রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সাইবার বুলিংয়ের ভয়ংকর যত ঘটনা

আবদুল কাদের

সাইবার বুলিংয়ের ভয়ংকর যত ঘটনা

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে শান্তি অথবা সম্মান ধুয়ে দেওয়ার এক হীনম্মন্য প্রচেষ্টার নামই ‘সাইবার বুলিং’। এটি সাইবার ক্রাইম, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেককে মৃত্যুর দিকে পর্যন্ত ঠেলে দিচ্ছে। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া এমন  সব ঘটনা নিয়ে আজকের রকমারি-

লিজি ভালসাকেজ

হাইস্কুলে পড়ার সময় তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল আট মিনিটের ইউটিউব ভিডিও। অনলাইনে বুলিরা তাকে দিয়েছিল পৃথিবীর কুৎসিততম নারীর খেতাব। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে চলে ট্রল। সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে ওঠেন শারীরিক প্রতিবন্ধী লিজি ভালসাকেজ। শুধু কি তাই! ভিডিওটি ব্রডকাস্ট হওয়ার পর অনেকে তাকে আত্মহত্যা করার পরামর্শ দিয়েছিল। সেসব নেতিবাচক মন্তব্যকে পাশ কাটিয়ে লিজি এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার জীবন। ২৩ বছরের এ মার্কিন নারী এক বিরল কনজেনিটাল রোগে আক্রান্ত। শারীরিক অসহায়ত্ব ইউটিউবারদের মনে দয়ার উদ্রেক ঘটাতে পারেনি। তাকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর লিজি নানা প্রহসনের শিকার হন। তবে লিজি এসব পরিস্থিতির ভ্রুক্ষেপ না করে এগিয়ে গিয়েছেন স্বীয় উদ্যমে।  লিজি আজ সমগ্র বিশ্বে অনন্য এক নজির।

হানান হামিদ

গণমাধ্যমে তাঁর কান্নার ভিডিও অনেক মানুষ দেখেন তাঁর প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ করেন কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা তাঁর নানা কাজে মন্দ দেখতে পান তারা তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে হেনস্তা করেন

সাইবার বুলিং যে কত ভয়াবহ হতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত ভারতের হানান হামিদ। বাবা ছিলেন মাতাল। এক সময় তার মা অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়েন। বাবা ছেড়ে চলে যান তাদের। ছোট ভাই আর মাকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন ক্লাস সেভেনের ছাত্রী হানান হামিদ। জীবিকার তাগিদে সব রকম কাজই তিনি করেছেন। মাছ বিক্রি করতেন স্কুলের ক্লাস শেষে। মূলত জীবিকার তাগিদে এ কাজ করতে গিয়ে নেট দুনিয়ায় ট্রলের শিকার হন তিনি। ভারতের কেরালা রাজ্যের ঘটনা এটি। এক সময় কলেজে ভর্তি হন হানান। হানান হামিদ ক্লাস শেষে মাছ বিক্রি করতেন রাস্তাঘাটে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে মাছ বিক্রেতার পথ বেছে নেন হানান হামিদ। তবে তিনি যেখানে থাকতেন, সেখানে নয়। বেশ খানিকটা দূরে অন্য শহরে গিয়ে এ কাজ করতেন। কিন্তু কোনোভাবে এক ব্যক্তি তাঁর মাছ বিক্রির ভিডিও ধারণ করে তা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। এরপর তার ইউনিফরম এবং মেকআপ পরা অবস্থায় মাছ বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ট্রল করতে শুরু করে অনেকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, নিজ আলোয় উদ্ভাসিত মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। গণমাধ্যমে তার কান্নার ভিডিও দেখে অনেকেই তার প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ করেন। তবে সমাজের কিছু মানুষ আছেন যারা সবকিছুতেই মন্দ খোঁজেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে চর্চা করতে থাকেন। তিনি নিজের জমানো টাকায় একটা আংটি কেনেন, সে বিষয়টিও বাদ পড়েনি নেটিজেনদের আপত্তিকর মন্তব্যে। তবে পরিস্থিতি বদলায়। ভারতে অনেকেই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীর মাছ বিক্রি এবং তাকে নিয়ে ট্রলের বিষয়টি উঠে আসে। ফলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতারও করা হয়।  মেয়েটির প্রশ্ন, শিক্ষার্থী হয়ে মাছ বিক্রি করা কি অপরাধ? নিজের দরিদ্র পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া কি অপরাধ?

মেগান মিয়ের

মাত্র আট বছর বয়সেই নেটিজেনদের হয়রানির শিকার হন মেগান মিয়ের। আমেরিকান টিনএজ মেয়েটি এতটাই হতাশায় ভুগছিলেন যে, সে সময় থেকেই অ্যান্টিসাইকোটিকস ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস গ্রহণ করতেন। ওষুধগুলো তাঁকে সাময়িক প্রশান্তি দিলেও নেট দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত হয়রানির কারণে মেগান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মেগান তাঁর মাকে জানান, তিনি বেঁচে থাকতে চান না। মেগানের মা তখন তাঁকে একটি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করান। ১৩ বছর বয়সে মেগানের অকাল মৃত্যুর পর জানা গেছে, মিসৌরিতে মেগানের প্রতিবেশী এক মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ফেক অ্যাকাউন্ড খুলে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। তখন থেকেই মেগান চরম হতাশা আর অবসাদে ভুগতে থাকেন।  তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে মেগান সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আসছিলেন।

মারিয়ান হার্নান্দেজ

সাইবার বুলিংয়ের কারণে আত্মহত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার মেসা শহরের ১০ বছর বয়সী মারিয়ান হার্নান্দেজ রোজাস। পরিবারের ছোট সদস্যের অকাল মৃত্যুর পর জানা গেছে, রোজাস দীর্ঘদিন ধরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছিল। মোবাইলে তাঁকে নানারকম বার্তা পাঠিয়ে হয়রানি করা হতো বলে জানিয়েছে ছোট্ট রোজাসের বন্ধুরা। মৃত্যুর পর শেষকৃতের অনুষ্ঠানে রোজাসের বড় বোন জানান, রোজাস ছিল অত্যন্ত সাহসী একটি মেয়ে। জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় থেকে সে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আসছিল। তখন থেকে সে প্রচণ্ড অবসাদে ভুগতে থাকে। তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, পরিবারের কেউ যেন তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে,  তাই রোজাস অনলাইনে হয়রানির বিষয়গুলো সর্বদা নিজের মাঝে চেপে রাখত।

অ্যামান্ডা টড

কানাডার ১৫ বছর বয়সী অ্যামান্ডা টড সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর ওই ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এক সময় ওই ব্যক্তি অ্যামান্ডাকে তার খোলা বুক দেখাতে রাজি করায়। কিশোরী অ্যামান্ডা প্ররোচণায় পড়ে নগ্ন ছবি দিয়ে বসে। এরপরই অ্যামান্ডার ওপর চলে হয়রানি ও মানসিক অত্যাচার। ওই ব্যক্তি তাকে ভিডিও চ্যাটিংয়ে সেক্সের অফার করে। কিন্তু কিশোরী অ্যামান্ডা তাতে রাজি হয়নি। আর তার জেরে অপরিচিত ওই ব্যক্তি অ্যামান্ডার নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেয় নেট দুনিয়ায়। নেটিজেনরা তাকে নিয়ে নানা অপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। নেট দুনিয়ায় নানা বুলিংয়ের শিকার হতে হয় কিশোরী অ্যামান্ডাকে। অসংখ্য মানুষ অ্যামান্ডার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। অনেক নেটিজেন তাকে কু-প্রস্তাবও করে বসে। অন্য শহরে গিয়েও, অ্যামান্ডা বুলিং থেকে রেহাই পায়নি। এ ঘটনায় তাকে কয়েকবার স্কুল বদলও করতে হয়েছিল। ২০১২ সালে অ্যামান্ডা আত্মহত্যা করে।  তার আগে ইউটিউবে এক ভিডিও পোস্টে বুলিংয়ের ঘটনা জানায় সে।

অ্যাশলিন কনার

ফুটফুটে মেয়ে অ্যাশলিন কনার। মাত্র ১০ বছর বয়সে নেট দুনিয়ায় নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। ছোট্ট মেয়েটি সাইবার বুলিংয়ে এতটাই বিরক্ত ছিল যে, তার মায়ের কাছে সে স্কুলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। বারবার বারণ করার পর স্কুলের ছেলেরা তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। এক সময় সে স্কুলের ভয়ংকর শিশুদের থেকে পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে পারেনি, তার মা তাকে বারবারই স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠাত। স্কুল থেকে অনলাইন প্ল্যাটফরম, হয়রানি যেন দিন দিন বেড়েই চলছিল। স্কুলের বন্ধুরা অ্যাশলিনকে প্রথমে মোটা এবং কুৎসিত বলা শুরু করে। পরে স্কুল এবং নেট দুনিয়ার নেটিজেনরা তাকে বেশ্যা বলে ডাকে। হয়রানি থেকে বাঁচতে নিজের চুল কেটে ফেলেছিল অ্যাশলিন। তবুও থেমে থাকেনি বুলিদের কটূক্তিকর মন্তব্য। এক সময় অ্যাশলিন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।  নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অ্যাঞ্জেল গ্রিন

দুরন্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ছিল অ্যাঞ্জেল গ্রিন। ১৪ বছর বয়সী গ্রিন প্রতিনয়ত অবসাদে ভুগত। সাইবার বুলিং কেড়ে নিয়েছিল মেয়েটির জীবন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার একটি স্কুলে পড়ত গ্রিন। বেঁচে থাকার দিনগুলোয় স্কুলের বন্ধু এবং নেটিজেনদের আপত্তিকর মন্তব্য বিষাদ করে তুলেছিল তার জীবন। যদিও সে সেসব অপবাদ শুনেও বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছিল। স্কুলের ছেলেরা তাকে বেশ্যা বলে ডাকত। পারিবারিকভাবেও গ্রিন খুব একটা সুখে ছিল না। তার বাবা প্রায়শই তাকে মারধর করত। যদিও মেয়েকে নির্যাতনের জন্য তার বাবার জেলও হয়েছিল। পারিবারিক অশান্তির খবর স্কুল ও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর লোকেরা তাকে নিয়ে নানা অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করত। নিজ বাড়িতে অ্যাঞ্জেল আত্মহত্যা করে। তবে মৃত্যুর আগে সে একটি সুইসাইড নোট রেখে গিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল- আমি মরতে চাই না,  তবে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।

ডলি এভারেট

ডলি এভারেট; ছোট্ট মেয়েটির অকাল মৃত্যুকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার বুলিং নিয়ে আলোচনা শুরু। ১৪ বছর বয়সী ডলি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তর টেরিটরির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করত। অস্ট্রেলীয় এ শিক্ষার্থী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করে। জানা গেছে, বধির হওয়ার কারণে ফেসবুকের বন্ধুদের দ্বারা ডলি প্রায়শই লাঞ্ছনার শিকার হতো। স্কুলের ছেলেরা তাকে ‘বেশ্যা’ ডাকত। কিশোরী মেয়েটি তখনো ‘বেশ্যা’ শব্দটির অর্থ বুঝে উঠতে পারেনি। এক সময় প্রচণ্ড একাকিত্ব বোধ করতে থাকে ডলি এভারেট।  পরিচিতদের এমন আচরণে বিধ্বস্ত ডলি এভারেট আত্মহত্যা করে।

কেনেথ ওয়েশুহ্ন

নেট দুনিয়ায় শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেদেরও অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। আমেরিকান কেনেথ ওয়েশুহ্ন জুনিয়র তাদের মধ্যে একজন। যাকে তার যৌন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য নেট দুনিয়ায় বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল। নিউইয়র্ক শহরে মা ও বোনের সঙ্গে থাকত ১৪ বছর বয়সী কিশোর কেনেথ ওয়েশুহ্ন জুনিয়র। সে ছিল সমকামী, আর এটাই ছিল তার একমাত্র দুর্বলতা। আমেরিকান সভ্য সমাজও মেনে নিতে পারেনি ওয়েশুহ্নর ব্যক্তি স্বাধীনতা। তার সঙ্গেও ঘটেছিল খারাপ কিছু- ওয়েশুহ্নের স্কুলের বন্ধুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যান্টি-সমকামী গ্রুপ খোলে। সেখানে তার বিরুদ্ধে চালায় নানা অপপ্রচার। এক সময় নেটিজেনরা তাকে ফোনে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। ওয়েশুহ্নর বন্ধুরা তার সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওয়েশুহ্ন এক সময় একাকী জীবন বেছে নেয়। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা আর অবসাদে ভুগতে থাকে সে। তার দুঃসময়ে কেউই পাশে ছিল না। ওয়েশুহ্নর মা জানান, সে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইত। অল্প বয়সেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।  কঠিন বাস্তবতা ছাড়িয়ে বিদায় নেয় নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে।

হানা কিমুরা

জাপানের জনপ্রিয় রেসলার (কুস্তিগির) এবং নেট ফ্লিক্স তারকা ছিলেন হানা কিমুরা। নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় রিয়েলিটি টিভি শো ‘টেরাস হাউস’-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৩ মে আকস্মিক আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এ তারকা। ২২ বছর বয়সী কিমুরা অনলাইনে রিয়েলিটি টিভি শো ‘টেরাস হাউসে’র দর্শকদের ক্রমাগত সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। কিমুরার টুইটগুলোতে আত্মহত্যার আভাস ছিল। নিজের ইনস্টাগ্রামে নিজের বিড়ালের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন কিমুরা। আর ক্যাপশনে লেখেন, ‘বিদায়’। এর আগে নিজের হাত কেটে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন হানা।  তারপরই তার মানসিক অবসাদের কথা জানতে পেরেছিল জনপ্রিয় এ তারকার ভক্তরা।

জেসিকা লোগান

হাইস্কুলে থাকাকালীন প্রেমে পড়েন জেসিকা লোগান। তার প্রেমিকের কাছে পাঠিয়েছিলেন নিজের নগ্ন ছবি। সেই ছবিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রেমিক ছবিটি পাওয়ার পর যেন বদলে গেল। সে জেসিকার নগ্ন ছবি তার স্কুলের বন্ধুদের তো বটেই কাছের মানুষদের কাছেও পাঠায়। এরপর থেকেই সামাজিকভাবে হেয় হতে হয় জেসিকাকে। শুরুর দিকে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন জেসিকা। তাই তার বাবা-মা বিষয়টি জানতে পারেননি। যখন জানতে পারেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেগান মারাত্মক হতাশায় ভুগছিলেন। অ্যান্টিসাইকোটিকস এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস গ্রহণ করতেন তিনি প্রতিনিয়ত। এক সময় নিজেকে মুক্ত করতে আত্মহত্যা করেন জেসিকা। তার মৃত্যুর পর বাবা-মা খোঁজ নিয়ে দেখেন কি অমানুষিক নির্যাতন ও যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে সময় পার করেছিলেন তাদের মেয়ে। এ নিয়ে আদালতে মামলার পর জেসিকার সাবেক প্রেমিক, তার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বন্ধুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। বেরিয়ে আসে স্কুলের গাফিলতি,  বন্ধুদের দিনের পর দিন সাইবার বুলিংয়ের রোমহর্ষক ঘটনা।

হেইলি ল্যামবেথ

যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে বাস করত কিশোরী হেইলি ল্যামবেথ। ১৩ বছর বয়সী এ কিশোরী নেট দুনিয়ায় হয়রানির শিকার হয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। সে এত বেশি বুলিংয়ের শিকার হয়েছিল যে, স্কুলে যেতে পারত না। ছেলেরা তাকে নিয়ে নানা কটূক্তিকর মন্তব্য করত। মেয়ের অকাল মৃত্যুর পর বাবা-মা জানায়, ল্যামবেথ মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিল। তার স্কুলের বন্ধুরা তার শারীরিক অক্ষমতার কারণে তাকে প্রতিনিয়ত হেয় করত। স্কুলের হয়রানি এক সময় নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। নেটিজেনরা তাকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। বুলিরা প্রায়ই তাকে আত্মহত্যা করতে বলত। একবার তো এক বন্ধু তাকে মেইল করে বলে- আশা করি তুমি মারা গেছ। ছোট্ট ল্যামবেথ মানসিক যন্ত্রণা আর নিতে পারেনি। এক সময় সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেয়। বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে।  তার বাবা-মা জানান, মৃগী রোগ থাকায় সে প্রচণ্ড অবসাদে ভুগত।

ডেভিড মোলাক

দুুর্দান্ত ছেলে ডেভিড মোলাক। তার প্রেমিকাও ছিল ভীষণ সুন্দরী। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোলাক ছিল সবার ছোট। ১৫ বছর বয়সী ছেলেটিও নেট দুনিয়ার বুলিং থেকে রেহাই পায়নি। নেটিজেনদের আপত্তিকর মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে এক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কিশোর এ আমেরিকান। যুক্তরাষ্ট্রের সান আন্তোনিওর আলমো হাইস্কুলে পড়াশোনা করত মোলাক। ২০১৬ সালে তার স্কুলের এক বন্ধু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। যেখানে তাকে একটি বানরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সে পোস্টে নেটিজেনদের মন্তব্যও ছিল কয়েক শ। অল্প  কিছু দিনেই সেসব মন্তব্য কিশোর মোলাককে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। এক সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মোলাক। বিবর্ণ ও বিষাদময় হয়ে ওঠে তার জীবন। ওই বছর ২১ অক্টোবর মোলাক নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে। মোলাকের বাবা-মা জানান, সে স্কুলে যেত না। তার ধারণা,  স্কুলের সবাই তাকে ঘৃণা করে।

সর্বশেষ খবর