বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নন্দিত হুমায়ূন

নন্দিত হুমায়ূন

ক্ষণজন্মা কথাসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের ছেড়ে গেছেন ছয় বছর হয়ে গেল। সময়টা ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। চারদিকে হাহাকার ধ্বনি দিয়ে বাংলা কথাসাহিত্যের এই অমর কিংবদন্তি চিরনিদ্রায় শায়িত হন নুহাশ পল্লীতে। ইতি ঘটে এক মহাজীবনের। যার শুরুটা ছিল নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুরে। কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের ডাকনাম কাজল। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবার কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন বিধায় শৈশবে তিনি দেশের নানা স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। শৈশবে তিনি যত জায়গায় গিয়েছেন তার মাঝে তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল দিনাজপুরের জগদল। কারণ তারা যেখানে থাকতেন তার আশপাশে কোনো স্কুল ছিল না। স্কুলের কথা মনে হলেই যার মুখ তেতো হয়ে যেত তারই এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার পর দেখা গেল তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয়। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও তিনি মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ১৯৭২ সালে রসায়ন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি একই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর জোসেফ এডওয়ার্ড গ্লাসের তত্ত্বাবধানে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে হুমায়ূন আহমেদের আত্মপ্রকাশ ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। তরুণ হুুমায়ূন আহমেদের মাঝে অমিত সম্ভাবনা তখনই টের পেয়েছিলেন প্রখ্যাত লেখক-সমালোচক আহমদ শরীফ। এক গদ্যের মাধ্যমে তিনি হুমায়ূন আহমেদকে অভিনন্দিত করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ তার জাদুকরি লেখনীতে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। উপন্যাসের ক্যানভাসে মধ্যবিত্ত জীবন রচনার পাশাপাশি অসাধরণ সব সায়েন্স ফিকশন, ছোটগল্প, কবিতা, গান, নাটক লিখেছেন তিনি। প্রায় তিন শতাধিক বই প্রকাশ পেয়েছে এই কালজয়ী লেখকের। তৈরি করেছেন হিমু ও মিসির আলীর মতো জনপ্রিয় সব চরিত্র। তার লেখা প্রায় তিন শতাধিক বইয়ের মধ্যে হিমু সংক্রান্ত বই রয়েছে ২৯টি, মিসির আলী সংক্রান্ত বই রয়েছে ২২টি এবং আত্মজীবনীমূলক বই রয়েছে ১৯টি। তার রচিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, এপিটাফ, কে কথা কয়, মেঘ বলেছে যাব যাব, অপেক্ষা ইত্যাদি। তার কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক নির্মাণ এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন। তার তৈরি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তাদের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তিন মেয়ে হলেন বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী হলেন অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তাদের দুই ছেলে। প্রথম ছেলের নাম নিষাদ হুমায়ূূন ও দ্বিতীয় ছেলের নাম নিনিত হুমায়ূন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর