স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু রাগবি
জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে রাগবি অন্যতম। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, এই খেলা শুরু হয় ২০০০ বছর আগে চীন ও গ্রিক অঞ্চলে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ শতাধিক দেশের ক্রীড়াপ্রেমী জনগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু শুরুতে রাগবি কোনো স্বীকৃত খেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৮২৩ সালে ব্রিটেনে রাগবি প্রথম একটি খেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পেছনে রয়েছে এক স্কুলছাত্র উইলিয়াম ওয়িব এলিসের অবদান। সে রাগবি খেলার প্রচলন করে বলে ধারণা পাওয়া যায়। রাগবি খেলার নিয়ম-কানুন লিখিত আকারে প্রকাশ পায় ১৮৪৫ সালে এবং ১৯৭১ সালে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠিত হয়। ডিম্বাকৃতির বল যা ফুটবলের মতো বলটিকে রাগবি নামেই অভিহিত করা হয়। দুটি দলের মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক পয়েন্ট অর্জনের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
ইনডোর চিন্তা থেকে বাস্কেটবল
বাস্কেটবল একটি ইনডোর গেম। খেলাটি বদ্ধ স্থানে হয়ে থাকে। এটি খেলা হিসেবে জন্ম হওয়ার একটি অদ্ভুত গল্প রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিং ফিল্ড, ম্যাসাচুসেটস ট্রেনিং স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৮৯১ সালে তৎকালীন ক্রীড়া শিক্ষক ড. জেমস নাইজ স্মিথকে নির্দেশ প্রদান করে ফুটবলের মতো একটি ইনডোর খেলার উদ্ভাবন করতে। ড. নাইজ স্মিথ বাস্কেটবল খেলার উদ্ভব করেন। বাস্কেটবল খেলার প্রধান উপকরণ হিসেবে বলকেও বাস্কেটবল নামে আখ্যায়িত করা হয়। এটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে খুবই জনপ্রিয় খেলা। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বাস্কেটবল বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। খেলাটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের অন্যতম ক্রীড়া হিসেবে বিবেচিত। প্রমীলা বাস্কেটবলও সমান জনপ্রিয়। তবে পুরুষের তুলনায় কম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে প্রমীলা বাস্কেটবল।
২০০০ বছর আগে প্রচলন বেসবলের
বেসবল বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। এটি অনেকটা ক্রিকেটের মতো বল ও ব্যাটের সমন্বয়ে খেলা। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় ২০০০ বছর আগে প্রাচীন মিসরে ব্যাট ও বল দিয়ে এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সতেরো শতকের দিকে বেসবল ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একই সময় ইংল্যান্ডে প্রায় একই ধরনের খেলা ক্রিকেটের প্রচলন ছিল। ১৭৯১ সালে অফিশিয়ালভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পুরনো কোর্ট হাউসে বেসবল নাম ব্যবহারকৃত নথি পাওয়া যায়। সেখানে জনসাধারণকে নতুন হল ভবন এলাকায় ক্রিকেট ও বেসবল খেলতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেখান থেকেও এই খেলা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর আমেরিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে বেসবল জনপ্রিয়। পুরনো ব্যাট-বলের খেলা থেকে বিবর্তিত হয়েই আধুনিক বেসবলের সূত্রপাত ঘটে। যা ইংল্যান্ডে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে খেলা হতো। অভিবাসীরা উত্তর আমেরিকায় খেলাটির প্রচলন ঘটায় এবং সেখানেই এর আধুনিক সংস্করণ সৃষ্টি হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় খেলা হিসেবে পরিচিতি পায়।
চার হাজার বছর আগে থেকে হকি
৪০০০ বছর আগে মিসরে হকি সাদৃশ্য এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। বর্তমানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক হকি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে বিশৃঙ্খলভাবে প্রচুর হকি খেলা হতো। সে সময় একেকটি দলে ১০০ জন করে খেলোয়াড় অংশ নিত। গ্রামবাসী খেলাটিকে প্রচ- পৌরুষ ও গর্বের বলে মনে করত। ফলে খেলাটি সে সময় মূলত ভয়ঙ্কর এক রূপ নিয়েছিল। ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলত এ খেলা এবং অনেক খেলোয়াড়কে গুরুতর আহত হতে হতো। একজন রেফারি থাকলেও তার বিশেষ কোনো ক্ষমতা ছিল না। মূলত এর কিছুকাল পর থেকেই খেলাটিতে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন যুক্ত হতে থাকে। ১০০ জনের বদলে খেলোয়াড় সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০-এ। খেলার মান বাড়ানোর জন্য রেফারির হাতে দেওয়া হয় বিশেষ ক্ষমতা। খেলাটিকে সভ্য করে তোলার জন্য ইংল্যান্ডের এটন কলেজ এতে যুক্ত করে বিশেষ কিছু রীতি। ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দ্য হকি অ্যাসোসিয়েশন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অলিম্পিক গেমস, প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হকি বিশ্বকাপ, বার্ষিক হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ। ইন্টারন্যাশনাল হকি ফেডারেশন (এফআইএইচ) হকির আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কবি হোমারের গ্রন্থে বক্সিং খেলার বর্ণনা
সহজাত খেলাগুলোর মধ্যে বক্সিং খেলা অন্যতম। অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ একে অপরের সঙ্গে হাতের মাধ্যমে লড়াই করত। খেলাধুলার জগতে বক্সিংয়ের বয়স নেহাতই কম নয়। একদম প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বক্সিং যেন খেলার চেয়েও বেশি কিছু। রিংয়ের ভিতর লড়তে থাকা বক্সারদের অনবদ্য পারফরম্যান্সে মুগ্ধ দর্শকরাও যেন এক পরোক্ষভাবে লড়তে থাকেন প্রিয় বক্সারের পাশেই। এ কারণেই খেলাধুলার জগতে বক্সিংয়ের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উচ্চতায়। সূত্র মতে, মেসোপটেমিয়ায় ৭০০০ বছর আগে কাদা মাটিতে বক্সিং সদৃশ খেলার প্রচলন ঘটে। প্রাচীন রোমান ও গ্রিক অঞ্চলেও এ ধরনের খেলার প্রচলন ছিল। হোমারের ইলিয়াড গ্রন্থেও বক্সিং সদৃশ খেলার বর্ণনা রয়েছে। আধুনিক বক্সিংয়ের শুরু হয় সতেরো শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে। জেমস ফিগ প্রথম স্বীকৃত কোনো বক্সিং টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়।
বলা হয়ে থাকে তিনি জীবনে একটি মাত্র খেলায় হেরেছে এবং ১৯৯২ সালে তাকে বক্সিংয়ের জন্মদাতার মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। বক্সিং এক থেকে তিন মিনিট চক্রের অন্তর একটি ধারাবাহিক খেলা যেটি একজন রেফারির তত্ত্বাবধানে খেলা হয়। প্রাচীন গ্রিসে বক্সিংয়ের শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৮ অব্দে। বক্সিং ১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দীতে মূলত গ্রেট ব্রিটেনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক বক্সিংয়ের শুরু ১৯শ’ শতাব্দীর মধ্যে হয় ব্রিটেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৪ সালে বক্সিং বিশ্বের সবচেয়ে জটিল খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল।
প্রাচীন গ্রিক ও মিসরে
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, টেনিস খেলার শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সে। বারো শতকের কোনো এক সময় থেকে খেলাটির প্রচলন শুরু হয়। ফ্রান্সের বারো শতকের টেনিস ষোল শতকের দিকে ইংল্যান্ডে এসে জনপ্রিয়তা লাভ করে। টেনিসের উদ্ভব সম্পর্কে শক্তিশালী কোনো নথি পাওয়া যায়নি।
অনেকে মতামত দিয়েছেন, প্রাচীন গ্রিক বা মিসরে টেনিস খেলার প্রচলন ছিল। বারো শতকে ফ্রান্সে সন্ন্যাসীরা মঠের প্রাচীরের দুপাশে বল দিয়ে খেলা করত। একপাশ থেকে বল ছুড়ে তারা টেনজ বলে চিৎকার করত। রাবার আবিষ্কার হওয়ার আগে টেনিস বল পশম দিয়ে তৈরি করা হতো এবং কাঠের মাধ্যমে র্যাকেট তৈরি করা হতো। ১৮৭৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে টেনিসের নিয়ম-কানুন সিদ্ধ হয় এবং ১৮৭৭ সালে প্রথম উইলম্বডন চালু হয়। এটি প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়।
নিষিদ্ধ ছিল অনেককাল গলফ
গলফ খেলাতে কোনো রেফারি বা আম্পায়ার থাকে না। প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের শটের সংখ্যা নিজেই লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বল ও স্টিকের এই খেলাটির প্রচলন হয় রোমান খেলা ‘পাগানিকা’ থেকে। অন্য সূত্র মতে, অষ্টম ও চতুর্দশ শতাব্দীতে চীনে প্রচলিত ছিল ‘চুইওয়ান’ নামের একটি খেলা। ওই ‘চুইওয়ান’ থেকেই প্রচলিত হয় গলফ খেলাটি। তবে অধিকাংশের মতে, গলফ খেলার প্রচলন শুরু হয় স্কটল্যান্ডে। তবে ধরে নেওয়া যায়, গলফ খেলার প্রচলন হয় আজ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দে রোমান ও চীন সাম্রাজ্যে। তখন অনেকে ঘোড়ায় চড়েও এই লেখায় অংশ নিত। পরবর্তী সময়ে ডাচ, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে লাঠির মাধ্যমে বলকে তাড়িত করার খেলা প্রচলন ছিল। ১৪৫৭ সালে রাজা দ্বিতীয় জেমস গলফকে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে নিষিদ্ধ থাকলেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি কখনো। গলফ মাঠের কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি থাকে না। গলফ খেলা হয় খোলা মাঠে যাকে বলা হয় গলফ কোর্স।
রাখালদের মাঝে প্রথম প্রচলন
ক্রিকেট খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশসহ অন্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করে চলছে।
রাখাল বালকদের খেলা হিসেবে শুরু হয় ক্রিকেট। ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম ক্রিকেট খেলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের ভেড়া চারণভূমিতে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল। ক্রিকেট খেলার প্রথম সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল একটি লাঠি এবং ভেড়ার পশমের বল। রবিবার সকালে যথারীতি চার্চে না গিয়ে দুই ব্যক্তি প্রথমবারের মতো ক্রিকেট খেলে ১৬১১ সালে এবং এজন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। ক্রিকেট শব্দটি এসেছে সনাতন ইংরেজি শব্দ ‘ক্রাইচ’ অর্থাৎ চার্চ এবং মধ্য হল্যান্ডের ওলন্দাজ শব্দ অর্থ স্টিক বা লাঠি থেকে। ১৮৫৩ সালে প্রথম ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়। মূল অংশ উইলি কাঠ, আর রাবারে মোড়া বেতের হাতল দিয়ে এই ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করা হয়। প্রথমে ব্যাটটিকে বাঁকা করে আবার সোজা করা হয়।
হাজার বছরের বিবর্তন
বর্তমান সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। প্রাচীন চীনে খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৬-২২১ অব্দ পর্যন্ত এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল, যার নাম ছিল কুজু। কাপড় দিয়ে তৈরি গোলাকার বলের মতো মোড়ানো বস্তু পায়ের মাধ্যমে লাথি মেরে খেলা হতো। বেশির ভাগ ঐতিহাসিকের মতে ফুটবল খেলার আবিষ্কারক চীন হলেও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যায় গ্রিক সভ্যতা এবং রোমান সভ্যতায় ফুটবল খেলার প্রচলন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দের দিকে গ্রিক ও রোমানরা বল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলত। গ্রিক ও রোমানদের বল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলার মধ্যে কিছু কিছু খেলা তারা পা দিয়ে খেলত। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন ঘটে এবং ফুটবল এসোসিয়েশন গঠিত হয়। ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্তা ব্যক্তিরাই সর্বপ্রথম ফুটবল খেলার নিয়ম লিপিবদ্ধ করে, যার ধারাবাহিকতায় আগমন ঘটে আজকের আধুনিক ফুটবল। কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় খেলাটি সকার নামে পরিচিত।