য এ জন্য প্যাটিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে তাকে দর-কষাকষিও কম করতে হয়নি। ওয়ান্ডার ওম্যান নির্মাণে খরচ হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ছবিটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এ পর্যন্ত আয় করেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। বিশ্বজুড়ে এ ছবির আয় ৮০ কোটি ডলার। এরই মধ্যে ওয়ান্ডার ওম্যান ২-এর জন্য গ্যাল চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তার সঙ্গে নতুন ছবিতে ক্রিস পাইনও থাকবেন। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি দেওয়া হবে ছবিটি। এত নতুনত্ব থাকায় বছরজুড়ে বিশ্ব মিডিয়ায় প্যাটি উঠে এসেছেন উল্লেখযোগ্যভাবে।

 

কিম জং উন

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কোরিয়ান পিপলস আর্মির সুপ্রিম কমান্ডার কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার প্রথম হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশপত্রে সই ছিল তার। হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কিম বিশ্বকে এটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুমকি, চাপ, ভাবনা নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি হরহামেশায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যান। গণমাধ্যমে কিম জং উনের নামটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। অল্প বয়সে দেশের শাসনভার তুলে নেওয়ার পর অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই ধারণা করেছিলেন, অন্তত পরের কটি বছর বাবার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ঝানু সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দায়িত্ব-কর্তব্য রপ্ত করবেন তিনি। কিন্তু তা না করে দেশের তিন শীর্ষ উপদেষ্টাকে যে নাজেহাল করেছিলেন তাতে তার সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতে দেরি হয়নি। উপদেষ্টাদের একজনকে সরকারি বৈঠকে ক্যামেরার সামনেই গ্রেফতার করান। পরের সপ্তাহেই মৃত্যুদণ্ড দেন। এ ছাড়াও নানা ধরনের উদ্ভট কাজ তিনি করেন। চুলের বিচিত্র ছাঁট, পোশাকে ভিন্নতা ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান- সবকিছুতে উন বিশ্ব গণমাধ্যমে হয়ে উঠেছেন এক ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রের নেতা। এতে সারা বছরই বিশ্ববাসীর কাছে কিম জং উন উদ্ভট চরিত্র হিসেবে আলোচনায় থেকেছেন।

 

কলিন কায়োপারনিক

রাগবি খেলোয়াড়

সারা বছর আমেরিকাজুড়ে চলেছে ট্রাম্প বিরোধী নানা প্রচার-প্রতিবাদ। এতে নানা সময় অংশ নিয়েছেন নানা পেশার মানুষসহ খেলোয়াড়রাও। এমনই অভিনব এক প্রতিবাদ এসেছে রাগবি  খেলোয়াড় কলিন কায়োপারনিকের কাছ থেকে। রায়ারসানফ্রান্সিসকো ফুটবল দলের কোয়ার্টার ব্যাক কলিন কায়োপারনিক। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদের বিরোধিতা করে সারা বছর আলোচনায় ছিলেন।

খেলার শুরুতে জাতীয় সংগীতের সময় খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে দেশের প্রতি সম্মান জানান এমনটাই নিয়ম। কিন্তু কলিন কায়োপারনিক খেলা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় না দাঁড়িয়ে হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানান ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।

ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে এই প্রতিবাদ বছরজুড়েই বাড়তে থাকে। তার উত্তাপ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কলিন পরিচিত ছিলেন যতটুকু তার থেকে বেশি পরিচিতি পান এ ঘটনার পর থেকে। তবে সাধারণত তারকারা নিজেদের রাজনীতি থেকে ঊর্ধ্বে রাখেন সব সময় এবং নির্দলীয় ভূমিকা রাখেন। জাতীয় সংকটে কিংবা দেশের রাজনৈতিক প্রয়োজনে তারকারা নিজেদের সমালোচনার বাইরে রাখতে সাধারণত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এ ধরনের ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে সাহসী ভূমিকার জন্য কলিন অন্যদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকলেন। আর এ কারণেই এ বছর সেরা ব্যক্তিত্বের তালিকায় উঠে এসেছে কলিন কায়োপারনিকের নাম।

 

#মি টু মুভমেন্ট

যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলা হয় ‘#মি টু’ ক্যাম্পেইন। এবারের টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৭ সালের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারীর খেতাব জিতেছে। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ‘দ্য সাইলেন্স ব্রেকারস’ উল্লেখ করে বলা হয়, কয়েক দশকের মধ্যে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। এ আন্দোলনের শুরু শত শত নারী, কিছু ক্ষেত্রে পুরুষও এখন সাহস করে এগিয়ে এসে তাদের ব্যক্তিগত গল্প বলা শুরু করেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারী তারানা বুর্কে ২০০৬ সালে যৌন নির্যাতনবিরোধী ‘মি টু’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এরপর হলিউডের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারির খবর ফাঁসের সূত্র ধরে মার্কিন অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগের এই প্রচারণা শুরু করেন। যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনা প্রকাশ এবং নারীদের উত্সাহিত করতে এ প্রচারণা জনপ্রিয় হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এক সময় যৌন নিপীড়নবিরোধী এই প্রচারণায় নারীদের পাশাপাশি যোগ দেন পুরুষরাও। সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের যৌন হয়রানির কথা তুলে ধরেন। তারানা বুর্কে বলেন, ‘আমি কখনই ভাবিনি যে, সারা পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার মতো কিছু করছি। আমি শুধু আমার নিজের সমাজকে পাল্টাতে চেয়েছিলাম। এটি কেবল একটা মুহূর্ত নয়, একটি আন্দোলন। এখন সত্যিকার অর্থেই তার কাজ শুরু হয়েছে।’

 

রবার্ট মুলার

এফবিআই পরিচালক

পেশায় রবার্ট মুলার একজন আইনজীবী। এর আগে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে কথিত রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তভার রবার্ট মুলারের ওপর আসে। মার্কিন বিচার বিভাগই বলেছে, মার্কিন জনগণের স্বার্থেই প্রশাসনের বাইরের কাউকে এই তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। একই পদ থেকে জেমস কোমিকে বরখাস্ত করে বিতর্কিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি মার্কিন সরকারের সন্ত্রাস দমনবিষয়ক গোপন কিছু তথ্য তুলে দিয়েছেন রাশিয়ার কর্মকর্তাদের হাতে। এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে সেই তদন্তভার দেওয়া হয়। এদিকে ট্রাম্প তাকে তদন্ত বন্ধ করতে বলেন। আর তার ফলশ্রুতিতেই জেমস কোমি বরখাস্ত হন। আর উঠে আসে রবার্ট মুলারের নাম। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বাস করে, নির্বাচনের ফল রিপাবলিকানদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মস্কো। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এফবিআই ও কংগ্রেস। এফবিআই পরিচালকের পদ থেকে জেমস কোমি বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই এ ঘটনা তদন্তে বিশেষ কাউকে নিয়োগের দাবি ওঠে। রবার্ট মুলারের নাম ঘোষিত হওয়ার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জনগনের স্বার্থেই প্রশাসনের বাইরের কাউকে এ তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের নানা উত্তেজনাকর বিষয়ের সঙ্গে রবার্ট মুলারও ছিলেন আলোচিত।

 

প্রিন্স সালমান

সৌদি আরব

সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। সালমানকে বাবা ক্রাউন প্রিন্স পদে আসীন করেন। এ পদ থেকে অনৈতিকভাবেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুহাম্মদ বিন সালমানের চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন নায়েফকে। কারণ, মুহাম্মদ বিন নায়েফের বাবা নায়েফ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর সালমান বিন আবদুল আজিজ ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আসীন হয়েছিলেন। বাবা বাদশাহ হওয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন সালমান। তারপর সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান। এর ফলে সৌদি আরব এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। মুহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও সৌদি আরবের অর্থনীতি এবং উন্নয়নবিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও দেওয়া হয়। এরপর মুহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ ঘোষণা করেন। এতে দেশটির রয়্যাল পরিবারের ব্যবসায় ধস নামে। ক্ষমতার একতরফা ব্যবহার করেন তিনি। দেশের বাইরে বাবার প্রতিনিধিত্ব করে বেইজিং, ওয়াশিংটন সফর করেন ছেলে। এ ধরনের নানাবিধ স্বেচ্ছাচারিতা সালমানকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেছে। আর সে কারণে বছরজুড়েই তিনি ছিলেন আলোচিত ও সমালোচিত।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়াও তার পরিচয়ে যুক্ত আছে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বড় মাপের বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও লেখকের পরিচয়। দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ট্রাম্প নিউইয়র্ক শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রেড ট্রাম্পের ছেলে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাবার অনুপ্রেরণাকে গ্রহণ করেছেন। ট্রাম্প ২০১৫ সালের ১৬ জুন রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। আগের সব প্রচারণা কর্মকাণ্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। ২০১৫-এর জুলাই থেকে রিপাবলিকান পার্টির জনমত নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে পছন্দের দিক থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম সারিতে অবস্থান করেছিলেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রথম থেকেই তিনি মিডিয়ায় আলোড়িত ব্যক্তিত্ব। ক্ষমতার প্রথম দিকেই আলোচনায় আসেন প্রচলিত সব নিয়ম-নীতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথমেই ওবামা প্রশাসনের হেলথ কেয়ার টু ইমিগ্রেশন পলিসি বদলে দেন। ট্যাক্স রেগুলেশনে ব্যাপক পরিবর্তন এবং এসব বিতর্কিত নীতি জনসাধারণকে বিব্রত করে। যার প্রমাণ রেকর্ডসংখ্যক টুইট বার্তায়।

 

শি জিনপিং

চীনের প্রেসিডেন্ট

বর্তমানে একাধারে চীনের প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার মহাসচিব এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান শি জিনপিং। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একজন উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এক নামে পরিচিত। প্রয়াত সিপিসি নেতা শি জোংশুনের ছেলে তিনি। জিনপিং জন্মস্থান ফুজিয়ান প্রদেশে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। পরে তিনি পার্শ্ববর্তী চেচিয়াং প্রদেশের দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জিনপিং দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে আসেন সাংহাইয়ের দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। শি জিনপিং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান এবং রাজনৈতিক ও বাজার অর্থনীতির সংস্কার প্রসঙ্গে খোলামেলা নীতির জন্য খ্যাত। বর্তমান দায়িত্বসমূহ ও বিশেষ নীতির কারণে তাকে হু জিনতাও-এর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে ধারণা করা হয়। দলের পঞ্চম প্রজন্মের অন্যতম নেতা হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধান হিসেবে চীনে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন হয় তার হাতে। সেসব নীতি বাস্তবায়িত হলে শি জিনপিং সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে পরিগণিত হন। বিশ্বব্যাপী তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। টাইমের চোখেও তিনি বর্ষসেরা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন। শি জিনপিং ১৯৫৩ সালে বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উত্তর চীনের শানসি প্রদেশে কমিউনিস্ট গেরিলা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। বাবাকে বার বার নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে দেখেছেন জিনপিং। বাবার কাছ থেকে তিনি রাজনীতির নানা ঘাত-প্রতিঘাত শিখতে থাকেন। তারপর মাও সেতুং-এর ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড কর্মসূচিতে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে শানসি প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির উত্পাদনবিষয়ক উপ-দলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তার পুরো জীবনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সর্বশেষ খবর