বুধবার, ২২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের প্রধান যত বন

সাইফ ইমন

বিশ্বের প্রধান যত বন

রহস্যঘেরা আমাজন বন

লাখ লাখ মাইলজুড়ে বিস্তৃত আমাজন বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই রেইন ফরেস্ট নিয়ে যতই দিন যাচ্ছে, না জানার বিষয়গুলো যেন ততই বেরিয়ে আসছে। এই বনের উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য পৃথিবীর দ্বিতীয় কোথাও নেই। তা বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করে নিয়েছেন। আমাজন এতই বিশাল যে এর বুকের ভিতরের বহু জায়গা দেখা হয়নি আজো। শুধু ভূখ-ের কথা চিন্তা করেই এটা বলা যায়, নদীপথের দিকে তাকালে সে পরিমাণ এতই কম হবে যেন মনে হবে আমাজনের প্রায় কিছুই আমরা জানি না। প্রতি বছর বহু পর্যটক সেখানে যান। তবে আমাজনের রহস্য বের করে নিতে যেসব প্রাণীবিজ্ঞানী, উদ্ভিদ-বিজ্ঞানী সেখানে যান তারা একেবারেই নতুন নতুন সব প্রজাতির সন্ধান নিয়ে আসেন। এমন সব জায়গায় অ্যাডভেঞ্জার করা হয় যেখানে এর আগে কেউ কোনো দিন যায়নি। এ জন্যই আমাজনকে বলা যায় চেনা এবং জানার মধ্যে অচেনা ও অজানার সম্ভার। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি এ আমাজন ছেয়ে আছে ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার। ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু বেষ্টিত। আমাজন অরণ্যের ৬০ ভাগ  রয়েছে ব্রাজিলে ১৩ ভাগ  রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ  রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিবিয়া, গায়ানা সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়। পৃথিবীজুড়ে যে রেইন ফরেস্ট তার অর্ধেকটাই এই অরণ্য নিজেই। নানারকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমাদৃত এ আমাজন। বিশাল আমাজন বনের  ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জলাশয়সহ বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী আমাজনে কমপক্ষে ৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করে। আমাজন বন অজগর জাতীয় বিশাল সাপ অ্যানাকোন্ডাসহ শ্লথ, জাগুয়ার প্রভৃতির জন্য বিখ্যাত। সম্প্রতি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে নির্বাচনে প্রথম স্থান পাওয়া আমাজন বন প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে কার্বনডাই অক্সাইডকে অক্সিজনে রূপান্তর করে বলে এর পরিবেশগত গুরুত্বও কম নয়। আমাজনের গহীনে এমন জায়গাও রয়েছে যেখানে আজ পর্যন্ত মানুষের পা পড়েনি একটিবারের জন্যও। ফ্রান্সিস দে ওরেলানা নামের স্প্যানিশই পর্যটক প্রথম মানুষ যিনি আমাজন নদী ধরে পৌঁছে যান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই রেইন ফরেস্টে। যার আয়তন ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার। এই বনের বুক চিরে বয়ে গেছে আমাজন নদী। যে নদী প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট পানি ফেলে সাগরে। গোটা পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে আমাজন। যে কারণে আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। ছোট পোকা-মাকড় আর রং-বেরঙের পাখিতে সমৃদ্ধ এ বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য গবেষকদেরও বিস্মিত করে। প্রায় ৪০০-এর বেশি আদিবাসীর বসবাস এ বনে। যাদের বেশির ভাগেরই আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এখনো আমাজনের বহু গহিন স্থানে মানুষের পা পড়েনি। সোনার শহরের খোঁজে শত শত বছর ধরে এ বনেই ছুটে এসেছেন অভিযাত্রীরা। নানা রহস্য আর রোমাঞ্চ আমাজনের আসল সৌন্দর্য। মানুষ চাঁদে পা ফেলেছে কিন্তু আমাজনের গোপনীয়তা ভাঙতে পারেনি সবটুকু।

 

ভয়ঙ্কর কঙ্গো রেইন ফরেস্ট

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট ‘কঙ্গো রেইন ফরেস্ট’।

এ বনাঞ্চল সেন্ট্রাল আফ্রিকার ক্যামেরুন, নিরক্ষীয় গিনি, গ্যাবন, কেন্দ্রীয় আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রজুড়ে বিস্তৃত। আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষের জীবিকার জোগান দিচ্ছে এ কঙ্গো রেইন ফরেস্ট। বিশেষত গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এ রেইন ফরেস্টের ওপর নির্ভর করে তাদের খাবার, আশ্রয় এবং ওষুধের জন্য।

১.৫ মিলিয়ন বর্গমাইলজুড়ে অবস্থিত এ রেইন ফরেস্টটি পৃথিবীর সব রেইন ফরেস্টের সম্মিলিত আয়তনের ১৮ ভাগ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী কঙ্গো নদী এ রেইন ফরেস্টের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে।   তবে ধীরে ধীরে এ অরণ্যের  গরিলা ও বনোবোর মতো অনেক প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের হার এখানে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও কঙ্গো রেইন ফরেস্টের ইকোসিস্টেম অনেক দুর্বল। এর প্রধান কারণ হতে পারে বাণিজ্যিকভাবে কাঠ সংগ্রহ, কৃষিকাজের জন্য বন উজাড়, গাছ কেটে রাস্তা তৈরি ইত্যাদি। আতঙ্কের বিষয় এ রেইন ফরেস্টের ৫০ মিলিয়ন হেক্টর অঞ্চলকে কাঠ সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। যার ফলে অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ কঙ্গো রেইন ফরেস্টের ৩০ ভাগ বিলীন হয়ে যাবে যদি না বৃক্ষ নিধনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বা বাণিজ্যিক কাঠ সংগ্রহ কমানো হয়। জীববৈচিত্র্যে অনন্য এ রেইন ফরেস্ট। এখানে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ৪০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭০০ প্রজাতির মাছ, এক হাজার প্রজাতির পাখি। এখানে যেসব বণ্যপ্রাণী আছে তার মধ্যে পিগমি শিম্পাঞ্জী, বন্যহাতি, গরিলা, কঙ্গো ময়ূর, সাদা গ-ার, ওকাপি ও স্থল প্যাঙ্গোলিন অন্যতম। তবে এসব প্রজাতির মধ্যে অদ্বিতীয় প্রজাতি হচ্ছে ওকাপি। এটি দেখতে কিছুটা জেব্রার মতো। এ অরণ্যে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ হাজার ওকাপি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

পৃথিবীর আর কোথাও এই বিরল প্রাণী নেই। এই প্রাণীর আকার জিরাফের মতো হলেও এরা অনেক ছোট আকৃতির। এর গায়ের রং বাদামি। এর লেজের কাছে ও পেছনের পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ আছে। দেহের তুলনায় গলাটা এদের বেশ লম্বা, যদিও জিরাফের মতো অতটা লম্বা নয়। এর মাথার গড়নও অনেকটা জিরাফের মতো। শুধু তাই নয়, পুরুষ ওকাপির মাথার ওপরে জিরাফের তথাকথিত দুটো শিঙের মতো ১.৫ সে.মি উপবৃদ্ধি দেখা যায়। মাথায় দুটো বড়ো বড়ো কান, এ জন্য এর শ্রবণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর। ওকাপি সাধারণত জোড় বেঁধে নতুবা একাকী বনের মধ্যে বিচরণ করে এবং গাছের মগডালের কচি কচি পাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। ওকাপির বিষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এরা বজ্রপাত এ পুড়ে যাওয়া গাছের কয়লাও ভক্ষণ করে থাকে। এ ছাড়াও এই অরণ্যের অনেক বড় একটা অংশজুড়ে বিচরণ করছে মাংসাশী আফ্রিকান চিতাবাঘ। নির্জনবাসী, শক্তিশালী ও ক্ষিপ্রগতির এ চিতাবাঘ টিকটিকি থেকে শুরু করে পাখি, কৃষ্ণসার, মহিষের বাছুর পর্যন্ত সব কিছু শিকার করে। চিতাবাঘের চেয়ে আকারে ছোট কিন্তু অনেক ভয়ানক আরেকটি মাংসাশী প্রাণী হলো আফ্রিকান সোনালি বিড়াল। এরা আফ্রিকার অন্যতম সংকটাপন্ন বানর প্রজাতি। আফ্রিকান হাতির দাঁতের মূল্য সাভানা অঞ্চলের হাতির দাঁতের তুলনায় অনেক বেশি। অতুলনীয় জীববৈচিত্র্য আর হাজার হাজার প্রজাতির আবাসস্থল কঙ্গো অরণ্যের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি; বিশেষ করে কেন্দ্রীয় আফ্রিকার জনগণ ও প্রাণীকুল যারা খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য এ অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান রেইন ফরেস্ট

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান রেইন ফরেস্ট হলো পৃথিবীর অন্যতম একটি প্রাকৃতিক অরণ্য। এখানে সারা বছর তাপমাত্রার খুব একটা তারতম্য হয় না। দুর্ভাগ্যবশত এ বনাঞ্চলগুলো অতীতে যে রকম ঘন ছিল বর্তমানে সে রূপ আর দেখা যায় না। গাছ নিধনের কবলে পরে এ বনভূমি হারিয়েছে তার অতীত ঐশ্বর্য যা সংরক্ষণ বিভাগের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন প্রজাতির পক্ষীকুল, স্তন্যপায়ী প্রাণী, অ্যামফিবিয়ান এবং সরীসৃপদের বাসস্থান এ বনভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ইকো-সিস্টেমের অংশ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ বনভূমি। এ রেইন ফরেস্টের জলবায়ু মোটামুটি স্থির থাকে এবং সারা বছরের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলোর পূর্ব উপকূলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ অঞ্চলগুলোতে শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

ভালদিবিয়ান রেইন ফরেস্ট

রেইন ফরেস্ট বা অতিবৃষ্টি অরণ্য হচ্ছে সেই সব অরণ্য যেখানে সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মম-লীয় রেইন ফরেস্টগুলোতে বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৪৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ‘পৃথিবীর রত্ন’ বা ‘পৃথিবীর বৃহত্তম ঔষধালয়’ বলা হয়ে থাকে এই গ্রীষ্মম-লীয় রেইন ফরেস্টগুলোকে। কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার মাঝখানে নিরক্ষীয় অঞ্চলে মূলত বেশির ভাগ রেইন ফরেস্ট অবস্থিত। এ রেইন ফরেস্টগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, সাবসাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, কেন্দ্রীয় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে অবস্থিত। এমনই একটি পৃথিবীর বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট ‘ভালদিবিয়ান রেইন ফরেস্ট’। এটা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত। চিলি এবং আর্জেন্টিনার বড় একটা অঞ্চলজুড়ে এর

বিস্তৃতি। এটা নিউট্রপিক্যাল ইকোজোনের অন্তর্ভুক্ত। এ গহীন অরণ্যের নামকরণ করা হয়েছে ভালদিবিয়া শহরের নামানুসারে। বাঁশ, ফ্রেন্স ও চিরহরিৎ গাছের প্রাধান্য দেখা যায় এ বনাঞ্জলজুড়ে। এ বণভূমির পশ্চিমে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর আর পূর্ব দিকে রয়েছে   আন্দাজ পর্বতমালা। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বনাঞ্চল।

 

জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট

বন সবুজ হলেও এ বনের নাম কালো বন বা ব্ল্যাক ফরেস্ট। এর অবস্থান জার্মানিতে। বনটিতে খারাপ কিছু আছে, সে জন্য এর নাম রাখা হয়েছে কালো বন বিষয়টা কিন্তু এমন নয় মোটেই। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পর্বতময় এ বনভূমির নাম ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কালো বন রাখা হয়েছে এ বনের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে। এক অনাবিল পরিবেশের সমারোহ ঘটেছে এ বনে। এ অরণ্য মোট ১৫০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বেষ্টিত। এখানকার সর্বোচ্চ পর্বতের চূড়া ফেন্ডবাগরাউর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪৯৩ মিটার। এ বনের গা ঘেঁষে থাকা বৃহৎ আকারের পর্বতগুলো মূলত বেলে পাথরের তৈরি। পর্বতগুলোর মধ্যে অন্যতম আরও কয়েকটি হচ্ছে হেরজোজেনহর্ন, বেলচিন, স্কাউইন্সল্যান্ড, ক্যানডেল, হোচব্লাউইন, হরনিসগ্রিন্ড।

এ বনাঞ্চলে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের কয়েকটি নদী। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম দানিয়ুব, দ্য ইনজ, দ্য কিনজিগ, দ্য মুরগ, দ্য নেগোল্ড, রেনচ। অন্যান্য বনের মতো এখানেও মানুষ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে একে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে এখানে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। যার ফলে ১০০ একর বনভূমি তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এ ব্ল্যাক ফরেস্ট জার্মানির একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে আসেন। পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য বর্তমানে ব্ল্যাক ফরেস্টকে অপরূপ সুন্দর, আকর্ষণীয় ও শৈল্পিকভাবে সাজানো হয়েছে।

জাপানে আওকিগাহারা

গুমোটবাঁধা নিস্তব্ধতা যেন বনজুড়ে। ঘন গাছপালায় তা যেন আরও জেঁকে বসেছে। পৌঁছাতে পারছে না সূর্যের আলোও। আবছা আলোতে নেই কোনো জনমানব। গা ছমছমে এই পরিবেশ বিরাজ করছে জাপানের আওকিগাহারা বনে। এ বনকে বলা হয় আত্মহত্যার বন। কারণ এটি জাপানের একটি রহস্যময় বন। এ বনে যারা আসেন তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরিই ভিন্ন। পর্যটক বা ভ্রমণকারী নয় বরং আত্মহত্যাকারী হতেই এ বনের পথে পা বাড়ান অসংখ্য মানুষ। আর তাই এমন নামকরণ। আওকিগাহারা বন সম্পর্কে জাপানিদের মধ্যে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। তারা বিশ্বাস করেন, এ বনের মধ্যে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না। এ ধরনের কিছু ভয়ঙ্কর তথ্যই আওকিগাহারাকে করে তুলেছে রহস্যময়। এ বনে ঠিক কত মানুষ আত্মহত্যা করেছে এর কোনো সঠিত সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু সমীক্ষা দাবি করে যে, প্রতি বছর ১০০ জনের মতো লোক এখানে আত্মহত্যা করে। আওকিগহারায় বা সুইসাইড ফরেস্টে ভ্রমণের উপযোগী পরিবেশ নেই। বনের ভিতরের গভীরতা অনেক বেশি। সুবিশাল এ  অঞ্চলে তাই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একবার ঢুকলে বের হওয়ার রাস্তা পাওয়া খুব মুশকিল। অদ্ভুতরকমের মোচড়ানো ও বাঁকানো আকৃতির গাছগুলো যেন বনের রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গাছের শিকড়গুলো জালের মতো আঁকড়ে রেখেছে পুরো বনের মাটি। রয়েছে শত শত গর্ত ও অন্ধকার গুহা।

 

ইথিওপিয়ার ফুসফুস সেকা

দক্ষিণ-পশ্চিম ইথিওপিয়ার সেকা অরণ্য পৃথিবীর অন্যতম একটি অরণ্য। এ বনাঞ্চলকে বলা হয় ইথিওপিয়ার ফুসফুস। প্রায় ২৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ অরণ্য। বহু বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং পশুপাখির আশ্রয় এ ইথিওপিয়ার ফুসফুস। এখানে একটি অঞ্চলকে নির্দিষ্ট করে ‘কোর এরিয়া’ ঘোষণা করে  পুরোপুরি সংরক্ষিত করা হয়েছে। ইথিওপিয়ান সরকার এ বনাঞ্চল রক্ষায় যথেষ্ট তৎপর। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস এখানে। এ মধ্যে রয়েছে মেঞ্জা উপজাতির মানুষ; যারা জঙ্গলে বাস করে আর বাঁদরের মাংস খায়। কিন্তু মেঞ্জাদেরও বন কেটে চাষের জমি করার অধিকার নেই। তাই এরা গাছ পুড়িয়ে কাঠকয়লা তৈরি করে। এখানেও মেল্কা ত্রাণ সংস্থা একটি বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। তারা মেঞ্জাদের ষাঁড় কিনে দেয়। ষাঁড় বড় হলে সেটা বেচে নতুন ষাঁড় কিনে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে তারা। এ বনাঞ্চলের মানুষদের জঙ্গল ঘিরেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। জঙ্গল না বাঁচলে তারাও বাঁচবে না, এ বিষয়টা এখানকার মানুষদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে এক সময় চায়ের চাষ করা হতো। চা বাগান ছিল। এ জন্য অনেকটা জঙ্গল পুড়িয়ে কিংবা কেটে সাফ করা হতো। এখন আর এই চাষের অনুমতি নেই। কিন্তু কফি চাষের ব্যাপারে কিছুটা শিথিল ইথিওপিয়ান সরকার। প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কফি প্ল্যান্টেশন। যার ফলে বনের মাঝখানে একটা আস্ত শহর গজিয়ে উঠেছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর