সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
অমর জুটি

সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন পুত্র সেলিম

সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন পুত্র সেলিম

সম্রাট আকবরের পুত্র ছিলেন শাহজাদা সেলিম। তিনি প্রেমে পড়েছিলেন অপরূপ সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির প্রকৃত নাম নাদিরা বেগম। কেউ বলেন শরীফুন্নেছা। তিনি ছিলেন এক ইরানীয় সওদাগরের কন্যা। সুন্দরী আনারকলি একদিন তার পিতার সঙ্গে আফ্রিকার উত্তর উপকূল থেকে সওদাগরি জাহাজে যাত্রা শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫। জলদস্যুরা তার বাবাকে হত্যার পর তাকে অপহরণ করে এবং ইস্তাম্বুলের ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে মনোরঞ্জনের নানারকম তালিম নেওয়ার পর তার অবস্থান হয় এক ধনাঢ্য পরিবারে। ওই পরিবারের ধনাঢ্য ব্যক্তি তাকে কিছুদিন পর তুরস্কের সুলতানের কাছে নজরানা পাঠান।

তুরস্কের সুলতান আনারকলিকে সম্রাট আকবরের কাছে পাঠান। সম্রাটের ভাষায় যার রূপ ছিল পাকা আনারের দানার ন্যায় রক্তিম। যৌবন রক্তজবার কলির ন্যায়। যাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন আনারকলি।

শাহজাদা সেলিম প্রথম দেখাতেই আনারকলির রূপে মজে যান। আনারকলির গাঢ় নীল চোখ, ডিম্বাকৃতি মুখমন্ডল, খাড়া নাক যেন অপ্সরা প্রতিরূপ। রূপের আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরলেন শাহজাদা সেলিম। আনারকলিকে পেতে সেলিম উৎকোচ দিয়ে হাত করেন সম্রাট আকবরের হেরেমের রক্ষী সারাকে। আকবর তিন সপ্তাহের জন্য শিকারে গেলে সারা অতি গোপনে আনারকলিকে শাহজাদা সেলিমের খেদমতে হাজির করেন। পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আনারকলিও তাঁর প্রেমে মজেছিলেন।

তাঁরা অভিসারে যেতেন। তবে তাঁদের মধ্যকার সাক্ষাৎ গোপন রাখা হতো। তাঁদের রোমান্টিক সম্পর্কের সময় আনারকলির বয়স ছিল চল্লিশের কোটায় আর শাহজাদা সেলিমের বয়স ছিল ত্রিশের কোটায়। এক নর্তকীর প্রেমে পুত্রের এই দশা মুঘল সম্রাট আকবরের কানে পৌঁছায়। সম্রাট আকবর এ সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হন।

নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান।

আকবর বন্দী করে আনারকলিকে হেরেমখানায় নিয়ে যান। সেখানে সেলিমের উপস্থিতিতে আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার শাস্তি দেন যেন আনারকলি তিলে তিলে মারা যায়। পরে জানা যায়, সেলিমের অনুরোধে তাঁর দাদি হামিদা অর্থাৎ সম্রাট আকবরের মা আনারকলিকে গোপনে বিষ সরবরাহ করেন, যেন কষ্ট পেয়ে মারা না গিয়ে একেবারে মারা যান। পাকিস্তানের লাহোরে রয়েছে আনারকলির সমাধি। পরবর্তীতে সেলিম আনারকলির স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন লাহোর নগরীতে। আজও সেটি আছে অমলিন।

সর্বশেষ খবর