বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশে দেশে রাজতন্ত্র

দেশে দেশে রাজতন্ত্র

সময়ের পরিক্রমায় রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্রের চর্চা বাড়লেও এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তে রাজতন্ত্র রয়ে গেছে। ধনী ও ক্ষমতাধর বেশ কয়েকটি দেশে রাজতন্ত্রের চর্চা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এখন ৫৪টি দেশের রানী হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রানী হিসেবে সবার কাছে সম্মানিত। সৌদিতে রাজপরিবারের হাতে রাষ্ট্রের পুুরো নিয়ন্ত্রণের ১০০ বছর হতে চলল। সব সময়ই রাজপরিবারগুলোকে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা, সমালোচনা রয়েছে। তারপরও রাজতন্ত্রের প্রভাব ও প্রতিপত্তি কমেনি। রাজতন্ত্র এখনো জিইয়ে রাখা ক্ষমতাধরদের নিয়ে লিখেছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

 

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ  [যুক্তরাজ্য]

যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোজ, বাহামাস, গ্রানাডা, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমান আইসল্যান্ড, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাদিনেস, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বার্বুডা, বেলিজ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস- এই ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের রানী ও রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কমনওয়েলথভুক্ত এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এরই মধ্যে ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়েছেন। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। তিনি ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত রানীর আসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। প্রতি সপ্তাহে রানী এলিজাবেথের সঙ্গে এক ঘণ্টা  বৈঠক তেরেসা মে তথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের নিয়মের মধ্যে পড়ে। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। দীর্ঘ ৬ দশকের পথচলা তার জন্য খুব মসৃণ ছিল না। সব কিছুর পরও রানী হচ্ছেন ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক।

 

সালমান বিন আবদুল আজিজ  [সৌদি আরব]

সৌদি আরবের রাষ্ট্র্রধান বাদশাহ। তিনি সৌদি রাজতন্ত্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাদশাহকে খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন বলা হয়। ১৯৮৬  সালে হিজ ম্যাজেস্টি সম্বোধন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই উপাধি দ্বারা মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ওপর সৌদি আরবের তত্ত্বাবধান  বোঝানো হয়। সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ হলেন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। সালমান ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি সৎভাই বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। বাদশাহ দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম এবং আল সৌদের প্রধান। তিনি ২০১১ সাল থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ রিয়াদে তার পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে ১৯০২ সালে বর্তমান সৌদি আরব জয় করা শুরু করেন। তিনি প্রথমে ১৯২২ সালে নজদ জয় করে সুলতান থেকে হেজাজ ও নজদের বাদশাহ এবং ১৯৩২ সালে সৌদি আরবের বাদশাহ হন। বাদশাহ আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলেরা সৌদি আরব শাসনের দায়িত্ব পালন করছেন।  সৌদি সিংহাসনের ওপর তার সন্তানদের প্রাথমিক অধিকার বলে ধরে নেওয়া হয়। সৌদি আরব ইসলামী আইন দ্বারা শাসিত হওয়ায় এটি ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তবে অনেক মুসলিম এই রাজত্বকে ইসলামে অনুমোদিত নয় বলে বিবেচনা করেন।

 

হাসসান আল-বলকিয়াহ  [ ব্রুনাই ]

হাসসান আল-বলকিয়াহ হলেন ব্রুনাইয়ের ২৯তম এবং বর্তমান সুলতান। তিনি ব্রুনাইয়ের প্রথম এবং দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রীও। ব্রনাইয়ের ১৯৫৯ সালের সংবিধান অনুসারে সুলতান পূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতাসহ রাষ্ট্রের প্রধান। এ ছাড়া তিনি ব্রুনাইয়ের অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও মন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি রয়্যাল ব্রুনাই আর্মড ফোর্সের সর্বাধিনায়ক। একইসঙ্গে তিনি ব্রিটিশ এবং ইন্দোনেশিয়ান আর্মড ফোর্সের একজন অনারারি জেনারেল। তিনি নিজেকে ব্রুনাই রাজকীয় পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিযুক্ত করেন। ১৯৬২ সাল থেকে সুলতান জরুরি অবস্থা ঘোষণা করারও অধিকারী। ২০০৬ সালের মার্চে সুলতান ব্রুনাইয়ের আইনে নিজেকে ভুলের ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান সংশোধন করেন। বাবা স্যার মুদা তৃতীয় ওমর আলী সাইফুদ্দিন ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর সিংহাসন ত্যাগের পর তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতানের সিংহাসন গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ফোর্বসের জরিপে সুলতান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। সুলতান ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই ব্রুনাই টাউনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার মতো তিনিও যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধি পান। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে তিনি একটি রক্ষণশীল মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন, যা মালয় ইসলাম বেজারা নামে পরিচিত। এই মতবাদে রাজতন্ত্রকে ধর্মীয় বিশ্বাসের রক্ষাকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ [ওমান]

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের রাজনৈতিক কাঠামো গঠিত রাজতন্ত্রের আদলে। সেখানকার রাজা সুলতান উপাধি ব্যবহার করেন। ওমানের বর্তমান সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারপ্রধান। ওমান শাসনভার ন্যস্ত রয়েছে সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদের হাতে। অন্য যে কোনো রাজার চেয়ে তিনি বেশি দিন রাজত্ব করছেন। তার রাজত্বের ৪৮ বছর চলছে। ওমানের সুলতানরা বংশানুক্রমে ক্ষমতায় আসেন। সুলতানকে সহায়তা করার জন্য একটি মন্ত্রিসভা আছে। এখানে সংখ্যালঘু মুসলমান গোত্র ইবাদি জাতির লোকেরা বাস করে। এরা শিয়া ও সুন্নিদের চেয়ে স্বতন্ত্র। বহু শতাব্দী ধরে ওমান ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের একটি অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৭ শতক থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত এটি একটি ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে তিনি রাষ্ট্রের মৌলিক বিধি উপস্থাপন করেন। এটিই মূলত ওমানের প্রথম লিখিত সংবিধান। এই সংবিধান ইসলামী আইন ও প্রচলিত আইনের কাঠামোয় বিভিন্ন অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কোনো সরকারি শেয়ার হোল্ডিং সংস্থার কর্মকর্তা হওয়া যাবে না। সবচেয়ে বড় সফলতা হলো সুলতানের উত্তরাধিকার আইন বিধিবদ্ধ করা। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওমানের মজলিশ আল শূরার জন্য প্রায় ১ লাখ ওমানি নারী ও পুরুষ মিলে দুজন নারীসহ মোট ৮৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত করেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুলতান কাবুস ৪৮ জনকে মজলিশ আল দাউলায় নিযুক্ত করেন।

 

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ [জর্ডান]

জর্ডানের রাষ্ট্রপ্রধানের পদ হলো বাদশাহ। জর্ডানের হাশিমি রাজপরিবারের প্রধান হিসেবেও দায়িত্বপালন করে থাকেন তিনি। বাদশাহকে মহামান্য বা ইংরেজিতে হিজ ম্যাজেস্টি হিসেবে সম্বোধন করা হয়। আবদুল্লাহ আল-সানি বিন আল-হুসাইন বা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জর্ডানের বর্তমান বাদশাহ। বাবা হুসাইন বিন তালাল মারা যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। দ্বিতীয় আবদুল্লাহ দেশের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধান। তার হাতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা। ২০১০ সালে দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিশ্বের চতুর্থ প্রভাবশালী মুসলিম হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ক্ষমতাগ্রহণের পর জর্ডানের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। দেশটিতে বাদশাহর শাসন বহাল থাকলেও বর্তমানে তিনি জর্ডানকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ার স্বপ্ন দেখেন। বর্তমান বাদশাহ হাশিমি রাজপরিবারের সদস্য। এই পরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। ব্রিটেনের সহায়তায় তখন রাজতন্ত্র স্থাপিত হয়। তারা মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধর বলা হয়। মক্কার শরিফ হুসাইন বিন আলীর ছেলেরা ইরাক ও জর্ডানের বাদশাহ হন। প্রথম আবদুল্লাহ ১৯২১ সালের ১১ এপ্রিল ট্রান্সজর্ডান আমিরাতের আমির হয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালের ২৫ মে ট্রান্সজর্ডান স্বাধীন হয়ে নতুন জর্ডান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আমির ছিলেন। এরপর তিনি জর্ডানের প্রথম বাদশাহ হন। হাশিমি রাজপরিবারের মূল উৎসভূমি হেজাজ। বর্তমানে তা সৌদি আরবের অংশ।

 

জিগমে খেসার নামগিয়েল [ভুটান]

ভুটান হলো একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। ১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের প্রথম রাজা নির্বাচিত হন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো বা ড্রাগন রাজা। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভুটানের রাজা বা ড্রাগন রাজা হলেন, রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে থাকে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে ন্যস্ত থাকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা। এ ছাড়াও খেনপো উপাধি বিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন। বর্তমানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করা বর্তমান রাজবংশের পঞ্চম রাজা তিনি। ২০০৬ সালে বাবা জিগমে সিংহে ওয়াংচুক সরে দাঁড়ালে ভুটানের রাজার দায়িত্ব পান জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশ বলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান সংবিধানে দেশটিতে একটি দুই-দলবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত হন বর্তমান রাজা। রাজা হওয়ার পর ভুটানের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক গণতন্ত্রের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। নির্বাচন হয় এবং নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে।

 

শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা [বাহরাইন]

একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংগঠিত হয় বাহরাইনের রাজনীতি। সেদেশের আইনসভা দুই-কক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন আর উচ্চকক্ষ তথা শূরা কাউন্সিলের সদস্যদের রাজা নিয়োগ দেন। বর্তমানে বাহরাইনের রাজা শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা। তিনি বাহরাইনের রাজতন্ত্রে ১৯৯৯ সালে আমির এবং ২০০২ সালে প্রথম রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। সরকার চালানোর জন্য তিনি একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী খলিফা ইবনে সুলেমান আল-খলিফা। রাজপুত্র শাইখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭১ সালে স্বধীনতা লাভ করা দেশ বাহরাইনে প্রায় ৫ হাজার বছর আগেও একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সেজন্য সবসময়ই শক্তিশালী প্রতিবেশীদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। ১৭ শতকে এটি ইরানের দখলে চলে যায়।  বাহরাইনের ৬০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা জন্মসূত্রে নাগরিক। এ ছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নি মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সুন্নিরা বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদি আরবের আল-খলিফা পরিবার বাহরাইনের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে থাকে। কিন্তু ১৯ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য  দেশটির প্রতিরক্ষা ও  বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল।

১৯৩০-এর দশকে বাহরাইন পারস্য উপসাগরের প্রথম দেশ হিসেবে তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকেই এর সব তেল ফুরিয়ে যায়। তবে দেশটি এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে  রেখেছিল এবং দেশটির অর্থনীতি এখনো উন্নতি করে যাচ্ছে।

 

রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন [থাইল্যান্ড]

১৭৮২ থেকে থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহীরা একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৬-এর কু পর্যন্ত থাইল্যান্ড একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বহুদলীয় মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চলছে। সংবিধানে রাজাকে খুব কম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি জাতীয় পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা ক্রাউন প্রিন্স মাহা ভাজিরালংকর্ন। ১৭৮২ সাল থেকে ক্ষমতাসীন ও থাইল্যান্ডের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চক্রী রাজবংশের দশম রাজা তিনি। বর্তমান রাজার বাবা ছিলেন রাজা ভুমিবল অতুল্যতেজ। ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রাজ্যভার পালন করায় রাজা ভুমিবল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাজা হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর রাজা ভুমিবলের মৃত্যুর পর ছেলে মাহা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে আরোহণ করেন। জনগণের ওপর সেদেশের রাজার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি রাজনৈতিক সংকট মীমাংসায় এগিয়ে আসেন। সংবিধান অনুযায়ী থাইল্যান্ডের জাতীয় আইনসভা দুটি কক্ষে বিভক্ত- সিনেট বা উচ্চকক্ষ এবং প্রতিনিধিসভা বা নিম্নকক্ষ। উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা ১৫০; এদের মধ্যে ৭৬ জন জনগণের সরাসরি ভোটে ও বাকি ৭৪ জন সিনেট সদস্য নির্বাচন কমিশনের তৈরি করা একটি তালিকা থেকে বিচারক ও ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দ্বারা বাছাই হন। নিম্নকক্ষে ৪৮০ জন সদস্য এবং এদের মধ্যে ৪০০ জন থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জেলা ও নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর