বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর যত বিমান দুর্ঘটনা

পাখা না থাকলেও পাখির মতো ওড়ার স্বাদ এসেছে মানব জনমেই। তাতে সহায়ক হয়েছে বিমান নামক একটি বাহন। বিমানের আবিষ্কারক রাইট ভ্রাতৃদ্বয় প্রথমে পাখির মতো ওড়ার প্রয়াসে যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। কিন্তু দিনে দিনে তার সংস্করণ মানুষকে শুধু ওড়ার শখই পূরণ করেনি, দূর যাত্রাকে দ্রুত, সহজ ও আরামদায়ক করেছে। কিন্তু সব সুবিধা কি আর শুধু সুবিধা থাকে? মাঝে মাঝে বিপত্তিও আনে। ইতিহাসের পাতায় উড়ে চলার এই যন্ত্রটি যোগ করে দিয়েছে বড় বড় শোকগাথা, ভয়ঙ্কর কিছু বিমান দুর্ঘটনা। এ নিয়ে আজকের রকমারি আয়োজন।

তানিয়া তুষ্টি

ভয়ঙ্কর যত বিমান দুর্ঘটনা

২৩৯ যাত্রীসহ উধাও এমএইচ৩৭০

মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ একটি নিয়মিত যাত্রীবাহী বিমান। ২০১৪ সালের ৮ মার্চে এটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাওয়ার পথে আকাশ থেকে হারিয়ে যায়। বিমানটি কুয়ালালামপুর থেকে উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেক বাদে রাডার থেকে হারিয়ে যায়। বিমানটিতে ১৫টি দেশের ১২ জন কর্মী ও ২২৭ জন যাত্রীসহ মোট ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের অধিকাংশই চীনা। ২৪ মার্চ মালয়েশীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, (সম্ভবত) ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে বিমানটি আকাশ থেকে ছিটকে পড়েছে। একই সঙ্গে ধারণা করা হয় এর যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই। বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার পর প্রায় দুই বছর হয়েছে। এ দুই বছরে ভারত মহাসাগরের কিছু অংশ তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে বহুজাতিক উদ্ধারকারী দল। তবে সে স্থানে কোনো ধ্বংসস্তূপ পাওয়া যায়নি। সাগরের গভীরেও কিছু পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অধিকাংশ অনুসন্ধানও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সম্প্রতি গবেষকরা বলছেন অনুসন্ধান এলাকার আরও কিছুটা উত্তরে খোঁজ করলে মিলতে পারে ধ্বংসাবশেষ। অবশ্য বিমানটির ধ্বংসাবশেষ মহাসাগরের সম্ভাব্য ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানে পাওয়া না গেলেও ফ্রান্সের রিউনিয়ন দ্বীপসহ বেশ কিছু জায়গায় ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে পাওয়া গেছে একটি প্লেনের ধ্বংসাবশেষ, যা এমএইচ-৩৭০ এর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

আটলান্টিকে ডোবে ২১৬ যাত্রীসহ বিমান

২০০৯ সালের ৩১ মে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৪৭ রিও ডি জেনেরিও থেকে ২১৬ জন প্যাসেঞ্জার নিয়ে প্যারিসের উদ্দেশে ফ্লাই করে। কিন্তু আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর কোথাও তা নিখোঁজ হয়ে যায়। তখন ধরেই নেওয়া হয় বিমানের সব আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় দুই বছর পর সাগরের নিচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়। বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নিচে নেমে আটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল বলে পরবর্তী সময়ে তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়। বিমানটি কোনো বিপদ সংকেত না দিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কোনো সাক্ষী ছিল না। রাডারেও কোনো সংকেত ছিল না। নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর সমুদ্রে বিমানের ডানা ও ৫০টি লাশ শনাক্ত করা যায়। ধ্বংসাবশেষে চাপ ও ভাঙার লক্ষণ আর যাত্রীদের ক্ষত দেখে বোঝা যায় দুর্ঘটনাকবলিত এয়ারবাসটি পানিতে আঘাত করা পর্যন্ত অক্ষত ছিল। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার ছিল, পাইলটরা কোনো মে ডে (উদ্ধারের আন্তর্জাতিক সংকেত) পাঠাননি। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট চওড়া বডির এয়ারবাসের ক্যাপ্টেন ছিলেন মার্ক ডুবিয়াস (৫৮)। ১০ ঘণ্টার এ যাত্রায় ৩২ দেশের ২১৬ যাত্রীর মধ্যে ছিলেন হানিমুনে গমনকারী, ব্যবসায়ী, অধ্যাপক, মিউজিশিয়ান এবং আটটি শিশু। ঘণ্টা দুই পর তৃতীয় পাইলট পিয়েরে সেডরিক বনিন (৩২) বিমানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ফ্লাইটে তার স্ত্রীও ছিলেন প্যাসেঞ্জার হিসেবে।

 

নিহতের বেশিরভাগই ছিলেন খেলোয়াড়

মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এ দিনে ব্রিটিশ ইউরোপিয়ান এয়ারওয়েজ ফ্লাইট ৬০৯ বরফে ঢাকা জার্মানির মিউনিখ-রিয়েম এয়ারপোর্টের রানওয়ে থেকে তৃতীয়বারের মতো উড্ডয়নের চেষ্টা করার সময় ভূপাতিত হয়। বিমানের যাত্রী ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবল দল এবং সমর্থক ও সাংবাদিক। বিমানের ৪৪ জন যাত্রীর মধ্যে ২৩ জন যাত্রী এই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন জেমস থেইন দুবার উড্ডয়নের চেষ্টা করেন, কিন্তু ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে দুইবারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিকাল ৩টায় তৃতীয়বারের মতো চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেবার বিমান উড্ডয়নের জন্য যথেষ্ট উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি, ফলে বিমানটি এয়ারপোর্টের সীমানা প্রাচীরে আছড়ে পড়ে। প্রথমে পাইলটের ভুলের কারণে বিমান দুর্ঘটনাটি হয়েছিল বলে মনে করা হলেও পরবর্তীকালে দেখা গেছে রানওয়ের শেষপ্রান্তে জমে থাকা তুষারের কারণেই এটি হয়েছিল। এই তুষারের কারণে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য পর্যাপ্ত গতি পেতে ব্যর্থ হয়। উড্ডয়নের শুরুতে বিমানটি ১১৭ নট গতি প্রাপ্ত হয়েছিল কিন্তু তুষারের কারণে গতি কমে ১০৫ নটে নেমে আসে, যেটি আকাশে উঠানোর জন্য খুবই কম। এই ছোট রানওয়েতে বিমান উড্ডয়ন বাতিল করার মতো পর্যাপ্ত সময়ও ছিল না। এই দুর্ঘটনার ফলে বিমান ও রানওয়ে পরিচালনা ক্ষেত্রে বিশাল অনুসন্ধান চলে এবং অনেক নিয়ম কানুনে পরিবর্তন আনা হয়।

 

ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা

ধরা হয়, বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটে স্পেনের টেনেরিফে নর্থ এয়ারপোর্টে। ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ লাস প্যামাস বিমানবন্দরে একটি বোমা হামলার কারণে প্যান অ্যাম ও কেএলএম উভয় উড়োজাহাজকে টেনেরিফে পাঠানো হয়েছিল। এখানে দীর্ঘ বিরতির পরে উভয় বিমানকেই রানওয়েতে আপ ট্র্যাকের নির্দেশ দেওয়া হয়। রানওয়েতে যখন কেএলএম বিমানটি তার টেক-অফ পয়েন্টে পৌঁছায়, প্যান অ্যাম বিমানটি তখনো রানওয়েতেই ছিল। আসলে প্যান অ্যাম বিমানটি রানওয়েতে কেবলই ট্যাক্সিওয়ের টিকিট পেয়েছিল। আর রানওয়েতেও সেদিন ছিল ভারী কুয়াশা। এদিকে কেএলএম বিমানটি প্যানএম প্লেনের স্ট্যাটাস ছাড়াই টেক অফ করতে শুরু করে। এটিসি কন্ট্রোলার এবং প্যান এম পাইলট প্রত্যেকে কেএলএম বিমানকে সতর্ক বার্তা প্রেরণ করেন, কিন্তু দুজনের রেডিও ট্রান্সমিশন একযোগে হওয়ার ফলে কেএলএম কারওটাই শুনতে পারেননি। কেএলএম বিমানটি টেক অফ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্যান অ্যামের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে উভয় প্লেনেই আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়। কেএলএমের ২৩৪ যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু এবং প্যান অ্যামের ৩২৬ জন যাত্রী ও ৯ জন ক্রুসহ মোট ৫৮৩ জনের সবাই নিহত হয়। প্যান আম বিমানটিকে ক্লিপার ভিক্টর নামে ডাকা হতো। কেএলএম বিমানটি রাইন রিভার নামে পরিচিত ছিল।

 

৫২০ জনের প্রাণহানি

বাণিজ্যিক বিমানের মধ্যে আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে জাপানে, ১৯৮৫ সালের ১২ আগস্ট। ঘটনাটি ঘটে বোয়িং ৭৪৭-এর সঙ্গে। শিডিউলটি ছিল ঘরোয়া। জাপান এয়ারলাইনসের এই বিমানটি হেনেডা এয়ারপোর্ট থেকে ওসাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট, জাপানে যাচ্ছিল। যান্ত্রিক ব্যর্থতার কারণে ফ্লাইটের মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় বোয়িং ৭৪৭ ফ্লাইটটি মাউন্ট অসুটাকার মাঝে বিধ্বস্ত হয়। টোকিও থেকে এর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের। ফ্লাইটটি বিধ্বস্তের পর বিমানের ৫২০ জন যাত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল সে সময়। তবে বিস্ময়করভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন চারজন। ইতিহাসের ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এটিও একটি। দুর্ঘটনার পর জাপানের দুর্ঘটনা তদন্ত কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এমন একটি সিদ্ধান্ত দেয় যে, ওসাকা এয়ারপোর্টে অবতরণের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিমানটি বাতাসের সঙ্গে সমঝোতার জন্য পেছনের বাল্কহামের ওপর একটি ডাবলার প্লেট ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বিমানের এই ত্রুটি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ছোট্ট এই ত্রুটি শেষ রক্ষা করতে পারেনি। শেষমেশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হয় ছোট্ট এই ত্রুটি। বিমান দুর্ঘটনার প্রথম দিকে কিছু যাত্রী আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেও পরে তারা মারা যান।

 

বাংলাদেশ

৫ আগস্ট ১৯৮৪ সাল

ফকার এফ২৭-৬০০ বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় আসছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এই বিমানটি বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি জলাভূমির মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। সেদিনের আবহাওয়া একদমই বিরূপ ছিল। প্রচুর বাতাস আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বিমানের পাইলট দূরের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। ফলে বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে বিমানটি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে অবতরণের জন্য ৩২ নম্বর রানওয়ে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু রানওয়ে দেখা না যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে পাইলট বুঝতে পারেন তিনি দিক ভুল করেছেন। ফলে অবতরণ না করে আবার উড়ে যান। দ্বিতীয় দফায় আইএলএস ব্যবহার করে অবতরণ করার চেষ্টা করেন। নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে রানওয়ে ১৪তে অবতরণের নির্দেশনা নেওয়া হয়। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়াতে সেটিও ব্যর্থ হয়। তৃতীয়বার অবতরণ করার সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে এক ডোবায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত ঘরোয়া যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। এতে চারজন ক্রু ও ৪৫ জন যাত্রীসহ সবাই নিহত হন।

২২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সাল

৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৬০৯ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় কুয়াশার কারণে রানওয়ের পাদদেশ থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁও নামক স্থানের একটি ধানখেতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭ জন যাত্রী আহত হন।

৮ অক্টোবর ২০০৪ সাল

এই দিনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। এটিও ১৯৯৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানের মডেলের অনুরূপ ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেল। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৬০১ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। অবতরণের পর রানওয়ে ভেজা থাকার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে খাদে পড়ে যায়। এতে ৭৯ জন যাত্রী ও চারজন ক্রুর মধ্যে দুজন যাত্রী আহত হন।

আগস্ট ২০১৫ সাল

সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরেক দফা দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা উড়োজাহাজে ২২০ জন যাত্রী ছিলেন। ওই সময় বিজি-৫২ বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিনের ভিতর পাখি ঢুকে পড়ে। তখন চারটি ব্লেড ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেদিন সকাল ৭টায় রানওয়েতে অবতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

৯ মার্চ ২০১৫ সাল

কক্সবাজারে একটি কার্গো বিমান বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সে ঘটনায় পাইলটসহ তিনজন নিহত হন। উড্ডয়নের ৫ মিনিটের মাথায় সাগরে আছড়ে পড়ে বিমানটি।

১২ মার্চ ২০১৮ সাল

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রুুবাহী বিমান থেকে ১৭ যাত্রীকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছে টিআইএ।

 

নেপাল

‘ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’টি নেপালের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৩৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ১৯৫৫ সালে রাজা মাহেন্দ্রার মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়। পাহাড়ে ঘেরা বিমানবন্দরটির আয়তন বিভিন্ন সময়ে বাড়ানো হয়েছে। শুরুর দিক থেকে অনিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ১৯৭২ সাল থেকে নিয়মিত জেট পরিচালনা করা হয়। বিমানবন্দরটিতে একটি ডমেস্টিক এবং একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল রয়েছে। বর্তমানে ৩৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

শুরুর দিক থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের কারণে ত্রিভুবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর হিসেবে ধরা হয়। তাদের কার্যকালের যাত্রার শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে ৩৫৬ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিমানের পাশাপাশি সেখানে হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ১২ মার্চ বাংলাদেশি একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ত্রিভুবন বিমানবন্দরটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আবারও বিশ্বমিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৭২ সালের মে মাসে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তাতে ১০০ জনের মতো যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন। তাদের একজন নিহত হন। ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হয় আরও একটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। পাকিস্তানের পিআইএর বিমানটি বিধ্বস্ত হলে বিমানের ভিতরে থাকা ১৬৭ জনের সবাই প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। ১৯৯৫ সালে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের একটি বিমান বেষ্টনী ভেঙে মাঠের ভিতরে ঢুকে যায়। তাতে দুজন নিহত হয়। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে লুফথানসার একটি বিমান এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়ন শুরু করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। তাতে পাঁচজন ক্রু সদস্য নিহত হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নেকন এয়ারের একটি বিমান ত্রিভুবন বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি টাওয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১০ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রুুর সবাই নিহত হন। ২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় ১৯ জন আরোহীর মধ্যে একজন শুরুতে প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হলেও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। বলা হয় খারাপ আবহাওয়া ও নিচুতে থাকা মেঘের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১২ সালে সিতা এয়ারের একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই সম্ভবত একটি শকুনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান। ২০১৫ সালে তুর্কি এয়ারলাইনসের একটি বিমান ঘন কুয়াশার মধ্যে নামতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে। ৩০ মিনিট ধরে এটি বিমানবন্দরের ওপর উড়তে থাকে। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় নামতে পারলেও সেটি রানওয়ে থেকে ছিটকে মাঠের ঘাসের ওপর চলে যায়। ২২৭ জন যাত্রীকে সেখান থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে সামিট এয়ারলাইনসের একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর সর্বশেষ দুর্ঘটনার শিকার হলো ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বিমানটি।

সর্বশেষ খবর