বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা ভ্যাকসিনে যত সুখবর

তানভীর আহমেদ

করোনা ভ্যাকসিনে যত সুখবর

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ববাসীর আশা জাগিয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ৮ হাজার মানুষের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে এই খবরের দিকে তাকিয়ে সবাই। ভ্যাকসিনটি শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্ববাসীর বুকে আশার আলো জ্বালিয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট। এরই মধ্যে তিনি জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগপ্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল এমন রোগীর জন্যও এই ভ্যাকসিন একদম নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাকিয়ে আছে এই ভ্যাকসিনটির দিকে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রস্তুত এবং কার্যকারিতায় এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড। ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। জুলাই মাসে মানবদেহে তৃতীয় ট্রায়ালও শুরু করতে চলেছে এই সংস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, ইংল্যান্ডে ১০ হাজার এবং ব্রাজিলে অন্তত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল হতে যাচ্ছে এ মাসেই। তবে সবকিছুর আগে প্রতিষেধকের সুরক্ষার বিষয়টিকেই জোর দিয়ে দেখছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ভ্যাকসিন তৈরিতে ভাইরাসের জিনগত উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে দ্রুতগতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়। তবে এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীদের শনাক্ত করতে হবে যে, ভাইরাসের কোনো অংশটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রণোদিত করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো করোনা আক্রান্তের দেহে এই ভ্যাকসিন একবার প্রয়োগ করলে পরবর্তী এক বছর এর কার্যকারিতা থাকবে শরীরে। মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরিতেও সাহায্য করবে এই ভ্যাকসিন।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাচ্ছে সিনোভ্যাক

করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে সবচেয়ে সফল মানা হচ্ছে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেককে। সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড দাবি করেছে, তাদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। চীনে চালানো প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় এ ফল এসেছে। এই ভ্যাকসিন ব্রাজিলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে। ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যের সরকারি গবেষণা কেন্দ্র ইনস্টিটিউট বুটান্টানের নেতৃত্বে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা হবে। নমুনা ভ্যাকসিন ব্রাজিলে প্রায় ৯ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। সিনোভ্যাক দাবি করেছে, ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে সক্ষম। এছাড়া মানুষের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শরীরে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। দুই ধাপের ওই ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৭৪৩ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবী। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ছিলেন ১৪৩ জন, আর দ্বিতীয় ধাপে ৬০০ জন। তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। এতে ৯০ ভাগ মানুষের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সিনোভ্যাক জানায়, ট্রায়ালে কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদনে যেতে এখন শুধু কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। অনুমতি পেলে করোনা মোকাবিলায় বছরে ১০ কোটি ডোজ করোনাভ্যাক উৎপাদনের জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সিনোভ্যাকের করোনা ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চীনের পরীক্ষাগারের পাশাপাশি ব্রাজিলেও করা হবে। বেইজিংভিত্তিক এই ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাংলাদেশের করোনা রোগীদের ওপর টিকার ট্রায়াল চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

 

 

বাংলাদেশেও আশার আলো

সম্প্রতি বাংলাদেশেও করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে আশার আলো দেখিয়েছে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। তারা ভ্যাকসিন তৈরিতে গবেষণা ও কাজ শুরু করেন গত ৮ মার্চ। ৮ মার্চ কভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা কর্মকা- শুরু করা হয়। ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিরীক্ষার লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য কাজ করছেন তারা। গবেষণাগারে আবিষ্কৃত টিকাটির বিশদ বিশ্লেষণের পর ল্যাবরেটরি অ্যানিমেল মডেলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে যথাযথ অ্যান্টিবডি তৈরিতে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়ার কথা জানানো হয়। করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, ৬ সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের প্রাথমিক পরীক্ষা সমাপ্ত হবে। তারা আশা করেন, যদি সবকিছু ঠিক থাকে পশুর ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি ঠিকমতো পেলে অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরে ট্রায়াল শুরু হতে পারে। তারা জানান, বিজয়ের মাসেই বাজারে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারবেন।

 

 

চীনের সিনোফার্মা

 

চীনা জাতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের (সিনোফার্মা) ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা রয়েছে তৃতীয় ধাপে। মানুষের শরীরে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে এই ভ্যাকসিনের। এছাড়া চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে একটি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট ল্যাব এবং একটি ভ্যাকসিন প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্ট সমন্বিত একটি মেডিকেল কমপ্লেক্স সম্পন্ন হয়েছে। সিনোফার্মা সম্প্রতি ঘোষণা করে, নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন প্রার্থী তারা তৈরি করেছিল যে, তারা চীনে ফেইজ ওয়ান বা প্রথম এবং দ্বিতীয় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল এবং এটি তৃতীয় পর্যায় শুরু করেছে গত ২৪ জুন। সিনোফার্মা প্রথম এবং দ্বিতীয় পরীক্ষার ফল ভালো ছিল। দ্বিগুণ ব্লাইন্ড ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পর কোনো মারাত্মক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন তারা সব উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল। সিনোফার্মা অনুযায়ী, বেইজিংয়ের গোষ্ঠীর অধীনে আর একটি উৎপাদন বিভাগও সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রতি বছর প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় চীন সরকার, সামরিক বাহিনী এবং বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করেছে। চীনের ১৯টি টিকার মধ্যে আটটিই এখন মানুষের ওপর ট্রায়াল চালাচ্ছে। একটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

 

ভারতে হবে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন পরীক্ষা

শিগগিরই ভারতে মানুষের শরীরে করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানায়, মোট ছয়টি ভারতীয় সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরির কাজে যুক্ত। এরমধ্যে কো-ভ্যাকসিন আর জাইকোভ-ডি অনেকটাই এগিয়ে। ১১টি ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে। ভারতের তৈরি ভ্যাকসিন নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেয় বায়োটেক। কো-ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে পরীক্ষার সবুজ সংকেত দিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোল অব ইন্ডিয়া। ভারত বায়োটেক চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের পথে বেশ কয়েকটি ধাপ এগিয়ে যায় দ্রুত। ৪০ দিনের গবেষণায় কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের (কোভ্যাকসিন) প্রথম ভার্সনটি তৈরি করেন তারা। সহযোগিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ইন্ডিয়ান ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ। পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিও যোগ দেয়। এরপর শুরু হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব। প্রাণীদেহের ওপর কোভ্যাকসিনের সফল পরীক্ষার পর মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি পায় বায়োটেক। ভারত বায়োটেক সম্প্রতি জানায় করোনার প্রতিষেধক এ বছর বাজারে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

সম্প্রতি মানব শরীরে ও প্রাণীদেহে পরীক্ষার পর সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ফল মিলেছে ৬টি ভ্যাকসিনের

► যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে মেরিল্যান্ডের নোভাভ্যাক্স

► কানাডার মেডিকাগো ফেইজ ওয়ান বা প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চালিয়েছে

► চীনের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সিনোভ্যাক বায়োটেক তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে

► ভারতের জাইডাস ক্যাডিলা, বায়োটেক দ্বিতীয় পর্যায়ের পর মানুষের শরীরে পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে

► জাপানের এনজেস তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সফল হয়েছে

► চীনের ক্যানিসিনো বায়োলজিকস সুনির্দিষ্ট সেনাসদস্যের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে

 

জেনেটিক ভ্যাকসিন

মডার্না

দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় সফল ফলাফল পাওয়া গেছে মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনের। জুলাইয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

সফল হলে ২০২১ সালে বাজারে ভ্যাকসিন ছাড়বে মডার্না।

বায়োএনটেক

জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে রয়েছে নিউইয়র্কের ফিজার ও চীনের ফোশুন ফার্মা। ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। সফল হলে এ বছরই অক্টোবরে ভ্যাকসিনটি বাজারে আনবে তারা।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন

যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা চালিয়েছে। গত ১৫ জুন তারা ভ্যাকসিনটি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য মর্নিংসাইড ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি করে। এ বছরের শেষদিকে এটি প্রস্তুত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

ভারত বায়োটেক ও জাইডাস ক্যাডিলা

ভারতের দুটি কোম্পানি ভাকসিন তৈরির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

৩ জুলাই জাইডাস ক্যাডিলা মানবশরীরে পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে।

সফল হলে ২০২১ সালে এটি বাজারজাত করা হবে।

এনজেস

জাপানের এনজেস, ওসাকা ইউনিভার্সিটি ও তাকারা বায়োর সঙ্গে মিলে তৈরি করছে একটি করোনা ভ্যাকসিন। জুনের ৩০ তারিখ প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পরীক্ষায় তারা সফলতার ঘোষণা করেছে। বাজারজাত করার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি তারা।

ইনোভিও

আমেরিকার ইনোভিউ কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে রয়েছে।

জুনের ৩০ তারিখ তারা জানায়, ৩৬ জনের মধ্যে ৩৪ জনই প্রথম ধাপের ভ্যাকসিনে সফল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মানবশরীরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাবে তারা।

কিউরভ্যাক, জেনেক্সিন, সানোফি

চীনের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল একটি করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের কিউরভ্যাক মার্চে সফলতার ঘোষণা দিয়েছিল। কোরিয়ার জেনেক্সিন প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। তারা কয়েক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাবে। সানোফি জুনের ২৩ তারিখ প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন

অ্যাস্ট্রাজেনকো ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি

ব্রিটিশ-সুইডিস কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনকো ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি করোনার সবচেয়ে সফল ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনটির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা দেখিয়েছে।

ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যাকসিনটি তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি চলছে। জুন মাসে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির ঘোষণা দেয় তারা। তৃতীয় পর্যায়ে সফল হলে এ বছরের অক্টোবর মাসে বাজারজাত করা হবে ভ্যাকসিনটি।

ক্যানসিনোবায়ো

চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকস তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ও সেনাবাহিনীতে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ভ্যাকসিন। একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল চীন মে মাস থেকে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা শুরু করে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এটি সফল হয়েছে।

জুনের ২৫ তারিখ অতি জরুরি প্রয়োজনে ভ্যাকসিনটি চীনের সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি পায়। এটি আপাতত বিশেষ প্রয়োজনে বিশ্বে একমাত্র অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিন।

গামালায়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট

রাশিয়ায় করোনা ভ্যাকসিন প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সফলতার ঘোষণা দেয় গামালায়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

জুন মাসে ভ্যাকসিনটির প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়।

জনসন অ্যান্ড জনসন

জুন মাসে জনসন অ্যান্ড জনসন ঘোষণা দিয়েছে জুলাইয়ের শেষ দিকে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করবে তারা।

বোস্টনের বেথ ইসরাইল ডিকোনেস মেডিকেল সেন্টার বানরের শরীরে একটি এডিনোভাইরাসের প্রয়োগ, পরীক্ষা চালাবে।

নোভার্টিস ও ম্যানচেস্টার আই অ্যান্ড ইয়ার

সুইডেনের নোভার্টিস ও ম্যানচেস্টার আই অ্যান্ড ইয়ার এ বছরের শেষদিকে প্রথম পর্যায়ে একটি করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়

প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে এমন করোনা ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্ক। ভাক্সার্ট কোম্পানিও তাদের একটি প্রিক্লিনিক্যাল ভ্যাকসিনের কথা জানিয়েছে।

 

প্রোটিন বেসড ভ্যাকসিন

নোভাভ্যাক্স

মেরিল্যান্ডের নোভাভ্যাক্স করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। মে মাস থেকে তারা ভ্যাকসিনটি তৈরির পেছনে শ্রম দিচ্ছে। জুলাইয়ের ৬ তারিখ তারা জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় তারা সফল। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় তারা আশাবাদী ভ্যাকসিনটি কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে ভ্যাকসিন তৈরি ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ২০২১ সালের শুরুতেই ১ কোটি ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

ইউরোপ ও এশিয়ায় ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত হলেই বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

 

ক্লোভার বায়োফার্মাটিক্যালস, জিএসকে ও ডায়নাভ্যাক্স

ক্লোভার বায়োফার্মাটিক্যালস করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের জিএসকে ও যুক্তরাষ্ট্রের ডায়নাভ্যাক্সও প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চালিয়েছে।

 

ভ্যাকসিন

অস্ট্রেলিয়ার করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে বেশ শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের ভ্যাকসিন নামের একটি কোম্পানি জুলাইয়ে প্রথম ধাপের পরীক্ষা চালানোর কথা ঘোষণা করেছে।

 

মেডিকাগো ও জিএসকে

কানাডার মেডিকাগো করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। জুলাইয়ে মেডিকাগো ও জিএসকে একসঙ্গে এই ভ্যাকসিনটি প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছে।

 

প্রিক্লিনিক্যাল

প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে এমন আরও কয়েকটি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড, সানোফি ও জিএসকে।

 

হোল-ভাইরাস ভ্যাকসিন

সিনোফার্মা

চীনের সিনোফার্মা জুনে তৃতীয় পর্যায়ে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষার কথা ঘোষণা করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এটি সফল হয়েছে।

ইউনাইটেড আরব আমিরাতের সঙ্গে তারা একটি চুক্তি করেছে, গালফে এই ভ্যাকসিনটি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানো হবে।

 

সিনোভ্যাক

করোনায় আশাব্যঞ্জক ভ্যাকসিনের প্রথম সারিতে রয়েছে সিনোভ্যাক। চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক এই ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় সফল হয়েছে।

জুনে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এমন  ৭৪৩ জন ভলান্টিয়ার এখনো পুরোপুরি সুস্থ রয়েছে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা দেখা গেছে। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে এটির।

 চীনের পর ব্রাজিলে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে এই ভ্যাকসিনের। বছরে ১ কোটি ভ্যাকসিন তৈরি প্রস্তুতি নিয়েছে কোম্পানিটি।

 

ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি

চীনের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের আরও একটি ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। জুনে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

 

ভারত বায়োটেক

ভারত বায়োটেক, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

আগস্টের ১৫ তারিখে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত মানবশরীরে এটি পরীক্ষা করা হবে।

সফল হলে ২০২১ সালে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর