রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশে দেশে শুদ্ধি অভিযান

বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান দৃষ্টি কেড়েছে দেশবাসীর। অনেকের দৃষ্টিতে দেশে চলছে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান। তবে দৃষ্টি প্রসারিত করে দেশ ও বিদেশের শুদ্ধি অভিযানের তথ্য সংগ্রহ করেছেন - মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি।

 

শুরুর কথা

পৃথিবীর ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে শুদ্ধি অভিযান। প্রাচীনকালে প্রত্যক্ষভাবে দেশ চালাতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে শত্রুর ক্ষেত্রে যুদ্ধ আর নিজেদের ক্ষেত্রে নির্মম বিচারই ছিল শাসকদের একমাত্র বিধান। তবে যুগের প্রয়োজনে নিজ দল বা গোত্রের বিপথগামীদের চিরতরে শেষ না করে কৌশলে ক্ষমতা বা প্রভাব থেকে দূরে রাখার নতুন ধারা প্রণীত হয়, যা শুদ্ধি অভিযান নামে পরিচিতি পেয়েছে। ইসলামসহ সব ধর্মেই একাধিক মতবাদ বা মতানুসারীর সন্ধান মেলে। ভিন্নমতাবলম্বী হলেও নিজ ধর্মের মানুষদের কৌশলে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া অতি প্রাচীনকাল থেকে সব ধর্মেই বিরাজ করছে। অনেক জনপ্রিয় নেতারও বিরুদ্ধাচরণ করে নিজ দলের কেউ কেউ। আবার কোনো রাজনৈতিক মতবাদই সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এই ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া যায় না নিজ দলের লোকদের। আধুনিককালে রাজনীতি কেবল আদর্শের জায়গায় নেই বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয় নেতা-কর্মীদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে, নিজ স্বার্থসিদ্ধির অসংখ্য উদাহরণ। তাই রাষ্ট্র ও দলের প্রয়োজনে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে শুদ্ধি অভিযান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে নানা ধরনের রক্তক্ষয়ী কিংবা রক্তপাতহীন শুদ্ধি অভিযান!

 

চীন ১৯২৭ সাল

শুদ্ধি অভিযানের জন্য বিশ্ব গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। দেশটিতেই কমিউনিজম বা শ্রেণিহীন সমাজ তথা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকবার শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হয়। এমন অভিযানের বেশ কিছু খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও রক্ষণশীলতার কারণে অপ্রকাশিত ছিল অনেক তথ্য।

১৯২৭ সালের ১২ এপ্রিল চীনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘১২ এপ্রিলের শুদ্ধি অভিযান’ শিরোনামে। এ দিন চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সাংহাই শাখার নেতা-কর্মীদের একটি বিরাট অংশের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালায় দলের জাতীয়তাবাদী বা রক্ষণশীল একটি অংশ। এই অভিযানে জেনারেল চিয়াং কাই শেখের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীও নামানো হয় এবং গুয়াংজু ও চাংসাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়। এই শুদ্ধি অভিযানের নেপথ্যে সোভিয়েত রাশিয়ার ইন্ধন এবং ন্যাশনাল রেভ্যুলেশনারি আর্মির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন শ্রমিক নেতা এবং বিপ্লবী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে ১৯২৭ সালে ১২ এপ্রিল শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়। ১৯২৭ সালে শুরু থেকেই দলের ভিতরের জাতীয়তাবাদী বা রক্ষণশীল অংশ সামরিক শাখার সমর্থনে শক্তি সঞ্চয় এবং সাফল্য অর্জন করতে থাকে। এই সাফল্য গুয়াংডং, হুনান, হুবেই, জিয়াংজি এবং ফুজিয়ান অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পর গুয়াংজুতে অবস্থানরত সাংহাইপন্থিরা পরবর্তী লক্ষ্যে পরিণত হয়। ১৯২৭ সালের ৫ এপ্রিল বামপন্থি শ্রমিকদের নেতা ওয়াং জিং উই সাংহাইয়ে আসেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতার কথা বলা হয়। পরবর্তীতে শ্রমিক নেতা ওয়াং জিং উই নিজ এলাকা ওয়াহান ফিরে গেলে রক্ষণশীলদের পক্ষে সামরিক শাখার প্রধান জেনারেল চিয়াং নিজ আদর্শের শ্রমিক নেতা ডু ইউসেংয়ের নেতৃত্বে ‘গ্রিস গ্যাং’ নামের এক পেটুয়া বাহিনী তৈরি করেন। ৯ এপ্রিল ১৯২৭-এ জেনারেল চিয়াং সাইহাই সামরিক শাসন জারি করেন এবং ১১ এপ্রিল গোপনে তার অধীনস্থ সামরিক ও বেসামরিক শাখার সবাইকে কমিউনিস্ট শ্রমিক তথা বামপন্থিদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ দেন। ১২ এপ্রিল সকালে প্রথমে পেটুয়া বাহিনী ‘গ্রিন গ্যাং’ কমিউনিস্টদের অফিস ও বাসস্থানে হামলা চালায়। বামপন্থি কমিউনিস্টরাও এর পাল্টা জবাব দেয়। এর পরপরই জেনারেল চিয়াং তার সামরিক শাখার ২৬ আর্মির বিশাল বহরকে বিদ্রোহী শ্রমিকদের নিরস্ত্র করার আদেশ দেন। ওই দিনই প্রায় তিনশ শ্রমিক মারা যায় বা আহত হয়। এতেও দমেনি বামপন্থি শ্রমিকরা। তারা প্রতিবাদ চালিয়ে যায়। পরদিন ১৩ এপ্রিল সেনাবাহিনীর একটি সদর দফতরের সামনে ছাত্র-জনতাসহ প্রতিবাদ করে। এতে কর্তব্যরত সেনারা গুলি ছুড়লে ১০০ প্রতিবাদী ঘটনাস্থলে মারা যায়। জেনারেল চিয়াং এ সময় সাংহাইয়ের প্রাদেশিক শাসন, শ্রমিক সংগঠন ও অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন এবং সবাইকে ‘গ্রিন গ্যাং’ তথা ডু ইউসেংয়ের নেতৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য করেন। এই শুদ্ধি অভিযানে পাঁচ থেকে দশ হাজার কমিউনিস্টের মৃত্যুর কথা বলা হলেও অন্তত এক হাজার জনকে বন্দী, ৩০০ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং পাঁচ হাজার জন গুম হওয়ার নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চীনের আরও অনেক যুদ্ধ অভিযান হলেও রক্ষণশীল প্রচারনীতির কারণে তা আলোচনায় আসেনি।

 

জার্মানি ১৯৩৪ সাল

পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম শাসক আর নির্দয় যুদ্ধবাজ হিসেবে জার্মানির চ্যান্সেলর (শাসক) অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে কারও তুলনা করা যায় না। তিনি যে নির্মমতার সঙ্গে শাসন চালাতেন, তাতে তার পক্ষে সবাই যে সাফাই গাইবে না, তা তিনি নিজেও জানতেন। তাই তার গুপ্তচর বাহিনীর অন্যতম কাজ ছিল নিজেদের মধ্যে কারা তাকে পছন্দ করে না তাদের খুঁজে বের করা এবং দমন করা। এ ছাড়াও হিটলার প্রতিনিয়ত তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকা হালনাগদ করতেন এবং কোনো ধরনের বাড়াবাড়ির আগেই তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতেন। এমনি এক ঘটনার জন্য জার্মানির বুকে ১৯৩৪ সালের ৩০ জুন, ১ ও ২ জুলাই এই তিন দিন হিটলারের চরমতম নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আছে : যা ইতিহাসে ‘লম্বা ছুরির রাত’ বা ‘অপারেশন হার্মিং বার্ড’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। হিটলার ও তার প্রচারের দায়িত্বে থাকা সর্বকালের সর্বসেরা গুজব রটনাকারী মন্ত্রী জোশেফ গোয়েবেলস এই তিন রাতের হত্যাযজ্ঞকে জার্মানির স্বার্থবিরোধীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান বলে প্রচার করেছিলেন। এই শুদ্ধি অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল হিটলারের এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তার অনুগত ও বিশ্বস্ত আধাসামিরক বাহিনী ‘স্টার ম্যাবটেনলাং’ যার অর্থ ‘ঝড় বাহিনী’র প্রধান আর্নেস্ট রহম ও অন্যদের সমূলে উৎখাত করা। তাই এই অপারেশনের আরেক নাম ‘রহম শুদ্ধি অভিযান’। ক্ষমতায় আরোহণের জন্য হিটলার তার বন্ধু রহম এবং রহমের নিয়ন্ত্রণাধীন পেটুয়া দল ঝড় বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এই বাহিনী হিটলারের যে কোনো জনসভা, মিটিং, মিছিল বা শোডাউনকে সবদিক থেকে নিরাপত্তা দিত এবং সফল করে তুলতে অনন্য ভূমিকা রাখত। অন্যদিকে এই ঝড় বাহিনী প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য যে কোনো দলের যে কোনো কর্মসূচি লন্ডভন্ড করে দিতেও ছিল সিদ্ধহস্ত। পরবর্তীতে হিটলার তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ‘সিকিউরিটি সার্ভিস’ (এসডি), গেস্টাপো নামক গুপ্ত পুলিশ বাহিনী এবং ব্যক্তিগত পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলেন।  ১৯৩৩ সালের ৩০ জুন হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর (সরকারপ্রধান) নিযুক্ত হন। সে সময় তিনি লক্ষ্য করেন তার এক সময়কার ক্ষমতার সিঁড়ি ‘ঝড় বাহিনী’ ক্রমেই তার জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। তাদের উগ্র আচরণ, আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, নিয়মিত পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা, সামরিক বাহিনীর প্রতি অবজ্ঞা প্রভৃতি হিটলারের নজরে আসে। প্রচার মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকায় তা প্রকাশিত না হলেও হিটলার এই অনাচারের উত্তাপ ঠিকই অনুভব করেন। তদুপরি হিটলার লক্ষ্য করেন এমনি এক প্রেক্ষাপটে তারই ভাইস চ্যান্সেলর সেচলেইচার এবং এককালের বন্ধু ও ঝড় বাহিনী প্রধান (তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী) রহম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ সময় রাস্তাঘাটে এবং প্রশাসনে ঝড় বাহিনীর বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাই ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক এক বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ১৯৩৪ সালের ৩০ জুন এক শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। ১৯৩৪ সালের ৩০ জুন ভোর সাড়ে ৪টায় হিটলার তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেন। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান এবং তার আদেশে পূর্ব থেকেই সেখানে সমাবেত ঝড় বাহিনী এবং গুপ্ত পুলিশ বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের উদ্ধত বিশেষত আগের রাতে রাস্তায় সংঘর্ষের জন্য বকাঝকা করেন এবং মিউনিখ পুলিশ প্রধানের শার্টের ব্যাজ বা র‌্যাংক ছিঁড়ে ফেলেন এবং এ দিন বিকালে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করেন। সকাল ৭টার মধ্যে হিটলার ও তার অনুগত দল সন্দেহভাজন রহম ও রহমের সঙ্গীদের হোটেলে হানা দেন। হিটলার নিজেই রহম ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ঝড় বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর নেতাদের গ্রেফতার করেন এবং তার জিম্মায় রাখেন। এ সময় ঝড় বাহিনীর উপ-প্রধান অ্যাডমন্ডকে তার কক্ষে ১৮ বছরের এক যুবকের সঙ্গে পাওয়া যায়, যা হিটলারের প্রচারযন্ত্র ঝড় বাহিনীর নৈতিকস্খলন বলে প্রচার করে। হিটলারের আদেশে অ্যাডমন্ড ও তার সঙ্গীকে তৎক্ষণাৎ হোটেলের বাইরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় হিটলার এবং রহমের সঙ্গে দেখা করতে আসা ঝড় বাহিনীর অন্য নেতাদেরও গ্রেফতার করা হয়। বার্লিনে ফিরে রাত ১০টায় হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবেলস পূর্ব নির্ধারিত কোড ওয়ার্ড ‘কলিব্রি’ প্রেরণ করলে হিটলারের অনুগত বিশেষ সেনাদল জেলে অবস্থারনত ঝড় বাহিনীর পাঁচ জেনারেলসহ অন্যদের হত্যা করে। যারা তখন কোনো কারণে বেঁচে যায়, তাদের সামরিক ব্যারাকে নেওয়া হয় এবং এক মিনিটের বিচারে গুলি করে মারা হয়। হিটলারের দুই এজেন্ট বন্দী ঝড় বাহিনী প্রধান রহমের কাছে একটি ব্রাউনিং পিস্তল ও একটি মাত্র গুলি দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে আত্মহত্যার আদেশ দেন। রহম আত্মহত্যা না করে হিটলারকে আমন্ত্রণ জানান তাকে গুলি করার জন্য। পরবর্তীতে হিটলারের এজেন্টরা রহমের বুকে গুলি করে তাকে হত্যা করেন।

যদিও এই শুদ্ধি অভিযানে ৮৫ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়, তবে প্রকৃত সংখ্যা ৭০০ থেকে ১ হাজারের মতো হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে এক ভাষণে হিটলার দেশদ্রোহীদের শায়েস্তা করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন এবং ভবিষ্যতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

 

কিউবা ১৯৬১ সাল

ল্যাটিন আমেরিকার দেশ কিউবা। ১৯০২ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় কিউবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে ফিদেল কাস্ত্রোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইতিহাসের পাতায় কিউবার ১৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৭ বছর (১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ সাল) এবং ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৩২ বছর (১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল) ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বলে উল্লিখিত আছে। এ ছাড়াও দেশে শীর্ষতম রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার টানা ৪৬ বছরের (১৯৬৫ থেকে ২০১১ সাল) প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। এই দীর্ঘ সময় ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে তিনি বেশ কিছু শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার এত কাছে একটি ছোট্ট দেশে মোটামুটিভাবে চ্যালেঞ্জ করেই টিকে থাকতে হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী ধারার সার্থক প্রয়োগকারী ফিদেল কাস্ত্রো। তাই অসংখ্যবার আপনজনদের ব্যবহার করেই কাস্ত্রোকে হটানোর পরিকল্পনা করা হয়। এমনকি প্রায় ৩৮ বার তিনি নিশ্চিত হত্যার ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পান বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। এসব ঘটনার কারণে বিভিন্ন সময় নিজ পরিবার ও নিজ দলে শুদ্ধি অভিযান চালান ফিদেল কাস্ত্রো। কিন্তু সাম্যবাদের কড়া শাসনে থাকা মিডিয়া তা কখনো তুলে ধরতে পারেনি বিধায় অজানাই রয়ে যায় শুদ্ধি অভিযানের অধিকাংশ খবর। এর মধ্যেও কিছু শুদ্ধি অভিযানের তথ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ এই ছয় বছর কিউবার বিপ্লব ও পাল্টা বিপ্লব ঘটতে থাকে। এর মধ্যে গেরিলা যুদ্ধ চলে ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৬১ সাল নাগাদ কিউবা কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদীদের বলয়ে চলে আসে। এ সময় ফিদেল কাস্ত্রো নিজেকে কার্ল মার্কস এবং লেনিনের অনুসারী রূপে প্রকাশ্য ঘোষণা দেন। তখন থেকেই কাস্ত্রো তার নিজ দল ও নিজ প্রশাসনে এমন ব্যক্তিদের অস্তিত্ব অনুভব করেন, যারা তার ব্যক্তিগত ইমেজ এবং কমিউনিজম বা সাম্যবাদের ইমেজের পক্ষে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২৬ জুলাই কিউবার সফল বিপ্লবের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনটি অঙ্গ সংগঠন বা উপদল ভেঙে একটি শক্তিশালী দল গড়ার ঘোষণা দেন। ভেঙে দেওয়া তিনটি উপদল ছিল ২৬ জুলাই আন্দোলন দল, কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিপ্লবী ছাত্র সংস্থা। এই তিন দল ভেঙে গড়া নতুন দলের নাম হয় ইন্টিগ্রেটেড রেভ্যুলেশনারি অর্গানাইজেশন্স। এই শুদ্ধি অভিযানে তিনি গোঁড়া কমিউনিস্ট এবং তার আস্থাভাজনদের ক্ষমতার পাদপিঠে বসান এবং অন্যদের অত্যন্ত সম্মানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনর্বাসিত করেন। এই শুদ্ধি অভিযানের পর অনেক নেতাকেই আর প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কাস্ত্রোর আস্থাভাজন এ্যানিবেল এস্কালান্তে ক্রমান্বয়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে মিডিয়ার কারণে তার সরকারের ভালো কাজগুলো প্রতিফলিত হচ্ছে না বিবেচনা করেন মিডিয়া জগতেও শুদ্ধি অভিযান চালান। এক পর্যায়ে কিউবা কমিউনিস্ট দলের ২৫ জন শীর্ষ নেতার মধ্যে একজন পুরান কমিউনিস্টসহ মাত্র ছয়জনকে সচিব পদে রেখে বাকি ১৯ জনকে অব্যাহতি দেন। অপর দিকে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে তার একান্ত আস্থাভাজন এ্যানিবেল এস্কালান্তেকেও অব্যাহতি দেন। ক্ষমতার অপব্যবহারই এ্যানিবেলের কাল হয়ে ছিল বলে জানা যায়। প্রথম শুদ্ধি অভিযানের ৪ বছর পর ১৯৬৫ সালে কাস্ত্রো আরও একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে নিজ দলের দুটি সংবাদপত্র ‘হয়’ এবং ‘রেভ্যুলেশন’ এর প্রকাশনা বন্ধ করে নতুন সংবাদপত্র গ্রানমা প্রকাশ করেন। ১৯৬৬ সালে কাস্ত্রোকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকায় ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা রোলান্ডো কিউবেলাকে ২৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তৎকালীন পুলিশপ্রধান এবং সরকারের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উপমন্ত্রী ইফিজিনিও আলমিজেইরাসকে নৈতিক স্খলনের দায়ে পদ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পুলিশপ্রধানের পথে আরও হাঁটতে হয় অভিযুক্ত সব সামরিক ও বেসামরিক কমিউনিস্টদের।

 

তুরস্ক ২০১৪ সাল

২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট তুরস্কের ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক দুই বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তার বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এ দিন রাত ১১টায় তুরস্কের বিমান বাহিনীর কয়েকটি জঙ্গি বিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টার তুরস্কের আঙ্কারার আকাশে উড়তে থাকে। এ সময় শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে নজরদারি শুরু করে বিদ্রোহী সেনারা। তাদের একটি দল রাষ্ট্রীয় বেতার এবং টেলিভিশনে বন্দুকের নলের মাধ্যমে অনুষ্ঠান ঘোষক, উপস্থাপক এবং সংবাদপাঠককে বাধ্য করে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেওয়ার জন্য। এ সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম অচল হয়ে পড়ে। বিদ্রোহী সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বন্দী করে বিদ্রোহের পক্ষে ঘোষণা দেওয়ার চাপ দিলেও তেমন সাফল্য লাভ করতে ব্যর্থ হয়। বিদ্রোহীদের একটি দল এ সময় ক্ষমতাসীন দলের অফিস দখল করে নেয়। অন্যদিকে জঙ্গি বিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোমা নিক্ষেপ করা হয় বিমান বাহিনীর সদর দফতর, পুলিশ সদর দফতর, স্যাটেলাইট সদর দফতর, সংসদ ভবন ও অন্যান্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। এতে প্রথম প্রহরেই ৪২ জন মৃত্যুবরণ করে, ৪৩ জন আহত হয় এবং কয়েকশ নাগরিক বন্দী হয়। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পক্ষে ছিলেন তার দলের সব মন্ত্রী ও নেতারা। তারা প্রথম থেকেই সব ধরনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন এবং স্বল্প সংখ্যক বিদ্রোহী সৈন্যের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি প্রকাশ করতে থাকেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান এ সময় রাজধানীর বাইরে ছুটিতে ছিলেন। মধ্যরাতের পরপরই প্রেসিডেন্টের বাণী এবং সিএনএন টেলিভিশনে প্রেসিডেন্টের সরাসরি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া বাকি সবাই সরকারের অনুগত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। প্রেসিডেন্ট নিজে এবং তার দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা বিদ্রোহীদের আরোপিত সান্ধ্য আইন ভেঙে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। এতে একদিকে জনগণ রাস্তায় নামতে থাকে অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রচারমাধ্যম পুনরায় চালু করে বিদ্রোহের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিমান বাহিনী বিদ্রোহীদের সব বোমারু বিমান ও হেলিকপ্টারের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে আঙ্কারায় ‘নো ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা’ করে। এতে ভীত একদল সেনা হেলিকপ্টার নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রিসে পালিয়ে যায়। তার পরও মরিয়া একদল বিদ্রোহী ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষেপ করে বিমানবন্দর, টেলিভিশন ভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সরকারের অনুগত বাহিনীর তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে বিমানবন্দর সম্পূর্ণ নিরাপদ হওয়ার পর রাজধানী আঙ্কারায় ফেরত আসেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন পুরো পরিস্থিতির। রাত ৪টায় বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি টেলিভিশনের ভাষণ এবং ভোর সাড়ে ৬টায় বিমানবন্দরের খোলা স্থানে জনসভায় ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট। এই ভাষণে রাতের ঘটনার জন্য মার্কিন প্রশাসন এবং তার বিরোধিতাকারী ইসলামী আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেন। ২০ জুলাই ২০১৬  থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট এরদোগান দৃঢ় হাতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। ঘটনার ৫ দিনের মধ্যে (২০ জুলাই ২০১৬) ২ হাজার ৭০০ বিচারক ও ১৫ হাজার শিক্ষকসহ প্রায় ৪৫ হাজার সামরিক কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য, পুলিশ সদস্য এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আটক করা হয়। বন্দী করা হয় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনকে। সেনা ও বিমান বাহিনীর জেনারেল পর্যায়ের ১৬৩ জন তথা ৪৫% উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়। এক মাস পর ৩৮ হাজার বন্দীকে মুক্তি দিলেও তখনো ৩৫ হাজার সন্দেহভাজন আটক আছে বলে জানা যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে তুরস্কের বিচার বিভাগের মন্ত্রী বাকির বোজড্যাগ ৭০ হাজার সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক এবং ৩২ হাজার ষড়যন্ত্রকারীকে বন্দীর কথা স্বীকার করেন। এরপর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া, যা এখনো চলমান। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৭২ জন বিদ্রোহী সেনাকে আজীবন কারাদন্ড দেয় ইস্তাম্বুলের একটি আদালত।

 

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জানুয়ারি ’৭২ থেকে আগস্ট ৭৫ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনাধীন ছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উদারতা এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে একদল স্বার্থান্বেষী রাজনীতি ও প্রশাসনে ঢুকে পড়ে। এর ফলে কালোবাজারি, মজুদদার, সীমান্তে পাচারকারী, অপপ্রচারকারীসহ নানাবিধ দুষ্টক্ষতের সৃষ্টি হয়। একই সময়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তার দলেরই অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে তথ্য পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর কাছে। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশি চক্রান্ত এবং বন্যার কারণে ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম খাদ্যাভাব বা দুর্ভিক্ষ হলে বঙ্গবন্ধু তার দল এবং প্রশাসনকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেন, যা ছিল এক ধরনের শুদ্ধি অভিযান। সাংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) সৃষ্টি করেন যা একই বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারিভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। বাকশালের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন এবং রাজনীতির নীতি নির্ধারকদের একই সুতায় গেঁথে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামগ্রিক উন্নতির পরিকল্পনা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা চালু হলে বহু রাজনৈতিক দল এবং সুবিধাবাদী ভূঁইফোড় সংগঠনসহ অসংখ্য সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো। সম্ভব হতো মিডিয়ার অপপ্রচারও। তবে দুঃখজনকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হলে তার শুদ্ধি অভিযান তথা বাকশাল মুখ থুবড়ে পড়ে।

১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান হলে বহু সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে শুদ্ধি অভিযানের নামে কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো গোপনে হত্যা করা হয়। অনেকেই এ সময় গুম হয়ে যায়, যাদের খোঁজ আজও মিলেনি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ও বিএনপিপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপির পক্ষে প্রেসিডেন্ট হন প্রাক্তন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তার আমলে শুদ্ধি অভিযোনের অংশ হিসেবে বেসামরিক প্রশাসনে নিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মির্জা নূরুল হুদাকে সরিয়ে মোহাম্মদ উল্লাহকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন। তার সময়েই ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে কুখ্যাত আসামি ধরার খবরে নড়েচড়ে বসে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বেসামরিক প্রশাসন। তবে এই শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে না হতেই জেনারেল এরশাদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

১ অক্টোবর ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি ও চারদলীয় জোট ২১৬টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়া শপথ নেন এবং সরকার গঠন করেন। সরকার গঠনের পরপরই তিনি নিজ দলসহ সমগ্র দেশে শুদ্ধি অভিযানের প্রয়োজন অনুভব করেন। এক বছরের মাথায় ১৬ অক্টোবর ২০০২ থেকে ৯ জানুয়ারি ২০০৩ পর্যন্ত ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে এক অভিযান চালায় সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রায় ৪০ হাজার সদস্য। এ সময় খালেদা সরকারের অধীনস্থ গোয়েন্দা সংস্থা বিএনপিসহ বহু দল, সংস্থা এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তির তালিকা তুলে দেয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এই শুদ্ধি অভিযানে ১১ হাজার ২৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর অভিযানকালে ৪০ জন মৃত্যুবরণ করে।

২০০৬-২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজপথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের তথা সেনা সমর্থনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদীন আহমদ এবং একদল প্রাক্তন আমলা ও বুদ্ধিজীবী নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যা ‘১/১১ সরকার’ নামে পরিচিতি পায়। এই সরকার রাজনীতিতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ বহু নেতা-কর্মী বন্দী হন। বহু নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী ও আমলা আদালতে ও তদন্ত সংস্থার কাছে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির তথ্য প্রাদন করেন। ট্রুথ কমিশনের কাছে দায় স্বীকার করেন বহু আমলা ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিনের ক্ষমতার স্বাদ পেতে দলে ‘কাউয়া’ ‘হাইব্রিড’ ‘নব্য আওয়ামী লীগার’ খেতাবপ্রাপ্ত একদল সুযোগ সন্ধানী আশ্রয় নেয়। তাদেরই বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার শুদ্ধি অভিযান জারি রেখেছেন। হয়তো এ অভিযানের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের এক নতুন ইতিহাস লেখা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর