সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় অবিশ্বাস্য বেঁচে ফেরার গল্প

তানভীর আহমেদ

করোনায় অবিশ্বাস্য বেঁচে ফেরার গল্প

করোনার সঙ্গে লড়ছে বিশ্ব। করোনা আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা সুস্থ হচ্ছেন দ্রুত। করোনায় মানুষ আশার কথা শুনতে চায়। করোনাকে হারিয়ে ঘরে ফেরাদের আক্রান্ত দিনগুলো কেমন ছিল? শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বেদনার গল্প জানিয়েছেন তারা। চিকিৎসকের পরামর্শ, ওষুধ, জরুরি সেবার পাশাপাশি বেঁচে ফেরার হাতছানি তাদের এই লড়াইয়ে জয়ী করেছে। করোনায় অবিশ্বাস্য সেই বেঁচে ফেরার গল্প বলেছেন তারা।

‘জেনেছি প্রতিটি নিঃশ্বাস অমূল্য’ [রিয়া লাখানি]

লন্ডনে থাকেন ভারতীয় বংশোভূত রিয়া লাখানি। সাত বছর আগে আকালেসিয়া রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এ রোগে শক্ত খাবার গিলতে কষ্ট হয়। সে রোগের অপারেশন করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। হঠাৎ এক দিন তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। তারপর গায়ে জ্বর আসে। অস্ত্রোপচারের সাইড অ্যাফেক্ট ভেবে প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি এবং চিকিৎসকদের কেউই। এদিকে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। একজন চিকিৎসক সন্দেহ করলেন, করোনা টেস্ট করাতে বললেন রিয়াকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রিয়া জানলেন তিনি করোনা পজিটিভ। ডাক্তাররা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন তাকে নিয়ে। সময় যত গড়াতে থাকল রিয়ার শ^াসকষ্ট তত  বাড়তে থাকল। রিয়ার কথায়, ‘নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আজকাল এই কাজটাই মনে করতে হচ্ছে আমাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়ায় যে, শ্বাস নেওয়া পাহাড় চড়ার মতোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।’ হাসপাতালে রিয়ার অবস্থার অবনতি হলে লন্ডনে একটি কভিড-১৯ সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। একটা সময় বেঁচে ফেরার আশাও ছেড়ে দেন। রিয়া বলেন, আর দেখা হবে কিনা, তার জন্য পরিবারের লোকদের জন্য শেষ চিঠি লেখাও শুরু করেছিলাম।’ চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ধীরে ধীরে করোনা থেকে সুস্থ হতে শুরু করেন। করোনাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। সেই অনুভূতি নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার। রিয়া ঘরে ফিরেই বলেন, ‘একটা কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। জীবনে আর কখনো কোনো কিছুকেই বাধাধরা বলে ধরে নেব না।’

‘ঘরে আলাদা থেকেই সুস্থ হয়েছি’ [এলিজাবেথ স্নাইডার]

হোম কোয়ারেন্টাইন করোনা মোকাবিলায় শক্তিশালী অস্ত্র। যতদিন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন বা ওষুধ বাজারে না আসছে ততদিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন মেনে চললে করোনার প্রকোপ কমে আসবে। সেটাই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ স্নাইডার। বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করছেন তিনি। থাকেন সিয়াটলে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের এক দিন। সেদিন অফিসে সামান্য অসুস্থ বোধ করায় বাড়ি ফিরে আসেন। বিশ্রাম নেন। পরদিন জ্বর বাড়তে থাকে তার। যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। তাই জ¦র আসার পরই সবার থেকে আলাদা হয়ে যান। ঠান্ডা জ্বরে ওষুধ খান। কিছুদিন পর পরীক্ষা করে দেখতে পান তিনি করোনা আক্রান্ত। নিজের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইন শুরু করেন। সবার সঙ্গে সব ধরনের মেলামেশা বন্ধ করেন। ঘরবন্দী থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে প্রচুর পানীয় খান। ১০ দিন ঘরে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এলিজাবেথ। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে গল্প প্রচার করেন। তিনি লেখেন, ‘করোনা নিয়ে ভয় পাবেন না। কিন্তু সাবধানে থাকুন। শরীর খারাপ লাগলে, বাড়িতেই থাকুন। মনে রাখবেন, ভিড় জায়গায় যাওয়া মানেই আপনার থেকে অন্যদের শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হওয়া।’ হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে এলিজাবেথ দারুণ এক উদাহরণ তৈরি করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, নতুন জীবনের স্বাদ পাওয়া সম্ভব।

‘বেঁচে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে’ [অশোক কাপুর]

পরিবারের সবাই যখন করোনায় আক্রান্ত তখন জীবন মলিন, ধূসর। ভারতের আগ্রার অশোক কাপুর সেই দুর্ভাগাদের দলে ছিলেন। করোনাভাইরাস তাদের দেহে আসে ইতালি থেকে। তার দুই ছেলে ও জামাতা মিলে গিয়েছিলেন ইতালির জুতা মেলায়। ফিরে আসার পর প্রথম জামাতা কিছুটা অসুস্থবোধ করেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যেতে যেতে জামাতা বললেন, আপনার দুই ছেলেকেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আগ্রার হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ভ্রমণ ইতিহাস জেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতালিফেরত পুরো পরিবারের করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। অশোকের পরিবারের ছয়জনই করোনা আক্রান্ত বলে ধরে পড়ে। তাদের দ্রুত সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের আইসোলেশনে রেখে চলে চিকিৎসা। ফোনে একজন অন্যজনের সঙ্গে কথা বলতেন।

অশোক জানান, ‘আমাদের জন্য হাসপাতালে ৬টি ঘর দেওয়া হয়েছিল। ১৪ দিন সেখানে ছিলাম। ডাক্তার ও নার্সরা যা বলতেন, অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আমার নাতি পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমি বলি, জীবন থাকলে পরে সব করতে পারবে।’ সত্যিই তাই। ধীরে ধীরে সুচিকিৎসায় তারা সুস্থ হতে থাকেন। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে বেঁচে ফেরেন অশোক ও তার পরিবার।

‘জীবনের তুচ্ছ জিনিসগুলো মূল্যবান’ [ক্যারেন ম্যানারিং]

ইংল্যান্ডের কেন্ট শহরে থাকেন ক্যারেন ম্যানারিং। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ক্যারেন মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে প্রচন্ড জ্বর। তারপর কাশি। ছুটে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে ভর্তি করালেন না। বাসায় অপেক্ষা করতে বললেন। এভাবে কাটল ১১ দিন! ততদিনে তার শরীর ভয়াবহ খারাপ। শ্বাসকষ্ট তীব্র। উপায় না পেয়ে জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলেন তিনি। সব শুনে দ্রুত ছুটে এলেন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কয়েক মিনিটে যেন উড়ে এলো অ্যাম্বুলেন্স। তখনই অক্সিজেন দেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান ক্যারেন। হাসপাতালে ভর্তির পর করোনা পরীক্ষা করা হয় তার। রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আইসোলেশনে রেখে তাকে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ সেখানে ছিলেন তিনি। ক্যারেন সেই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, আমার দুটি ফুসফুসেই নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কাউকে আমার কাছে আসতে দেওয়া হতো না। টয়লেটে যাওয়ার শক্তি ছিল না। হাসপাতালের বিছানার চাদর বদলাতে হলে আগে আমাকে উল্টে দিতে হতো। যখন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হতো তখন আমি বেল টিপে নার্সদের ডাকতাম। কিন্তু তারা সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে আসতে পারত না। তাদের আগে নিরাপদ পোশাক পরতে হতো। তারপর তারা আমার কাছে আসতে পারত। এই দুঃসময়ে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। একটু ভালো লাগলেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। তারাই সাহস জোগাত। তার গর্ভে থাকা সন্তানের কথা ভেবে বাঁচার লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারেন। মাত্র সাত দিনেই সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। যেদিন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সেদিনের স্মৃতি বলেছেন এভাবে, ‘হাসপাতালের দরজার বাইরে পা রাখা মাত্রই ঠান্ডা তাজা বাতাস তার মুখে পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল। বাড়ি ফেরার সময় আমার মুখ মাস্ক-ঢাকা ছিল। গাড়ির জানালা সেদিন আমি খুলে রেখেছিলাম। বাতাসের স্পর্শ খুব ভালো লাগছিল। জীবনের তুচ্ছ বিষয়গুলোকেও অনেক মূল্যবান বলে মনে হচ্ছিল।’

‘মাত্র সাত দিনে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছি’ [সেয়ি মাকিন্দে]

করোনাভাইরাসে বেশির ভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠবেন, এমনটাই মনে করেন চিকিৎসকরা। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও অন্যান্য রোগ নেই তারা নিজে থেকেই করোনাভাইরাসকে হারিয়ে দিতে সক্ষম। সেই চিত্র মিলেছে সেয়ি মাকিন্দের বেলায়। সেয়ি মাকিন্দে নাইজেরিয়ার ওয়ো রাজ্যের গভর্নর।

সামান্য দুটি ঘরোয়া উপাদান সকাল-সন্ধ্যা দুবেলা খেয়ে করোনাকে হারিয়েছেন তিনি। সময় লেগেছে মাত্র সাত দিন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরপরই আইসোলেশনে চলে যান তিনি। করোনাকে হারাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে হবে, এই সূত্র ধরেই ওয়ো রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বোর্ডের নির্বাহী সচিব ড. মাইদেন ওলাতুনজি তার হাতে কালিজিরা তুলে দেন। তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে দেন সকাল ও সন্ধ্যা দুবেলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। গভর্নর  সেয়ি মাকিন্দে বলেন, ‘কালিজিরা ও মধু খেয়েছি। আর এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে আর করোনাভাইরাস নির্মূল করে। মাত্র সাত দিনেই আমি এখন সুস্থ অনুভব করছি।’ যদিও বিজ্ঞানসম্মতভাবে এখনো করোনা থেকে বাঁচতে মধু, কালিজিরা খেতে হবে এমন স্বাস্থ্য পরামর্শ কেউ নিশ্চিত করেনি। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খেতে চিকিৎসকরা সব সময়ই উপদেশ দিয়েছেন। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে সেয়ি মাকিন্দে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে আতঙ্কিত হলে চলবে না। চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া যায়।’

‘বয়স কম বলে করোনা হবে না, ধারণাটি ভুল’ [জেসি কার্ক]

ইংল্যান্ডের শেফিল্ড শহরে থাকেন তরুণী জেসি কার্ক। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পাঁচ বছর আগে কঠিন কিডনি রোগে একটি কিডনি ফেলে দিতে হয়েছিল তার। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেটা জীবন সংশয় তৈরি করবে তা জানতেন কার্ক। শুরু দিকে জ¦র, মাথাব্যথা আর শরীর ব্যথায় কাতর ছিলেন তিনি। ডাক্তার দেখাননি তখনো। ঘরেই ছিলেন। এর কয়েক দিন পর শুরু হলো কাশি ও মারাত্মক শ্বাসকষ্ট। জেসি বলেন, ‘আমার বুকের পাঁজর, পিঠ এবং পেটে প্রচন্ড ব্যথা দেখা দিয়েছিল।’ এবার ছুটলেন হাসপাতালে। ডাক্তাররা তাকে দ্রুত আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে ছুটলেন। তিনি বারবার জানতে চাইছিলেন, তার করোনা পরীক্ষা করা হবে কখন? ডাক্তাররা বললেন, ‘আপনার লক্ষণ থেকে স্পষ্ট আপনি করোনা আক্রান্ত। ফুসফুসে প্রদাহের জন্যই আপনার শরীরে ব্যথা হচ্ছে। আপনাকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে এবং পেইনকিলার খেতে হবে।’ দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন তারা। আইসোলেশন ওয়ার্ডের বর্ণনা দিয়ে জেসি কার্ক বলেন, ‘আমাকে একটি সবুজ মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হলো। এরপর আমাকে যে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে শুধু কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। ওয়ার্ডে প্রতিটা বেড ছিল আলাদা। একা একা থাকতে আমার খুব ভয় করত। কিন্তু আমার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমি চাইতাম কেউ আমাকে একটু সাহায্য করুক।’ হাসপাতালে জেসি কার্ককে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয় তিনি বাসাতেই কোয়ারেন্টাইন পালন করবেন ও ওষুধ খাবেন। বাড়িতে আসার পর পাঁচ দিন খুব দুর্বল ছিলেন তিনি। সারা দিন ঘুমাতেন। পাঁচ দিন পর থেকে তিনি সেরে উঠতে শুরু করেন। মৃত্যুভয় কেটে যায় তার। করোনাকে হারিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে জেসি কার্ক বলেছেন, ‘যাদের বয়স কম তারা করোনায় আক্রান্ত হয় না, এ ধারণা ভুল। সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’ নর্দান জেনারেল হাসপাতাল থেকে জরুরি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পর সবার থেকে আলাদা থেকেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, ঘরে থেকেই পুরোপুরি করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন জেসি কার্ক।

‘স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখে থাকাই জীবন’ [ঝাং]

চীনের উহান থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন ঝাং, তার স্বামী ও ছেলে সন্তান। সিঙ্গাপুরে প্রবেশের সময়ই তিনি অসুস্থ ধরা পড়েন। তাদের তিনজনকেই দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঝাংয়ের শরীরে জ¦র ছিল। তাদের পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশন ডিজিস (এনসিআইডি)-তে। সেখানে নেওয়ার পরই শরীর আরও খারাপ হয় ঝাংয়ের। জ¦রের সঙ্গে বাড়ে শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকরা দ্রুত তার নাকে অক্সিজেন টিউব ঢুকিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। ঝাং স্মৃতিচারণ করেন, আমার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছিল না, তাই টিউবটাও সেভাবে কাজে আসছিল না। আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে, শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি মারা যাচ্ছি।’ হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। চিকিৎসক এবং নার্সরা দ্রুত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ডাক্তার ও চিকিৎসকরা পুরোটা সময় তাকে মানসিকভাবে সাহস দিয়ে গেছেন। ঝাং বলেন, ‘একজন ডাক্তার আমার হাত ধরে রেখেছিলেন এবং বলছিলেন, চিন্তা করো না। আমরা একটা টিউবের ব্যবস্থা করছি যা দিয়ে তোমার শ্বাস নিতে সহজ হবে। ওই নারী চিকিৎসক আমাকে লাগাতার ভরসা দিয়ে যাচ্ছিলেন।’ করোনা পরীক্ষায় ঝাং ও তার ছেলের ফলাফল পজিটিভ আসে। তার স্বামীর করোনা হয়নি। হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা চলে মা ও ছেলের। ডাক্তারদের নিরলস প্রচেষ্টা সফল হয়। মা ও ছেলে দুজনেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারা সুস্থ হয়ে ওঠার পর স্বামী-স্ত্রী, সন্তান একসঙ্গেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। চিকিৎসক, নার্সরা তাদের হাসিমুখে বিদায় দেন। ঘরে ফিরে স্বামীর সঙ্গে মা ও ছেলেকে কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। সেটা হাসিমুখেই মেনে নিয়েছেন তারা। করোনাকে হারিয়ে ঝাং বলেছেন, আমি আমার সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে চাই। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাই, কিছু শপিং করতে চাই এবং এক কাপ কফি খেতে চাই। তারপর রাতে আমার স্বামী এবং সন্তানদের জন্য ডিনারের প্রস্তুতি নিচে চাই। আমার মনে হয় সেটাই ভালো হবে।’

‘১০৩ বছর বয়সী বৃদ্ধার করোনা জয়’

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান নগরী। এখানে শুরু করোনাভাইরাসের। আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিল ছিল এই শহরে। আজ সব স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বয়োজ্যেষ্ঠরাই করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন। কিন্তু চীনের উহানে ৯৮ বছর, ১০০ বছর, ১০১ বছর ও ১০৩ বছর বয়সী বৃদ্ধার করোনা জয়ের গল্প সবাইকে বিস্মিত করে। সবার প্রথম যিনি বৃদ্ধ বয়সেও করোনাকে হারিয়ে ছিলেন তার বয়স ছিল ১০০ বছর। এক দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষার পর জানা যায় তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। দ্রুত আইসোলেশনে পাঠিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় তার। তিনি আগে থেকেই অ্যালঝাইমার, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। করোনায় তার  বেঁচে ফেরার আশা কম ছিল চিকিৎসকদের। সংক্রমণরোধী ওষুধ, থেরাপি সব চালাতে থাকেন ডাক্তাররা। দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে করোনা জয়ী প্রথম শতবর্ষী নাগরিক বিশ্ববাসীকে জানালেন, করোনাকে ভয় নয়, বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এরপর ১০১ বছর বয়সী একজন ও ৯৮ বছর বয়সী আরেকজন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ যার কথা জানা যায় তার বয়স ১০৩ বছর। বিশে^ সবচেয়ে বেশি বয়সী করোনা আক্রান্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষ এমন রয়েছেন মাত্র দুজন। চীনের উহানে ১০৩ বছর বয়সী করোনা আক্রান্ত রোগী মাত্র সাত দিনে সুস্থ হয়েছিলেন। ডাক্তাররা তার দ্রুত সুস্থতার কারণ হিসেবে বলেন- করোনা ছাড়া তার শরীরে আর বড় কোনো ধরনের অসুখ ছিল না। তাই তিনি দ্রুত সেরে ওঠেন।

সর্বশেষ খবর