মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই প্রেসিডেন্টের লড়াই

দুই প্রেসিডেন্টের লড়াই

একটা সময় পৃথিবীর মানুষ একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত ছিল। তখন একটাই কথা প্রচলিত ছিল তা হলো সার্ভাইবাল অব দ্য ফিটেস্ট। ধীরে ধীরে মানুষ সভ্য হতে থাকে। নানা জাতিতে বিভক্ত মানুষ ঝগড়া-বিবাদ ভুলে মেতে উঠে খেলাধুলা নিয়ে। যার একটি বৈশ্বয়িক সংস্করণ ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’। গত পরশু রাতে ফাইনাল ম্যাচে নান্দনিক ফুটবলের লড়াইয়ের পাশাপাশি ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্টের পরস্পরিক রসায়ন উপভোগ করে দুনিয়াবাসী।  লিখেছেন— সাইফ ইমন 

 

এক আবেদনময়ী প্রেসিডেন্টের গল্প

ভদ্রমহিলার নাম কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ। তিনি ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রেসিডেন্টও তিনি। এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে রাকিটিচ-মডরিচদের ক্রোয়েশিয়া যেমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, তেমনই আলোচনায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট কিতারোভিচও। ১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল  ক্রোয়েশিয়ার রিজিকা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন কোলিন্দা গ্র্যাবার। ওই সময় ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়ার অধীনে ছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি জ্যাকব কিতারোভিচ নামের একজনকে বিয়ে করেন। ৫০ বছর বয়সী এই আবেদনময়ী দুই সন্তানের জননী। তার মেয়ে ক্যাটরিনার বয়স ১৭ বছর। আর ছেলে লোকার বয়স ১৫ বছর। ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ। এর আগে এবারের বিশ্বকাপে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্ট। ক্রোয়েশিয়ার প্রতি ম্যাচেই দেখা গেছে তার ঝলমলে উপস্থিতি। কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে তো লুকা মডরিচদের অভিনন্দন জানাতে কিতারোভিচ চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমেও। আর পরের ঘটনা হয়েছে এমন যে, ক্রোয়েশিয়ার সব ম্যাচে যে কোনো উত্তেজনার পরই ক্যামেরা তাক করে থাকে এই আবেদনময়ী প্রেসিডেন্টের দিকেই। রাশিয়ায় গিয়ে কিতারোভিচ কূটনীতি যতটুকুই করেছেন, সেটিও ফুটবলকেন্দ্রিক। পুতিন ছাড়াও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে উপহার দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার জার্সি। বিশ্বকাপের মাঝে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর সম্মেলনে গিয়ে জার্সি উপহার দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ভ্লাদিমির পুতিনকে জার্সি উপহার দেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ।

 

এক প্রেমিক প্রেসিডেন্টের গল্প

প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের বয়সের ব্যবধান ২৫ বছর। সম্পর্কের শুরুটাও খুব একটা সাধারণ নয়। ১৬ বছরের এক কিশোর প্রেমে পড়েন ৪০ বছর বয়সী নারীর। এই হলো ঘটনা। ওই মহিলা তখন ছিলেন তিন সন্তানের জননী। আর ১৬ বছরের কিশোর ছেলেটা এখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের রাজনীতিতে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নাটকীয় উত্থান হয়েছে। অথচ তিনি কখনোই রাজনীতিবিদ হতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন একজন ঔপন্যাসিক হতে। যার বর্তমান বয়স ৩৯ বছর এবং স্ত্রী ব্রিজিথ তোনিয়োর বয়স এখন ৬৪ বছর। অর্থাৎ তার প্রেমকাহিনী এখন পুরোপুরি সফল। ম্যাক্রোঁর স্ত্রী একসময় তার স্কুলের নাটকের শিক্ষিকা ছিলেন। স্কুলজীবনে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। ম্যাক্রোঁর স্কুলশিক্ষিকা এবং বর্তমানে স্ত্রী ব্রিজিথ  তোনিয়ো ছোটবেলা থেকেই তাকে চেনে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্রিজিথ তোনিয়ো বলেছেন, ম্যাক্রোঁ স্কুল  ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের দুজনের মধ্যে টেলিফোনে দীর্ঘ কথোপকথন হতো। ধীরে ধীরে শিক্ষিকার মন জয় করেন ছাত্র। দুজনের মধ্যে যখন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে, তখন শিক্ষিকা ছিলেন বিবাহিতা এবং তিন সন্তানের জননী। আগের স্বামীকে ছেড়ে তিনি ২০০৭ সালে বিয়ে করেন ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে।

অনেকে বলছেন ম্যাক্রোঁর প্রেম এবং বিয়ে তার জীবনে ‘আত্মবিশ্বাস’ তৈরিতে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। 

ম্যাক্রোঁ যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনস্থির করেন তখন থেকেই এই দম্পতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তারা তখন অনেক বেশি জনসম্মুখে আসেন।


এমবাপ্পেকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছেন

এমবাপ্পেতে মুগ্ধ কিতারোভিচ

বিশ্বকাপের মঞ্চে সেরা উদীয়মান প্লেয়ার নির্বাচিত হওয়ার পর এমবাপ্পেকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ। তাকে জানিয়েছেন তিনি এমবাপ্পের খেলায় মুগ্ধ। এভাবেই সবসময় খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। মাত্র ১৯ বছরের এমবাপ্পের প্রতি এখন মুগ্ধ বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্তও। এই ছোট্ট জীবনে প্রায় অনেক কিছুই অর্জন করে ফেলেছেন এমবাপ্পে। ইন্টারনেটে এই মুহূর্তে একটি ট্রল বেশ ভাইরাল। সেখানে বলা হচ্ছে, আমাদের দেশে যেখানে ১৯ বছর বয়সে ছেলেরা মেয়েদের পেছনে ঘুরে ঘুরে সময় নষ্ট করে, এমবাপ্পে সেখানে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্বজয় করে ফেলেছেন! কে  কেমনভাবে ট্রলটিকে নেবেন তা যার যার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। তবে এ কথা একদমই সত্যি যে, অন্য অধিকাংশ পেশাদার ফুটবলারও যে বয়সে ক্যারিয়ার মাত্র শুরু করে সে বয়সেই এমবাপ্পে বিশ্ব জয় করে ফেলেছেন। শুধু তাই-ই নয়, একই বিশ্বকাপে তিনি দুই-দুইবার ভাগ বসিয়েছেন সর্বকালের সেরা পেলের রেকর্ডেও।


ফ্রান্সের এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট বিশ্বকাপের মঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজছেন

কূটনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছেন তারা

মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল চলছে। ফ্রান্স ও  ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা জোগাতে গ্যালারিতে উপস্থিত দুই দেশের দুই প্রেসিডেন্ট। শুধু অনুপ্রেরণা নয়, ফুটবলের প্রতি দুজনের আলাদা ভালোবাসাও আছে। যা তাদের উচ্ছ্বাসই প্রমাণ করে দিয়েছে। কিন্তু কাপ একটাই। ক্রোয়েশিয়াকে চোখে পানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। হতাশ হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্টও। কিন্তু দুজনকে দেখে মনে হয়নি কেউ আসলে হেরেছেন, কেউ জিতেছেন। জয় হয়েছে দুজনেরই। জয় হয়েছে ফুটবলের। জয় হয়েছে মানবতার। ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ দল নক আউট রাউন্ডে ওঠার পর থেকে প্রতিটি খেলায় তিনি মাঠে হাজির ছিলেন, গ্যালারিতে সাধারণ সমর্থকদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছেন, দলকে সমর্থন জুগিয়েছেন। সেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটজুড়ে। ক্রীড়ামোদী এই প্রেসিডেন্ট তাই নজর কেড়ে নিয়েছেন বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের।

ফাইনালেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আর ফিফা প্রেসিডেন্ট জিওভান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে ভিআইপি বক্সে বসে খেলা উপভোগ করেছেন তিনি।  এদিকে অভিজাত বলে বদনাম রয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর। অনেকেই বলে, সাধারণের কাছের মানুষ নন তিনি। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতে সে সব অভিযোগ যেন ধুয়ে মুছে গেল। গ্রিজম্যান, পগবা, এমবাপ্পেদের জয়ের আনন্দে গ্যালারিতে মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত তুলে আনন্দ প্রকাশ করেছেন তিনি। মাঠে নেমে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজেছেন। বিশ্ব জয়ের পর ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর যেন নতুন রূপ দেখল  গোটা বিশ্ব। ছাত্রজীবনে ম্যাক্রোঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেফট ব্যাক ছিলেন। এরপর করপোরেট জগতে ঢুকেও ফুটবলের নেশাটা তার সবসময়ই ছিল। রাজনীতিতে পা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পদ দখল করার পরও নিয়মিত ফুটবলের খোঁজ-খবর নিতেন।

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও দেখা যায় বিশ্বের দুই দেশের দুই প্রেসিডেন্টকে এক অন্য রূপে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ছাতার আশ্রয় নিলেও ফ্রান্সের  প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ বৃষ্টিতে একসঙ্গে হাত ধরে ভিজেছেন। খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্ব কূটনৈতিক সম্পর্কের এক অন্য রূপ দেখল বিশ্ববাসী। খেলার মাধ্যমে দুই দেশের দুই প্রেসিডেন্ট পরস্পর কতটা কাছাকাছি চলে এসেছেন। খেলায় জয়-পরাজয় ঘটেই। কিন্তু টিভি পর্দায় কোটি কোটি মানুষ উপভোগ করল দুই দেশের জয়। যা সত্যি অসাধারণ অনুভূতি জুগিয়েছে সবার মাঝে। ফ্রান্সের বিশ্বকাপের স্বপ্নের শিরোপা জয়ের পর বিজয়োৎসব শুরু হওয়ার পরপরই মাঠে নামে ঝুম বৃষ্টি। কোট-টাই পরা ম্যাক্রোঁকে দেখা যায় বৃষ্টির পরোয়া না করে ছাতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। জয়ের আনন্দে খোলোয়াড়দের আলিঙ্গন শুরু করেন।

মডরিচকে ভালোবাসা জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ

মডরিচের জন্য ভালোবাসা

এ সময় বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে দেখা হচ্ছে লুকা মডরিচকে। তার একক নৈপুণ্যে ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলেছে ইতিহাসে প্রথম। মডরিচের প্রশংসা তাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মুখেও। হারের পর যখন মডরিচের মন খারাপ তখনই তিনি জানতে পারলেন এবারের বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল তিনি জয় করেছেন। তাই অনেকটা বিরস মুখেই গোল্ডেন বল গ্রহণ করেন মডরিচ। আর এই দৃশ্য বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তিনি পরম আবেগে জড়িয়ে ধরে মডরিচের প্রতি তার ভালোবাসা জানান। সাহস জোগান। পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য অবলোকন করেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আর মাঠের দর্শকরা। সেই সঙ্গে এই দৃশ্য দেখে টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত। এটাই আসলে ফুটবলের সৌন্দর্য। ক্রোয়েশিয়ার ফুসফুস হয়ে উঠেছেন তিনি। খেলার মাঠে মডরিচ ছুটে বেড়ান পুরো সময়। কখনো বল নিয়ে নিজেই তেড়েফঁড়ে ওপরে উঠে আসছেন আবার নিচে নামছেন। ফলস নাইনে পৌঁছে স্ট্রাইকারের সঙ্গী হয়ে উঠছেন। তাকে সামলানোর কোনো অঙ্ক বের করতে পারেনি কেউ।


স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ

নেচে-গেয়ে সাধারণের সঙ্গে জয় উদযাপন

ফুটবল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় জাতীয় দলকে উৎসাহ দিতে উড়োজাহাজের ইকোনমি ক্লাসে চেপে রাশিয়ায় চলে আসেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ। রুশ বার্তা সংস্থা স্পুটনিকের তথ্য অনুযায়ী উড়োজাহাজের নিয়মিত ফ্লাইটে অন্য সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে রাশিয়া পৌঁছান ক্রোয়েশিয়ার এই আবেদনময়ী রাষ্ট্রপ্রধান। ব্যবহার করেননি কোনো সরকারি প্রটোকল। ইকোনমি ক্লাসে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে ভ্রমণের ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ারও করেছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ। ডেনামার্কের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় ফুটবল দলের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলার ঠিক আগ মুহূর্তে নিজনি নভগরোদের স্টেডিয়ামে পৌঁছান তিনি। ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিতারোভিচ নিজ দেশের জয়  দেখেছেন সাধারণ গ্যালারিতে, সাধারণ দর্শকদের সঙ্গে বসেই। গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে ফুটবলের আনন্দ ভাগ করে নিতেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত বিলাসবহুল স্যুটে বসেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। দলের প্রতিটি জয়ে আর দশজনের মতোই নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট।  ফাইনালে অবশ্য ভিআইপি জোনে বসেই খেলা দেখেছেন তিনি। তবে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার অনুভূতিই নাকি অসাধারণ, এ কথা জানিয়েছেন রাশিয়ান ওয়েবসাইট স্পোর্টবক্স। সত্যিই এমন প্রেসিডেন্ট পাওয়া দারুণ ব্যাপার।


ফরাসি প্রেসিডেন্ট উল্লাসে ফেটে পড়েন

ভিআইপি বক্সে ফরাসি প্রেসিডেন্টের নাচ

২০ বছর পর ক্রোটদের হারিয়ে আবার বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নিল ফ্রান্স। বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতেছে ফরাসিরা। তবে উচ্ছ্বাসের শুরুটা করে দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ক্রোয়েশিয়ানদের জালে প্রথম বল জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাক্রোঁর প্রথম গোল উৎসব উদযাপনের ছবিটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। গুরুগম্ভীর হিসেবে পরিচিত হলেও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নাচ আগের সব বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছে। পুতিনের পাশে বসে শান্তভাবে খেলা  দেখছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তার এ নির্লিপ্ততা  দেখা গিয়েছিল খেলার ১৮ মিনিট পর্যন্তই। মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে ফ্রান্স এগিয়ে গেলে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। গ্যালারিতে ফেটে পড়া ফ্রান্স সমর্থকদের সঙ্গে ভিআইপি বক্সে উপস্থিত ফরাসি প্রেসিডেন্টও উল্লাসে ফেটে পড়েন। পুরস্কার বিতরণী পর্বে ফিফা মঞ্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, ক্রোয়েশিয়ার  প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবারের পাশে দাঁড়িয়ে শুটেড-বুটেড হয়েও বৃষ্টিতে ভিজেছেন। প্রতিটি খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েরছন। একই সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়দেরও ভালোবাসা জানিয়েছেন।   আর এভাবেই বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এর আগে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হতে না হতেই এক শব্দের টুইটে ম্যাক্রোঁ তার ফুটবল দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অবিস্মরণীয় এ জয়ের পর ফরাসি রাষ্ট্রপতি লিখেন ‘মার্সি’ বাংলায় অর্থ ‘ধন্যবাদ’। আসলেই ফ্রান্স ভালো খেলে জয় করেছে বিশ্বকাপ। 

 

যেভাবে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ক্রোয়েশিয়াকে ফেবারিটের তালিকায় ওপরের দিকে রেখেছিলেন এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। খুব কম মানুষই। সবাইকে চমকে দিয়ে চলতি আসরে অপরাজিত থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে জ্লাতকো দালিচের দল। গত রবিবার মস্কোর লুঝনিকি  স্টেডিয়ামে ফাইনালে হেরে গেলেও ভালো খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। এই প্রথম ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলে। তবে তাদের ফাইনালে আসার পথটা মোটেই সুখকর ছিল না। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া ২-০ তে শক্তিশালী নাইজেরিয়াকে পরাজিত করে।

১৯৯৮ সালের পর চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। এর আগে ‘ডি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা অপ্রত্যাশিতভাবে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়ামে এই জয়ের শুরুতেই সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায় ক্রোয়েশিয়া। আর আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারায় তারা। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখায় ইউরোপের ছোট দেশটি। টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে জ্লাতকো দালিচের দল।

ক্রোয়েশিয়া ২-১ এর ব্যবধানে আইসল্যান্ডকে হারায়। নকআউট পর্ব আগেই নিশ্চিত হওয়ায় এ ম্যাচে একাদশে নয়টি পরিবর্তন আনেন দালিচ।

টানা তিন জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে পা রাখে ক্রোয়েশিয়া। এর আগে কখনোই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই জয় পায়নি তারা। শেষ ষোলোতে এসে ক্রোয়েশিয়া পেনাল্টি শট আউটে ৩-২ গোলে জয়ী হয় ডেনমার্কের বিপক্ষে। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া ২-২ রাশিয়ার সঙ্গে ড্র করে। তারপর পেনাল্টি শট আউটে ৪-৩ গোলে জয়ী হয় ক্রোয়েশিয়া। পেনাল্টি শট আউটে আবারও ক্রোয়াটদের ত্রাতা হয়ে আসেন দানিয়েল সুবাসিচ। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার পর একই বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে টাইব্রেকারে দুটি জয় তুলে নিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে ক্রোয়েশিয়া।

সেমিফাইনাল ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ২-১ ইংল্যান্ডের সঙ্গে জয়ী হয়। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে পঞ্চম মিনিটেই কিরান ট্রিপিয়ারের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমার্ধে মোটেও ছন্দে ছিলেন না মডরিচ, মানজুকিচরা।

কিন্তু বিরতির পর শিমে ভারসালকোর ক্রসে সমতা ফেরান পেরিসিচ। ছন্দে ফিরতে শুরু করে ক্রোয়েশিয়া। চার মিনিট পর ইন্টারমিলান ফরোয়ার্ডের শট পোস্টে লেগে না ফিরলে নির্ধারিত সময়েই জয় পেত ক্রোয়াটরা। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে দলকে জয় এনে দেন মানজুকিচ। আর সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছে ক্রোয়েশিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর