শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন এই রাশিয়া ইউক্রেন

সাইফ ইমন

সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন এই রাশিয়া ইউক্রেন

সোভিয়েত ভেঙে রাশিয়া

তিনটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র রাশিয়া, ইউক্রেন এবং বেলারুশের নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে  সই করেন

১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৯১ সালে ভেঙে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সোভিয়েত  ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হিসেবে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ১৫টি নতুন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। তিনটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র রাশিয়া, ইউক্রেন এবং বেলারুশের নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করেন। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের বহু দেশে কমিউনিজমেরও পতন ঘটে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তখনো টিকে ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তখন মিখাইল গর্বাচেভ। ১৯৯১ সালের আগস্টে তার বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে কট্টরপন্থি কমিউনিস্টরা। কিন্তু সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখানেই থেমে যায়নি সব কিছু। ১৫টি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অনেকগুলোতেই স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ইউক্রেনসহ অনেক ছোট ছোট প্রজাতন্ত্রে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটও হয়ে যায়। ইউক্রেনের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান। একই বছর ডিসেম্বরে বেলারুশে বৈঠকে বসেন তিনটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নেতারা। বৈঠকটি ডেকেছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট স্ট্যানিস্লাভ শুশকেভিচ।

ইউক্রেনের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক এবং রাশিয়ার নেতা বরিস ইয়েলৎসিন যোগ দেন তার সঙ্গে। ইউক্রেন তত দিনে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু বেলারুশ তখনো সে রকম ঘোষণা দেয়নি। আবার গর্বাচেভকে না জানিয়ে এ রকম একটা বৈঠকে বসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ১৯৯১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাশিয়ার নেতা বরিস ইয়েলৎসিন, ইউক্রেনের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক এবং বেলারুশের নেতা স্ট্যানিস্লাভ পূর্ব বেলারুশের এক বিরাট খামারবাড়িতে গিয়ে মিলিত হলেন। বৈঠক শুরুর অল্প পরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির লক্ষ্যে চুক্তির প্রথম লাইনটির ব্যাপারে একমত হন সবাই। লাইনটি ছিল এ রকম- ‘ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস বা ইউএসএসআরের কোনো অস্তিত্ব আর নেই।’  এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লেন। এর মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়।

 

রুশ বিপ্লবের পর সোভিয়েতের সৃষ্টি যেভাবে

সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক দেশ। যার অস্তিত্ব ছিল ১৯১৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। সোভিয়েত অর্থনীতি ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভূমি ও বাড়ির ব্যক্তিগত মালিকানা সোভিয়েত ইউনিয়নে নিষিদ্ধ ছিল। যদিও বলা হতো, সব সম্পদের মালিক সোভিয়েত জনগণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সম্পদের মালিক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার। যার উত্থান ঘটেছিল মূলত রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ১৯১৭ সালে।  ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে হয়েছিল রুশ বিপ্লব। সে সময় মার্কস-অ্যাঙ্গেলসের অর্থনৈতিক-সমাজবাদী তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ও প্রকাশ ঘটান লেনিন ও তার সহকর্মীরা। এর প্রভাব ঢেউ তোলে গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপীয় সমাজে। সোভিয়েত শাসন ব্যবস্থা স্নায়ুযুদ্ধ যুগে পৃথিবীর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। মূলত চারটি প্রজাতন্ত্র হতে সোভিয়েত ঐক্যের উৎপত্তি হলেও ১৯৯১ সালে ভেঙে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৫টিতে। এগুলো ছিল- আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র, বেলারুশ প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া প্রজাতন্ত্র, কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্র, কিরগিজিস্তান প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া প্রজাতন্ত্র, মলদোভিয়া প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান প্রজাতন্ত্র, তুর্কমেনিস্তান প্রজাতন্ত্র, ইউক্রেন প্রজাতন্ত্র ও উজবেকিস্তান প্রজাতন্ত্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত হতো কার্ল মার্কসের দর্শনানুসারে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সবাই বিনামূল্যে শিক্ষা পেত। পানি, গ্যাস, সেন্ট্রাল হিটিংসহ নাগরিক বিভিন্ন সুবিধায় রাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি প্রদান করায় নাগরিকদের এ খাতে তেমন কোনো খরচ করতে হতো না। পেশা ও চাকরির শর্তানুসারে বেতন নির্ধারিত হতো। ছাত্রদেরও রাষ্ট্র বেতন প্রদান করত। সব চাকরিজীবীকে ডরমিটরিতে আবাসন প্রদান করা হতো। পরবর্তীতে সবাইকেই নিজস্ব বাসা প্রদান করা হতো। খুব অল্প কিছু বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন লোককে জীবনের শুরুতেই বড় অ্যাপার্টমেন্ট প্রদান করা হতো।

মূলত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ছিল সোভিয়েত সমাজের বৃহত্তর অংশ। অত্যন্ত ক্ষমতাবান গুটিকয়েক পার্টি সদস্যকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হতো।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ঐক্য ভেঙে গেলে ভূতপূর্ব সোভিয়েত ঐক্যের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে ১১টি নিজেরা একটি শিথিল জোট সৃষ্টি করে। যেটা স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রমণ্ডল নামে পরিচিত। তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া এই জোটে যোগ দেয়নি। এই রাষ্ট্রমণ্ডলের মূল সদস্য থাকলেও তা থেকে তুর্কমেনিস্তানকে বর্তমানে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া ২০০৪ সালে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়।

 

রুশ-ইউক্রেন সংকট

ইউক্রেন ঘিরে ইউরোপে উত্তেজনা এখন চরমে। এর একদিকে আছে রাশিয়া, যারা ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় লাখখানেক সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে বলে দাবি করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পাল্টা ন্যাটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে কোনো অভিযান চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ব্যবস্থার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ইউরোপ আবার একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি- এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। কিন্তু এ উত্তেজনা আসলে ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের অধীনে থাকা ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকেই চলে আসছে। হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা ও বেসামরিক জনগণের প্রাণ গেছে এবং অনেক প্রাণ ঝরতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি একটা অচলাবস্থার মধ্যে আছে। কয়েক বছর ধরে ফ্রন্টের অবস্থানের তেমন পরিবর্তন হয়নি। ইউক্রেন কোনো নমনীয়তা দেখাচ্ছিল না। একই সঙ্গে হারানো ভূখণ্ডগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য আগ্রাসী কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। একই সঙ্গে অপরপক্ষও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।  ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সফর শুরু করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইউক্রেন সফরে  দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন বরিস। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তারা বৈঠকে আলোচনা করবেন। বরিসের ইউক্রেন সফর নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে যুক্তরাজ্য কী কৌশলগত সহায়তা দিতে পারে, তা নিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করবেন বরিস। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর সক্ষমতা এই মুহূর্তে রাশিয়ার রয়েছে। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। বিশ্ববাসী মনে-প্রাণে চাচ্ছন কোনো যুদ্ধ সংঘটিত না হোক।

 

যে কারণে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত ছিল

ইউরোপের কৃষ্ণ সাগরের উত্তরে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি ২০১৪ সালে রাশিয়া নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এর আগে সোভিয়েত সরকার ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত কেন করেছিল এই প্রশ্ন আসে। রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখল ছিল ১৯৪৫ সালের পর মস্কোর প্রথম সরাসরি রাজ্য বিস্তার। স্বভাবতই এটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় নতুন করে রুশভীতি সৃষ্টি করে। তবে এর আগে ঠিক কী কারণে সোভিয়েত সরকার ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটি স্পষ্ট নয়। যদিও ইতিহাসবিদরা এই সিদ্ধান্তের পশ্চাতে বিভিন্ন ধরনের কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, সোভিয়েত সরকার ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করার পর সোভিয়েত কমিউনিস্ট দলের পত্রিকা ‘প্রাভদা’য় এই সিদ্ধান্তের পেছনে তিনটি কারণ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি কারণ ছিল ‘ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের অর্থনীতি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত’ হওয়া। কিন্তু বস্তুত ক্রিমিয়ার অর্থনীতি রাশিয়া বা ইউক্রেন কোনো প্রজাতন্ত্রের সঙ্গেই সংযুক্ত বা অঙ্গীভূত ছিল না।

দ্বিতীয় আরেকটি কারণ ছিল ‘ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার ভৌগোলিক নৈকট্য’। কিন্তু বস্তুত ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি একদিকে যেমন ইউক্রেনের সন্নিকটে, অন্যদিকে তেমনি রাশিয়ারও সন্নিকটে।

তৃতীয় আরেকটি কারণ ‘প্রাভদা’য় উল্লেখ করা হয়, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য’। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুক্তিটি অত্যন্ত দুর্বল, কারণ ১৯৫৪ সালে ক্রিমিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৭৫% ছিল জাতিগত রুশ, আর প্রায় ২৫% ছিল জাতিগত ইউক্রেনীয় অর্থাৎ ‘সাংস্কৃতিক সাদৃশের দিক থেকে ক্রিমিয়া ছিল ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়ার অনেক বেশি নিকটবর্তী।

 

বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন

জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে সোভিয়েত সেনারা প্রাণপণ লড়েছে বাধ্য হয়ে। যুদ্ধে পিছু হটলেই তাদের জন্য মৃত্যু ছিল নিশ্চিত

বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল শক্তিশালী। স্তালিনের আমলে ভিন্নমতাবলম্বী সন্দেহে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে চলে ভয়াবহ হত্যালীলা। এ সময় জার্মানরা সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি অনুযায়ী সাড়ে ৩ লাখ সোভিয়েত লাল ফৌজকে হত্যা করে। তাদের হাতে সাধারণ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে লাখ লাখ। জার্মান হামলার মুখে স্তালিন ১৯৪১ সালের ৬ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিন দশকব্যাপী শাসনামলে এটি ছিল জাতির উদ্দেশে তার দ্বিতীয় ভাষণ। সোভিয়েত একনায়ক স্তালিন তার ভাষণে দাবি করেন যে, ‘জার্মান হামলায় সোভিয়েত বাহিনীর সাড়ে ৩ লাখ সেনা নিহত হলেও ৪৫ লাখ জার্মান সেনাও নিহত হয়েছে এবং বিজয় আমাদের দ্বারপ্রান্তে।’ তবে অনেকেই দাবি করেন, এই সংখ্যা ছিল কল্পনাপ্রসূত। এ কথা ঠিক, জার্মানদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত সেনারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এ প্রতিরোধের জন্য তাদের ব্যাপক মূল্য দিতে হয়।

১৯৪১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মস্কোর উপকণ্ঠে হানাদার সেনাদের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ এবং তাদের অগ্রাভিযান থামিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জার্মান সেনাদের বিরুদ্ধে লাল ফৌজের প্রতিরোধ ছিল অকার্যকর। সোভিয়েত সেনারা যুদ্ধে ব্যর্থ হলেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়া জার্মানদের পরাজয় ডেকে আনে। স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মানদের পরাজিত করতে সোভিয়েত মার্শাল জর্জিঝুচভের সঙ্গে স্তালিন একযোগে কলাকৌশল প্রণয়ন করেন। জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে সোভিয়েত সেনারা প্রাণপণ লড়েছে বাধ্য হয়ে। যুদ্ধে পিছু হটলেই তাদের জন্য মৃত্যু ছিল নিশ্চিত। ১৯৪৮ সালের ২৭ জুলাই স্তালিনের ২২৭ নম্বর অর্ডারে তার এই যুদ্ধ কৌশলের ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে।

 

রাশিয়া ফেডারেশন

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিল রাশিয়া। কিন্তু সেই রাশিয়া এখন আবার বিশ্বনেতৃত্বের জায়গায় সরব হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সিরিয়ায় পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে মস্কো এখন বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। রাশিয়ার এই সাফল্যের পেছনে যিনি প্রধান ভূমিকা পালন করছেন তিনি হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এটি পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়াজুড়ে বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। রাশিয়ার আয়তন দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ। দেশটির সরকারি নাম রাশিয়ান ফেডারেশন। রাশিয়ার মতো এত বেশি খনিজসম্পদ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নেই। রাশিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জনগণ এর পূর্ব ইউরোপীয় অংশে বাস করে। ২০০৩ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪৫ লাখের কিছু বেশি। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো। দেশটির বেশির ভাগ জনগণ রুশ ভাষায় কথা বলে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ, যা সোভিয়েত শাসনামলে লেনিনগ্রাদ নামে পরিচিত ছিল।

 

কেজিবি এখন এফএসবি

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি। কেজিবির তৎপরতা ছিল বিশ্বজুড়ে। তাদের গুপ্তচরবৃত্তি আর গোপন কার্যক্রম নিয়ে তোলপাড় চলে সর্বত্র। সবার চোখের সামনে থেকেও যেন অদৃশ্য ছিল এই গোয়েন্দারা। সেই কেজিবি এখন নেই। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গড়ে উঠেছে রাশিয়া। বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ রাশিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী এখন এফএসবি। কেজিবি থেকে এফএসবি এখন আরও দুর্র্ধর্ষ। এফএসবির কর্মী সংখ্যা আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজারের। এফএসবির সদর দফতর রাশিয়ার মস্কো শহরের ল্যুবিয়াঙ্কা স্কোয়ারে। এর জবাবদিহিতা রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের কাছে। এফএসবির সাহায্যকারী সংস্থার নাম গ্রু। এফএসবির মোট ১০টি বিভাগ রয়েছে। তাদের কাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, কাউন্টার টেররিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি, বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি ইত্যাদি।

 

প্রধান যত নেতা

১৯২২-২৪

ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন

 

১৯২৪-৫৩

জোসেফ স্তালিন

 

১৯৫৩-৬৪

নিকিতা ক্রুশ্চেভ

 

১৯৬৪-৮২

লিওনেদ ব্রেজনেভ

 

১৯৮২-৮৪

ইউরি আন্দ্রোপোভ

 

১৯৮৪-৮৫

কনস্টাইন্টান শেরনেনকো

 

১৯৮৫-৯৯

মিখাইল গর্বাচেভ

 

সর্বশেষ খবর