চীন
চীনের উহান শহর বিশ্বজুড়ে ভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্র। গত বছর উহানকে এই রোগ সংক্রমণের কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরপর লকডাউন ঘোষণা করে চীনের সরকার। কিন্তু ততক্ষণে চীনের কয়েকটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে কভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস। দেশটিতে প্রতিদিনই সংক্রমণে নতুন নতুন রেকর্ড আর মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হতে থাকে। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় লকডাউন (অবরুদ্ধ) অবস্থায় থাকার পর উহান শহরে সংক্রমণ কমতে থাকে। এরপরই চীনের প্রায় সব শহর থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে সচল হতে থাকে চীন। তবে দেশটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। সুইফেনহে শহরসহ চীনের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। সম্প্রতি চীনের শুলান শহরে লকডাউন ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে সুখবর হচ্ছে দেশটিতে প্রায় এক মাসের মতো সময়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা নেই। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সব।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল করোনাভাইরাস। সম্প্রতি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায়ও লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া মন্টানা ও নেভাদা অঙ্গরাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবং দেশটির ২৯টি অঙ্গরাজ্যে লকডাউন শিথিল করছে প্রশাসন। ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বলেন, ‘ইতিমধ্যে খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ধীরে ধীরে সেলুন, জিম এবং রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’ এর মধ্যেই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য মন্টানা অঙ্গরাজ্যে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। সাত সপ্তাহ পর থেকে কম প্রয়োজনীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নেভাদা অঙ্গরাজ্য।
যুক্তরাজ্য
ইংল্যান্ডে টানা সাত সপ্তাহ ধরে চলা লকডাউন (অবরুদ্ধ অবস্থা) শিথিল করেছে দেশটির সরকার। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকায় দেশটিতে নতুন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে। যুক্তরাজ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা তথা রিপ্রডাকশন রেট। দেশটির মহামারী সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, মহামারীর প্রসারণ সংকুচিত হতে শুরু করেছে এবং তা ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এরপরই দেশটির সরকার লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেক্ষেত্রে বরিস জনসনের সরকার লকডাউন শিথিলের রোডম্যাপ ঘোষণার সময় জনগণকে এখন থেকে ঘরের মধ্যে থাকার বদলে চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। লকডাউন শিথিল করার পর থেকে লোকজন ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করেছে। তবে সর্বোচ্চ ছয়জন ব্যক্তিগত বাগানগুলোতে পরস্পরের থেকে ২ মিটার দূরত্বের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। শরীরচর্চার জন্য দিনে একবারের বদলে যতবার খুশি বাইরে যাওয়া যাবে এবং গাড়ি চালিয়ে যতদূর খুশি যাওয়া যাবে।
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বা আনুপাতিক হার কমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, নিউজিল্যান্ড এখনকার মতো ‘এ যুদ্ধে জিতেছে’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নিউজিল্যান্ডে সামাজিক মেলামেশায় নেওয়া কঠোরতম বিধিনিষেধ শিথিল করছে দেশটির সরকার। সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী সুস্থ হওয়ায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্কুল, রেস্তোরাঁসহ সুপারশপ এবং স্টোরগুলো আবারও চালু হয়েছে। বেশিরভাগ অফিস সচল হয়েছে। কর্মীরা আবারও অফিসে কাজ করতে শুরু করেছে। নিউল্যান্ডের ক্রীড়াগুলো পুনরায় আরম্ভ করার অনুমতি দেওয়া হবে। লাইব্রেরি, জাদুঘর ও জিমগুলো আবার খুলতে পারবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করছি, কিন্তু মানুষের সামাজিক জীবন এখনই আবার চালু করা হচ্ছে না।’
অস্ট্রিয়া
করোনাভাইরাস তথা কভিড-১৯-এর প্রকোপ কমে যাওয়া লকডাউন শিথিল করেছে দেশটির সরকার। গত মাসের শুরু থেকে অস্ট্রিয়ার জনসাধারণকে ঘর থেকে বের হতে স্বাধীনতা দিয়েছে সরকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রিয়াও কঠোর আইন বা লকডাউন শিথিল করেছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে। গণপরিবহন এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির সরকার। দোকানপাট খুলেছে, তবে সেক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়। এ ছাড়া চিড়িয়াখানা, ধর্মীয় উপাশনালয় এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও খুলে দেওয়া হয়। দেশের সব হোটেল এবং পর্যটন সেবা কেন্দ্রগুলো তাদের স্বাভাবিক পর্যটনসেবা দিতে পারবে। যে কোনো অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে ১০ জনের বেশি মানুষ থাকতে পারবে না। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৩০ জন উপস্থিত থাকতে পারবে। উল্লেখ্য, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রিয়ার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতির দিকে। নতুন আক্রান্ত থেকে সুস্থতার সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে অস্ট্রিয়ার সরকার শর্ত সাপেক্ষে লকডাউন তুলে নিয়েছে।
জার্মানি
দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অবর্ণনীয় ক্ষতি হচ্ছে। অবরুদ্ধ অবস্থার কারণে পারিবারিক ও মানসিক জটিলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক জায়গায় লকডাউনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও শুরু হয়েছে। যা সামনে হয়তো আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে এসবের মাঝেই প্রায় চার সপ্তাহ পর জার্মান সরকার লকডাউন তুলে নিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার শর্ত সাপেক্ষে লকডাউন শিথিল করেছে। জার্মানি ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে পুনরায় চালু হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। যদিও এর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মে মাসের শুরুতে গির্জা, হেয়ারড্রেসার, খেলার মাঠ এবং স্কুলগুলো খুলতে শুরু করে। তবে দ্য গার্ডিয়ানের মতে, এখন থেকে দেশটির পরিবারের লোকেরা অন্য পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। জার্মানির জনপ্রিয় বুন্দেসলিগা পেশাদার ফুটবল লিগ গেল ১৬ মে থেকে শুরু হয়। অন্যদিকে বইয়ের দোকান, গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেরামতের সব দোকান খোলা হয়েছে। বেশকিছু অঞ্চলে চিড়িয়াখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে।
ভারত
ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার পরে একরকম ধাক্কা খেলেও দেশটির সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ওঠে। তবে দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে ভারতের সরকার বেশ কয়েকটি স্থানে কঠোরতা শিথিল করছে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবাসিক এলাকার ছোট ছোট দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে মল ও সুপারমার্কেটগুলো বন্ধ থাকবে। যেসব দোকানপাট খোলা যাবে, সেখানে আগের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী থাকতে পারবে না। কর্মীদের অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে; মানতে হবে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনাও। এ ছাড়া সংক্রমণের হটস্পট বলে বিবেচিত এলাকাগুলো থাকবে নতুন এই নির্দেশের বাইরে। মদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন বেশির ভাগ জিনিসের বিক্রি আগের মতোই বন্ধ থাকবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো আবার শুরু হচ্ছে। এ ছাড়াও কয়েক সপ্তাহের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করেছে দেশটির সরকার। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক, এটিএম, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি এবং সরকারি অফিস খোলা থাকবে। এ ছাড়া দেশটির সরকার জানায় স্ব স্ব-কর্মসংস্থান যেমন- কল-কারখানা, শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রিরা তাদের নিজ নিজ কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবে।
ইরান
ইরানে লকডাউন ঘোষণার সাত দিন পরই লকডাউন তুলে নেয় দেশটির সরকার। যেসব এলাকা করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় মসজিদ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে দেশটির অধিকাংশ সরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে কর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ। বাকিদের ‘ওয়ার্ক এট হোম’ বা বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয় ইরান সরকার। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, দেশের প্রশাসনিক বিভাগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১৩২টি এলাকায় মসজিদ পুনরায় খুলে দেওয়া হবে। তবে দল বেঁধে প্রার্থনা করার চেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘ইসলাম সুরক্ষা বাধ্যতামূলক বলে বিবেচনা করে।’ এ ছাড়া শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। দেশে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও লকডাইনে নারাজ ইরান সরকার।
ইতালি
সংক্রমণ আর মৃত্যু এড়াতে লকডাউন ঘোষণা করে ইতালির সরকার। কেবল জরুরি নিত্যপণ্য কেনা ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এতে অর্থনীতি স্থবির হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি কাটাতেই এখন লকডাউন শিথিলের কথা ভাবছে সরকার। যার ফলস্বরূপ, টানা পাঁচ সপ্তাহ পর ইতালি নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করতে শুরু করেছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইতালির বার এবং রেস্তোরাঁগুলো মে মাসের শুরুতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। দেশটির বিল্ডিং সাইট এবং কারখানাগুলোও খোলা হয়েছে এবং আরও অনেক স্টোরের পাশাপাশি জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারগুলোও মে মাসেই পুরোপুরি চালু হয়। বিবিসির সংবাদ থেকে জানা যায়, জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশটির সেলুনগুলো খুলে দেওয়া হতে পারে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ জুন থেকে আবার শুরু হতে পারে। ইতালির অর্থনীতির জনপ্রিয় দৈনিক সোলে-৪৪ এ একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় দেশের প্রায় ১৫০ জন শিক্ষাবিদের মতামত। সেখানে তারা বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত ক্ষতি এড়াতে দ্রুত লকডাউন তুলে দেওয়া উচিত।’
স্পেন
করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মিছিল দেখেছে ইউরোপের দেশ স্পেন। সম্প্রতি দেশটির মহামারী সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় লকডাউন শিথিল করেছে স্পেন সরকার। খুলে দেওয়া হয় রাস্তাঘাট, কারখানাগুলো। উৎপাদন, নির্মাণসহ কয়েকটি সেবা খাতের সঙ্গে জড়িতদের কাজে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বার্সেলোনা এবং মাদ্রিদ সৈকতসহ পুনরায় প্রায় অনেক পর্যটন এলাকা খোলা শুরু করেছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে বিদেশি পর্যটন আবার শুরু হতে পারে এবং লা লিগা ফুটবল খেলা শুরু করবে আগামী ৮ জুন থেকে। দোকানপাট, বার, রেস্তোরাঁসহ কম প্রয়োজনীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খোলা হয়েছে। কৃষি সংকট মোকাবিলায়, নতুন ফসল তোলা এবং নতুন ফসল বোনার জন্য কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে কাজের নিশ্চয়তা দিচ্ছে স্পেন সরকার।
তুরস্ক
তুর্কি সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা পয়লা জুন থেকে কাজ শুরু করেছেন। একই সময় দেশের রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, সমুদ্র সৈকত, ডে-কেয়ার সেন্টার এবং পার্কগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তুরস্ক সরকার সীমিত পরিসরে লকডাউন শিথিল করেছে। এর আওতায় মুসল্লিরা দুই মাস পর শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন। তবে অবশ্যই সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি খুব কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। এ ছাড়া মুসল্লিদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। লকডাউন শিথিল করলেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, ‘লকডাউন শিথিল হলেও কিছু কিছু বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। এর মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের চলাচলের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে।
বাহরাইন
রমজানের শুরুতে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে বাহরাইন সরকার। তবে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এর আগে এপ্রিল মাসে শপিং মল ও কিছু দোকানপাট পুনরায় চালু করা হয়। আরব আমিরাত আবুধাবিতে শপিং মল পুনরায় খুললেও গ্রাহকসংখ্যা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা মাত্র ৩০ শতাংশ গ্রাহকসক্ষমতা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা রেখে। নিয়মিত শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষাও চলছে। এ ছাড়াও শারজায় মল, সেলুনসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার চালু হতে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে নির্দেশনা দেয় বাহরাইন সরকার। তবে খাবার ও ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টায় খোলা রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের অবশ্যই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
ইসরায়েল
করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখতে ইসরায়েলের লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন দেবে সরকার। তবে পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে আবার কড়াকড়িভাবে লকডাউন আরোপ করা হবে। সাত সপ্তাহ পর আংশিকভাবে স্কুল খুলেছে ইসরায়েলে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৮০ শতাংশ স্কুল খুলে গেছে। তবে আরব এলাকার স্কুলগুলোও খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি দোকানপাট এবং শপিংমলগুলোও খোলার অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। জিম এবং খেলাও চালু হয়েছে মে মাসে।
লকডাউন ছিলই না সুইডেনে!
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ অবরুদ্ধ ছিল লকডাউনে। কিন্তু হালের বিপরীতে হেঁটেছিল বিশ্বের অন্যতম সুখের দেশ সুইডেন। করোনাভাইরাসের এমন সময়েও সুইডেনে অধিকাংশ নাগরিকই অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারছেন। সুইডেনের এই কৌশল অবলম্বন করার পেছনে দেশটির নাগরিকদের সমর্থন ছিল। দেশটির বিজ্ঞানীরা এই কৌশলের প্রবর্তক এবং সরকার এটিকে সমর্থন করেছে। এখানে নেই কোনো লকডাউন। সবাই প্রায় স্বাভাবিক দিন পার করছে। সুইডেনের বিভিন্ন পানশালার ভিড় আর আইসক্রিমের দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে বেশ আলোচিত।
কীভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে দেশটি, তা নিয়ে কৌতূহল থাকতেই পারে। লকডাউন ছাড়া জনগণ স্বেচ্ছায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলছে। যদিও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুইডেনের উন্মুক্ত এই পদ্ধতি অনেকে সমালোচিত হয়। এমনকি অনেকে ভাইরাস মোকাবিলায় দেশটি বিপজ্জনক কৌশল বেছে নিয়েছে বলেও শঙ্কাও প্রকাশ করে।
তবে ভবিষ্যতে দেশটির এই সফল পদ্ধতি মহামারী মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুকরণীয় মডেল (দৃষ্টান্ত) হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে দেশটির সরকার শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণেই এই পদ্ধতিতে করোনা মোকাবিলার পথে হাঁটছে বলে জানায়।
দেশটির গণপরিবহন ব্যবহারের হার যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে, জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ঘরে থেকে কাজ করছেন এবং অধিকাংশই ইস্টারের ছুটিতে কোথাও ভ্রমণ করেননি। সুইডেনের সরকার ৫০ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হওয়া এবং বৃদ্ধনিবাসে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০ জন সুইডিশের ৯ জনই দিনের অন্তত কিছু সময় অন্য ব্যক্তির চেয়ে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখেন।
সুইডেনের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সুইডেনের মানুষ যেরকম মনোভাব দেখিয়েছে তা উদযাপনযোগ্য। রাষ্ট্রীয় মহামারী বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেস টেগনেল বলেন, ‘আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তার অনেকটাই পেরেছি। সুইডেনের স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও যথেষ্ট চাপের মধ্যে তাদের কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের এখনো কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়নি।’ সুইডিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ‘প্রতিরোধের চেয়ে শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থার মাধ্যমেই কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। যদিও ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সুইডেনে করোনায় গড় মৃত্যু বেশি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৯৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ হাজার ৯৭১ জন।