বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সা ক্ষা ৎ কা র

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব হবে না দেশি শিল্প সুরক্ষা পাবে

মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

রুহুল আমিন রাসেল

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব হবে না দেশি শিল্প সুরক্ষা পাবে

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ছবি : জয়ীতা রায়

দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর দূরত্ব হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। দেশি শিল্পখাতকে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, অনেক লোক কর দিতে ভয় পান, এই ভয় দূর করতে আমার উদ্যোগ থাকবে। মানুষকে ধরে শাস্তি দেওয়া, সেই জিনিসটা না করে, সবার সঙ্গে মিলেমিশে রাজস্ব আদায় করাটাই আমাদের ইচ্ছা।

সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। রাজস্ব প্রশাসন গতিশীল ও শক্তিশালী করতে সরকার অবসরে যাওয়া সাবেক এই শিল্প সচিবকে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠ সচিব পদে নিয়োগ পেয়ে পরদিন ৪ জানুয়ারি নতুন কর্মস্থল এনবিআরে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এই ডিগ্রিধারী।

১৯৮১ সালের বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মনে করেন, দেশে গত কয়েক বছর যাবৎ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানোকেই নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে অর্থনীতির এই ছাত্র মানুষকে কর দিতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করতে চান। তার মতে, রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়টি একটা চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে করজাল বাড়ানোর বিষয়ে অতীতের মতো আমিও লক্ষ্য রাখব।

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এনবিআরের দূরত্ব প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এনবিআরের দূরত্ব হবে না। সরকার অবশ্য বলে দিয়েছে, নতুন ভ্যাট আইন ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর হবে। আমি ভ্যাট আইন কার্যকর করার ব্যাপারে সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী করব। তবে এখনো তো ভ্যাট চালু আছে। সেই ভ্যাট যাতে সঠিকভাবে আদায় হয় এবং যাতে ফাঁকিটা রোধ হয়, সে চেষ্টা আমরা করব। একই সঙ্গে ভ্যাট আধুনিকায়নে নজরটা আমাদের বেশি থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের কয়েকটা প্রকল্পও আছে।

কর প্রদানে সক্ষম মানুষের মাঝে বিরাজমান করভীতি তুলে ধরে মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমার জানাশোনা অনেক লোক আছেন। তারা কর দিতে ভয় পান। ভয় পান, তাদের সহায়-সম্পত্তি উন্মুক্ত করতে। আমি একজনকে বলেছি, আপনি যে কর দিতে ভয় পান, আপনি কত কর দেবেন? দিলে তো আপনি বড়জোর ১০ হাজার টাকা কর দিবেন। এখন এক পয়সাও কর দেন না। ১০ হাজার টাকা কর দিলে আপনার কোনো অসুবিধা আছে? এ কথার জবাবে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ১০ হাজার টাকা না আরও বেশি হতে পারে। এটা একটা ভয়। আর কিছুই নয়। এই ভয় দূর করতে আমার উদ্যোগ থাকবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে কাজের অনেক সুযোগ আছে। এনবিআরের কাজের ব্যাপ্তি একটু বেশি। এখানে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এবং তাদের নির্দেশনা পরিপালন করা যায়। আমি মনে করি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ করা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের মতো দেশের জন্য। কারণ, এখন বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরতা অনেক কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ের জন্য অনেক খাত আছে, যেখানে আদায় বাড়ানো যায়। সেটা শুল্ককর হোক আর আয়কর হোক, এটা বাড়ানো সম্ভব। তবে বিশ্বায়নের কারণে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব কমেছে। আবার আমাদের দেশে উদাহরণ আছে, অভ্যন্তরীণ শিল্পখাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কখনো কখনো সম্পূরক শুল্ককর আরোপ করার বিষয়টি চলে আসছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, এটা অব্যাহত থাকবে।

করদাতা হিসেবে নিজের আয়কর দেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমি তো মনে করি, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক সময়ই বিভিন্ন প্রকার সম্মানী ও বিভিন্ন জায়গায় কনসালট্রেন্সি এবং এটা-সেটা করারও সুযোগ হয়। সেগুলো যদি উন্মুক্ত করে, তাতে একদিকে যেমন তার (সরকারি কর্মকর্তা) সম্পদের পরিমাণ বাড়ে এবং এটা সম্পদ হিসেবে ভবিষ্যতে দেখানো যায়। তাতে করে সরকারও রাজস্ব পাবে।

নিজে গত বছর সাড়ে ৯ লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করে এনবিআরের এই নতুন চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি দুই-তিনটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলাম। তারা আমাকে যেসব সম্মানী দিয়েছে, সেগুলো সব আমার আয়কর বিবরণীতে প্রকাশ করে কর দিয়েছি। সে হিসাবে সাড়ে ৯ লাখ টাকা আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েই কর দিয়েছি। আবার অনেকে বা আমার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাধারণত কর আসে প্রায় ৩ লাখ টাকা।

রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাটে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো ঠিক করিনি কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে গুরুত্ব দেব। কিন্তু আমাদের যারা রাজস্ব কর্মকর্তা আছেন, সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, তাদের পরামর্শ নিয়েই করব। কারণ- তাদের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে বেশি। আর আমি মনে করি, আমাদের যারা কমিশনার আছেন, তাদের যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তারা অনেক কিছু করতে পারবেন। শুধু তাদের উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর