বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় মানুষের পাশে

তানভীর আহমেদ

করোনায় মানুষের পাশে

বিল গেটস দম্পতির বিশাল অনুদান

বিল গেটস বিশ্বের শীর্ষ ধনী। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার কম্পিউটিং জগৎটাই বদলে দেন তিনি। তার বিশাল টাকার পাহাড়ের বড় অংশ ব্যয় করেন মানুষের সেবায়। বিল গেটস মাইক্রোসফট থেকে অবসরে যাওয়ার পর মনোযোগ দেন জনহিতৈষী কাজে। গড়ে তোলেন তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণা দেন বিল গেটস দম্পতি। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এ অর্থ দান করা হয়। পুরো টাকা করোনাভাইরাস শনাক্ত, ভ্যাকসিন গবেষণা এবং চিকিৎসার জন্য খরচ করা হবে। এ অর্থের মধ্যে দুই কোটি ডলার সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চীনা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। অপরদিকে ৬ কোটি ডলার দেওয়া হবে ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং রোগ নির্ণয়ের কাজে। বাকি দুই কোটি ডলার দান করা হবে সাব সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোতে যারা করোনার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তার সাতটি টিকা কারখানা : করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছেন বিল গেটস। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগেই বিপুল সংখ্যায় টিকা তৈরির জন্য সাতটি পৃথক কারখানা স্থাপনের ঘোষণা দেন তিনি। বিল গেটস তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যে সাতটি কারখানা তৈরি করবেন তার মধ্যে আসলে শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে একটি বা দুটি মাত্র কারখানা। তিনি বলেন, টিকা আবিষ্কার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কারখানায় টিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যেতে পারবে, এতে করে বহু মাস সময় বাঁচবে। কারণ প্রতিটি মাস এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাতটি টিকার মধ্যে একটি বা দুটি কার্যকর প্রমাণিত হলে বাকি কারখানাগুলো কোনো কাজেই আসবে না। তবু মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান দিচ্ছেন।

বিল গেটস এখন ৮৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মালিক। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত জনসেবামূলক কাজে দান করেছে ৪১ বিলিয়ন ডলার।

 

দুই হাত খুলে দান করছেন জ্যাক মা

বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন জ্যাক মা। চীনের এ ধনকুবের আলীবাবা ই-কমার্স সাইটের মালিক। করোনায় দুই হাত খুলে অনুদান করছেন সারা বিশ্বে। চীনের উহান শহরে প্রথম তিনি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ফান্ড গঠন করেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে তার কার্গো বিমান উড়ে যাচ্ছে, মাস্ক, চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক, ভেন্টিলেটরসহ নানা অনুদান নিয়ে। তার অনুদানের চিত্র যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

গত জানুয়ারিতে চীনের উহান শহর ও হুবেই প্রদেশে ১ বিলিয়ন ইউয়ান দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তখন মেডিকেল সরঞ্জাম কেনার জন্য এ অর্থ দান করা হয়েছিল। এর কিছু দিন পরেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়তা করতে ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান দান করেন জ্যাক মা। গত ২ মার্চ তিনি ওয়েইবোতে এক পোস্টে জানান যে, জাপানকে ১০ লাখ মাস্ক দেওয়া হয়েছে। ৬ মার্চ ইরানকে ১০ লাখ মাস্ক দেওয়া হয়। ১১ মার্চ ইউরোপে ১ লাখ  টেস্ট কিট ও ১০ লাখ ৮০ হাজার মাস্ক দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ১৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ লাখ ফেস মাস্ক ও ৫ লাখ টেস্ট কিট দেওয়ার কথা জানান জ্যাক মা। গত ২১ মার্চ ইথিওপিয়া এবং রুয়ান্ডা জানায়, তারা জ্যাক মার কাছ থেকে প্রথম ব্যাচে করোনার টেস্ট কিট ও অন্যান্য সরঞ্জাম পেয়েছে। আফ্রিকার ৫৪টি দেশে টিস্ট কিট ও অন্যান্য জিনিস পাঠিয়েছেন জ্যাক মা। চীনা চ্যারিটি সংস্থা ও আলিবাবা ফাউন্ডেশন থেকে ভারতে পাঠানো হয় বিপুল পরিমাণ সুরক্ষিত থাকার পোশাক, মাস্ক, ভেন্টিলেটরস। দিল্লিতে এ ত্রাণ ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটি গ্রহণ করে। ইউরোপে বিতরণের জন্য ২০ লাখ মাস্ক দান করছেন জ্যাক মা। তার অনুদানের প্রথম চালানটি পৌঁছায় বেলজিয়ামে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরীক্ষার কিট স্বল্পতার কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেও করোনাভাইরাস পরীক্ষার ৫ লাখ কিট ও ১০ লাখ মাস্ক দেওয়ার ঘোষণা দেন।  কার্গো বিমান ভাড়া করে ইতালিতে পাঠান পার্টে ৫ লাখ মাস্ক এবং টেস্ট কিটের মতো অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মাস্ক-টেস্ট : করোনায় পুরো বিশ্বে মাস্ক ও টেস্ট কিটের সংকট দেখা দিয়েছে। এমন মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের কর্মকান্ড আরও এগিয়ে নিতে  টেস্ট কিট ও মাস্ক দিয়ে সহায়তার ঘোষণা দেন জ্যাক মা। চীনের সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে এক পোস্টে এ ধনকুবের ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার এবং আলিবাবার পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মাস্ক এবং টেস্ক কিট দান করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১০ কোটি ক্লিনিক্যাল মাস্ক, ১০ লাখ এন-৯৫ মাস্ক এবং ১০ লাখ করোনার টেস্ট কিট দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ১১৯ কোটি টাকা : করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও চিকিৎসার সহায়তা করতে ১১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকারও বেশি অনুদান দিয়েছেন জ্যাক মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জ্যাক মা ফাউন্ডেশন জানায়, ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার দান করা হয়েছে দুটি চীনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে। বাকি অর্থ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত হবে।

 

দেশ ও মানুষের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান।

একই সঙ্গে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রস্তাবে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি ট্রেড সেন্টারকে ২ হাজারের বেশি শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

এর বাইরে মার্চ থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে নিরাপত্তা সরঞ্জাম, আর্থিক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্পগ্রুপটি।

সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরকে এক হাজার পিপিই (পারসোন্যাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট) ও ৫০ হাজার মাস্ক, নৌবাহিনীকে ৫০ হাজার মাস্ক, ৫০০ পিপিই এবং ৭০০ প্যাকেট খাদ্যপণ্য প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগকে ২৫ হাজার মাস্ক, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) ৫০ হাজার মাস্ক ও চার ট্রাক (১৪০০ প্যাকেট) খাদ্যসামগ্রী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) ৫০ হাজার মাস্ক দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

এ ছাড়া লকডাউন পরিস্থিতির মাঝে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোর, বগুড়া, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ মানুষকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

গত ২৯ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডের দুই হাজার পরিবারকে, পরদিন আরও চারটি ওয়ার্ডের এক হাজার ৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।

গ্রুপটির পক্ষ থেকে এপ্রিলের শুরুতেই উত্তরের আট জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে স্যানিটাইজার, চাল, ডাল, আলু, লবণ, তেল, সাবান, আটাসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৫০ হাজার পরিবারের প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিয়েছে গ্রুপটি।

গত ১২ এপ্রিল বসুন্ধরার পক্ষ থেকে মোংলায় সাড়ে তিন হাজার কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। মানিকগঞ্জে তিন হাজার দুস্থ নারীসহ পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার, ঢাকার দুই হাজার সংবাদপত্র হকার, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের তিনটি ইউনিয়নে এক হাজার দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

 

ভারতে শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর বিশাল অনুদান

টাটা গ্রুপের  ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দিচ্ছে ভারতের অন্যতম শিল্পগ্রুপ টাটা সন্স। টাটা গ্রুপ ভারতে প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে এবং ভারতে যাতে দ্রুত উৎপাদন করা যায় সেদিকেও নজর দিয়েছে। টাটা ট্রাস্ট থেকে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য। এছাড়ও জানানো হয়, টাটা ট্রাস্টের দায়বদ্ধতার ৫০০ কোটি টাকা গোটা সমাজের প্রতিটি কোণের আক্রান্তদের জন্য ব্যয় করা হবে। তহবিলে টাকা একদিকে সামনে থেকে লড়াই করা স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও টেস্টিং কিটস, আক্রান্ত রোগীদের মডিউলার মেডিকেল ফ্যাসিলিটির জন্য এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে বাকি টাকা ব্যয় করা হবে।

মুকেশ আম্বানি

মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গোষ্ঠী। ভারতে করোনা ত্রাণের জন্য তৈরি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণের তহবিলে মুকেশ আম্বানির সংস্থা দিয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক মুকেশ আম্বানি মার্চে মুম্বাইয়ের সেভেন হিলস হাসপাতালে ভারতের প্রথম ১০০ শয্যার কভিড-১৯ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা এ হাসপাতাল বানিয়ে ফেলেন। ভারতের শীর্ষ এ ধনী দৈনিক এক লাখ মাস্ক উৎপাদন ও বহু শহরে ফ্রি খাদ্য বিতরণ করছেন। এছাড়া নিজ বাড়ি গুজরাট ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের জন্য ৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার করে দান করেছেন।

আজিম প্রেমজি

সমাজসেবায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করার ঘোষণা দেন ভারতীয় ধনকুবের, উইপ্রো সংস্থার চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি। উইপ্রো সংস্থার ১.৮ থেকে ২.৭ কোটি শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে আনার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। উইপ্রো লিমিটেড, উইপ্রো এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড ও আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা দিচ্ছে। এর মধ্যে শুধু আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনই দিচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকা।

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমাজের সব থেকে পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিসেবা পৌঁছে  দেওয়ার কাজে এ অর্থ সাহায্য দিচ্ছেন আজিম প্রেমজি। আজিম প্রেমজি প্রথম ভারতীয় যিনি বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটের শুরু করা ‘দ্য গিভিং প্রেজ’-এ যোগ দিলেন। এ উদ্যোগে যোগ দিয়ে বিশ্বের ধনকুবেররা প্রতিজ্ঞা করেন তাদের সম্পত্তির ৫০ শতাংশ দান করবেন সমাজের উন্নতির জন্য। 

গৌতম আদানি

ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানি দেশটির ত্রাণ তহবিলে ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া আদানি গ্রুপ এক লাখ ২০ হাজার মাস্ক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। টুইটারে গৌতম আদানি জানান, এ অনুদানের পাশাপাশি করোনাযুদ্ধে সরকার ও নাগরিকদের সহায়তায় অতিরিক্ত সাহায্যও প্রদান করবে আদানি গ্রুপ।

অনিল আগারওয়াল

ভেদান্তা গ্রুপ মোদির তহবিলে ২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও এপ্রিলে এক লাখ মাস্ক ও পরে আরও দুই লাখ মাস্ক সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে।

 

এশিয়ায় অনুদানে এগিয়ে তারাও

ফোর্বস ম্যাগাজিন এশিয়ার ধনকুবেররা কে কত সম্পদ দান করছেন তার একটি বর্ণনা দিয়েছে। নিচে একটি তালিকা তুলে ধরা হলো-

চাং মং-কো : দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা হুন্দাই মোটর মালিক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনসহ ১১ শহরে ১১টি শিশু হাসপাতালে কভিড-১৯ টেস্ট সেন্টার নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ২২ লাখ ডলার দান করেছেন।

 

হুই কা ইয়ান : চীনা আবাসন ব্যবসায়ী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের গ্যাংঝু ইনস্টিটিউট অব রেসপাইরেটরি হেলথকে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণায় সাড়ে ১১ কোটি ডলার দান করেছেন।

 

জে লি : স্যামসাং গ্রুপের মালিক বৈশ্বিক ত্রাণ হিসেবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার দান করেছেন। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ জার্সি ও টেক্সাসের জন্য ৪০ লাখ ডলার দান করেছেন।

 

আবোইতিজ পরিবার : ফিলিপাইনের আবোইতিজ গ্রুপ মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ এন-৯৫ মাস্ক, ১৫ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষায় অন্যান্য সরঞ্জাম দান করেছে। ওই গ্রুপের চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের সদস্যরা গ্লাভস, থার্মোমিটার, সুরক্ষা চশমা ও তাঁবু দান করেছেন।

 

ধানিন ছিয়ারাভানন্ট : ব্যাংককভিত্তিক থাই ধনকুবের এপ্রিলের মধ্যে ২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ লাখ ডলার ব্যয়ে ব্যাংককে কারখানা নির্মাণ, যেখান থেকে দৈনিক এক লাখ মাস্ক ফ্রি বিতরণ করা হবে। থাইল্যান্ডজুড়ে তার কোম্পানি ৪০টিরও বেশি হাসপাতালের রোগী, ডাক্তার ও নার্সদের বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছে।

 

যোগী হেন্দ্রা আতমাদজি : ইন্দোনেশিয়ার এ ধনকুবের তার ফুড গ্রুপ মায়োরা ১০ লাখ মাস্ক, ১০ লাখ পানির বোতল ও ১০ লাখ বিস্কুটের প্যাকেট দানের প্রতিশ্রুত দিয়েছে।

 

অ্যাডরিয়ান চেং : হংকংয়ের মোঘুল হেনরি চেংয়ের পুত্র নিউ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্টের মালিক এক কোটি মাস্ক বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন। তার  কোম্পানি নতুন ভাইরাস প্রতিরোধী মাস্ক তৈরিতে ১৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ, কভিড-১৯ মোকাবিলায় হংকংকে ১৩ লাখ ডলার এবং চীনকে ৭০ লাখ ডলার দান করেছে।

 

চেং ওয়েই : চীনের বৃহত্তম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ দিদির ১ হাজার ৩৩৬ চালক উহানে ডাক্তার-নার্সদের ফ্রি পরিবহন সেবা দিচ্ছেন।

 

দুই কনসার্টে ১২৭ মিলিয়ন ডলার

ভার্চুয়াল কনসার্ট আয়োজন করে মার্কিন গায়িকা লেডি গাগা ১২৭ মিলিয়ন ডলার জোগার করেছেন। এই পুরো টাকা দান করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে। করোনা সংকটে বিশ্বের শীর্ষ শিল্পীদের গান নিয়ে ভার্চুয়াল এ কনসার্ট ঘরে বসেই পরিচালনা করেন লেডি গাগা। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকারা যোগ দেন। প্রথম কনসার্ট থেকে ওঠে আসে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। অস্কার বিজয়ী লেডি গাগা নিজ উদ্যোগে আয়োজন করেছিলেন সাত দিনের ভার্চুয়াল উৎসব। এ উৎসব থেকে উপার্জন হয়েছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এসময় তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থসহায়তার আহ্বান জানান। এরপরের আরেকটি ভার্চুয়াল কনসার্টে তার সঙ্গে যোগ দেন বিলি এলিশ, লিজো, এলটন জন, ক্রিস মার্টিন, পল ম্যাককার্টনি এবং স্টিভ ওয়ান্ডারসহ কয়েক ডজন তারকা। দুই ভার্চুয়াল মিলিয়ে তিনি জোগার করেন ১২৭ মিলিয়ন ডলার।

 

২ কোটি ডলার দিচ্ছে ফেসবুক

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি মার্কিন ডলার দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এছাড়া  ফেসবুকের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে একত্রে কভিড-১৯ সলিডারিটি রেসপন্স ফান্ড চালু করা হয়েছে। এ তহবিলে যে কেউ দান করতে পারবে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এক পেস্টে বলেছেন, ফেসবুকের দান করা ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সঙ্গে তহবিলে দান হিসেবে আসা সম্পূর্ণ অর্থ বিশ্বজুড়ে সরাসরি করোনা মোকাবিলা, শনাক্ত ও প্রতিরোধের কাজে ব্যয় হবে। ফেসবুকের বাকি ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যাবে সিডিসি ফাউন্ডেশনে। বেসরকারি এ সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে তহবিল সংগ্রহের কাজ করছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের বার্ষিক মুনাফার কিছু অংশ করোনাভাইরাস মোকাবিলার কাজে ব্যয়ের কথাও জানায়।

 

গুগলের অনুদান ৬ হাজার কোটি টাকা

করোনায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গুগল। এর বেশিরভাগ অংশ গুগল বিনামূল্যে করোনা সতর্কবার্তামূলক বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যয় করতে চায়। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে গুগল তুলে দিয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া করোনায় ত্রাণ তহবিল ও ছোট ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ২ মিলিয়ন অনুদান দেবে গুগল। গুগলের প্রধান নির্বাহী জানান তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাপী সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তথ্য সরবরাহের জন্য এ অনুদান দেবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা ও শিল্পের জন্য ৩৪০ মিলিয়ন দান করা হবে। করোনাভাইরাস নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের জন্য ২০ মিলিয়ন অনুদান দেবে গুগল। যুক্তরাষ্ট্রের সব হাসপাতালে উন্নতমানের মাস্ক বিতরণেও কাজ করছে তারা। ইতিমধ্যে গুগল মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহকারী সংস্থাকে দুই থেকে তিন মিলিয়ন মাস্ক ও গ্লাভস উৎপাদন করার অর্ডার দিয়েছে।

 

অ্যামাজনের ১০০ মিলিয়ন ডলারের খাবার

অনলাইন বাজার অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস। তার অ্যামাজন ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে আমেরিকাকে। করোনা মহামারীতে গরিব ও অসহায় আমেরিকান অধিবাসীদের খাদ্য সহায়তায় এ অনুদান ব্যয় হবে। বেজোস ইনস্টাগ্রামের এক পোস্টে বলেছেন, আমরা মার্কিন এ খাদ্য ব্যাংকগুলোকে সমর্থন করছি এবং আমেরিকাকে খাদ্য সহায়তায় ১০০ মিলিয়ন ডলার উপহার করতে চাই।

এ মহামারীর সময় ফিডিং আমেরিকা সংস্থাটি দেশজুড়ে অসহায়দের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। অ্যামাজানের এ বৃহত্তম একক উপহার এ সংকটে বড় ভূমিকা রাখবে।

 

টিকটকের ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় টিকটক। জনপ্রিয় এ ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষা ও সামাজিক কাজে এই অনুদান ব্যবহার করবে। টিকটক জানিয়েছে শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যের জন্য ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ অনুদান পৌঁছে যাবে। টিকটক এরই মধ্যে ভারতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ১০০ কোটি রুপি অনুদান দিয়েছে। শুধু দিল্লি এবং মহারাষ্ট্র সরকারের হাতেই ২ লাখ মাস্ক, ৪ লাখ পিপিই তুলে  দিয়েছে টিকটক। করোনাযুদ্ধে ভারত সরকারকে যে কোনো ধরনের সাহায্য করতে তারা প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ সংস্থা টিকটক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর