শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাহাথির মহাকাব্য

রণক ইকরাম

মাহাথির মহাকাব্য

১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ভেলকিতে আপাদমস্তক পাল্টে যায় মালয়েশিয়ার চালচিত্র। সফল রাজনীতিক ও শাসক হিসেবে মাহাথির যুগের অবসান হয় ২০০৩ সালে। এরপর পাল্টে যেতে থাকে চালচিত্র। নিজের শত্রুর সঙ্গে জোট বেঁধে নিজের দলের বিরুদ্ধেই মাঠে নামেন মাহাথির। সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী।

 

বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী

তার জনপ্রিয়তা নিয়ে দ্বিধা ছিল না কখনই। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নিজেরই তৈরি করা দল আর সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে জোট বাঁধলেন চিরশত্রু আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে। সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল তাই মালয়েশিয়ার দিকে। শেষ সময়ে এসে প্রথম জীবনের অর্জন করা সব কৃতিত্ব না ম্লান হয়ে যায়, এমন আশঙ্কাও করেছেন অনেকে। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গিয়ে অসাধারণ জয় তুলে নিলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার খ্যাত মাহাথির মোহাম্মদ।

গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাতে কুয়ালালামপুরের ইস্তানা নেগারা রাজপ্রাসাদে শপথ নেন তিনি। ১৫ বছর পর আবার দেশটির কাণ্ডারির ভূমিকায় দেখা যাবে ৯২ বছর বয়সী এই রাজনীতিককে। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নির্বাচিত নেতা হিসেবে ইতিহাস গড়লেন মাহাথির মোহাম্মদ। এর আগে টানা প্রায় ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যান। বুধবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনালকে (বিএন) হারিয়ে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে জানা গেছে, মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট পাকাতান হারাপান পার্লামেন্টের ১১৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। পার্লামেন্টের মোট আসন ২২২টি। অন্যদিকে বারিসান ন্যাশনাল জিতেছে ৭৯টি আসনে। মাহাথির মোহাম্মদ নিজেও একসময় বারিসান ন্যাশনাল জোটের অংশ ছিলেন। তবে ১৫ বছর পর রাজনীতির মঞ্চে ফিরেই নিজের দল ও একসময়ের শিষ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দাঁড়ান তিনি। মাহাথির বলেছিলেন, যে রাজনৈতিক দল দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়, সেই দলে থাকা লজ্জার। বিরোধীদলীয় জোট পাকাতান হারাপান ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। তখন মাহাথির বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবেন না তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমতায় এনেই বিদায় নেবেন।

 

নিম্নমধ্যবিত্ত একজন

ডা. মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর অ্যালোর সেটরে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানকারই একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দারের নয় সন্তানের মধ্যে মাহাথির ছিলেন সবার ছোট। মাহাথিরের পিতা প্রথম জীবনে একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি একজন সরকারি অডিটর হিসেবে কাজ করেছেন।

তার পিতা ছিলেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ একজন মানুষ। শৃঙ্খলা এবং গুছিয়ে চলার যে সহজাত গুণ মাহাথিরের পরবর্তী জীবনে খুঁজে পাওয়া যায়, সেটি তিনি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন বলেই ধারণা করা হয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে মাহাথির ছোটবেলা থেকেই দারুণ সুশৃঙ্খল জীবন পালন করেছেন। মাহাথিরের মা সাধারণ গৃহিণী হলেও তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। ছোটকাল থেকেই তিনি মাহাথিরকে বাসায় পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিতেন। মাহাথিরের সাধারণ জীবন দেখে বোঝার উপায় ছিল না এই ছেলে একদিন বিশ্ব কাঁপাবে। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

মেধার স্বাক্ষর

মেধাবী ছাত্র হিসেবে মাহাথিরের পছন্দের বিষয় ছিল আইনবিদ্যা; কিন্তু সরকার তাকে পরামর্শ দেয় ডাক্তার হওয়ার। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। স্কুলে এবং মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন এবং পত্রিকায় লিখতেন। উল্লেখ্য, মেধাবী ছাত্র মাহাথির খুব সহজেই বৃত্তি পেয়ে যান। এখানে উল্লেখ করার মতো আরও একটি বিষয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে ১৯৪৭ সালে সিঙ্গাপুরের মেডিকেল কলেজে মাহাথিরসহ মাত্র সাতজন মালয় শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে এক সময় মেধাবী মাহাথির পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসেন নিজ দেশ মালয়েশিয়ায়। ফিরে আসার পরই আসলে নিজের জীবনের বাঁক পরিবর্তন করেন তিনি।  দেশ ও জাতির জন্য নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে

মাহাথির তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন সেবেরাং পেরাক মালয় স্কুলে। কিন্তু তিনি চাইতেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে। সমস্যা হলো, ইংরেজরা মালয় ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সহজে সুযোগ দিত না। ভর্তি পরীক্ষা হতো খুবই কঠিন। তাই মালয় ছেলেমেয়েদের জন্য সুযোগ পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য। সেই ছোটবেলাতেই তিনি এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথমদিকে স্থান করে নেন। আলোর সেতারের গভর্নমেন্ট ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন মাহাথির। বাসায় তাদের একজন ধর্ম শিক্ষক ছিলেন যিনি প্রতিদিন বাড়িতে এসে পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্মের ওপর বিশ্বাস এবং ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান শেখাতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। তখন সেখানকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে একটি জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মাহাথিরের বয়স তখন মাত্র ১৬। প্রথমে তিনি জাপানি স্কুলে যেতে চাননি। ওই সময় মাহাথির একটি স্থানীয় ছোট বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু পিতার চাপে তিনি পরবর্তীতে ওই জাপানি স্কুলে ভর্তি হন।  মালয়েশিয়ায় জাপানি শাসন প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। ১৯৪৭ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড মেডিসিন কলেজে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া ফিরে আসেন।

রাজনীতির বীজ কৈশোরেই

অন্য আট-দশজন মেধাবী যেখানে রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় ঝুট-ঝামেলা থেকে বিরত থাকতে চান, সেখানে ব্যতিক্রম ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তার রাজনৈতিক আগ্রহের পরিচয় মিলেছিল সেই কিশোর বয়সেই। মাহাথিরের বয়স যখন ২০ বছর তখনই  সমমত আর একই আদর্শের অনুসারী সহপাঠীদের একত্র করে তিনি গোপনে ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানিরা চলে যাওয়ার আগে তৎকালীন মালয়েশিয়াকে তারা থাই সরকারের শাসনাধীনে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা আবার ফিরে আসে এবং ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করে। মালয়ান ইউনিয়ন সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ উপনিবেশ ছিল। আর এটারই প্রতিবাদে মাঠে নামেন মাহাথির। তারা তখন রাতের অন্ধকারে সারা শহরে রাজনৈতিক বাণী সংবলিত পোস্টার লাগাতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সীমিত, ‘মালয়ান ইউনিয়ন’ প্রস্তাবের সমাপ্তি এবং প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা ফিরে পাওয়া। সাইকেল চালিয়ে তারা সমগ্র প্রদেশ ঘুরে ঘুরে জনগণকে ব্রিটিশবিরোধী হিসেবে সংগঠিত ও সক্রিয় করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সংগঠনে মাহাথির সাধারণত সম্পাদক বা দ্বিতীয় অবস্থানটা বেছে নিতেন, কারণ দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই বেশি সাংগঠনিক কাজ করতে হয় ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। মাহাথির প্রথম কেদাহ মালয় যুব ইউনিয়ন এবং পরে কেদাহ মালয় ইউনিয়ন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যা পরবর্তীতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএমএনও হিসেবে পরিচিত হয়।

সিঙ্গাপুরে ছাত্রনেতা

মাহাথিরের সিঙ্গাপুর জীবন খুব বেশি বর্ণিল ছিল না। কিন্তু সেখানে রাজনীতি না হলেও সাংগঠনিক নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন ঠিকই। সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন মাহাথির সেখানের কলেজের মালয় ছাত্রদের নিয়ে ‘মালয় ছাত্র সংগঠন’ গঠন করেন। তবে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের শিক্ষার মান ও ফলাফল উন্নয়ন করা।

 

বর্ণিল কর্মজীবন এবং রাজনীতি

১৯৫৩ সালে মাহাথির সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। একটি প্রাইভেট ক্লিনিকও ছিল তার। রোগীদের বাড়ি গিয়ে ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও করতেন। ১৯৬৪ সালে কোটা সেটর দক্ষিণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর দলের অনেক নীতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে তিনি একটি বই লেখেন, যার নাম The maloy dilima বা মালয়ীদের উভয় সংকট। বইটি পরে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৩০ মে কুয়ালালামপুরে চীনা ও মালয় জাতির মধ্যে তুমুল দাঙ্গা বাধে। দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় পার্টি নেতৃবৃন্দের দলীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মাহাথিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু অনেক ঘটনার পর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পার্টিতে আবার ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন। তখন তিনি ঘোষণা দেন তার নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ও তার কোনো ছবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা সরকারি অফিসে টাঙানো যাবে না। মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৭৫ সালে মাহাথির পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন হোসেন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথকেও সুগম করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩      সালের ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

 

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার

যে গল্পের হিরো ডা. মাহাথির মোহাম্মদ, সেই গল্পের শুরুটা কিন্তু অন্য আট-দশটি দুনিয়া পাল্টানো গল্পের মতোই সাদামাটা। বদলে ফেলার জন্য চাই জীর্ণশীর্ণ একটা অবয়ব। সেই অবয়বকে আমূল পাল্টে ফেলাটাই একজন শিল্পী কিংবা স্বপ্নদ্রষ্টার কাজ। মাহাথির সেই স্বপ্নদ্রষ্টা। আর মাহাথিরের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া। কিন্তু আলো ঝলমলে যে আধুনিক মালয়েশিয়া আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে, সেই চোখ ধাঁধানো কী আগে থেকেই ছিল? ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। এই মালয়েশিয়া আসলে রূপকথার সফল বাস্তবায়নেরই প্রতিচ্ছবি।

মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এক সময়ের অনুন্নত মালয়েশিয়াকে উন্নত বিশ্বের তালিকায় এনেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। এশিয়ার এই নন্দিত নেতা বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের গণতান্ত্রিক এ প্রধানমন্ত্রী ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ততদিনে মালয়েশিয়ার চেহারাও পাল্টে যায়। কোন ম্যাজিকে এটা সম্ভব জানতে চাইলে সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, কোনো ম্যাজিক বা ফর্মুলা নয়, মালয়েশিয়ার মানুষের সমন্বিত চেষ্টায় আজ এ অবস্থান সম্ভব হয়েছে।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর মাহাথিরের আগ্রহ ছিল সুগভীর। তাই একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। সরকারি নীতি এবং বেসরকারি বিনিয়োগের মাঝে তিনি একটি সমঝোতা এবং সখ্য গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ মালয়েশিয়ার দ্রুত শিল্পায়নে সহায়ক হয়েছে। তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ আর সহযোগিতায় বেসরকারি খাতকে লাভজনক করতে মালয়েশিয়ান বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করেছেন।

 

সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রধানমন্ত্রী

ডা. মাহাথির মোহাম্মদকে কেবল সফল বললেই চলবে না। তিনি নীতি ও আদর্শে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রধানমন্ত্রী বলতেই হবে। মাহাথির নিজের নাম লেখা ব্যাজ পরতেন। আধুনিক মালয়েশিয়ার বাস্তবায়নে দেশেই গাড়ি তৈরি ও বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে নিউ ইকোনমিক পলিসি সফলভাবে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। এনইপির উদ্দেশ্য ছিল জাতি নির্বিশেষে দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা। ২০ বছর মেয়াদি এনইপি শেষ হওয়ার পর ১০ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার আমলে নিজের নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামকরণ একদমই নিষিদ্ধ ছিল।

 

ধর্মীয় চেতনায় ভাস্বর

মাহাথির মোহাম্মদ ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী। তার পরিবার তাকে ইসলামের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখার শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এতে কোনো রূপ গোঁড়ামি ছিল না। ইসলাম সম্পর্কে ‘এ নিউ ডিল ফর এশিয়া’ শীর্ষক নিজের বইতে মাহাথির বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম আমাদের জীবনের অংশ। একে পরিত্যাগ করার কোনো কারণ নেই। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ধর্ম কখনই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। ইসলামের শিক্ষা সমসাময়িক সময়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে নিতে হবে। ইসলাম শুধু সপ্তম শতাব্দীর ধর্ম নয়। ইসলাম অবশ্যই সর্বকালের ধর্ম।’ ফলে সাধারণ মানুষের মনে মাহাথিরের জন্য বরাবরই আলাদা জায়গা ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর