বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কুখ্যাত জেল পালানো কয়েদি

সাইফ ইমন

কুখ্যাত জেল পালানো কয়েদি

অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই জেলখানার উৎপত্তি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনকাল থেকেই কয়েদিদের আটকে রাখার জন্য জেলখানা ব্যবহৃত হতো। কত রকমের কয়েদির বসবাস এই অন্ধকার চার দেয়ালের ভিতরে। মাঝে মাঝে ঘটে জেল থেকে পালানোর ঘটনা। যত দিন জেলখানা আছে তত দিনই ঘটবে জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা। আর এ জন্য প্রয়োজন হয় কয়েদিদের তীক্ষ বুদ্ধি আর জন্ম হয় একের পর এক ঘটনার...

 

টেক্সাস সেভেন কোনালি ইউনিট থেকে পালান

দ্য টেক্সাস সেভেন হলো একদল জেলবন্দী, যারা টেক্সাসে জন কোনালি ইউনিট থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাটি ২০০০ সালের ১৩ ডিসেম্বরের। এর ঠিক এক মাসের মাথায় ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দ্য টেক্সাস সেভেন দলটি আবার ধরা পড়ে একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের কল্যাণে। আমেরিকাস মোস্ট ওয়ান্টেড নামের অনুষ্ঠানটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। এই সাত কয়েদি পালানোর জন্য অত্যন্ত সুচারু পরিকল্পনা করেন দক্ষিণ টেক্সাস টাউনের স্টেট সিকিউরিটি কারাগার ‘জন কোনালি ইউনিট’ থেকে পালিয়ে যাওয়ার। পালানোর সময় তারা চারজন বেসামরিক রক্ষণাবেক্ষণ সুপারভাইজার, চারজন শাস্তিবিষয়ক কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণভাবে পরাভূত করতে সক্ষম হন। দ্য টেক্সাস সেভেন দলটি কারাগার ভেঙে পালানোর সময় কারাগারেরই একটি পিকআপ ব্যবহার করেন। এভাবে দল বেঁধে পালানোর আরও একটি উদাহরণ আছে আফগানিস্তানে। গজনি শহরে তালেবান যোদ্ধারা কারাগার ভেঙে প্রায় ৩০০ বন্দীকে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেন। ঘটনাটি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে অধিকাংশই বিদ্রোহী তালেবান সদস্য। তবে এদের মধ্যে অনেক অপরাধীও আছেন বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ। কারাগারটির দেয়ালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গর্ত সৃষ্টি করা হয়। একজন তালেবান সদস্য আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান। ওয়াচ টাওয়ারগুলো লক্ষ্য করে ছোড়া হয় রকেট লঞ্চার। সেখান দিয়েই বন্দীরা পালিয়ে যান। কর্তৃৃপক্ষ এই জেল ভাঙার ঘটনার জন্য বিদ্রোহী তালেবানদের দায়ী করেছে।

 

খেলনা পিস্তল দেখিয়ে পালান

চলচ্চিত্রে আমরা অনেক সময় দেখতে পাই কেউ একজন খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিজের কার্য হাসিল করছেন। কিন্তু এই বুদ্ধি কিন্তু বাস্তব থেকে নেন। ঘটনাটি ডিলিঞ্জারের কাঠের পিস্তল নামে ব্যাপক পরিচিত। জন ডিলিঞ্জার আমেরিকার ইতিহাসের কুখ্যাত সন্ত্রাসী। তিনি ছিলেন ডিলিঞ্জার গ্যাংয়ের সদস্য, যারা ২৪টি ব্যাংক ডাকাতি, চারটি পুলিশ স্টেশনে হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য পরিচিত। তাকে ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বারবার। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৪ সালের জানুয়ারিতে অ্যারিজোনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং তার স্থান হয় ইন্ডিয়ানার লেক কাউন্টি জেলে। কিন্তু ফন্দি আঁটেন জেল পালানোর। সামান্য কাঠ কেটে তিনি বানিয়েছিলেন এক খেলনা পিস্তল। তারপর সেটিকে আরও আসলের মতো দেখাতে ব্যবহার করেন জুতার কালি। সেই খেলনা পিস্তল দিয়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়েই পালিয়ে যান জন ডিলিঞ্জার। জেল ভেঙে পালানোর জন্য সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন শেরিফের নতুন কেনা একটি ফোর্ড গাড়ি। ওই বছরেরই ২২ জুলাই পুলিশের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

 

অপ্রতিরোধ্য ডোনাল্ড জনসন

দীর্ঘ ২১ বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের চোখে ধুলো দেন ডোনাল্ড জনসন। এর আগে ডাকাতির দায়ে ১৯৬৬ সালে ১৫ বছরের সাজা হয়েছিল ডোনাল্ডের। ক্যালিফোর্নিয়ার জেমসটাউনে পাঠানো হয় তাকে। তবে ছয় মাস যেতে না যেতেই ডোনাল্ড নানা ফন্দি-ফিকির শুরু করেন জেল থেকে পালানোর। এক সময় সফল হন ডোনাল্ড। জেল থেকে পালিয়ে যান। এরপর তিন মাস কেটে যায়। ১৯৬৯ সালে আবার ফ্লোরিডায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেখানে পাঁচ বছরের সাজা হয় তার। কথা ছিল, সেখান থেকে বেরোলেই ক্যালিফোর্নিয়ার জেলে ফেরত যেতে হবে তাকে। কিন্তু তা আর হয়নি। মাত্র সাড়ে তিন মাস জেলে কাটিয়েই বেরিয়ে আসেন জনসন। ফ্লোরিডা থেকে চলে যান সোজা আরকানসাসে। সেখানে বিয়ে করে নিজের আসল পরিচয় ব্যবহার করেই টেক্সাসের টমবলে পাড়ি জমান ডোনাল্ড। পরিবারকে কিছু না জানিয়েই নিজের জীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে আবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অতিরিক্ত সাজাসহ আগের সাজা ভোগের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার জেলে পাঠানো হয় তাকে। সেখান থেকেও পালিয়ে যান ডোনাল্ড জনসন।

 

জেল থেকে পালিয়ে সেলফি

জেল ভেঙে পালিয়ে সেলফি তুলছেন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করছেন! এমন ঘটনাই ঘটেছে ব্রাজিলে। মানাউস শহরের কারাগার থেকে পালানো এক বন্দী ব্রায়ান ব্রেমার ফেসবুকে দম্ভভরে একের পর এক সেলফি পোস্ট করেন জেল থেকে পালিয়ে। মানাউসের দুটি কারাগার ভেঙে দুই শতাধিক বন্দী পালিয়ে যায় সেদিন। ব্রেমার ডাকাতির অভিযোগে সাজা খাটছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, ঘন জঙ্গলের মধ্যে ব্রায়ানসহ কয়েকজন পলাতক আসামি আঙ্গুল উঁচিয়ে সেলফি তুলছেন। এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। পালানোর পরে তার তোলা সেলফি ভাইরাল হয়ে যায় পুরো বিশ্বে। একটি ছবিতে ক্যাপশন ছিল-  জেল থেকে পালিয়ে দৌড়াচ্ছি। অপর একটি  ছবিতে দেখা যায়, ব্রেমার ও অন্য চারজন ফল খাচ্ছেন। আমাজোনাস প্রদেশের মানাউস শহরের অ্যান্তোনিও ত্রিনিদাদ কারাগারে এই পালানোর ঘটনা ঘটে। এর পরেই আনিসিও জবিম কারাগারে রক্তাক্ত দাঙ্গায় ৫৬ জন নিহত হন। সেখান থেকে পালায় আরও ১১২ জন বন্দী। ব্রেমারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি এক সময় বন্ধ হয়ে যায়।

 

ধোঁয়াশায় কাটে ৩৪ বছর

ধোঁয়াশার ৩৪ বছর। ১৯৭৫ সালে ২২ বছর বয়সী নারী ক্যারোলকে চুরির দায়ে ৫ বছরের জন্য ফ্লোরিডার ওকালার কারাগারে পাঠানো হয়। এর ৪৭ দিনের মাথায় জেল থেকে পালিয়ে যান ক্যারোল। তবে তার পালানোর ব্যাপারটি পুরোটাই ধোঁয়াশা তৈরি করে সবার কাছে। কারণ প্রহরীর ভাষ্যমতে, ক্যারোলার পালানোর এক ঘণ্টা আগেও তাকে তার জায়গাতেই ঘুমাতে দেখা গেছে। জেল থেকে পালিয়েই নিজের নাম পাল্টিয়ে শ্যারন অ্যাডওয়ার্ডস রাখেন ক্যারোল। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার শ্যারন নামের এক নারীর নিরাপত্তা কার্ডের নম্বরও ব্যবহার করা শুরু করেন। এরপর কেটে যায় ৩৪ বছর! ২০১০ সালে পুলিশের কাছে আবার ধরা পড়েন ক্যারোল। যদিও তখন তার দাবি, তিনি আর আগের ক্যারোল নেই। কিন্তু পুলিশ তাকে এত সহজে ছাড়েনি। জেলে ঢুকতে হয় আবার তাকে। আর সেখানেই ১১ মাস কাটিয়ে ২০১১ সালে বাইরে বের হন ক্যারোল।

 

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানো

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানো কয়েদি অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার রজার জয়েস বুশেল। পালানোর এই ঘটনাটি দ্য গ্রেট এস্কেপ নামে ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত একটি ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘স্টালাগ লাফট-৩’ ছিল জার্মানদের বানানো আরেকটি যুদ্ধবন্দীদের ক্যাম্প যেখানে বিমান বাহিনীর লোকদের বন্দী হিসেবে রাখা হতো। এখানকার বন্দীদের মাঝেই একজন ছিলেন অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার রজার জয়েস বুশেল। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে বুশেল এখান থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানোর পরিকল্পনা করলেন, তবে একটি নয়, তিনটি; একা নয়, সবাইকে নিয়ে। এগুলোর সাংকেতিক নাম ছিল টম, ডিক ও হ্যারি। সুড়ঙ্গগুলো তৈরিতে প্রায় ১৩০ টন মাটি সরানোর কাজ করা হয়েছিল! সুড়ঙ্গপথে এক এক করে পালান ৭৬ জন। ৭৭তম বন্দী সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়া মাত্রই ধরা পড়ে যান এক প্রহরীর নজরে। এরপর ৭৬ জনের মধ্যে ৭৩ জনই ধরা পড়েছিলেন।

 

আলফ্রেড ওয়েটজলার

তার নাম আলফ্রেড ওয়েটজলার। জেল পালানো আলফ্রেড ওয়েটজলার নামেই বেশি পরিচিত। তার সঙ্গে পালানো রুডলফ ভ্রবা বিখ্যাত হয়ে আছেন এল ক্যাম্পের সর্বপ্রথম বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার জন্য। ভ্রবা-ওয়েটজলার দেওয়া তথ্য ফাইলটি মোট ৩২ পৃষ্ঠার। এ থেকেই জানা যায়, ডেথ ক্যাম্পের গ্রাউন্ড প্ল্যান, গ্যাস চেম্বারের কনস্ট্রাকশন প্ল্যান, মানবদেহ পোড়ানোর চুল্লির ভয়াবহ সব বর্ণনা। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে মিত্রবাহিনী নাৎসি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়, রক্ষা পায় ১ লাখ ২০ হাজার হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি। ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৪ সালের ৭ এপ্রিল। আনুমানিক দুপুর ২টার দিকে ওয়েটজলার এবং ভ্রবা পালিয়ে এক কাঠের স্তূপের আড়ালে আশ্রয় নেন। এ সময় ক্যাম্পের অন্য বন্দীরা তাদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেন। জায়গাটির চারদিকে কাঠের বোর্ড জমা করে রেখেছিলেন, যাতে তারা ধরা না পড়েন। সেখানে ৪টি রাত কাটিয়ে দুজন ১৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোল্যান্ডের সীমান্তে চলে যান।

 

হেলিকপ্টারে পালান পায়েট

জেল পালানো কয়েদি নিয়ে কথা হচ্ছে আর পেসকেল পায়েটের নাম আসবে না, তা হয় না। এই পেসকেল শুধু একবারই পালাননি, তিনি দু-দুবার ফ্রান্সের অত্যাধুনিক কারাগার থেকে পালিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন এবং অদ্ভুত ব্যাপার যে, প্রতিবারই তিনি হেলিকপ্টার নিয়ে পালান। একটি হত্যা মামলায় পেসকেল ৩০ বছর সাজাপ্রাপ্ত হন। পেসকেল প্রথমবার পালান ২০০১ সালে। কিন্তু তখন তেমন সুবিধা করতে পারেননি। শিগগিরই ধরা পড়ে যান তিনি। এরপর ফন্দি করতে থাকেন আবারও কীভাবে জেল থেকে পালানো যায়। প্রথমবারের ভুল এবার আর করতে চান না তিনি। সঙ্গী জোগাড় করে নেন পায়েট। এরপর সবাই মিলে পরিকল্পনা করে মুখোশ জোগাড় করেন। নির্দিষ্ট দিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কারাদ এয়ারপোর্ট থেকে সঙ্গীদের নিয়ে মুখোশ পরে একটি হেলিকপ্টার হাইজ্যাক করেন। এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করেই পেসকেল পায়েট পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু পেসকেল পায়েট আবারও ধরা পড়েন ২০০৭ সালে। কিন্তু আবারও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। এরপর এখন পর্যন্ত পেসকেল পায়েটকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

 

জেল ভেঙে প্রেমিকার কাছে

প্রেমিকার কাছে যাওয়ার জন্য জেল থেকে পালানোর রেকর্ড বোধহয় আর একটিও নেই। এমনই রেকর্ড করেছেন জিতেন্দ্র। কয়েক মাস ধরেই জেলখানার বাইরে যেতে নানা অজুহাত তৈরি করছিলেন জিতেন্দ্র। ভারতের আগ্রা জেলে থাকা এই কয়েদি জেল সুপারের কাছে ছুটির আবেদনও করেছিলেন। ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়ায় নতুন আবদার ধরেন জিতেন্দ্র। এবার জানান, প্রেমিকার সঙ্গে তার দেখা করার ইচ্ছা। এমন আবদারেও অবশ্য সাড়া দেয়নি জেল কর্তৃপক্ষ। ফলে জেল ভেঙে পালানোর ফন্দি আঁটেন তিনি। প্রেমিকের টানে মরিয়া জিতেন্দ্র আগ্রা জেল থেকে পালিয়েও যায়। ভারতীয় গণমাধ্যম দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে খুনের অভিযোগে জেলে যান জিতেন্দ্র। বাস ছিল আগ্রার সদর এলাকায়। দীর্ঘদিন জেলে কাটালেও প্রেমিকার সঙ্গে কিছু মধুর সময় কাটানোর জন্য তিনি দুঃসাহসিক কাজটি করে ফেলেন। জিতেন্দ্রর জেল থেকে পালানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তাকে খুঁজতে চালানো হয় চিরুনি অভিযান। জেল থেকে পালিয়েই জিতেন্দ্র প্রেমিকাকে নিয়ে চলে যান গোয়ায় প্রিয়জনের সঙ্গে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর জন্য। একজন জেল পালানো কয়েদির জন্য এটি ব্যতিক্রম হলেও বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল! এক সপ্তাহ পর বাধ্য ছেলের মতো জেলে এসে আত্মসমর্পণ করেন জিতেন্দ্র।

 

রেকর্ড করেন মুনডাইন জো

তিনি রীতিমতো কিংবদন্তি হিসেবে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন। তার জন্ম ১৮২৬ সালে আর মৃত্যু ১৩ আগস্ট ১৯০০। মাঝের এই কটা বছর ছিল অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের ঘোল খাওয়ার সময়। এই কিংবদন্তির নাম ‘মুনডাইন জো’। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবার টুডে শহরতলির লোকেরা মুনডাইন ফেস্টিভ্যাল পালন করেন। চুরি-ডাকাতিতে হাত পাকিয়েছিলেন মুনডাইন জো। পুলিশের হাতে ধরাও পড়েন। কিন্তু কোনোবারই তাকে ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ। কথিত রয়েছে- কবে, কখন পালাবেন তা নাকি প্রহরীদের জানিয়েই রাখতেন মুনডাইন। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকই উধাও হয়ে যেতেন জেল থেকে। তবে কারাগারে তার চমৎকার ব্যবহারের কথা একবাক্যে স্বীকার করতেন সবাই। এই চোর-পুলিশ খেলায় একবার মুনডাইনের জন্য নিশ্ছিদ্র কারাগার তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই জেলও ভেঙেছিলেন মুনডাইন। সবাই দাবি করতেন, পৃথিবীর কোনো জেল তাকে আটকে রাখতে পারবে না। প্রৌঢ়ত্বে এসে মুনডাইন অবশ্য জেলভাঙা ছেড়ে দেন। ক্রমশ তার শরীর ভাঙতে থাকেন। একদিন মারাও যান। কিন্তু তার মিথ থেকে যায়। তাকে নিয়ে যেমন ফিল্ম তৈরি হয়েছে, তেমনি বইও লেখা হয়েছে। কবিতা, ছড়া সবই হয়েছে। এমনকি একটি স্টেশনের সাইডিংও হয়েছে তার নামে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর