শিল্প অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বাড়ির পাশের ডোবা, নালায় গৃহস্থালির ময়লা ফেলার পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃত্রিম উপায়ে অপসারণ করা হয় গৃহস্থালির আবর্জনা। এরও সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় না। এতে বর্জ্য নিরসনের কাজ হয় আংশিক। তাতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ছড়াচ্ছে জীবাণু, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা ময়লা সমস্যা এই নগরীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। গত এক সপ্তাহে দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে এই নগরীর বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করে এমন ভয়ংকর চিত্র পাওয়া যায়।
নিয়ম হচ্ছে, বর্জ্য জমা করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলবেন নগরবাসী। সেই ময়লা সকাল ৮টার মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সংগ্রহ করে নেবেন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে। এরপর সেখান থেকে বাছাই-পর্ব শেষে চলে যাবে ল্যান্ডফিল্ড বা ডাম্পিং জোনে। পুরো এই প্রক্রিয়ার কোথাও কোনো ব্যত্যয় ঘটলেই সৃষ্টি হয় ময়লা জট। আর তা-ই ঘটছে বছরের পর বছর।
গত এক সপ্তাহে দিনের ও রাতের বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া, কালিরবাজার, ব্যাংকের মোড়, উকিলপাড়া, ২ নম্বর রেলগেট, ডিআইটি, মন্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জ হয়ে মিনাবাজার। এরপর টানবাজার থেকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক হয়ে ১ নম্বর রেলগেট, ফলপট্টি, চারারগোপ, কালির বাজার, বিআইডব্লিউটিসির কার্যালয়, মেট্রো সিনেমা হলের মোড় হয়ে ঈশা খাঁ সড়ক ও নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে ডন চেম্বার, মিশনপাড়া থেকে হকার্স মার্কেট পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে মূল সড়কজুড়ে প্রায় আড়াই শ স্থানে ময়লার স্তূপ আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনায় নগরীকে ময়লার ভাগাড়ই মনে হবে যে কারও। আর মূল সড়কেরই যখন এমন হাল, তখন ২৭টি ওয়ার্ডের অলিগলির চিত্র কতটা করুণ হতে পারে সহজেই অনুমেয়।দেখা যায়, রাস্তার ওপরেই নারায়ণগঞ্জে উন্মুক্তভাবে ৩৪টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সড়কের আরও প্রায় ২৪১টির অধিক স্থানে রাত ৯টার পর থেকে বাজার, হোটেল আর দোকানিরা (গৃহস্থালি ব্যতীত) ময়লা ফেলেন। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। ভোর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে ময়লা অপসারণের কথা থাকলেও কখনো কখনো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কোনো রকম বাছাই ছাড়াই সেই ময়লা শহীদ নগরের ল্যান্ডফিল্ডে বা ডাম্পিং জোনে খোলা স্থানে ফেলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সকাল থেকে দুপুর পুরো সময়ই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালতগামী নগরবাসীকে। কোনো কোনো স্থানে এক দিন পর পর ময়লা অপসারণ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হিরণ বলেন, সিটির তিন অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করে। শহরের ৩৪টিসহ তিন অঞ্চলে মোট ১০৪টি স্থান ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ময়লা পড়ে রাস্তায়। সকাল ৮টার মধ্যে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটা আমরা পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতাই বলতে পারেন। আর গৃহস্থালির ময়লা টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায় এনজিওগুলো।