শিরোনাম
রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় মানুষের পাশে মানুষ

তানভীর আহমেদ

করোনায় মানুষের পাশে মানুষ

গান গেয়ে করোনা সচেতনতায় পুলিশ

পাঞ্জাবি গানে করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার কথা শোনান সাব ইন্সপেক্টর পাম্মা। সে ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেন ভারতের চিফ মিনিস্টার অমরিন্দ সিং। একই রকম করোনা সচেতনতায় মিউজিক থেরাপি দিয়ে নজর কেড়েছে কলকাতার পুলিশ। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে কালজয়ী গান প্যারোডি করে করোনা সচেতনতায় হাতিয়ার করেছে তারা। লোকসংগীতের সুরে করোনা প্রচার, লকডাউনে ঘরবন্দী রাখতে হাবড়ায় গান শোনায় পুলিশ। একই উদ্যোগ শুরু হয় ভারতের জেলায় জেলায়। বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সোদপুরের একটি আবাসনের নিচে সুরে সুরে করোনা সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি মানুষজনকে ঘরে থাকার গান শোনান। একই ছবি উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়াতেও। সেখানে বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে পুলিশ কর্তারা গান লোকগান। ভাইরাসের ভয়াবহতা বোঝাতে এক পুলিশকর্মীকে করোনারূপী দানব সাজানো হয়। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গানের মাধ্যমেই মানুষকে ঘরে থাকার বার্তা পৌঁছে দেন সেখানকার পুলিশ।

বাংলাদেশ

করোনা সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশেও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ গান গেয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। গানের তালে তালে নেচে গেয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন পথে-প্রান্তরে ঘুরছেন পুলিশ সদস্যরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে, সচেতন করতে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। করোনাভাইরাসের যে ভয়াবহতা ও এ সময় করণীয় সাধারণ মানুষকে বোঝাতেই পুলিশের এই পন্থা। চট্টগ্রামেও গানে গানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করছে পুলিশ। নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের গাওয়া একটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের কণ্ঠে গান গেয়ে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির নানা পরামর্শ তুলে ধরছেন।

জরুরি সেবাদানকারীদের সন্তানদের রাখছে যত্নে

সারা বিশ^ ঘরবন্দী জীবন কাটালেও জরুরি পরিষেবায় রয়েছেন পুলিশ, সেনা, চিকিৎসক, জরুরি পরিহনকর্মীসহ নানা পেশার মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে। করোনার সঙ্গে লড়ছেন তারা। দশজনের জীবন বাঁচাতে তাদের এই লড়াইয়ে যে যেভাবে পারছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সান ফ্রান্সিসকোর ওয়াইএমসিএ এমনই এক উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ, চিকিৎসক ও জরুরি পরিষেবা দিতে যাদের ঘরের বাইরে কাজে যেতে হচ্ছে তাদের সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি চারটি ক্যাম্প খুলে জরুরি সেবাদানকারীদের সন্তানদের থাকা, খাওয়াসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করছে। ঘরের বাইরে তারা যখন করোনা আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে লড়ছে তখন এটুকু করতে পেরে সান ফ্রান্সিসকোর এই মানবিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ কিছুই নয়। সন্তানকে ঘরে রেখে বাইরে কাজ করতে যাওয়া জরুরি সেবা প্রদানকারীরা বলেছেন, তাদের সন্তানকে নিরাপদে রেখে কাজে যেতে পেরে তারা স্বস্তি পাচ্ছেন। এসব ক্যাম্পে যে সন্তানরা থাকছেন তারা ঘরের পরিবেশেই এখানে থাকছে। খেলাধুলা করা, টিভি দেখা, পুষ্টিকর খাবার, নিরাপত্তা সব পেয়ে তারা বেশ আনন্দেই থাকছে ক্যাম্পে। পুলিশ ও চিকিৎকরা বেশ দীর্ঘসময় করোনা মোকাবিলায় ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে- এ সময়টাতে তাদের সন্তানরা যেন একাকিত্ব ও বিষণ্ন হয়ে না পড়ে তার জন্য বিনোদন আয়োজন রাখা হয়েছে ক্যাম্পগুলোতে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের জন্য গান

ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিতে ঘরবন্দী মানুষেরা প্রতিদিন শুনছেন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। বাইরে মৃত্যুর মিছিল। ঘরে বসে আতঙ্কে কাটছে দিন। অপেক্ষা সুদিনের। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে- মনের কথা বলতে তারা ছুটে আসেন বারান্দায়। ঘর থেকে বেরোতে না পারলেও যারা করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন তাদের সাহস দিচ্ছেন তারা। ইতালি, স্পেনে ঘরবন্দী মানুষেরা যখনই দেখেন চিকিৎসকরা রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন সুরে সুরে ধরছেন গান। সেই গানে তারা শোনাচ্ছেন, আশার কথা। একই দৃশ্য ফ্রান্স, জার্মানিতেও। রাতে যখন ডাক্তাররা ঘরে ফিরছেন সবাই দৌড়ে আসেন বারান্দায়। অনেকে অপেক্ষা করেন কখন বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিরবেন। তাদের দেখলেই গাইছেন গান, মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বেলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাদের বলছেন, তোমরা সত্যিকারের নায়ক। করোনায় আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে আশ^স্ত করতে ইতালি শুরু হয় ‘ফ্লাশ মবস’। ঘরবন্দী মানুষেরা তাদের বারান্দায় এসে নেচে-গেয়ে পাশের মানুষটিকে, প্রতিবেশীকে আশ^স্ত করেছে। তারা বলছে, ‘ভয় পেয়ো না, খুশি থাকো, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বিল মেটাতে গিয়ে অন্যরকম দৃশ্য

কুরিয়ার জার্নালে প্রকাশিত ঘটনাটি পুরো বিশ^কে অবাক করে দেয়। করোনার কারণে শপিং মলে ছুটেছেন সবাই। যে যার সামর্থ্য ও প্রয়োজনমতো বাজার সেরে দাঁড়িয়েছেন লাইনে। বিল কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। একদম শুরুতে দাঁড়িয়েছিলেন এক নারী। তিনি লম্বা তালিকা ধরে অনেক বাজার করেন। বিল মেটানোর পর তিনি নিজেরমতো করে চলে যান। বিল মেটাতে পরের জন এসে দেখলেন সেই মহিলা দশ ডলার তার পরের ক্রেতার জন্য রেখে গেছেন। কথাটি শুনেই পেছনে ফিরে তাকান। ততক্ষণে তিনি চলে গেছেন। করোনায় কার আর্থিক অবস্থা কেমন কারও জানা নেই। যে যেভাবে পারছে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় মহিলাও তার বাজারের বিল মিটিয়ে রেখে গেলেন আরও দশ ডলার। বলে গেলেন পরের ক্রেতার বাজার বিল এখান থেকে কেটে নিতে। একে একে সবাই যার যা সামর্থ্য ছিল সে মতো বাড়তি টাকা বিল কাউন্টারে রেখে আসেন। কাউন্টারে যিনি বিল নিচ্ছিলেন তিনি করোনায় মানুষের এমন মানবিক আচরণে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন।

ইরানের মসজিদে তৈরি হচ্ছে মাস্ক

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর ইরানে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নেয়। এরপরই দেশটি গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে। জুমার নামাজসহ মসজিদে বড় জামাতে নামাজ পড়তে নিরুৎসাহিত করে। সরকারি নির্দেশনায় মসজিদগুলোতে মানুষের ভিড় কমে যায়। শূন্য পড়ে থাকা মসজিদে এখন তৈরি হচ্ছে প্রয়োজনীয় মাস্ক। ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি মসজিদে চলছে করোনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় এই মাস্ক তৈরির কাজ। সেখানে ১৫ জন মহিলাকে সারিবদ্ধভাবে মাস্ক তৈরির সেলাই মেশিনে কাজ করতে দেখা যায়। এই মহিলারা সবাই বাসিজ মিলিশিয়া কর্মী। শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে প্রতি বছর ইরানি নববর্ষে প্রায় ৪০ জনের নারী দল ইরান-ইরাক যুদ্ধের ময়দানে ভ্রমণ করেন। করোনার কারণে এবার সেটি বন্ধ করা হয়েছে। এ সময়টাতে মানবিক কাজে তারা আত্মনিয়োগ করতে চাইছিলেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা মাস্ক তৈরির এই কাজে যোগ দেন। এ জন্য তেহরানের একটি মসজিদে বসানো হয়েছে অস্থায়ী এই সেলাই কারখানা। এখানে তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, পর্দা মেনে কাজ করছেন। বাসিজ মিলিশিয়াদের মতো লম্বা কালো চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে তাদের কাজ করতে দেখা যায়। নামাজের জায়গাগুলোতে একজন থেকে অন্যজনের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে সেখানে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নামাজ ও ইবাদতে মশগুল থাকেন তারা। দেশের জন্য মানুষের কল্যাণের জন্য তারা মাস্ক তৈরি করছেন বলে জানান। ইরানের মসজিদে এমন মানবিক উদ্যোগ দেখে মাস্ক তৈরির জন্য আরও কয়েকটি মসজিদে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

অনলাইনে উন্মুক্ত হয়েছে জাদুঘর লাইব্রেরি, আর্কাইভ

ঘরে বসে বিনামূল্যে বিশে^র দুর্লভ শিল্প দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ফ্রান্সের লুভ, স্মিথসোনিয়ানসহ বেশ কয়েকটি জাদুঘর। নিউইয়র্ক সিনিট মেট্রোপলিটন অপেরাও নিজেদের নানা আয়োজনে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে। অনলাইনে ডিসি পাবলিক লাইব্রেরিতে ঢু মারতে পারবেন। সিডনি অবজারভেটরি দিচ্ছে বিনা খরচায় রাতের আকাশ দেখার সুযোগ। ঘরবন্দী ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আইসিসি ক্রিকেট আর্কাইভ খুলে দিয়েছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা এই আর্কাইভে ১৯৭৫ সাল থেকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

 

ডাক্তার-নার্সদের জন্য তাদের হোটেল ফ্রি

রতন টাটা

করোনা মোকাবিলায় ভারতে সবচেয়ে বেশি অনুদান করছে টাটা গোষ্ঠী। টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য খুলে  দিয়েছেন মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল তাজ হোটেল। যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের রাখা হবে বিলাসবহুল তাজমহল প্যালেসে। এ ছাড়াও তাজ গ্রুপের আরও ছয়টি হোটেল খুলে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য।

শাহরুখ দম্পতি ও সোনু সোদ

জরুরি সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাদের জন্য নিজের হোটেল খুলে দিলেন বলিউড অভিনেতা সোনু সোদ। মুম্বাইয়ের জুহুতে থাকার একটি হোটেল রয়েছে। মুম্বাই প্রশাসন থেকে শুরু করে সব সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বলে এই প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। সোনুর মতে, দেশের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। যারা দিনরাত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন, তারা হয়তো মুম্বাইয়ের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা, দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। তাই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ভালো কোনো জায়গাও পান না। যারা সবার  সেবা করছেন, তাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি।’ এর আগে করোনায় আক্রান্ত মানুষদের  জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়তে নিজেদের চারতলা অফিস দিয়ে দেন শাহরুখ-গৌরী দম্পতি। এই অফিসে বাচ্চা, বয়স্ক এবং মহিলাদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হবে।

গ্যারি নেভিল

চিকিৎসক, নার্সসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য ব্রিটেনের ফুটবলপ্রেমী ও হোটেল মালিক গ্যারি নেভিল তার মালিকানাধীন দুটি  হোটেল উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। শুধু স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা থাকবেন এ দুই হোটেলে। একই সঙ্গে হোটেল দুটির কর্মীদের যাবতীয় দেখভালের দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি।

 

মানুষের সেবা তরুণ তরুণীদের গল্প

হাসপাতালে খাবার নিয়ে ছোটেন রভিন্দার সিং

খালসা এইড নামের একটি দাতব্য, সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সিইও রভিন্দার সিং। করোনায় এগিয়ে এসেছেন তিনি। লন্ডনের হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটছেন খাবার নিয়ে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে চিকিৎসাকর্মীদের জন্য খাবার চাইছেন। যে যতটুকু পারছে খাবার দিচ্ছে। এসব খাবার নিয়ে হাসপাতালের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিজেই গাড়ি চালান, নিজেই খাবার প্যাকেট করেন, নিজেই পৌঁছে দেন। তার মানবিক এই উদ্যোগ দেখে আরও ২৫ জন তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। লন্ডনের বড় বড় হাসপাতালে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালিয়ে সবার চোখের মণি হয়ে উঠেছেন তিনি।

ডিজনির রানী শার্লস ব্রেডেল

১৮ বছর বয়সী তরুণী শার্লস ব্রেডেল বসে নেই করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। বাচ্চাদের পার্টি আইটেম, ড্রেস, খেলনা এসবের দোকান রয়েছে তার। বাচ্চারা খুব পছন্দ করে তাকে। করোনার কারণে সে দোকান বন্ধ। এখন সে ডিজনি ওয়ার্ল্ডের সুন্দরী রানীদের মতো পোশাক পরে ভিডিও বানাচ্ছে। তার ভিডিও মুগ্ধ হয়ে দেখছে বাচ্চারা। ব্রেডেল বলেন, জরুরি পেশাজীবীদের দীর্ঘ সময় করোনা পরিস্থিতির জন্য বাইরের কাজ করতে হচ্ছে। ঘরে তারা সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। তাই এই বাচ্চাদের বিনোদন দিয়ে যতটা সম্ভব সুন্দর সময় কটানোর চেষ্টা থেকেই এই কাজটি করছেন তারা। বাচ্চারা তার পোশাক, অভিনয়, গল্প শুনে ভালো সময় কাটাচ্ছে।

দুই তরুণের ‘অদৃশ্য হাত’

নিউইয়র্কের দুই তরুণ লিয়াম একিন্ড ও সিমোন পলিকিনো। নিম্ন আয়ের মানুষদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে একটি উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের নাম দেন ‘ইনভিজিবল হ্যান্ডস’। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি  স্বেচ্ছাসেবক। এই স্বেচ্ছাসেবক দল খাবারসহ নিত্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছে বয়স্ক ও বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের কাছে।

রেস্টুরেন্টকর্মীদের জন্য বেতন বকশিশ

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশে^র এক নম্বরে রয়েছে তারা। মৃতের তালিকায় দ্বিতীয়। করোনা আতঙ্কে লকডাউনে রয়েছে সব। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকান। কর্মীরা পাচ্ছেন না বেতন। অনিশ্চয়তার দিনগুলোতে হিউস্টনের এক রেস্টুরেন্টে দেখা মিলল মানবিক এক দম্পতি। ঘরবন্দী মানুষের আনাগোনা নেই রেস্টুরেন্টে। হিউস্টনের এক  রেস্টুরেন্টে এক দম্পতি গিয়ে কিছু খাওয়া-দাওয়া করেন। বিল আসে ৯০ ডলার। কিন্তু তারা বিল পরিশোধের পর বকশিশ হিসেবে দেন ৯ হাজার ৪০০ ডলার। ওই বাড়তি অর্থের ওপর রাখা একটি কাগজে লিখে দেন, ‘পরের সপ্তাহগুলোয় কর্মীদের বেতন পরিশোধের জন্য।’ তাদের এই দান যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাদের দেখাদেখি এভাবে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে শুরু করেন। শুধু টেক্সাসে নয়, একই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের বহু শহরে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তার নিয়মিত ক্রেতারা গিয়ে কিছু খেয়ে দিয়ে আসছেন বড় অঙ্কের বকশিশ। খাবারের বিলের বাইরে এই বড় আর্থিক দান রেস্টুরেন্ট কর্মীদের বেতন হিসেবে যেন ব্যবহার হয় সে কথাই জানিয়ে আসছেন তারা।

গৃহহীনদের জন্য হোটেল রুম

লন্ডনের মেয়র সাদেক খান ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ সেখানকার গৃহহীনদের জন্য বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। ঘরছাড়া মানুষগুলো থাকে খোলা আকাশের নিচে। তাদের নেই পুষ্টিকর খাবার, উন্নত চিকিৎসা সেবা। সচেতনতার দিক থেকেও তারা পিছিয়ে। করোনা ছড়িয়েছে গোটা যুক্তরাজ্যে। এই গৃহহীনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য লন্ডনের মেয়র একদম শুরুর দিকেই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১২ সপ্তাহের জন্য এই বিলাসবহুল হোটেলের রুমগুলো বিশেষ ছাড়ে ভাড়া নিয়ে বসেন। করোনা লকডাউনে ঘরছাড়া মানুষগুলো এখানে থাকবেন, খাবেন পুষ্টিকর খাবার।

 

মালয়েশিয়ার রানী পাঠালেন নিজের হাতের রান্না

করোনাযুদ্ধে লড়ছেন চিকিৎসক, নার্স, পুলিশসহ জরুরি সেবা দানকারীরা। এসব কর্মীদের জন্য নিজের রান্না করা খাবার পাঠিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন মালয়েশিয়ার রানী তুনকু আজিজাহ আমিনাহ। মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সব খাবার নিজের হাতে রান্না করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও দুর্যোগ প্রশমন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে রান্না করা বিভিন্ন খাবারের ছবি দিয়ে এটি জানান তিনি। একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘আজকের ডিশ আয়াম গুলাই টেম্পোয়াক (মুরগির মাংস), ফ্রায়েড ক্যাবেজ ও সল্টেড এগ। এগুলো সুনগাই বুলোহ হাসাপাতাল ও ক্রাইসিস প্রিপেরার্ডনেস অ্যান্ড  রেসপন্স  সেন্টারে (সিপিআরসি) পাঠানো হবে।’ তিনি ইনস্টাগ্রামে অনেক ধরনের খাবারের ছবি পোস্ট করেছেন। যেমন : চকেন ডিশ, এগ কারি, স্টায়ার ফ্রাই ইউথ গ্রিন বিনস ও চকলেট চিপ কাপ কেক। একটিতে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘নিজের জীবন উৎসর্গ করে যেসব সরকারি কর্মচারীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্যালুট তাদের।’

সর্বশেষ খবর